প্রিন্টার কেনাকাটা
ডিজাইনের দিক থেকে প্রিন্টার খুব একটা পরিবর্তন না হলেও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। মোবাইল প্রিন্টিং অপশন, ওয়ারলেস সংযোগ, এনএফসি ইত্যাদি প্রযুক্তি বর্তমানে প্রিন্টারগুলোকে অনেক বেশি কর্মক্ষম করে তুলেছে। প্রিন্টার কেনার আগে নির্ধারণ করুন প্রিন্টারটি কেনার উদ্দেশ্য কি এবং এটি কে ব্যবহার করবে। তাছাড়া বাজেটের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যাতে করে আপনি সবচেয়ে ভালো মডেলের প্রিন্টারটি দেশে ক্রয় করতে পারেন।
কোন ধরণের প্রিন্টার ভাল হবে?
একসাথে প্রচুর ডকুমেন্ট ফাইল বিরতিহীন ভাবে দ্রুত প্রিন্ট করতে লেজার প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়। হাই কোয়ালিটি প্রিন্ট করতে লেজার প্রিন্টার হলো অতুলনীয়। ইঙ্কজেক্ট প্রিন্টার দিয়েও ভাল মানের ছবি নিখুঁত ভাবে প্রিন্ট করা যায় তবে ছবি প্রিন্ট করতে একটু বেশি সময় নিয়ে থাকে। যাদের অল্প প্রিন্ট করার প্রয়োজন তাদের জন্য লেজার প্রিন্টার ভাল কারণ লেজার প্রযুক্তির কারণে এর কালি সহজে শুকিয়ে যায় না কিন্তু ইঙ্কজেক্ট প্রিন্টাের কালি অব্যবহৃত থাকলে সহজে শুকিয়ে যায়। ইঙ্কজেট প্রিন্টার কম দামের জন্য জনপ্রিয়।
কোন প্রিন্টার দিয়ে কম খরচে প্রিন্ট করা যায়?
যদি অনেক ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয় তবে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট প্রিন্টার সবচেয়ে ভাল কারন এর সক্ষমতা বেশি আর কম সময়ে অধিক প্রিন্ট করার কারনে খরচ অনেক কম হয়। আর কালার প্রিন্টের জন্য রঙিন প্রিন্টার দরকার তবে সেক্ষেত্রে ইঙ্কজেট কালার প্রিন্টার সাশ্রয়ী হবে। তবে ফটো প্রিন্টার দিয়ে ভাল মানের ছবি এবং ড্রয়িং কম খরচে প্রিন্ট করা যায়।
প্রিন্টার কিনতে বাজেট কত হওয়া উচিত?
আপনি ৬,০০০ টাকায় অল-ইন-ওয়ান প্রিন্টার পাওয়া যাবে যা স্ক্যান, কপি ফাংশন সহ রঙ এবং কালো প্রিন্ট করে। এটি সব ধরনের ব্যবহারকারীদের জন্য উপযুক্ত। যদি শুধুমাত্র কালো প্রিন্ট করেন তবে কালো ও সাদা লেজার প্রিন্টারের দাম বাংলাদেশে প্রায় ১০,০০০ টাকা। এগুলো ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানেই জন্য ভালো। আর বড় অফিসের জন্য খুব ভাল মানের প্রিন্টার দাম কমপক্ষে ২৫,০০০ টাকা খরচ হবে এবং আর যদি আরো দামি কিনেন তাহলে আরও ভাল হয়।
আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি দেখতে হবে?
