থার্মোমিটার কেনাকাটা
থার্মোমিটারকে চেনে না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুব কম আছে। বলা যায়, বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ মানুষ থার্মোমিটারের সাথে পরিচিত। থার্মোমিটারের কাজ হলো বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তাপমাত্রা পরিমাপ করে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রযুক্তির থার্মোমিটার পাওয়া যায়। আর এই বিভিন্ন প্রযুক্তির থার্মোমিটার ব্যবহার হয় বিভিন্ন কাজের জন্য। স্বাস্থ্য সচেতনতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বানিজ্যিক এবং গবেষণার কাজে প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী থার্মোমিটার পাওয়া যাচ্ছে বিডি স্টলে।
থার্মোমিটারের দাম কেমন?
বিডিতে দাম নির্ভর করে এটি কোন ধরনের থার্মোমিটার এবং কি কাজ করা হবে এর উপর ভিত্তি করে যেমন সাধারণ জ্বর মাপার জন্য বিডিতে ৮০-১০০ টাকার মধ্যে পারদ থার্মোমিটার পাওয়া যায়। আরেকটু উন্নতমানের থার্মোমিটারের দাম পরবে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকার মত। এছাড়াও টেম্পারেচার মাপার জন্য আছে বিভিন্ন সেন্সর যেগুলোর দাম ২০০ থেকে ১০,০০০ টাকার ভিতর। আর বিভিন্ন ডাটা লগার যেগুলোর দাম প্রায় ২৫০০ টাকা থেকে ১০,৫০০ টাকার মত । এছাড়া ইমেজিং ক্যামেরা আছে যেগুলোর দাম বিডিতে প্রায় একই রকম।
কত ধরনের থার্মোমিটার আছে?
বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন থার্মোমিটারগুলো হলোঃ
- পারদ থার্মোমিটার
- অ্যালকোহল থার্মোমিটার
- স্ট্রিপ থার্মোমিটার
- ডিজিটাল থার্মোমিটার
- টেম্পোরাল আর্টারি থার্মোমিটার
- টাইমপ্যানিক বা কানের থার্মোমিটার
- বেকম্যান থার্মোমিটার
- দ্বি-ধাতব যান্ত্রিক থার্মোমিটার
- এয়ার থার্মোমিটার
- প্রোব থার্মোমিটার
- ইনফ্রারেড থার্মোমিটার
- ডাটা লগার
- থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা
এসকল থার্মোমিটার পরিচালিত হয় বিভিন্ন প্রক্রিয়াতে। এই থার্মোমিটারগুলো কীভাবে কাজ করে এবং কি কি কাজে কোন কোন থার্মোমিটার ব্যবহার হয় এ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা থাকে সঠিক থার্মোমিটার কম দামে কেনা সম্ভব। তাই নিচে এসবের বৈশিষ্ট্য এবং সঠিক কার্যকরিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
পারদ থার্মোমিটারঃ বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত জ্বর মাপার একটি থার্মোমিটার। এই থার্মোমিটার আকৃতিতে সরু হয়ে থাকে। পারদের এই থার্মোমিটার শরীরে ব্যবহার করা ভালো। অনেকেই বাচ্চাদের মুখে প্রবেশ করিয়ে দেয় যা মোটেও উচিত নয় কারণ এর ফলে কিন্তু পারদ থার্মোমিটার সঠিক ভাবে ব্যবহার না করলে হতে পারে বিভিন্ন রোগ। তাই পারদ থার্মোমিটার শরীরে ব্যবহার করতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে এটি ভেঙে গেলে পারদ হাত দিয়ে না ধরে সরিয়ে ফেলতে হবে।
অ্যালকোহল থার্মোমিটারঃ অ্যালকোহল থার্মোমিটারে একটি জৈব তরল গ্লাস বাল্ব যুক্ত থাকে যা দ্বারা এটি শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে পারে। এই থার্মোমিটারকে পারদ থার্মোমিটারের বিকল্প বলে আখ্যায়িত করা হয়। কারণ পারদ থার্মোমিটারের মতোই এর সকল কাজ।
স্ট্রিপ থার্মোমিটারঃ স্ট্রিপ থার্মোমিটার কপালে রাখলে দেখিয়ে দিবে শরীরের সম্ভাব্য তাপমাত্রা। এই থার্মোমিটার গুলো ব্যবহার করা খুবই সহজ। শিশু বা বয়স্কদের জন্য এই থার্মোমিটার বেশি উপযোগী। মনে রাখতে হবে স্ট্রিপ থার্মোমিটার কপালে ব্যবহার করলেই শরীরের সম্ভাব্য তাপমাত্রা দেখাতে পারবে।
