স্টেথোস্কোপ কেনাকাটা
স্টেথোস্কোপ হচ্ছে মূলত মানব শরীরের যেমন হার্ট, ফুসফুস, অন্ত্র কিংবা রক্তে সৃষ্ট শব্দ শনাক্ত করণ যন্ত্র। যা মূলত সাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের রোগীর রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমানে রোগী কিংবা পশুর রোগ নির্ণয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় বিডিতে ডাক্তার, নার্স কিংবা পশু চিকিৎসকদের কাছে স্টেথোস্কোপ খুবই জনপ্রিয় মেডিক্যাল ডিভাইস।
কেন স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করা হয়?
স্টেথোস্কোপ মূলত সাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ডাক্তার কিংবা নার্সদেরকে রোগীর শরীর থেকে উৎপন্ন শব্দ অস্বাভাবিক কিনা তা পরীক্ষা করতে সহায়তা করে। কারণ রোগীর শরীর থেকে সৃষ্ট শব্দ শুনে একজন ডাক্তার কিংবা নার্স রোগীর বর্তমান রোগের অবস্থা সম্পর্কে অবগত করার পাশাপাশি সেবা প্রদান করে থাকেন।
হৃদ স্পন্দন পরিক্ষা করাঃ স্টেথোস্কোপ হৃৎপিণ্ড থেকে উৎপন্ন শব্দ শোনার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে, একজন চিকিৎসক রোগীর হৃদ স্পন্দন শব্দ শুনে হার্টের ভালবের সমস্যা থেকে শুরু করে অনিয়মিত হৃদ স্পন্দন সহজেই শনাক্ত করতে পারেন।
শ্বাস- প্রশ্বাস পরিক্ষা করাঃ ফুসফুস থেকে উৎপন্ন শব্দ শনাক্তের ক্ষেত্রে স্টেথোস্কোপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে নিউমোনিয়া, হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ এর মতো রোগ সহজেই একজন ডাক্তার শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন।
অন্ত্রের সমস্যা পরিক্ষা করাঃ হজমের সমস্যা, ব্লকেজ কিংবা বুকে জ্বালা পোড়ার মত রোগ শনাক্ত করা যায় স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করে। কারণ স্টেথোস্কোপ দিয়ে অন্ত্র থেকে সৃষ্ট শব্দ শনাক্ত করে একজন চিকিৎসক সহজেই রোগীর অন্ত্রে কি ধরণের সমস্যা রয়েছে তা পরীক্ষা করতে পারেন।
রক্ত প্রবাহ পরিক্ষা করাঃ স্টেথোস্কোপের সাহায্যে একজন মানুষের শরীরের ধমনী এবং শিরাগুলোতে চলমান রক্ত প্রবাহের শব্দ শোনায় যায়। ফলে একজন চিকিৎসক অস্বাভাবিক রক্ত প্রবাহের শব্দ থেকে পেরিফেরাল ধমনী রোগ বা শিরার অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন।
বিডিতে স্টেথোস্কোপের দাম কত?
বর্তমানে সাশ্রয়ী মূল্যে গুনগণ মানসম্পন্ন, বিভিন্ন ডিজাইনে তৈরি স্টেথোস্কোপ বাংলাদেশে পাওয়া যায়। বিডিতে স্টেথোস্কোপের দাম ৭০০ টাকা থেকে শুরু হয় যা মূলত সাধারণ মানের হয়ে থাকে। তবে, টেকসই, দীর্ঘস্থায়ীত্ব, অ্যাকোস্টিক পারফরম্যান্স এবং দ্বিমুখী ডায়াফ্রাম ইত্যাদি উপর ভিত্তি করে স্টেথোস্কোপ দাম ২,১০০ টাকা থেকে শুরু হয়। তাছাড়া বর্তমানে বিডিতে ইলেক্ট্রনিক স্টেথোস্কোপও পাওয়া যায় যার দাম কিছুটা বেশি।
স্টেথোস্কোপ কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
স্টেথোস্কোপ কেনার আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই দেখতে হবে তা হলোঃ
টিউবঃ স্টেথোস্কোপের টিউব বিভিন্ন আকারের পাওয়া যায় যা মূলত ২২ থেকে ৩১ ইঞ্চি হয়ে থাকে। বর্তমানে বিডিতে ২৭-২৮ ইঞ্চি টিউব সংযুক্ত স্টেথোস্কোপ বেশি পাওয়া যায়। তবে বেশি দৈর্ঘ্যের টিউব ব্যবহারে শব্দ কম বেশি শনাক্ত হবে এমন কোনো ঝামেলা নেই।
ডায়াফ্রামঃ স্টেথোস্কোপের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ডায়ফ্রাম ।ডায়াফ্রাম মূলত সমতল অবস্থায় হৃদপিন্ড, ফুসফুস বা অন্ত্র থেকে সৃষ্ট উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ গ্রহণ করে থাকে। পাশপাশি একটি স্ফিগমোম্যানোমিটার ব্যবহার করে রক্তচাপের রিডিং নেওয়ার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সাধারণ স্টেথোস্কোপে ডায়াফ্রাম সাধারণত একমুখী হয়ে থাকে। তবে দ্বিমুখী মডেলের ডায়াফ্রাম যুক্ত স্টেথোস্কোপ ব্যবহারে কম-ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ পাশাপাশি অল্প বয়স্ক রোগীদের উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দও খুব ভালোভাবে সনাক্ত করা যায়। তাই স্টেথোস্কোপের ব্যবহারের কার্যকারিতা বিবেচনায় নিয়ে কেনা উচিত।
ইয়ারপিসঃ সাধারণত দুটি সিলিকন বা রাবারের তৈরি দুটি ইয়ারপিস স্টেথোস্কোপের সাথে সংযুক্ত থাকে। শব্দের গুণগত মান সঠিকভাবে শোনার জন্য ইয়ারপিস কানে সঠিক ভাবে ফিট থাকে কিনা দেখে নেওয়া। তাছাড়া স্টেথোস্কোপের ব্র্যান্ড, গণগত মান যাচাইয়ের পাশাপাশি সঠিকভাবে ফিট থাকে এবং একাধিক সাইজের ইয়ারপিস আছে কিনা যাচাই করে নেওয়া উচিত।
স্থায়িত্বঃ স্টেথোস্কোপ কেনার আগে সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে দীর্ঘস্থায়িত্ব। এক্ষেত্রে স্টেইনলেস স্টিল বা টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি প্রিমিয়াম ফিনিশিং রয়েছে এমন স্টেথোস্কোপ বাছাই করা। কারণ এই ধরণের স্টেথোস্কোপ মজবুত হওয়ার পাশাপাশি যথেষ্ট নমনীয় হয়।
সহজে পরিষ্কারঃ রোগ নির্ণয়ের জন্য মূলত ব্যবহার করা হয় বিধায় স্টেথোস্কোপে ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার জীবাণু লেগে থাকাটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ব্যবহারের পর স্টেথোস্কোপ পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ব্যবহারের পর পরিষ্কার করার জন্য সব উপাদান খুলে পুনরায় সংযুক্ত করা যাবে কিনা সে বিষয়ে জেনে নেওয়া উচিত।