এখন যেহেতু বাংলাদেশে টিভির দাম সবচেয়ে কম তাই এটি শুধুমাত্র নিয়মিত বিনোদনের জন্য নয় বরং বড় পর্দার সুবিধা, গেমিং এবং বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের বাজারে সস্তার স্মার্ট টিভি আবির্ভূত হওয়ার পর স্মার্ট ফিচারগুলো এখন একটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করেছে।
এখন টিভি ইন্টারনেট, পেন ড্রাইভ এবং বিনোদন এবং শোকেসের জন্য উচ্চ গতির পোর্টের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। এছাড়াও, পরবর্তী প্রজন্মের টিভিতে ভয়েস সহকারী, ৪-৮কে রেজোলিউশন, ডলবি সাউন্ড, ওয়াইফাই-৬ এবং থিয়েটারের মতো স্ক্রিন রয়েছে। তবে বাংলাদেশে টিভি কেনার সময় এমন টিভি কিনুন যেটি আপনার প্রয়োজন মেটায় যাতে কোনো অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ না হয়।
Read more
টিভি কেনাকাটা
একটি টিভি আপনার বাড়িতে বিনোদনের মাত্রা অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু বাজারে এত এত টিভির মধ্যে আপনার মনের মতো টিভিটি খোঁজে পেতে হলে আপনাকে টিভির ফিচার এবং বাংলাদেশে টিভির দাম সম্পর্কে কিছু ধারনা থাকা আবশ্যক। নিচে টিভি সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হল যা আপনার বাসার জন্য কাঙ্ক্ষিত টিভিটি খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
বিনোদন ছাড়াও আর কি কাজে টিভি ব্যবহৃত হয়?
- সিসি ক্যামেরা এর ফুটেজ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য বর্তমানে টিভির ব্যবহার বেশ বাড়ছে করেন এটি মনিটরের তুলনায় বেশ সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
- তুলনামূলক কম দামের কারনে অনেক অফিসে মিটিং রুমের জন্য প্রজেক্টর এর পরিবর্তে টিভি ব্যবহার করা হয়।
- বিভিন্ন সুপারমার্কেট, সুপার শপ, রেঁস্তোরা ইত্যাদি স্থানে বিজ্ঞাপনের জন্য টিভি ব্যবহার করা হয়।
- গেমিংয়ের জন্য এখন বড় স্ক্রিনের টিভির বেশ চাহিদা আছে।
বাংলাদেশে টিভির দাম কত?
বাংলাদেশে টিভির দাম ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১,৩০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয় যেখানে ওয়াইফাই, এইচডি+ এবং স্মার্ট সুবিধা রয়েছে৷ টিভি কেনার সময় মনে রাখবেন সাধারণত ব্র্যান্ড, স্ক্রিনের আকার, রেজোলিউশন এবং স্মার্ট বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশে, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল প্যানেল ওয়ারেন্টি এবং টিভির দাম এতে অনেক পরিবর্তিত হতে পারে যা বিডি স্টলে পার্টস ওয়ারেন্টি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই টিভি কেনার আগে কোন ওয়ারেন্টিতে কি আছে ভালভাবে জেনে নিন। প্রায় সমস্ত টিভিতে সার্ভিস ওয়ারেন্টি রয়েছে তবে এটি বিবেচনা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় কারন পার্টস এর দাম গ্রাহকেই দিতে হবে। বাজেট যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে টিভি কেনার সময় এমন একটি টিভি কেনা উচিত যা ভালো মানের ছবি প্রদর্শন করে।
বাংলাদেশে কোন প্রযুক্তির টিভি পাওয়া যায়?
