সার্ভার কেনাকাটা
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল অর্থনীতি এবং ক্লাউড-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন, ওয়েবসাইট, ডাটা সেন্টার পরিচালনার জন্য সার্ভারের ব্যবহার করা হয়। সার্ভার হচ্ছে কম্পিউটার প্রোগ্রামেবল ডিভাইস যা ব্যবহারকারীদেরকে অন্যান্য ডিভাইসের সাথে ডেটা, ফাইল, ছবি, ভিডিও স্টোর করে রাখার পাশাপাশি আদান প্রদানে সহায়তা করে। চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে বাংলাদেশে এইচপি এবং ডেল সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভিন্ন ভিন্ন ধরণের সার্ভার পাওয়া যায় যা দামে কম বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে আইটি শিল্প এবং ক্লাউড-ভিত্তিক সেবা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে সার্ভারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কেন সার্ভার ব্যবহার করা হয় ?
- সার্ভার মূলত ডেটা, ফাইল এবং অ্যাপ্লিকেশন সংরক্ষণ,এবং পরিচালনাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও একটি নির্দিষ্ট অবস্থান প্রদান করবে যা একাধিক ব্যবহারকারী বা ডিভাইস দ্বারা অ্যাক্সেস করার জন্য নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ উপায় প্রদান করে, যা আধুনিক কম্পিউটিং অবকাঠামোর জন্য অপরিহার্য।
- ওয়েবসাইট এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হোস্ট করতে সার্ভার ব্যবহার করা হয়। যা ব্যবহারকারীদের অনলাইন সামগ্রী এবং অন্যান্য পরিসেবা অ্যাক্সেস করার জন্য প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে।
- সার্ভার মূলত ফাইল সংরক্ষণ এবং শেয়ার করতে ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি একাধিক ব্যবহারকারীকে ফাইল, ছবি, ভিডিও, এবং অন্যান্য ধরণের ডেটা অ্যাক্সেস অনুমতি দেয়।
- ডাটাবেস, ভার্চুয়াল মেশিন, এবং এন্টারপ্রাইজ সফ্টওয়্যারের মত অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য উচ্চ প্রসেসিং পাওয়ার প্রদান করবে।
- রাউটিং, ফায়ারওয়ালিং এবং লোড ব্যালেন্সিং সহ নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক পরিচালনা এবং কন্ট্রোল করার জন্য সার্ভার কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
- ব্যবহারকারীদের যে কোনও জায়গা থেকে এবং যে কোনও ডিভাইসে অ্যাপ্লিকেশন এবং ডেটা দূরবর্তীভাবে অ্যাক্সেস সহায়তা করবে।
বাংলাদেশে সার্ভারের দাম কত?
বর্তমানে বাংলাদেশে সার্ভারের দাম এর ধরণ, কনফিগারেশন, এবং ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে সার্ভারে দাম ৬৭,০০০ টাকা থেকে শুরু যা র্যাক কম্পাটিবল এবং এতে জিওন প্রসেসর রয়েছে। সার্ভার কনফিগারেশন যত বেশি শক্তিশালী, দাম তত বেশি।
সার্ভার কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
সার্ভার কেনার আগে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত। যার মধ্যে কেনার উদ্দেশ্য, প্রসেসিং পাওয়ার, মেমরি, স্টোরেজ সক্ষমতা, স্কেলেবিলিটি, নিরাপত্তা, অপারেটিং সিস্টেম এবং বাজেটের মত বিষয়গুলো বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
১। ব্যবহারের উদ্দেশ্যঃ সার্ভারের কেনার আগে প্রথমত কি কাজে ব্যবহার করা হবে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। যেমন ওয়েবসাইট হোস্ট করা, অ্যাপ্লিকেশন চালানো, ডেটা সংরক্ষণ করা বা অন্যান্য নির্দিষ্ট কাজের জন্য সহায়ক হবে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া।
২। প্রসেসিং পাওয়ারঃ সার্ভারের কাজের চাপ দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রসেসিং পাওয়ার যাচাই করার জন্য সার্ভারের সিপিইউয়ের কোরের সংখ্যা, ক্লক স্পিড এবং ক্যাশ সাইজ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া উচিত।
৩। মেমরি / র্যামঃ প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা ও দক্ষ প্রসেসিং সক্ষমতার পাওয়ার জন্য সার্ভারের জন্য প্রয়োজনীয় মেমরি বাছাই করে নেওয়া উচিত।
