ওয়াটার হিটার এবং গিজার কেনাকাটা
ঘন ঘন বৃষ্টি কিংবা শীত এই দুই কালে শরীরকে সুস্থ রাখতে গোসলের সময় কুসুম গরম পানির বিকল্প নেই। কিন্তু বারবার পানিকে চুলায় গরম করতে খরচ হয় অনেক সময় এবং ব্যয় হয় চুলার গ্যাস। তাই সময় অপচয় এবং গ্যাসের খরচ কমাতে ওয়াটার হিটার বা গিজার এর ব্যবহার হলো একটি উত্তম পন্থা। এছাড়াও বিভিন্ন সুবিধার কারণে ওয়াটার হিটার এর ব্যবহার বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাংলাদেশে ওয়াটার হিটার বা গিজার এর দাম অনেক কম।
কোন ধরনের ওয়াটার হিটার কেনা উচিত?
বাংলাদেশে ছোট, বড়, মাঝারি সাইজের বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার হিটার পাওয়া যায়। তাই প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী এই ওয়াটার হিটার কেনা উচিত। কারন বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার হিটারের বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে।
গিজার: গিজার এক ধরনের ওয়াটার হিটার যেটিতে পানি গরম করে ধরে রাখা যায় এবং অনেক্ষন গরম থাকে। এটি মোটামুটি দ্রুত পানি গরম করে ফেলতে পারে প্রায় ৫-১৫ মিনিটেই এটির ফুল ট্যাংক গরম হয়ে যায়। লিটার অনুযায়ি গিজার বিভিন্ন সাইজের হয় যেমন ৫ গ্যালন, ১০ গ্যালন, ১৫ গ্যালন, ২০ গ্যালনের গিজার বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত বাথরুমে বা রান্নাঘরের পানির কলের সাথে সংযুক্ত থাকে। পানি গরম হয়ে গেলে এটি আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সবার জন্য ব্যবহার করার জন্য এটি আদর্শ। এগুলো সাধারণত সর্বোচ্চ ১৫০০ ওয়াট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এগুলো ব্যবহার সবচেয়ে নিরাপদ।
ইনস্ট্যান্ট ওয়াটার হিটার: এটি এক ধরনের ওয়াটার হিটার দেখতে অনেকটা পানির কলের মত এবং সরাসরি পানির লাইনে সংযুক্ত করা যায়। এটিতে কোন সংরক্ষণ ট্যাংক থাকে না কিন্তু এটির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত পানিকে মুহূর্তেই গরম করে ফেলতে পারে। মুহূর্তেই পানি গরম করে বিধায় তবে এগুলোর ওয়াট একটু বেশি হয়ে থাকে। এগুলো সাধারণত ৫৪০০ ওয়াট পর্যন্ত হয়।
ঝরনা হিটার: এই ওয়াটার হিটার দেখতে অবিকল সাধারণ ঝরনার মত। গোসল করার কাজে এটি ব্যহার করা হয়। এটিও প্রবাহিত পানিকে সাথে সাথে গরম করে ফেলে। বাংলাদেশে দাম এটির অনেক কম এবং যাদের বাজেট কম তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোর ওয়াটও বেশি হয়ে থাকে।
নিমজ্জন হিটার: এটি পানিতে ডুবিয়ে ব্যবহার করা হয এবং পোর্টেবল। বালতির বা কোন পাত্রের পানি এটি দিয়ে সহজেই গরম করা যায় এবং সকল ধরনের ওয়াটার হিটারের মধ্যে এটির দাম সবচেয়ে কম। বাংলাদেশে আগে এটি অনেক প্রচলিত ছিল কিন্তু এখন আধুনিক হিটারের জন্য এটির ব্যবহার কমে গিয়েছে। এটি পানি গরম হয়ে গেলে অটোমেটিক বন্ধ হয় না বিধায় কিছুটা অসুবিধাজনক। এগুলো সাধারণত ৫০০ থেকে ১০০০ ওয়াটের হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে ওয়াটার হিটার এর দাম কত?
বাংলাদেশে ওয়াটার হিটার এর দাম মাত্র ৯৫০ টাকা থেকে শুরু। এই ওয়াটার হিটার গোসলের জন্য তাৎক্ষণিক গরম পানি প্রদান করে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন তাপমাত্রা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এটির সাহায্যে পানি তাৎক্ষণিক ভাবেগরম করা যায়। বাংলাদেশে ওয়াটার হিটারের দাম নির্ভর করে ওয়াটার হিটারের ধরনের উপর।
বৈদ্যুতিক গিজার কি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং দাম কত?
কম সময়ে বেশি পানি গরম চাইলে ব্যবহার করতে হবে বৈদ্যুতিক গিজার। বর্তমান বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গিজার বিদ্যুৎ সাশ্রয় করায় পারদর্শী। গিজারগুলো পানিকে দীর্ঘক্ষণ গরম রাখতে পারে ফলে বারবার গিজার চালু করতে হয় না এবং বিদ্যুৎও সাশ্রয় হয় খুব সহজেই। বাংলাদেশে গিজার দাম ৬,৫০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং গিজারের দাম এর ধারণক্ষমতা, বডি কোয়ালিটি, ব্র্যান্ড এর উপর নির্ভর করে।
গিজারে ফিল্টার কেন ব্যবহার করবেন?