টেলিভিশনে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেমন সিআরটি, প্লাজমা, এলসিডি, এলইডি, আইপিএস, কিউএলইডি এবং ওএলইডি। বর্তমানে সর্বাধিক জনপ্রিয় প্যানেল প্রযুক্তি হল এলইডি, ওএলইডি, এবং কিউএলইডি।
- সিআরটি টিভিঃ সিআরটি টিভি পুরানো দিনে বাংলাদেশে ঘরোয়া বিনোদনের জন্য একটি আদর্শ টিভি ছিল। এটি এখনও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সাধারণত দেখা যায়। অধিকন্তু, নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত সিআরটি টিভি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। সিআরটি টিভি তাদের বৃহৎ এবং ভারী ফর্ম ফ্যাক্টরের জন্য সুপরিচিত। তাছাড়া, যেহেতু সিআরটি টিভি ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লের জন্য অ্যানালগ সিগন্যাল ব্যবহার করে, তাই পাওয়ার খরচ কিছুটা বেশি। তবে, সাধারণত পুরানো সিআরটি টিভি ব্যক্তিগত বিক্রেতাদের কাছ থেকে খুব কম খরচে কেনা যায়।
- এলসিডি টিভিঃ এলসিডি প্রযুক্তির টিভি সাধারণত পুরানো সিআরটি টিভির তুলনায় বেশি শক্তি-দক্ষ এবং পরিবেশবান্ধব। যাইহোক, এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে শেষ হতে চলেছে এবং বর্তমানে এলসিডি শুধুমাত্র কিছু পোর্টেবল টিভিতে দেখা যায়। বাংলাদেশে এলসিডি টিভির দাম সাধারণত ৫,০০০ টাকার নিচে।
- আইপিএস টিভিঃ ইন-প্লেন সুইচিং প্রযুক্তি মূলত এলসিডি ডিসপ্লে প্যানেলের মতোই। যাইহোক, আইপিএস প্যানেল প্রথাগত এলসিডি প্যানেলের চেয়ে ভাল ছবির গুণমান সরবরাহ করে। বাংলাদেশে আইপিএস প্যানেল টিভির প্রাপ্যতা এখন বিরল কারণ এলইডি টিভি এই জায়গাটি দখল করেছে।
- এলইডি টিভিঃ এলইডি টিভিতে "লাইট এমিটিং ডায়ডস" বা এলইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় যা পর্দাকে বেশি আলোকিত করে থাকে। এলইডি টিভি স্লিম, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং অধিকতর উজ্জ্বল আলো প্রদান করে। বর্তমানে, বাংলাদেশে এলইডি টিভির দাম সর্বনিম্ন ৬,০০০ টাকা এবং বাংলাদেশে স্মার্ট এলইডি টিভি কিনতে আপনাকে অতিরিক্ত ৪০% বেশি টাকা যোগ করতে হবে।
- কিউএলইডি টিভিঃ কিউএলইডি টিভি এর দাম ওএলইডি এর থেকে কিছুটা কম এবং এর আয়ুষ্কাল দীর্ঘ, উজ্জ্বল, চোখের জন্য ভালো এবং গেমিংয়ের জন্য ভালো। দিনে দিনে কিউএলইডি টিভি লেড টিভিকে প্রতিস্থাপন করছে।
- ওএলইডি টিভিঃ ওএলইডি হল সর্বশেষ আবিষ্কৃত এইচডি প্রযুক্তি যা অধিকতর উজ্জ্বল আলোর সাহায্যে বাস্তবধর্মী ছবি প্রদর্শন করে। ওএলইডি টিভি এর কন্ট্রাস্ট রেশিও অনেক বেশি। ওএলইডি টিভি বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে নতুন তাই দাম এলইডি টিভির তুলনায় একটু বেশি। যাইহোক, সময়ের সাথে সাথে ওএলইডি টিভির দাম অনেকের জন্য সাশ্রয়ী হচ্ছে।
- প্লাজমা টিভিঃ এলসিডি এবং এলইডি টিভির বিপরীতে, প্লাজমা টিভি একটি ভিন্ন ধরনের ডিসপ্লে প্রযুক্তি অফার করে। এই প্রযুক্তির টিভি প্রদর্শনগুলি সাধারণত গ্যাসে ভরা ছোট, সিল করা কোষগুলির একটি ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করে। ফলস্বরূপ, প্লাজমা টিভি সাধারণত অন্ধকার ঘরে এলসিডি টিভির চেয়ে ভাল ভিজ্যুয়াল সরবরাহ করে।
কোন টিভি সাইজ আপনার রুমের জন্য উপযুক্ত?
