ট্রাক কেনাকাটা
পন্য পরিবহন এবং লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন হচ্ছে ট্রাক। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য সরবারহের ক্ষেত্রে ট্রাকের ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, পণ্য সরবারহে দক্ষ ডেলিভারি নিশ্চয়তা প্রদান করায় ট্রাক ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে, টাটা, অশোক লেল্যান্ড, আইসার জাম্বু, ইসুজু, ফোটন, মাহিন্দ্রা বোলেরো, টয়োটা, জ্যাক, রানকন সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ট্রাক বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে কি কি ধরণের ট্রাক পাওয়া যায়?
পণ্য ও মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন ধরনের ট্রাক কম দামে বাংলাদেশে পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য ভাবে ব্যবহৃত ট্রাক সমূহ হচ্ছেঃ
পিকাআপ ট্রাকঃ এই ধরণের ট্রাক সাধারণত ছোট সাইজের হয়ে থাকে। এই ধরণের ট্রাক দিয়ে ১-২টন মালামাল বহণ করা যায়। পিকআপ ট্রাক দিয়ে ছোট এবং মাঝারি আকারের জিনিসপত্র যেমন ইলেকট্রনিক্স ও হার্ডওয়্যার সরাঞ্জাম এবং বাসাবাড়ির আসবাবপত্র পরিবহন করা যায়।
ফ্ল্যাটবেড ট্রাকঃ এই ধরনের ট্রাক সাধারণত মাঝারি সাইজের ট্রাক। ফ্ল্যাটবেড ট্রাকের সাইজ লম্বায় ২২ ফুট এবং পাশে ৮ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ধরণের ট্রাক দিয়ে প্রায় ১৫-২০ টন মালামাল পরিবহন করা যায়।
ক্রেন ট্রাকঃ ক্রেন ট্রাক সাধারণত ক্যাবল-মাউন্ট করা এবং ক্রেন দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। এই ট্রাক মূলত ভারী মালামাল উপরে তুলতে এবং নীচে নামাতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া, দক্ষভাবে পরিচালনা করার জন্য হুক এবং পর্যাপ্ত ক্যাবল সহ শক্তিশালী স্ট্যান্ড যুক্ত রয়েছে।
সিমেন্ট ট্রাকঃ এই ধরণের ট্রাক কংক্রিট মিক্সার হিসাবে বেশ পরিচিত। সিমেন্ট ট্রাক মূলত বড় কন্সট্রাকশন সাইটে কংক্রিট পরিবহন এবং মিশ্রিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ট্রাকের মধ্যেই কংক্রিট মিশ্রণের জটিল কাজ সম্পাদন করে অতিরিক্ত সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা দূর করে।
ফায়ার ট্রাকঃ ফায়ার ট্রাক সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও রয়েছে। এই ধরনের ট্রাক প্রাথমিকভাবে আগুন নিভানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের ট্রাকে সাইরেন সিস্টেম এবং বিভিন্ন অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে।
রেকার ট্রাকঃ এই ধরনের ট্রাক রাস্তায় ভেঙ্গে যাওয়া, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বা অননুমোদিত এলাকায় পার্ক করা যানবাহন অপসারণের জন্য ব্যবহার করা হয়। রেকার ট্রাক মূলত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।
ট্যাঙ্কার ট্রাকঃ এই ধরনের ট্রাক তেল, পানি এবং রাসায়নিক পদার্থের মতো তরল পরিবহনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তরল পেট্রোলিয়াম পরিবহনের জন্য ট্যাংকার ট্রাক বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়।
ডাম্প ট্রাকঃ ডাম্প ট্রাক বালি, মাটি, নুড়ি এবং পাথরের মতো উপকরণ পরিবহনের আদর্শ ট্রাক। এটি সাধারণত বাসাবাড়ি, ভবন সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে মালামাল পরিবরহনে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়।
ট্রেলার ট্রাকঃ মালবাহী ট্রেলার ট্রাক সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। এই ধরণের ট্রাক দীর্ঘ দূরত্বে ভারী পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যাপক পরিসরে ব্যবহার করা যায়।
কাভারড ট্রাকঃ কাভারড ট্রাক বাংলাদেশে কভার্ড ভ্যান নামেও পরিচিত। এই ধরনের ট্রাক বিশেষ করে খাদ্য সামগ্রী এবং প্রসাধনী পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া, কাভারড ট্রাক দিয়ে ট্রানজিটের সময় পণ্যের শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য কিভাবে সঠিক ট্রাক নির্বাচন করবেন?
