বালি কেনাকাটা
কন্সট্রাকশন কাজের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বালি। যদি মাটির মোট উপাদানের শতকরা ৮৫ ভাগ বালি কণার উপাদান থাকে তবেই তাকে বালু বলা হয়। বালু মূলত কন্সট্রাকশন কাজে প্লাস্টার কিংবা ইটের দেয়াল নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। ইট-পাথরের সাথে সিমেন্টের মধ্যে শক্ত বন্ডিং তৈরি করার জন্য পরিপূরক পদার্থ হিসেবে বালিকে ব্যবহার করা হয়। যা কংক্রিট কিংবা ইটের দেওয়ালের ফাকা স্থান পূরণ করে।
বাংলাদেশে কয় ধরনের বালি পাওয়া যায়?
বাংলাদেশের সমুদ্রে ও নদীতে এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় বালু পাওয়া যায়। বালুর আকারের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। বালু পরিমাপের একককে ফাইনেস মডুলাস বলা হয় যা সাংকেতিক ভাবে এফএম দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সাইজ, আকার, ও ব্যবহারের উপর নির্ভর করে তিন ধরনের বালু পাওয়া যায়।
লোকাল বালুঃ লোকাল বালু প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই বালু দেখতে সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। লোকাল বালু সাধারণত ১.২ থেকে ১.৮ এফএম সাইজের হয়। এই ধরনের বালু সচরাচর লাল বালু সাথে মিশ্রিত করে ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়। এবং, লোকাল বালু দেওয়াল নির্মানেই কাজে ইট গাঁথায় এবং বাড়ির দেওয়াল প্লাস্টার করতে ব্যবহার করা হয়।
ভিটি বালিঃ ভিটি বালু ০.৫ থেকে ০.৭ এফএম সাইজের হয়ে থাকে। এই বালুতে কিছুটা মাটি মিশ্রিত থাকে বিধায় কালো বর্ণের হয়। নতুন বাড়ি নির্মণের সময় নিচু জমি ভরাট করার কাজে ভিটি মাটি ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের বালু সিএফটি ও প্রতি গাড়ি হিসেবে বিক্রি হয়। এই বালি কন্সট্রাকশনের কাজে ব্যবহার হয় না বিধায় কম দামে পাওয়া যায়।
সিলেট বালু বা লাল বালুঃ বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে এই বালু পাওয়া যায় বিধায় সিলেট বালু নামে পরিচিত। সিলেট বালির সূক্ষ ও লাল রঙ্গের বৈশিষ্টের কারনে লাল বালি নামেও খ্যাতি পেয়েছে। লাল বালুর সাইজ ২.৩ থেকে ২.৮ এফএম হয়ে থাকে। এই ধরনের বালি সাধারণত মাটির উপরে সুইমিং পুল নির্মাণে ও রিটেইনিং দেয়াল সহ ফ্লোর পাকা করার কাজে বেস বালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মূলত সিলেটের বিছানাকান্দি ও ভোলাগঞ্জ সহ বেশ কিছু এলাকা থেকে লাল বালু উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও, ময়মনসিংহ অঞ্চলের কিছু এলাকায় লাল বালু পাওয়া যায়। তবে, সিলেটের লাল বালি ময়মনসিংহের লাল বালির তুলনায় উন্নত মানের হয়ে।
বালি কেনার পূর্বে সতর্কতা সমূহ।
বালি হচ্ছে কন্সট্রাকশন কাজের অন্যতম গুরুত্তপূর্ণ উপাদান তাই অবশ্যই বালি কেনার পূর্বে কিছু বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
- বালুর মধ্যে গোলাকার বালুর চেয়ে কোণাকার বালু তুলনামূলক ভালো।
- কিছু পরিমাণ লোকাল বালি বালি দুই আঙ্গুলের ফাকে রেখে ঘষে ফেলে দিতে হবে এবং যদি হাতে ধূলিকণা লেগে থাকে তাহলে এই বালি ধূলিকণা যুক্ত বালি। যা ঠালাইয়ের কাজের জন্য উপযুক্ত নয়।
- অনেক সময় লোকাল বালির পরিবর্তে ভিটি বালি সাপ্লাই দেওয়া হয়। তাই, অবশ্যই কেনার আগে ও পরে দেখে নিতে হবে।
- সিলেট বালু কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে। কারন, সিলেট বালির পরিবর্তে মরা পাথরের গুড়ো সাপ্লাই দেওয়া হয়।
- সামুদ্রিক বালিতে কিছুটা লবন মিশ্রিত থাকে বিধায় সামুদ্রিক বালি চিনতে কিছু পরিমাণ বালি মুখে নিয়েও পরিক্ষা করা যায়। বালিতে বেশি পরিমাণ লবণ মিশ্রিত থাকলে কেনা যাবে না।
- লোকাল বালু কেনার পূর্বে অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত কোন এলাকার বালু নিচ্ছেন। ঢাকার মধ্যে টাংগাইল ভূয়াপুরের লোকাল বালু সবচেয়ে ভালো।
- যদি গাড়ি হিসেবে বালি কেনা হয় তাহলে সঠিক ভাবে গাড়ির ধারণ ক্ষমতা মেপে নিতে হবে। এবং, গাড়ি হিসেবে বালি কিনলে ছোট গাড়ি ব্যবহার না করে ডাম্প ট্রাক ব্যবহার করা উচিত। কারণ, ছোট গাড়িতে বালি কিনলে মাপে কম হয়ে থাকে।
- সাধারণত লোকাল ভাবে নিম্ন কোয়ালিটির সিলেট বালু পাওয়া যায় তাই কেনার পূর্বে দেখে নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে বালির দাম কত?
বাংলাদেশে বালির কোয়ালিটি, উত্তোলনের স্থান, ও ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দামে পাওয়া যায়। প্রতি সিএফটি লোকাল বালির দাম ১৭ টাকা থেকে ২৭ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং, সিলেট বালি বা লাল বালুর দাম আকারের ভিত্তি প্রতি সিএফটি ৩৭ টাকা থেকে ৫২ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে, ভিটি বালি সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যায়। প্রতি সিএফটি ভিটি বালি ৮ টাকা থেকে ১০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।