ওয়াশিং মেশিন কেনাকাটা
কাপড় ধোঁয়ার কাজকে সহজ করতে বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে ওয়াশিং মেশিন বহু আগেই। তবে বর্তমানে এতে যোগ হচ্ছে বিভিন্ন রকমের আধুনিক বিশেষত্ব যা আরও কিছু বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। আর এই সুবিধা গুলোর জন্য বাংলাদেশে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ওয়াশিং মেশিন প্রকাশ করছে বাংলাদেশের বাজারে।
ওয়াশিং মেশিনে সুবিধা কি কি আছে?
বর্তমানে প্রতিটি ব্র্যান্ড নতুন নতুন সুবিধা যুক্ত করে আসছে তাদের ওয়াশিং মেশিন গুলোতে। নিচে ওয়াশিং মেশিনের সুবিধা গুলো তুলে ধরা হলোঃ
১। ওয়াশিং মেশিনের সাহায্যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক গুলো কাপড় একসাথে ধুইয়ে ফেলা যায়। এতে সময় অনেক সাশ্রয় হয়।
২। বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারীদের একটা নির্দিষ্ট বয়সে যাওয়ার পরে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা এবং বিশেষ করে মাজায় অনেক সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যার প্রধান কারণ ঘন্টার পর ঘন্টা এক জায়গায় বসে থেকে কাপড় ধোঁয়া। তাই মানব দেহের যত্ন নিতে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করা উচিৎ। কেননা ওয়াশিং মেশিন নিজেই কাপড় ধুইয়ে দিতে পারে, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয় না। ফলে শরীর সুস্থ থাকে।
৩। বাংলাদেশে বর্তমানের ওয়াশিং মেশিন গুলোর কিছু মডেল কাপড় ধুইয়ে শুকিয়ে দিতেও পারে। ফলে আলাদা করে কাপড় শুকানোর সময় অপচয় করতে হয় না।
৪। কাপড় ইস্ত্রি করার খরচ বাঁচাতে বর্তমানের আধুনিক ওয়াশিং মেশিন গুলো রাখে বিশেষ ভূমিকা কেননা এই ওয়াশিং মেশিন গুলো কাপড় শুকিয়ে ইস্ত্রি করে দিতে পারে।
৫। কাপড় কাচার সময়ে ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়, হাতের চামড়া ছিলে যায়, নখের গোড়ায় কালো দাগ পড়ে যায়। ত্বকের এসব সমস্যার সমাধান হিসাবে ওয়াশিং মেশিন সবচেয়ে ভাল ভূমিকা রাখে।
৬। কাপড়কে জীবাণু মুক্ত রাখতে ওয়াশিং মেশিনে ব্যবহার করা হয় এক ধরণের প্রযুক্তি যার নাম হট ওয়াশ। এটি কাপড়ের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস দূর করে।
৭। ওয়াশিং মেশিনের ভিতরে আলাদা ভাবে কাপড় ভিজিয়ে রেখে দিতে হয় না কারণ টাইম ডিলে নামে একটি বিশেষত্ব আছে যা কাপড়কে ভিজিয়ে রাখে।
৮। কাপড়ের মধ্যে অনেক রকমের ভিন্নতা আছে। সব ফেব্রিক একরকম না। যেমনঃ কোনোটা আছে সুতির আবার কোনোটা আছে সিল্ক। কিন্তু এগুলো ধোয়ার প্রসেস একরকম না। তাই বর্তমানের ওয়াশিং মেশিন গুলোতে যুক্ত হচ্ছে এক ধরণের বিশেষত্ব যা কাপড়ের ধরণ অনুযায়ী ধোঁয়ার সেবা প্রদান করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুতি কাপড়ের জন্য কটন অপশন সিলেক্ট করলে ওয়াশিং মেশিন কাপড় অত্যন্ত নমনীয়তার সাথে ধুইয়ে দিবে। ফলে কাপড়ের মান নষ্ট হবে না।
৯। বর্তমানে অনেক পোর্টেবল ওয়াশিং মেশিন যা আকারে ছোট এবং ওজনে হালকা ফলে সব স্থানেই এটি বহন করা যায়।
বাংলাদেশে ওয়াশিং মেশিনের দাম কত?