টিভির সঠিক আকার নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আপনার বাজেটকে প্রভাবিত করবে। এছাড়াও, আপনি যদি সঠিক আকার নির্বাচন না করেন তবে এটি আপনার চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। সুতরাং, সর্বোত্তম দেখার দূরত্ব এবং টিভির আকার একসাথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনি বিডিস্টল টিভি সাইজ ক্যালকুলেটর থেকে একটি ধারণা পেতে পারেন।
- ২৪ ইঞ্চি টিভিঃ ২৪ ইঞ্চি টিভি সাধারণত বেডরুম এর মত ছোট জায়গায় ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত যেখানে আপনি স্ক্রিন খুব কাছাকাছি অবস্থান থেকে দেখে থাকেন। এই সাইজের টিভি সর্বনিম্ন ১.২ ফিট দূরত্ব এবং সর্বোচ্চ ৩ ফিট দূরত্ব থেকে দেখা উত্তম।
- ৩২ ইঞ্চি টিভিঃ ৩২ ইঞ্চি টিভি ছোট থেকে মাঝারি আকারের রুমের জন্য জনপ্রিয় পছন্দ। এই সাইজের টিভি আকর্ষণীয় দেখার অভিজ্ঞতা প্রদান করে থাকে। এই সাইজের টিভি মিনিমাম ৩ ফিট থেকে সর্বোচ্চ ৭ ফিট দূরত্বে অবস্থান করে দেখা উচিত, যা আপনার চোখকে নিরাপদ রাখতে সহায়ক হবে।
- ৪০ ইঞ্চি টিভিঃ ৪০ ইঞ্চি টিভি মোটামুটি বড় স্ক্রীন সাইজ সরবারহ করে থাকে, যা মাঝারি আকারের রুমের জন্য উপযুক্ত। এই সাইজের টিভি দিয়ে যেকোনো ভিডিও বা খেলাধুলা দেখার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এই সাইজের টিভি দেখার জন্য নিরাপদ দূরত্ব হচ্ছে ৪.৯২ ফিট।
- ৪৩ ইঞ্চি টিভিঃ ৪৩ ইঞ্চি টিভি সাধারণত ছোট এবং মাঝারি উভয় সাইজের রুমের জন্য উপযুক্ত। এই সাইজের টিভি সাধারণত স্ক্রিন সাইজ এবং দেখার দূরত্ব এর মধ্যে ভালো ভারসাম্য প্রদান করে থাকে। ৪৩ ইঞ্চি টিভি সাধারনত ৪ ফিট থেকে ৯ ফিট দূরত্বে দেখা উত্তম।
- ৫০ ইঞ্চি টিভিঃ মাঝারি পরিসরের জায়গার জন্য ৫০ ইঞ্চি টিভি আদর্শ টিভি। এই সাইজের টিভি আরও বেশি সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা দিয়ে মাল্টিমিডিয়া ভিডিও দেখা বা গেম খেলার জন্য দুর্দান্ত। ৫০ ইঞ্চি সাইজের টিভি মিনিমাম ৫ ফিট থেকে ১০.৫ ফিট দূরত্ব থেকে দেখা উত্তম।
- ৫৫ ইঞ্চি টিভিঃ ৫৫ ইঞ্চি টিভি মূলত বসার ঘর বা বড় পরিসরের জায়গার জন্য উপযুক্ত। এটি বেশ বড় সাইজের স্ক্রিন সরবারহ করে থাকে, যা দিয়ে পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব মিলে টিভি শো এবং বৈশ্বিক খেলাধুলার টুর্নামেন্ট দেখার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এই সাইজের টিভি সাধারণত ৫.৫ ফিট থেকে ১১.৫ ফিট দূরত্বে দেখা উচিত।
- ৬৫ ইঞ্চি টিভিঃ এই সাইজের টিভি বড় পরিসরে জায়গা বিশেষ করে অফিস, হল রুম কিংবা রেস্টুরেন্টের মত জায়গা ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত, যা আপনাকে নিমগ্ন দেখার অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। ৬৫ ইঞ্চি টিভি হোম থিয়েটার হিসেবে ব্যবহারের জন্য আদর্শ টিভি। এই সাইজের টিভি মিনিমাম ৬.৫ ইঞ্চি থেকে ১৩.৫ ইঞ্চি দূরত্বে দেখতে হবে।
