ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কেনাকাটা
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হলো আধুনিক ইলেকট্রিক ডিভাইস যা শোষণ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে মেঝে, সোফা, বেড, এবং অন্যান্য পৃষ্ঠতল থেকে ময়লা অপসারণ করে থাকে। ভ্যাকুয়াম ক্লিনারগুলোতে, ইলেকট্রিক মোটরের মাধ্যমে শোষণ সিস্টেম নির্মাণ করা হয় এবং শোষণ সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়ন্ত্রণ প্যানেল যুক্ত থাকে। বর্তমানে কম দামে প্যানাসনিক, ফিলিপস, হিটাচি, শাওমি, শার্প, এবং বিভিন্ন চায়না ব্র্যান্ডের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে কয় ধরনের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার পাওয়া যায়?
সাইজ, নির্মিত প্রযুক্তি, এবং কার্য প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে কয়েক ধরনের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বাংলাদেশে পাওয়া যায়। বিস্তারিত বর্ণনা করা হলঃ
হ্যান্ড-হেল্ড ভ্যাকুয়াম ক্লিনারঃ হ্যান্ড-হেল্ড ভ্যাকুয়াম ক্লিনারগুলো তুলনামূলক ছোট হয়ে থাকে ফলে যেকোনো জায়গায় সহজে বহনযোগ্য। এই ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মাধ্যমে রুমের ছোট কর্নার গুলো সহজেই পরিষ্কার করা যায়। এমনকি সোফা বা গাড়ির সিট কভারের কর্নার জমে থাকে ধুলা ও ময়লা সহজেই পরিষ্কার করা যায়। হ্যান্ড-হেল্ড ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সাধারণত পোর্টেবল ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবেও পরিচিত। তাছাড়া, বেশিরভাগ হ্যান্ড-হেল্ড ভ্যাকুয়াম ক্লিনার রিচার্জেবল হয়ে থাকে ফলে পরিষ্কার করার সময় ইলেকট্রিক কোর্ডের সাথে তার যুক্ত রাখার প্রয়োজন হয় না। এবং, হ্যান্ডহেল্ড ভ্যাকুয়াম ক্লিনার আকারে ছোট এবং ছোট জায়গায় সংরক্ষণ করা যায়। বিশেষ করে ঘড়ের মধ্যে পোষা প্রানি পালন করলে বেড, সোফা, এবং ঘড়ের বিভিন্ন কর্নার থেকে এগুলোর পশম অপসারণ করার জন্য হ্যান্ড-হেল্ড ভ্যাকুয়াম ক্লিনার অধিক ব্যবহার করা হয়।
ক্যানিস্টার ভ্যাকুয়াম ক্লিনারঃ বাংলাদেশেসহ বিশ্বেব্যাপী ক্যানিস্টার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার অধিক ব্যবহার করা হয়। ক্যানিস্টার ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের চাকাযুক্ত বডি থাকে এবং একটি শোষণ করে এমন হসপাইপ থাকে। যাতে হসপাইপ এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ময়লা ও ধূলাবালি শোষণ করা যায় এবং তা গিয়ে বডিতে থাকা নির্দিষ্ট পলিথিনে জমা হয়। ক্যানিস্টার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সাধারণত বাসা বাড়ি অথবা অফিসের মেঝে পরিষ্কার করার জন্য ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয়। এই ভ্যাকুয়াম ক্লিনার গুলোতে উন্নত মানের শোষণ সিস্টেম এবং প্রবাহ হার যুক্ত থাকে ফলে ছোট থেকে বড় আকৃতির ময়লা সহজেই অপসারণ করা যায়। ক্যানিস্টার ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।
ভার্টিকাল ভ্যাকুয়াম ক্লিনারঃ ভার্টিকাল ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের বাকেট এবং হসপাইপ একসাথে যুক্ত থাকে। এই ভ্যাকুয়াম ক্লিনারগুলোর কন্ট্রোল সিস্টেম সহজ এবং দেখতে আকর্ষণীয়। ভার্টিকাল ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সাধারণত আপরাইট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবেও পরিচিত। বেশিরভাগ ভার্টিকাল ভ্যাকুয়াম ক্লিনার রিচার্জেবল হয়ে থাকে ফলে ময়লা পরিষ্কার করার সময় ইলেকট্রিক তার সংযুক্ত রাখার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া, ভার্টিকাল ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের দাম তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।
রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনারঃ রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দেখতে গোল চাকতির মত হয়ে থাকে। এই ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নিজে নিজেই পরিষ্কার করার কার্যক্রম পরিচালন করতে পারে। সাধারণত রোবোটিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনারগুলো একটি রোলিং ব্রাশের সাথে এক বা দুটি স্পিনিং ব্রাশ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ঘড় বিচিরন করে এবং ময়লা, ধূলাবালি, ও পশুর পশম অপসারণ করে। রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনারগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত থাকে ফলে ব্যবহারকারীদের কাছে অধিক জনপ্রিয়।
বাংলাদেশে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের দাম কত?