ব্যবসায়িক চাহিদাঃ ট্রাক কেনার আগে ব্যবসার নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পেলোড ক্ষমতা, টোয়িং ক্ষমতা এবং কার্গো স্পেস ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। ফলে, যেকোনো দূরত্বে পণ্য বা মালামাল পরিবহন করা যাবে অনায়সে।
ট্রাকের ধরণ যাচাইঃ ব্যবসায়িক চাহিদা অনুযায়ী ট্রাকের ধরণ যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা চাহিদা অনুযায়ী মালামাল পরিবহনে আদর্শ যানবাহন হিসেবে কর্মক্ষমতা প্রদান করবে।
বাজেটঃ উপযুক্ত ট্রাক কেনার জন্য বাজেট নির্ধারণ করা জুরুরি, যা নির্ভরযোগ্য কর্মক্ষমতা প্রদানের পাশাপাশি জ্বালানী সাশ্রয়ী হবে।
অন রোড/অফ রোড ড্রাইভঃ ব্যবসায়িক চাহিদা অনুযায়ী ট্রাক কেনার ক্ষেত্রে অন রোড/ অফ রোডে ভারী মালামাল পরিবহনের জন্য ফোর-হুইল ড্রাইভ, উচ্চতর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এবং উন্নত সাসপেনশন সিস্টেমের সমন্বয়ে তৈরি কিনা তা যাচাই করতে হবে।
সেফটি ফিচারঃ ড্রাইভার এবং মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অ্যান্টি-লক ব্রেক, স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ, ব্লাইন্ড-স্পট পর্যবেক্ষণ, এবং সংঘর্ষ এড়ানো সিস্টেমের মতো উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা ট্রাকে রয়েছে কিনা যাচাই করতে হবে।
টেস্ট ড্রাইভঃ ট্রাক কেনার ক্ষেত্রে একজন দক্ষ চালক দিয়ে পছন্দের ট্রাকটি ড্রাইভ করিয়ে ট্রাকের ইঞ্জিন পাওয়ার, ট্রান্সমিশন অপশন, হ্যান্ডেলিং, আরামদায়ক গ্রিপ সহ অভ্যন্তরীণ অন্যান্য সুবিধাদি ভালো ভাবে যাচাই করতে হবে।
উপরোক্ত বিষয় সমূহ পর্যালোচনা করার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসায়িদের থেকে পরামর্শ, ভবিষ্যৎ ব্যবসার চাহিদা অনুযায়ী পেলোড ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যুক্ত করার মত বিষয় সমূহ যাচাই করে নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে ট্রাকের দাম কত?
বাংলাদেশে ট্রাকের দাম ২৮০,০০০ টাকা থেকে শুরু, যা সাধারণত পিকআপ টাইপের, পাবলিক ইউটিলিটি, ডিস্ট্রিবিউশন এবং জরুরী পরিষেবার মতো অনেক কাজে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে নতুন এবং ব্যবহৃত উভয় কন্ডিশনে ট্রাক পাওয়া যায়। তাছাড়া, ট্রাকের দাম সাধারণত ব্র্যান্ড, মডেল, লোড ক্যাপাসিটি, টাইপ এবং অন্যান্য ফিচার সমূহের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ১০ টনের বেশি ক্যাপাসিটি সম্পন্ন ট্রাক ৮০০,০০০ টাকা থেকে ১,২০০,০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়। এছাড়াও, উচ্চ ক্যাপাসিটি সম্পন্ন এবং মালামাল পরিবহন ব্যাতিত কন্সট্রাকশন সাইটে, রাস্তা মেইন্ট্যানেন্স, ফায়ার সার্ভিস সহ অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের দাম ২,০০০,০০০ টাকা থেকে শুরু।