- ৭৫ ইঞ্চি টিভিঃ ৭৫ ইঞ্চি টিভি সাধারণত হলরুম বা ডেডিকেটেড হোম থিয়েটার সেটআপের জন্য উপযুক্ত। এটি আকর্ষণীয় সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা প্রদান করে থাকে। এই সাইজের টিভি ৭.৫ ফিট থেকে ১৬ ফিট দূরত্বে অবস্থান করে দেখা উত্তম। উন্নত ফিচার এবং অন্যান্য সুবিধা সমূহের উপর নির্ভর করে ৭৫ ইঞ্চি টিভির দাম বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে।
- ৮৫ ইঞ্চি টিভিঃ এই সাইজের টিভি বেশ বড় সাইজের স্ক্রীন সরবারহ করে থাকে, যা অডিটোরিয়াম, কনফারেন্স রুম বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য আদর্শ। ৮৫ ইঞ্চি টিভি খুবই আকর্ষণীয় ভিজ্যুয়াল প্রদান করে। পাশাপাশি, এই সাইজের টিভি অনেকটা থিয়েটারের মতো পরিবেশ প্রদান করে থাকে।
কোন স্মার্ট টিভি বৈশিষ্ট্যগুলি গুরুত্বপূর্ণ?
পুরানো টিভি কেবল টিভি স্টেশন থেকে পাঠানো শব্দ এবং ছবি দেখায়। টেলিভিশন এখন শুধু টেলিকাস্ট দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। টিভিকে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করে ভিডিও নেটওয়ার্ক যেমন ইউটিউব, নেটফ্লিক্স ইত্যাদি উপভোগ করা যায়। তবে কিছু টিভিতে ইউএসবি সুবিধা রয়েছে যাতে পেনড্রাইভ বা হার্ডডিস্ক ব্যবহার করে ভিডিও ফাইল চালানো যায়। ওয়াইফাই, ইউএসবি, ল্যান এবং স্মার্ট ওএসের মতো স্মার্ট কানেক্টিভিটি সহ স্মার্ট টিভি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে ওয়েব ব্রাউজিং, ইউটিউবের মতো ওয়েব ভিডিও, সামাজিক নেটওয়ার্কিং এবং অনলাইন গেমিং উপভোগ করার জন্য। বাংলাদেশে স্মার্ট ওএস দ্বারা চালিত কিছু জনপ্রিয় স্মার্ট টিভি হলঃ
- অ্যান্ড্রয়েড টিভিঃ অ্যান্ড্রয়েড টিভি ওএস বিশেষভাবে অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মের উপর ভিত্তি করে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ওপেন সোর্স তাই অনেক জনপ্রিয় নির্মাতা অ্যান্ড্রয়েড টিভি পরিবারের অংশ হিসেবে এই টিভি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে। চায়না স্মার্ট টিভি এই অ্যান্ড্রয়েড টিভি ওএস ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।
- টাইজেন টিভিঃ এই টাইজেন অপারেটিং সিস্টেমটি স্যামসাং মালিকানাধীন টিভি ওএস। অনেক স্যামসাং মডেল এই টাইজেন ব্যবহার করে এবং বিশ্বের মোট স্মার্ট টিভির ৩৫% টিজেন। যেহেতু স্যামসাং কোম্পানি এটিকে স্যামসাং স্মার্ট টিভি এর জন্য ডেভেলপ করেছে তাই টাইজেন ওএস অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় আরও ভালো মসৃণ এবং নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে।
- ওয়েবওএস টিভিঃ এই ওয়েবওএসটি এলজি দ্বারা তৈরি তাই এটি এলজি ওয়েবওএস নামে সুপরিচিত। ওয়েবওএস টিভির বিভিন্ন আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম। শুধু তাই নয়, ওয়েবওএস টিভি তার প্রতিদ্বন্দ্বী অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে খুব মসৃণভাবে চলে। এলজি স্মার্ট টিভি ওয়েবওএস অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা চালিত হয়।
স্মার্ট টিভির সর্বশেষ দাম কত?
