দূরবীন কেনাকাটা
মহাজগৎ বা মহাবিশ্ব নিয়ে সকলেরই আছে জানার আগ্রহ ও ইচ্ছা। সৌরজগতে বিদ্যমান থাকা সকল গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্রকে পৃথিবী থেকে দেখতে প্রয়োজন একটি টেলিস্কোপ। চাঁদ, সূর্য, মঙ্গল, বৃহস্পতি, নেপচুন, শনি সহ সৌরজগৎ সম্পর্কে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেয়া হচ্ছে এবং পড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশে এগুলো অনেক সময় মনোকুলার লেন্স বলে কারণ এটিতে একটি আইপিস থাকে।
বাংলাদেশে কত ধরণের টেলিস্কোপ পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে মোট দুই ধরণের টেলিস্কোপ পাওয়া যায়। এগুলো হলোঃ
• প্রতিসরণ টেলিস্কোপ
• প্রতিফলন টেলিস্কোপ
প্রতিসরণ টেলিস্কোপ কি?
প্রতিসরণ টেলিস্কোপ মূলত প্রতিসরণকে কাজে লাগিয়ে পরিচালিত হয়। এই টেলিস্কোপে দুইটি লেন্স ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে একটি বড় এবং আরেকটি ছোট। বড় লেন্সটি থাকে নলের শেষে, এটিকে বলে অভিলক্ষ্য লেন্স। ছোট লেন্সটি নলের শুরুতে থাকে যাকে অভিনেত্র লেন্স বলে।
প্রতিফলন টেলিস্কোপ কি?
প্রতিফলন টেলিস্কোপে প্রতিফলনের সূত্র কে কাজে লাগানো হয়। এটিতে লেন্সের পরিবর্তে দুইটি আয়না বা প্রতিফলক ব্যবহার করা হয়। প্রতিফলন টেলিস্কোপ পৃথিবীর অন্য যে কোনো টেলিস্কোপের চেয়ে বেশি আলো সংগ্রহ করে। প্রতিফলন টেলিস্কোপে তোলা ছবি হাবল মহাকাশ দুরবিনের তোলা ছবি থেকেও দশ গুণ বেশি পরিষ্কার দেখায়।
টেলিস্কোপ কেনার আগে কি কি জানতে হবে?
টেলিস্কোপ কেনার আগে কয়েকটি বিষয় জানা বিশেষ ভাবে দরকার। কেননা টেলিস্কোপে কি কি থাকা আবশ্যক এবং কি কি পরিহার করা উচিৎ তা সঠিক ভাবে না জানলে টেলিস্কোপ ঠিক ভাবে কেনা যাবে না। তাই টেলিস্কোপ কেনার আগে নিচের এই বিষয় গুলো জানা জরুরিঃ
ক্ষমতাঃ
টেলিস্কোপ কেনার আগে সর্বপ্রথম এটির ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। অর্থাৎ এটি কতটুকু স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল দৃশ্য দেখাতে পারে। বিভিন্ন ক্ষমতার টেলিস্কোপ পাওয়া যায় বাংলাদেশে তবে ক্ষমতার দিক থেকেও এরা পৃথক। শুধুমাত্র পরিষ্কার ছবিই নয় বরং এটি কি ধরণের টেলিস্কোপ সেটি জানাও টেলিস্কোপের ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে সাধারণত এগুলো ২০ এক্স, ৩০ এক্স, ৪০ এক্স, ৫০ এক্স ইত্যাদি এভাবে পাওয়া যায়। তবে টেলিস্কোপ এর পাওয়ার নিচের তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে
- রেসোলভিং পাওয়ার
- লাইট গ্যাদারিং পাওয়ার
- ম্যাগ্নিফায়িং পাওয়ার
আইপিসঃ
টেলিস্কোপে উণ্ণেষ হলো এমন একটি রন্ধ্র যার মধ্য দিয়ে আলো গমন করে। উণ্ণেষ এর ব্যাস কে মিলিমিটার ও মাঝে মাঝে ইঞ্চিতে প্রকাশ করা হয় যেমন, ১ ইঞ্চি = ২৫.৪ মিলিমিটার। এটির উণ্মেষ সাধারণত ২.৮ ইঞ্চি বা এর চেয়ে বেশি হয়। তবে ছোট উণ্মেষ এর চেয়ে বড় উণ্মেষ অনেক ভাল স্পষ্ট বিম্ব সৃষ্টি করে। মূলত টেলিস্কোপের লেন্সের ক্ষমতা উণ্মেষ এর আকারের উপর নির্ভর করে। টেলিস্কোপ লেন্সের আলোকরশ্মি কে একত্রিত করার ক্ষমতা উণ্ণেষ আকারের সমানুপাতিক হয় আর টেলিস্কোপ যত আলোকরশ্মি একত্রিত করতে পারে তার মাধ্যমে তত সুস্পষ্ট বিম্ব গঠিত হয়। তাই টেলিস্কোপ কেনার আগে আইপিস সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
ফোকাসঃ
টেলিস্কোপের ফোকাসকে অনুপাতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আর টেলিস্কোপের ফোকাস অনুপাত হলো ফোকাস দূরত্ব ও টেলিস্কোপের উণ্ণেষ এর অনুপাত। মূলত ফোকাস দূরত্ব হল আলোক কেন্দ্র থেকে প্রধান ফোকাস বা দ্বিতীয় ফোকাসের দূরত্ব। টেলিস্কোপের ফোকাস অনুপাত যত ছোট হবে বিম্ব তো উজ্জ্বল হবে। পছন্দের টেলিস্কোপ কেনার আগে অবশ্যই ফোকাস সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
ট্রাইপডঃ
টেলিস্কোপ কেনার পাশাপাশি অবশ্যই ট্রাইপড কিনতে হবে আলাদা ভাবে। এই ট্রাইপডের কাজ হলো টেলিস্কোপকে নির্দিষ্ট স্থানে ধরে রাখা সমান ভাবে। ট্রাইপড না থাকলে সমান ভাবে দেখা যাবে টেলিস্কোপ দিয়ে। আঁকাবাঁকা দৃশ্য যাতে না দেখায় তাই ট্রাইপড কেনা ভাল। তবে বাংলাদেশে কিছু টেলিস্কোপ আবার ট্রাইপড সহই পাওয়া যায়।
বিডিতে টেলিস্কোপের দাম কত?
বিডিতে টেলিস্কোপের দাম মাত্র ২,২৬০ টাকা থেকে শুরু। এটি ২২ ডিগ্রী পর্যন্ত ফিল্ড ভিউ প্রদান করতে পারে। ৫২ মিলিমিটারের অবজেক্টিভ লেন্স আছে এই টেলিস্কোপে। এটি ছাড়াও বিভিন্ন রকমের টেলিস্কোপ পাওয়া যায় বিডিতে। টেলিস্কোপের দাম নির্ভর করে টেলিস্কোপের ধরণ, আকার, ফোকাস দুরুত্ব, ক্ষমতা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের উপর।