পানির ট্যাংক কেনাকাটা
পানির ট্যাংক মূলত বাসা-বাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প কারখানাতে সবসময় সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে পানি সরবারহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পানি সঞ্চয় করে রাখার পাশাপাশি যথাসময়ে পানি সরবারহের জন্য এই ধরনের ট্যাংক ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবারহে পানির ট্যাংকের ব্যবহার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে, গ্রাহক চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী গাজী, বস, পলিকন, সাপোর্ট, সেরা, তাইওয়ান ট্যাংক সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পানির ট্যাংক বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
পানির ট্যাংক ব্যবহারের সুবিধা
১। পানির ট্যাংক মূলত বাসা বাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান পানি রিজার্ভ করে নির্ভরযোগ্য পানি সরবারহ বজায় রাখে। ফলে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো জুরুরি মুহূর্তে পানি সরবারহ নিশ্চিত করে।
২। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অবকাঠামোগত ব্যর্থতার মতো পরিস্থিতিতে, পর্যাপ্ত জল সরবরাহ করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে পানির ট্যাংক পারিবারিক কিংবা বড় পরিসরে এরিয়ার মানুষদের জন্য পানি জমা রাখতে সহায়তা করে। পরবর্তীতে, পানীয়, রান্না, স্যানিটেশন এবং জরুরী পরিস্থিতিতে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে পরিষ্কার ও নিরাপদ পানি পাওয়া যায়।
৩। জমাকৃত পানি একাধিক স্তর দিয়ে পানির ট্যাংক সুরক্ষিত থাকে। ফলে, কোনো প্রকার রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজন ছাড়াই পরিষ্কার এবং নিরাপদ পানি পাওয়া যায়।
৪। রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করে এবং মূল্যবান পানি সম্পদ সংরক্ষণে সহায়তা করে। ফলে, বর্ষাকালে পানির ট্যাংকে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে পরবর্তীতে সেচ, যানবাহন ধোয়া বা বাথরুমের কাজে ব্যবহার করা যায়।
৫। পানির ট্যাঙ্ক বিভিন্ন আকার, আকৃতি এবং উপকরণে পাওয়া যায়, যা প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহৃত স্থান অনুসারে নমনীয় হয়ে থাকে। তাই, আবাসিক, বাণিজ্যিক কিংবা শিল্প কারখানাতে চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী সহজেই ইনস্টল করা যায়।
৬। এছাড়াও, পানির ট্যাংকে পানির গুণমান উন্নত করতে পরিস্রাবণ ব্যবস্থা বা পরিশোধন পদ্ধতির মত উন্নত টেকনোলোজির সুবিধা প্রদান করে থাকে।
৭। পানির ট্যাংক থাকার ফলে বাসা-বাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাহ্যিক পানির উৎসের উপর নির্ভরশীলতা কমায়। ফলে, খরচ সাশ্রয় হয় এবং নিরাপদ পানি ব্যবহারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রদান করে।
পানির ট্যাংকের দাম কত?
পানির ট্যাংক আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্প কারখানায় পানি জমা রাখার জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে পানির ট্যাংকের দাম ২,৬০০ টাকা থেকে শুরু, যা ১২ লিটার ক্যাপাসিটি সম্পন্ন এবং নিরাপদ, স্বাদহীন ও গন্ধহীন পানি সরবারহ নিশ্চিত করে । এছাড়াও, বাংলাদেশে পানির ট্যাংকের দাম সাধারণত ব্র্যান্ড, সাইজ, ওয়াটার ক্যাপাসিটি, বিল্ড কোয়ালিটি, পানি বিশুদ্ধকরণ টেকনোলোজি এবং অন্যান্য ফিচার সমূহের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এছাড়াও, বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানাতে ব্যবহার উপযোগী ৫০০ লিটার থেকে ৩০০০ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংক বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