পানি গিজারে দেওয়ার আগে ফিল্টারিং করে দেওয়া হয় কারণ পানিতে অনেক সময় নানা ধরণের বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা গিজারের বডিতে বা হিটারে লেগে থাকে এবং ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলে। গিজারে ফিল্টার ব্যবহার করলে একই গিজার অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
ওয়াটার হিটার কেন কেনা উচিৎ?
বিভিন্ন কারণে ওয়াটার হিটার কেনা উচিৎ। কারণ ওয়াটার হিটার এবং গিজারে আছে অনেক সুবিধা। এই সুবিধা গুলো হলোঃ
১। ওয়াটার হিটার বা গিজার সময় সাশ্রয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২। তাৎক্ষণিক গরম পানি প্রদানের ক্ষেত্রে ওয়াটার হিটার এবং গিজার এর কোনো বিকল্প নেই।
৩। ওয়াটার হিটার ব্যবহারের ফলে চুলার গ্যাসের খরচ কমে।
৪। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় চুলা থেকে গরম পানি নামাতে গিয়ে শরীরে গরম পানি পরে পুড়ে গেছে এমন খবর শোনা যায়। তাই পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে ওয়াটার হিটার বা গিজার ব্যবহার করা উচিৎ।
৫। চুলার গরম পানি থেকে যে ধোয়া বের হয় সেটিতে থাকে কার্বন মনোক্সাইড নামক গ্যাস যা ছোট বাচ্চাদের জন্য অধিক ক্ষতিকর। কিন্তু ওয়াটার হিটার বা গিজারে এর গ্যাস নিঃস্বরণ হয় না, তাই এটি পরিবেশবান্ধব।
৬। শরীরকে সুস্থ রাখতে ওয়াটার হিটার এবং গিজার ব্যবহার অতীব জরুরী।
৭। ওয়াটার হিটার পানিকে সাথে সাথেই গরম করে ফলে তাই এটি দিয়ে হাত মুখ ধোয়া, কুসুম গরম পানি পান করা ইত্যাদি দৈনন্দিন জীবনে কাজে আসে। আর বৃদ্ধ বা বাচ্চাদের জন্য পরিবারে এটি খুবই কাজের এবং যাদের ঠান্ডা জনিত সমস্যা আছে তারা এই ওয়াটার হিটার ব্যবহার করে নিজেকে রাখতে পারেন সুস্থ।
ওয়াটার হিটার বা গিজার সম্পর্কে কি কি জানতে হবে?
ওয়াটার হিটার বা গিজার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জিনিস জেনে নিতে হবে। এগুলো হলোঃ
১। গিজার কেনার আগে এটি কোথায় ফিট করবনে জানতে হবে। ওয়াটার হিটার বা গিজার স্থাপনের জন্য কতটুকু জায়গার প্রয়োজন তা নির্ভর করবে এর ধরন, ধারণ ক্ষমতার এবং সাইজের উপর।
২। হট ওয়াটার ট্যাপ কেনার আগে দেখতে হবে এটি সংযোগের জন্য বৈদ্যুতিক পোর্ট আছে কোন স্থানে অথবা হট ওয়াটার ট্যাপ যেখানে লাগানো হবে সেখানে বৈদ্যুতিক পোর্ট দেয়া যাবে কি না।
৩। ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে ওয়াটার হিটার বা গিজার স্থাপন হতে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু বাথরুমে রাখার ক্ষেত্রে গোসলের স্থান থেকে দূরে রাখতে হবে।
৪। উঁচু স্থানে ওয়াটার হিটার এবং গিজার লাগানো উচিৎ এবং সুইচ যাতে হাতের লাগালে থাকে এটিও মাথায় রাখা জরুরী।
৫। গিজার বেশিক্ষণ চালু না রাখা ভাল। অধিকাংশ গিজার পানি গরম করার পর সংকেত প্রদান করে থাকে তখন সুইচ অফ করে। তাই সংকেত প্রদান করে এমন গিজার কেনা বেশি ভালো। তবে সাধারণ গিজারে অটো অফ হওয়ার সুবিধা থাকলেও পানি গরম হয়ে গেলে ম্যানুয়ালি সুইচ অফ করে দেয়া ভাল।
৬। ওয়াটার হিটার এবং গিজারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ভাল কোন সংশ্লিষ্ট কাজে পারদর্শী এমন ব্যক্তিকে দেখাতে হবে।
৭। ওয়াটার হিটার এবং গিজার ব্যবহারের পর মনে করে বন্ধ করতে হবে।
৮। গিজার অনেকদিন বন্ধ রাখা ঠিক না। আর ৫-৭ বছর ব্যবহারের পর এটি পরিবর্তন করে নেয়া ভাল। কারন গিজারের তলায় অনেক ময়লা জমা হয় এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।