বর্তমানে ছোট থেকে বড় বিভিন্ন সাইজের ও আধুনিক প্রযুক্তিসহ ভ্যাকুয়াম ক্লিনার পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের দাম ৮০০ টাকা থেকে শুরু যা একটি রিচার্জেবল হ্যান্ড-হেল্ড ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। ক্যানিস্টার ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের দাম ৮,৫০০ টাকা থেকে শুরু যা প্রতিবারে ২০-লিটার ডাস্ট একসাথে অপসারণ করতে পারে। অন্যদিকে, ভার্টিকাল এবং রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের দাম ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে থাকে। তাছাড়া, বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্লোর সুইপার পাওয়া যায় যার দাম তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বর্তমানে অতীব প্রয়োজনীয় ডিভাইস হয়ে উঠেছে। তাই, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কেনার আগে অবশ্যই কিছু বিশেষ বিষয় দেখে নিতে হবে।
১। বাকেট ক্যাপাসিটিঃ যে পরিমাণ ময়লা একসাথে পরিষ্কার করার প্রয়োজন হবে সে অনুপাতে নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটির বাকেট যুক্ত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নির্বাচন করতে হবে। কেননা প্রয়োজনের তুলনায় ছোট বাকেট যুক্ত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কেনা হলে, তাহলে ঘড় পরিষ্কার করার সময় ঘন ঘন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ভরাট হয়ে যাব, ফলে ঘন ঘন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার পরিষ্কার করতে হবে যাতে সময় ও শ্রম উভয় বেশি প্রয়োজন হবে।
২। মোটর পাওয়ারঃ ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মোটর পাওয়ারের উপর নির্ভর করে, এর শোষণ সিস্টেম কতটা শক্তিশালী হবে। আর ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের শোষণ সিস্টেমের উপর নির্ভর করে কতটা দ্রুত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ঘড়কে পরিষ্কার করতে পারবে। তাই, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কেনার আগে অবশ্যই মোটর পাওয়ার বিবেচনা করতে হবে।
৩। ফিল্টার সিস্টেমঃ ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে সিঙ্গেল লেয়ার হেপা ফিল্টার ও ডাবল লেয়ার হেপা ফিল্টার সহ বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার সিস্টেম যুক্ত থাকে। ফলে, পরিষ্কার করার সময় বাতাসে উড়তে থাকে পরাগ, পোষা প্রাণীর খুশকি, এবং ধূলিকণার মতো কণা অপসারণ করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই, প্রয়োজন অনুসারে নির্দিষ্ট ফিল্টার সিস্টেম যুক্ত ভ্যায়াকুম ক্লিনার সংগ্রহ করতে হবে।
৪। তারের দৈর্ঘ্যঃ যেহেতু বৈদ্যুতিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনারগুলি নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক সকেটে যুক্ত হয়ে চালিত হয়, তাই বাড়ির সমস্ত কোণ পরিষ্কার করার জন্য নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের তার যুক্ত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নির্বাচন করতে হবে। তবে, বৈদ্যুতিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের সাথে লম্বা দৈর্ঘের তার সম্পন্ন মাল্টি সকেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫। ব্যাকআপ সময়ঃ রিচার্জেবল ভ্যাকুয়াম ক্লিনারগুলো কত সময় ব্যাকআপ প্রদান করবে এবং কত সময়ে পুনরায় রিচার্জ হতে প্রয়োজন হবে তা বিবেচনায় রিচার্জেবল ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নির্বাচন করতে হবে।
কিভাবে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করব?
- স্টেপ ১ঃ যেকোনো পৃষ্টতল ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মাধ্যমে পরিষ্কার করার আগে ডাস্টার জাতীয় জিনিস দিয়ে ময়লা বা ধূলা আলগা করে নিতে হবে।
- স্টেপ ২ঃ প্রয়োজন অনুসারে ফার্নিচার পাশে সরিয়ে নিন যাতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সহজেই ব্যবহার করা যায়।
- স্টেপ ৩ঃ ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহারের আগে বড় ও শক্ত ময়লা অপসারণ করে নিন। কেননা বড় ও শক্ত ময়লা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে ভিতরে গেলে এর মোটরের ক্ষতি হতে পারে।
- স্টেপ ৪ঃ ভ্যায়াকুম ক্লিনারের ব্যাগ সঠিক ভাবে যুক্ত রয়েছে কিনা চেক করুন।
- স্টেপ ৫ঃ প্রয়োজন অনুসারে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের সাথে নির্দিষ্ট আকারের নজেল ব্যবহার করতে হবে। ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের নজেলটি ভালোভাবে যুক্ত করে নিন।
- স্টেপ ৬ঃ ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিন এবং সুইচ চালু করুন। আর রিচার্জেবল ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ চার্জ করে নিন এবং সুইচের মাধ্যমে চালু করুন।
- স্টেপ ৭ঃ এখন, ধীর গতিতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের সাহায্যে পরিষ্কার করার কার্যক্রম চালু করুন। কিছু সময় পর পর দেখতে হবে যে ভ্যাকুয়াম ক্লিনাররে ব্যাগ ভর্তি হল কিনা।
- স্টেপ ৮ঃ ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের ডাস্ট ব্যাগ ভর্তি হয়ে গেলে তা পরিষ্কার করতে হবে।