৪। স্টোরেজঃ সার্ভারে ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশন যথাযথ জমা করে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় স্টোরেজের পরিমাণ বিবেচনা করতে হবে। প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সলিড-স্টেট ড্রাইভ বা হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ বাছাই করে নিতে হবে।
৫। স্কেলেবিলিটিঃ ব্যবসায়িক চাহিদা অনুযায়ী পরবর্তীতে সার্ভার সহজে স্কেল আপ বা ডাউন করা যাবে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।
৬। নির্ভরযোগ্যতাঃ উচ্চ নির্ভরযোগ্যতার জন্য সার্ভারে অপ্রয়োজনীয় পাওয়ার সাপ্লাই, গরম-অদলবদলযোগ্য উপাদান এবং ত্রুটি-সংশোধনকারী কোড (ইসিসি) মেমরি রয়েছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।
৭। সিকিউরিটি সিস্টেমঃ সার্ভারে হার্ডওয়্যার-ভিত্তিক নিরাপত্তা, এনক্রিপশন এবং বহিরাগত অনুপ্রবেশ সনাক্তকরণ/প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে তা খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। এছাড়াও, সার্ভারটি আপনার বিদ্যমান সুরক্ষিত স্থানে স্থাপন করা যেতে পারে তা বিবেচনা করতে হবে অন্যথায় অতিরিক্ত সার্ভার র্যাক কেনার প্রয়োজন হতে পারে।
৮। মনিটরিং সিস্টেমঃ সহজে-ব্যবহারযোগ্য এবং মনিটরিং টুল যুক্ত সার্ভার বাছাই করে নেওয়া উচিত। যা দূরবর্তী অবস্থান থেকে সার্ভারে সহজে অ্যাক্সেস এবং কন্ট্রোল করতে সহায়তা করবে।
৯। অপারেটিং সিস্টেমঃ সার্ভারের হার্ডওয়্যারের সাথে কোন অপারেটিং সিস্টেম সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে তা যাচাই করে নেওয়া উচিত।
১০। বাজেটঃ বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে কার্যকারিতা পাওয়া যাবে এমন সার্ভার বাছাই করে নেওয়া উচিত।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চাহিদা অনুযায়ী সেরা সার্ভার বাছাই করতে সহায়ক হবে।
সার্ভার কেনার আগে কি কি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দেখতে হবে?
সার্ভার কেনার সময় ডেটা এবং নেটওয়ার্ক সুরক্ষা জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি সিস্টেম অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। যেমন এনক্রিপশন, ফায়ারওয়াল, অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার, অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যা্র, অ্যাক্সেস কন্ট্রোল, ডেটা ব্যাকআপ, এবং ২৪/৭ ভিডিও নজরদারির মত বিষয় গুলো সংযুক্ত রয়েছে কিনা তা অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে। তবে ব্যবহারকারীর নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সার্ভারে যে ধরণের ডেটা সংরক্ষণ করা হবে তার উপর ভিত্তিতে সার্ভারের সিকিউরিটি সিস্টেমে জোরদার করতে হবে।
সার্ভারটি আইটি অবকাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা কীভাবে যাচাই করবেন?
সার্ভারটি ব্যবহারকারীর আইটি অবকাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য হবে কিনা তা যাচাই করে নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এক্ষেত্রে সার্ভারের হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যারের সাথে আইটি অবকাঠামো তে ইন্সটল করা অপারেটিং সিস্টেম, নেটওয়ার্ক টপোলজি এবং নিরাপত্তা প্রোটোকল নেটওয়ার্কের সাথে সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। পাশাপাশি সার্ভারটি অন্যান্য সার্ভারের সাথে যথাযথ কমিউনিকেট এবং ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। পরিশেষে সার্ভারটি ইনস্টল করার পর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী যথেষ্ট কার্যকারিতা পাওয়া যাচ্ছে কিনা তা বিবেচনা করা উচিত। এভাবে ব্যবহারকারী সার্ভার কেনার ক্ষেত্রে নিজস্ব আইটি অবকাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সেরা সার্ভারটি বাছাই করে নিতে পারবেন।