ডিজিটাল থার্মোমিটারঃ ডিজিটাল থার্মোমিটার বাংলাদেশে এখন জনপ্রিয় হচ্চে কারন এটি পরিবেশ বান্ধব। এটি বাংলাদেশে ইলেক্ট্রনিক থার্মোমিটার নামেও পরিচিত। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটিতে একটি এলসিডি ডিসপ্লে থাকে। এটি শরীরে ব্যবহার করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শরীরের তাপমাত্রা সংখ্যা এলসিডি ডিসপ্লেতে দেখিয়ে দেয়।
টেম্পোরাল আর্টারি থার্মোমিটারঃ রোগীর কপালে ধরে রাখলে শরীরে থাকা তাপকে ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিমাপ করে। এই থার্মোমিটারগুলো নিখুঁতভাবে তাপমাত্রা পরিমাপ করতে সাহায্য করে। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্কদের জন্য এই টেম্পোরাল আর্টারি বা ইনফ্রারেড থার্মোমিটার জ্বর মাপার খুবই উপযোগী।
টাইমপ্যানিক বা কানের থার্মোমিটারঃ এটি সহজে বহনযোগ্য এবং কানের নির্ভুল তাপমাত্রা প্রদানের জন্য একটি বিশেষ থার্মোমিটার। এই থার্মোমিটারটি ৬ মাসের শিশু হতে বৃদ্ধ পর্যন্ত মানুষ ব্যবহার করতে পারবে। এটির সামনের দিকে একটি নল থাকে যা কানের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে কয়েক মিনিট ধরে রাখলে সঠিক তাপমাত্রাটি এর মাঝে থাকা ডিসপ্লেতে প্রদর্শন করে। এটি ব্যবহারের পর অবশ্যই ভালো ভাবে মুছে রাখতে হবে।
বেকম্যান থার্মোমিটারঃ মূলত একটি জিনিসের তাপমাত্রার সাথে আরেকটি জিনিসের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যবহার হয়। বেকম্যান ডিফারেনশিয়াল থার্মোমিটার বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ল্যাব, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মেডিসিন বিভাগ ইত্যাদি জায়গায় এর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
দ্বি-ধাতু যান্ত্রিক থার্মোমিটারঃ কোনো ধাতব বস্তুকে তাপ দিলে সেটি তার আকৃতি পরিবর্তন করে ফেলে। আর এই তাপ দিতে হয় ভিন্ন ধাতব এর জন্য ভিন্ন পরিমাপে। এই পরিমাপটি যে যন্ত্রের সাহায্যে দেয়া হয় তাকে দ্বি-ধাতব যান্ত্রিক থার্মোমিটার বলে। এই থার্মোমিটার বাণিজ্যিক কাজে বাংলাদেশে ব্যবহার হয়ে থাকে।
এয়ার তাপমাত্রা থার্মোমিটারঃ এই ধরনের থার্মোমিটার দিয়ে বাতাসের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়। এই থার্মোমিটার একটি এলাকার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে। এটিতেও পারদ ব্যবহার করা হয় তবে বর্তমানে ডিজিটাল এয়ার থার্মোমিটার পাওয়া যায়।
প্রোব থার্মোমিটারঃ প্রোব থার্মোমিটার হল এমন একটি থার্মোমিটার যার মাথায় সূক্ষ্ম ধাতব স্টেম রয়েছে এবং এটি যেকোন খাবারের ভিতর প্রবেশ করানো যেতে পারে। প্রোব থার্মোমিটার ব্যবহার করে খাবারের সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা যায় ফলে যাদের খাবারের তাপমাত্রায় অসুস্থতার ঝুঁকি আছে তারা এটি নির্ণয় করে ভাল থাকতে পারেন।
ইনফ্রারেড থার্মোমিটারঃ ইনফ্রারেড থার্মোমিটার হল একটি থার্মোমিটার যা ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প দূরত্বের কোন বস্তু বা মানুষের শরীরের তাপ নির্নয় করতে পারে। বাংলাদেশে এগুলিকে লেজার থার্মোমিটার, নন-কন্টাক্ট থার্মোমিটার, টেম্পারেচার গান বলা হয়।
ডেটা লগারঃ ডেটা লগার হল একটি বিশেষ ধরনের থার্মোমিটার যা বিভিন্ন সময়ের পরিবেশের তাপমাত্রা রেকর্ড করতে পারে। এটি পরিবেশগত গবেষণার জন্য বহুল ব্যবহার করা হয়।
থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরাঃ এটি একটি বিশেষ ধরনের ক্যামেরা যা প্রাথমিকভাবে সামরিক কাজের জন্য ব্যবহৃত হলেও এখন ব্যাপকভাবে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি থার্মাল ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেকোনো অতিরিক্ত তাপমাত্রা শনাক্ত করতে পারে।