বর্তমানে স্মার্ট টিভির দাম এখন অনেক কম কারন অনেক কোম্পানি এটি তৈরী করছে। স্মার্ট টিভির সর্বশেষ দাম বাংলাদেশে ৬,৯৯০ টাকা থেকে যেটি ফুল এইচডি রিসোলিউশন দিবে আর স্মার্ট টিভির সকল সুবিধা থাকছেই। স্মার্ট টিভির দাম যত বেশি তত বেশি ভালো মানের ছবি এবং লেটেস্ট ফিচার সাধারণত অন্তর্ভুক্ত থাকে। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভিতে উন্নত মানের ছবি, শব্দ এবং পারফরম্যান্স রয়েছে তবে দাম কমপক্ষে ২০,০০০ টাকা। তাই, আপনার প্রয়োজন অনুসারে স্মার্ট টিভি কিনুন।
স্মার্ট টিভি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কি কি থাকা জুরুরি?
- স্মার্ট টিভিতে গেমিং, ভিডিও স্ট্রিমিং সহ অন্যান্য অনলাইন পরিষেবা অ্যাক্সেস করার জন্য নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।
- পাশাপাশি মসৃণ ভাবে ভিডিও স্ট্রিমিং এবং গেমিং করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইথ থাকতে হবে।
- তারের ঝামেলা এড়াতে প্রায় সকল স্মার্ট টিভিতে ইন্টারনেট ক্যাবল সংযোগের পাশাপাশি হোম নেটওয়ার্কে সংযোগ দেওয়ার জন্য ওয়াইফাই সংযোগ সুবিধা রয়েছে। তাই, প্রয়োজনে ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করতে পারেন।
- তাছাড়া, স্মার্ট টিভিতে ইন্টারনেট সংযোগের পাশাপাশি অ্যাপ ডাউনলোড করা, গেমিং এবং ভিডিও স্ট্রিমিং করার জন্য একাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে।
- স্মার্ট টিভি দেখার পাশাপাশি প্রয়োজনে সফটওয়্যার এবং ফার্মওয়্যার আপডেট করতে হবে।
কোন টিভি রেজোলিউশন যথেষ্ট?