৫০০ লিটার পানির ট্যাঙ্কের দাম
৫০০ লিটার পানির ট্যাংক মূলত কমপ্যাক্ট সাইজের হয়ে থাকে যা সীমিত সংখ্যক লোকের পানির সরবারহের জন্য উপযুক্ত। তাছাড়া, বাংলাদেশে ৫০০ লিটার পানির ট্যাংকের দাম ৪,৫০০ টাকা থেকে শুরু, যা ফুড গ্রেড এলএলডিপিই উপাদান দিয়ে তৈরি। তবে, গুণমান, ব্র্যান্ড এবং আলট্রাভায়োলেট প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য ফিচার সমূহের উপর নির্ভর করে ৫০০ লিটার পানির ট্যাংকের দাম পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
১০০০ লিটার পানির ট্যাংকের দাম
আবাসিক বাসা-বাড়িতে ১০০০ লিটার ক্যাপাসিটির পানির ট্যাংক উপযুক্ত। বর্তমানে, বাংলাদেশে ১০০০ লিটার পানির ট্যাংকের দাম ৯,০০০ টাকা থেকে শুরু, যা ১০০ ভাগ ভার্জিন উপাদানে তৈরি। তাছাড়া, ১০০০ লিটার পানির ট্যাংকের গুণমান, ব্র্যান্ড এবং ফিটিংস, ঢাকনা বা ওভারফ্লো সুরক্ষার মতো অতিরিক্ত ফিচার সমূহের উপর নির্ভর করে দামের তারতম্য হয়ে থাকে।
২০০০ লিটার পানির ট্যাংকের দাম
২০০০ লিটার ক্যাপাসিটি সম্পন্ন পানির ট্যাংক মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। বাংলাদেশে ২০০০ লিটার পানির ট্যাংকের দাম ১৮,০০০ টাকা থেকে শুরু। তবে, পলিথিন, ফাইবারগ্লাস, বা ইস্পাতের মত উপাদান, ব্র্যান্ড, গুণমান এবং ইনলেট/আউটলেট ফিটিং সহ অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করে ২০০০ লিটার পানির ট্যাংকের দাম কম বেশি হয়ে থাকে।
৩০০০ লিটার পানির ট্যাংকের দাম
বড় পরিসরের অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা শিল্প কারখানাতে পানি নিরবিচ্ছিন্নভাবে সরবারহের জন্য ৩০০০ লিটারের পানির ট্যাংক উপযুক্ত। বাংলাদেশে ৩০০০ লিটার পানির ট্যাংকের দাম ২৭,০০০ টাকা থেকে শুরু, যা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী পানির ট্যাংক। তবে, এই সাইজের পানির ট্যাংক তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান, ব্র্যান্ড, গুণমান, এবং অন্যান্য ফিচার সমূহের উপর নির্ভর করে দাম পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
পানির ট্যাংকে পানি রক্ষণাবেক্ষণ টিপসসমূহ
সংরক্ষিত পানি পরিষ্কার ও নিরাপদ তা নিশ্চিত করতে পানির ট্যাংক রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানির ট্যাংকে জমাকৃত পানি দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহার উপযোগী রাখতে করণীয় বিষয় সমূহ হচ্ছে
- পানির ট্যাংক নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষ করে ১০-৫০ লিটার ক্যাপাসিটির ছোট পানির ট্যাংক সপ্তাহে অন্তত এক বা দুইবার পরিষ্কার করতে হবে। অন্যদিকে ৫০০ থেকে ৩০০০ লিটার ক্যাপাসিটির পানির ট্যাংক মাসে একবার কিংবা প্রতি দুই মাসে অন্তর একবার পরিষ্কার করতে হবে।
- এছাড়া, পানির ট্যাংক থেকে নিয়মিত পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পানির রঙ, ঘনত্ব এবং অন্যান্য কোনো ভৌত পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
- মজবুত প্লাস্টিক, স্টেইনলেস স্টিল বা তামার মত ভালো মানের উপকরণে তৈরি পানির ট্যাংক বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি, পানিতে শেওলা এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে কম আলোময় স্থানে পানির ট্যাংক সেটআপ করতে হবে।
- পানির ট্যাংকে পরিশোধিত পানির সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে ট্যাংকে পানির প্রবেশ মুখে ইউভি (আল্ট্রাভায়োলেট) ট্রিটমেন্ট, রিভার্স অসমোসিস এবং কার্বন ফিল্টার যুক্ত ওয়াটার পিউরিফায়ার ইনস্টল করতে হবে।
- তাছাড়া, ব্যাকটেরিয়া ও দূষিত পদার্থ থেকে ট্যাংকের পানি পরিষ্কার ও নিরাপদ রাখতে ক্লোরিন বা অনুরূপ রাসায়নিকের পরিবর্তে আয়নাইজার ব্যবহার করতে হবে।