মাল্টি-ফাংশন মডেলঃ শুধু প্রিন্ট করে এমন প্রিন্টার বর্তমানে নেই বল্লেই চলে। স্ক্যানার সংবলিত প্রিন্টার কিনলে ডকুমেন্ট কপি বা ডিজিটাল ডকুমেন্ট তইরি করা অনেক সহজ হয়। বহুমুখী ব্যবহারের জন্য আপনি মাল্টি-ফাংশন প্রিন্টার ক্রয় করতে পারেন।
কানেক্টিভিটিঃ সব ধরনের প্রিন্টারই ইউএসবি/ ইথারনেট পোর্টের সাহায্যে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। সাধারণত অফিসে ব্যবহারের জন্য তৈরিকৃত মডেলগুলো ইথারনেটের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে। প্রিন্টারের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ওয়াই-ফাই এর বিকল্প নেই। ওয়াই-ফাই আপনাকে সহজেই প্রিন্টার ব্যবহার করতে সাহায্য করবে তাই ওয়াই-ফাই ছাড়া প্রিন্টার কেনার পূর্বে ভালোভাবে চিন্তা করে নিন।
মোবাইল প্রিন্টিংঃ এমনকি সবচেয়ে কর্পোরেট-ফোকাসড্ প্রিন্টারগুলোও মোবাইল ডিভাইসের চাহিদাকে এড়িয়ে যেতে পারেনি এবং মোবাইলের মাধ্যমে প্রিন্ট করার কোনও না কোনও ব্যবস্থা রেখেছে। সরাসরি প্রিন্টিং এর জন্য এমন অ্যাপ খুজুন যা অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস এবং অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসের সাথে কাজ করে বা ইমেইলের মাধ্যমে(এইচপির ইপ্রিন্ট ও গুগোলের ক্লাউড প্রিন্ট) বা থার্ড-পার্টি টেকনোলজির মাধ্যমে(অ্যাপেলের এয়ারপ্রিন্ট) প্রিন্ট করতে পারে। এনএফসি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার মোবাইল ডিভাইসটি প্রিন্টারের সাথে পেয়ার করতে পারবেন এবং ওয়াই-ফাই ও অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রিন্ট করার নির্দেশ দিতে পারবেন।
পেপার হ্যান্ডলিংঃ আপনার দৈনিক যতগুলো পেজ প্রিন্ট করতে হয়, তার চেয়ে বেশি পেজ ধারন করতে পারে এবং প্রিন্টার বাছাই করুন। একটি পার্সোনাল প্রিন্টার সাধারণত একটি সিঙ্গেল ট্রেতে ১০০ থেকে ১৫০টি পেজ ধারন করতে পারে। কিছু কিছু প্রিন্টারে ডেডিকেটেড ফটো ট্রে আছে যা পেপার সোয়াপিং কমিয়ে আনে। একটি বিজনেস প্রিন্টার সর্বনিম্ন ২৫০ পেজ ধারন করতে পারে এবং উন্নত মডেলের প্রিন্টারগুলো সাধারণত ৫০০ থেকে ১০০০ পেজ ধারন করতে পারে। অফিসে ব্যবহারের জন্য মাল্টিপল পেপার ট্রে ওয়ালা প্রিন্টার শ্রেয়।
ডুপ্লেক্সিংঃ টু-সাইডেড প্রিন্টিং বা ডুপ্লেক্সিং আপনার পেপার খরচ অর্ধেক কমিয়ে আনতে পারে। কিছু কিছু প্রিন্টারে ম্যানুয়াল ডুপ্লেক্সিং আছে। ম্যানুয়াল ডুপ্লেক্সিং আপনাকে বলে দেয় কিভাবে পেপারটি রোটেট ও রিলোড করতে হবে।
পেপার সাইজঃ সকল ধরনের প্রিন্টার দিয়ে এ৩ সাইজের কাগজ প্রিন্ট করা যায় না। প্রিন্টার কেনার আগে মন স্থির করতে হবে কোন ধরনের প্রিন্টার দিয়ে কোন সাইজের কাগজ প্রিন্ট করবেন এ৪ নাকি এ৩।
পেপার ট্রেঃ আপনি যদি হ্যাভি ইউজার হন তাহলে আপনার প্রয়োজন বড় ট্রে বিশিষ্ট প্রিন্টারের। যে সকল প্রিন্টারের ট্রে আকারে বড় সে সকল প্রিন্টার কেনা ভালো। অন্যথায় কাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
মেমোরীঃ প্রিন্টারের মেমোরী একটি খুব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। এটা নির্ভর করে কাজের ধরনের উপর। প্রিন্টারের সাহায্যে একসাথে বেশি পরিমানে কাজ করতে চাইলে এর মেমোরী বেশি লাগবে কারণ সকল প্রিন্ট কমান্ড মেমরিতে রাখতে পারবে।