- ৭২০পি টিভিঃ এটি এইচডি রেজোলিউশন নামেও পরিচিত এবং একসময় এইচডি টিভি স্ট্যান্ডার্ড ছিল কিন্তু এখন শেষ হতে চলেছে। এই ৭২০পি অন্তত ১২৮০ x ৭২০ পিক্সেল রেজোলিউশন প্রদান করে।
- ১০৮০পি টিভিঃ এটিকে ফুল এইচডি টিভিও বলা হয় যা ২ মিলিয়ন পিক্সেল রেজোলিউশন সরবরাহ করে। যেকোনো ভিডিও দেখা আরও তীক্ষ্ণ, এবং ৭২০পি রেজোলিউশনের চেয়ে আরও বিশদ প্রদান করে। ফুল এইচডি এখন বাংলাদেশে সাধারণ এবং বাংলাদেশে ফুল এইচডি টিভির দাম ১০,০০০ টাকার কম। যাইহোক, বর্তমানে বাংলাদেশে কিছু ফুল এইচডিপ্লাস টিভি সামান্য বেশি টাকায় পাওয়া যায় যার রেজোলিউশন ১০৮০পি এর বেশি কিন্তু ৪কে এর কম।
- ৪কে টিভিঃ এই রেজোলিউশনটি ৩৮৪০ x ২১৬০ পিক্সেল সরবরাহ করে এবং ৪কে টিভি ১০৮০পি এর থেকে ৪ গুণ বেশি পিক্সেল অফার করে। ফলস্বরূপ, এটি যেকোনো ছবি বা ভিডিও দেখার জন্য অতি-তীক্ষ্ণ, প্রাণবন্ত মানের সরবরাহ করে। প্রযুক্তি এবং দামে ভারি হ্রাসের সাথে সাথে ৪কে টিভি বাংলাদেশে একটি ডি-ফ্যাক্টো স্ট্যান্ডার্ড হয়ে উঠছে।
- ৮কে টিভিঃ ৮কে টিভি উন্নত ডিসপ্লে প্রযুক্তি দ্বারা গঠিত যা প্রায় 33 মিলিয়ন পিক্সেল সরবরাহ করে। এই রেজোলিউশন টিভির সাহায্যে খেলাধুলা, টিভি শো সহ যেকোনো ভিডিও দেখা আকর্ষণীয় এবং বাস্তবসম্মত দেখায়। নতুন প্রযুক্তি এবং উন্নত বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশে ৮কে টিভির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
বাড়তি খরচ কি কি?
টিভি কেনার পর কিছু বাড়তি খরচ বিবেচনা করা উচিত যেমন
- বর্তমানের টিভিগুলো ফ্ল্যাট প্যানেল প্রজুক্তির হওয়ায় বেশ স্লিম এবং বেশির ভাগ ব্যবহারকারীরা টিভি দেওয়ালে সেট করে ব্যবহার করে। তাই, টিভির সাথে ওয়াল ব্রেকেট আছে কিনা তা দেখতে হবে আর যদি না থাকে সেক্ষেত্রে টিভির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন একটি ওয়াল ব্রেকেট কিনতে হবে।
- টিভি ওয়ালে সেট করে ব্যবহারের পরিবর্তে টিভি ট্রলির উপর টিভি সেট করে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই, টিভিরুমের অভ্যন্তরীণ ডিজাইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ টিভি ট্রলি কিনতে হবে।
- ল্যাপটপ বা কম্পিটারের সাথে টিভি সংযুক্ত করার প্রয়োজন হলে টিভির রেজোলিউশন অনুসারে এইচডিএমআই ক্যাবল সংগ্রহ করতে হবে।
কোন ফিচারসমূহ উচ্চ মানের টিভি দেখার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে?