বাংলাদেশে ওয়াশিং মেশিনের দাম শুরু হয় মাত্র ২৬,৫০০ টাকা থেকে। এটি একটি অটোমেটিক প্রযুক্তির ওয়াশিং মেশিন। খুব দ্রুততার সাথে এই ওয়াশিং মেশিন কাপড় ধুইয়ে ফেলতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশে অনেক রকমের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়। এগুলোর দাম নির্ভর করে ব্র্যান্ড, মডেল, মোড এবং সুবিধার উপর।
বাংলাদেশে কত ধরণের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে ২ ধরণের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে একটি হলো টপ লোডার এবং আরেকটি ফ্রন্ট লোডার। এই দুই ধরণের ওয়াশিং মেশিনে পাওয়া যায় বিভিন্ন রকমের সুবিধা। এগুলো হলঃ
টপ লোডারঃ
সহজ কথায়, যেসব ওয়াশিং মেশিনে কাপড় উপর দিক দিয়ে ঢোকানো হয় সেগুলোকে টপ লোডার ওয়াশিং মেশিন বলে। নিচে টপ লোডার ওয়াশিং মেশিনের কিছু সুবিধা উল্লেখ করা হলোঃ
- এই ওয়াশিং মেশিন সহজে নষ্ট হয় না।
- টপ লোডার ওয়াশিং মেশিন খুব দ্রুত কাপড় ধুঁতে পারে।
- এগুলো দামে খুব সস্তা হয়।
- ওজনে হালকা হওয়াতে খুব দ্রুত এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সরানো যায়।
- একবার কাপড় দিয়ে মেশিন দিয়ে চালু করে ফেললেও চালু অবস্থাইয় আরও কাপড় দেয়া যায়।
- এটি খুব ভালভাবে কাপড় পরিষ্কার করতে পারে।
ফ্রন্ট লোডারঃ
ফ্রন্ট লোডার ওয়াশিং মেশিন হলো, যে ওয়াশিং মেশিন গুলোতে সামনের দিক থেকে কাপড় ঢোকাতে হয় সেগুলো। নিচে ফ্রন্ট লোডার ওয়াশিং মেশিনের কিছু সুবিধা আলোচনা করা হলোঃ
- এটি কাপড়ের জন্য খুবই ভাল কারণ এটি কাপড়ের গুণমান অনুযায়ী কাপড় ধুইয়ে থাকে।
- খুব কম পানি ব্যবহার করে এই ওয়াশিং মেশিন কাপড় ধোঁয়ার সময়ে।
- হট ওয়াশ করার সময় বিদ্যুৎ কম খরচ করে।
- ফ্রন্ট লোডার ওয়াশিং মেশিন কাপড় ধোঁয়ার সময়ে খুব কম পরিমানে ডিটার্জেন্ট ব্যবহার করেও কাপড়ের দাগ উঠাতে পারে।
- ফ্রন্ট লোডার ওয়াশিং মেশিন পরিচালন খরচ অনেক কম।
কীভাবে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করলে ওয়াশিং মেশিন দীর্ঘস্থায়ী হবে?
ওয়াশিং মেশিন দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য কিছু দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়াশিং মেশিন পরিচালন করতে হবে। এই দিক নির্দেশনা গুলো হলোঃ
১। কাপড় কোন উপাদানের তৈরি সেটি দেখতে হবে। সাধারণত বেশির ভাগ কাপড়ে একটি ট্যাগ পাওয়া যায় সেখানে কাপড়টি কীভাবে পরিষ্কার করতে হবে সেটি বলা থাকে। সেটি জেনে ওয়াশিং মেশিনে দেয়া উচিৎ নতুবা ওয়াশিং মেশিনের ক্ষতি হতে পারে।
২। কাপড় ধুতে দেয়ার আগে ওয়াশিং মেশিনের সেটিংস গুলো ভাল ভাবে নির্বাচন করতে হবে।
৩। ওয়াশিং মেশিনে অতিরিক্ত ডিটার্জেন্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪। ওয়াশিং মেশিনের ভিতরে কাপড় ধোঁয়ার পরে কখনোই দীর্ঘক্ষণ রেখে দেয়া যাবে না। ফলে মেশিনের ভিতরে দূর্গন্ধ ছড়াবে যার ফলে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হবে। এটি কাপড়ের জন্যও ক্ষতিকর এবং মেশিনের জন্যও।
৫। কঠিন দাগের কাপড় মেশিনে দেয়ার আগে আলাদা ভাবে দাগ গুলো ভাবে ধুইয়ে নিয়ে তারপর মেশিনে দেয়া ভাল ফলে মেশিনের উপর প্রেশার কম পড়বে মেশিন দীর্ঘমেয়াদি হবে অনেক বছর।
৬। এক সাথে অনেক গুলো কাপড় দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কেননা বেশি কাপড়ের ফলে মেশিন সঠিক ভাবে ঘুরতে পারবে না ফলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই কম কম কাপড় দেয়া উচিৎ। সর্বোচ্চ ২ কেজি ওজনের কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ধুতে দেয়া ভাল।
৭। ব্যবহারের পর মেইন সুইচ অফ রাখতে হবে কারণ ভোল্টেজ কখনো বেড়ে যায় আবার কমেও যেতে পারে যা ওয়াশিং মেশিনের জন্য বিপদ ডেকে আনতে যথেষ্ট।
ওয়াশিং মেশিনের ভিতরে দুর্গন্ধ হলে কি করণীয়?
ডিটার্জেন্ট ব্যবহারের ফলে ওয়াশিং মেশিনে দুর্গন্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ ডিটার্জেন্ট পাওডারে অনেক ক্ষার যুক্ত থাকে এবং রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি থাকে। কিন্তু দুর্গন্ধ কমাতে ওয়াশিং মেশিনে ২ কাপ লেবুর রস অথবা ভিনেগার দিলেই দুর্গন্ধ কেটে যায়।
ওয়াশিং মেশিনে কি কি ধোয়া যাবে?
ওয়াশিং মেশিনে খুব সহজেই জিন্স, শার্ট, জ্যাকেট, গ্যাবার্ডিন প্যান্ট সহ, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, পর্দা, বাজারে ব্যাগ, পাপোশ, কাপড়ের জুতা, মাউস প্যাড, রান্নাঘরের সরঞ্জাম, যেমন- ওভেনের মুখের রাবারব্যান্ড, টেবিল ম্যাট, খেলার সরঞ্জার, যেমন- টুপি, গ্লাভস, প্যাড, হ্যান্ডব্যান্ড ইত্যাদিও ধুইয়ে ফেলা যাবে দ্রুত।