একটি টিভি কেনার সময় আপনার দেখার অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য নীচের অংশগুলিও গুরুত্বপূর্ণ।
- সাউন্ড কোয়ালিটিঃ অডিও আউটপুট কতটা স্পষ্ট তা বিবেচনায় টিভি নির্বাচন কবলে ভাল হয়। বর্তমানে, টিভির মডেল অনুযায়ী ডলবি সাউন্ড, ডুয়াল স্পিকার, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে সাউন্ড যেন পরিষ্কার হয় সেটিই প্রধান বিবেচনায় রাখতে হবে অন্যথায় আপনাকে আরও ভাল শব্দের জন্য টিভি সাউন্ডবার কিনতে হবে।
- রিফ্রেশ রেটঃ রিফ্রেশ রেট সাধারণত এলসিডি এবং এলইডি টিভিতে দেয়া হয়। এটি যত বেশি হবে ভাল। রিফ্রেশ রেট হল প্রতি সেকেন্ডে কতগুলো ইমেজ চালনা করতে সক্ষম বা দেখাতে সক্ষম তার পরিমান। সুতরাং, ৬০এইচজেড ফ্রেম রেট মানে প্রতি সেকেন্ডে ৬০টি ইমেজ দেখানোকে বোঝানো হয়। এটি তখনই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে যখন আপনি কোনও ফাস্ট অ্যাকশান দেখেন। যেমন গেমস, অথবা অ্যাকশান মুভি।
- ৩ডি ভিডিওঃ ৩ডি টিভি তে ভিডিও সামঞ্জস্যপূর্ণ ৩ডি গ্লাস দিয়ে দেখা যায়। তবে ভিডিওটিকে অবশ্যই ৩ডি ছবি সমর্থন করতে হবে। তবে বাংলাদেশে এর ব্যবহার এখন একটু কমে গিয়েছে।
- কার্ভড স্ক্রীনঃ কার্ভড টিভি তে বাঁকা ডিজাইনের স্ক্রিন রয়েছে যা সমস্ত কোণ থেকে দেখতে দুর্দান্ত দেখায়।
- পোর্টঃ আপনার টিভিটিতে এইচডিএমআই পোর্ট প্রয়োজন হতে পারে বিভিন্ন ডিভাইস সংযুক্ত করার জন্য যেমন এ / ভি রিসিভার, ব্লু-রে প্লেয়ার বা গেমিং কনসোলে। কাজেই সর্বশেষ এইচডিএমআই সুবাধাযুক্ত টিভি কিনুন।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় টিভি ব্র্যান্ড কি কি?
যদি আপনার বাজেট কম থাকে তবে চায়না ব্র্যান্ড টিভি নির্বাচন করুন তাহলে আপনি লেটেস্ট ফিচার পাবেন। আপনি যদি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের টিভি কিনতে চান তাহলে আপনি পাবেন অসামান্য কর্মক্ষমতা, স্বচ্ছ ছবি এবং মানসম্পন্ন পণ্য।
- সনি ব্রাভিয়া স্মার্ট টিভি তার দীর্ঘমেয়াদী ব্র্যান্ড মূল্য এবং মানসম্পন্ন পণ্যের জন্য বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়।
- স্যামসাং টিভি সোনি টিভির প্রতিদ্বন্দ্বী তাই স্যামসাং একই মানের বাজারজাত করছে। স্যামসাং ব্র্যান্ড শুধুমাত্র টিভি নয়, হোম অ্যাপ্লায়েন্সের জন্যও খুব জনপ্রিয়।
- এলজি টিভি খুবই শালীন এবং বাংলাদেশের বেশিরভাগই স্মার্ট এলজি টিভি।
- বাংলাদেশে তোশিবা টিভি এর কয়েকটি মডেল পাওয়া যায় এবং কম দামে তোশিবা টিভিও পাওয়া যায়।
- কম দামে এবং অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি সরবরাহ করার জন্য হায়ার টিভি বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় যেখানে অন্যরা এই দামের ভিতর নন-স্মার্ট টিভি দিচ্ছে।
- এমআই টিভি একটি চায়না টিভি ব্র্যান্ড কিন্তু এটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের কম দামের টিভির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
আপনি যদি ইতিমধ্যে সাধারণ টিভি কিনে থাকেন তবে আপনি কী করতে পারেন?
যেহেতু আপনি ইতিমধ্যেই সাধারণ টিভি কিনেছেন তাহলে আপনার টিভি পরিবর্তন করার দরকার নেই আপনি আপনার নিয়মিত টিভিকে স্মার্ট টিভিতে রূপান্তর করতে স্মার্ট টিভি বক্স ব্যবহার করতে পারেন।
অতিরিক্ত টিভি রিমোট পাওয়া যায় কি?
বাংলাদেশে ইউনিভার্সাল টিভি রিমোট সব জায়গায় পাওয়া যায়। যাইহোক, আপনি সঠিক মডেল রিমোটের জন্য আপনার বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।