মাইক্রোটিক রাউটার কেনাকাটা
নেটওয়ার্কিং রাউটার ডিভাইসের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী যে রাউটার ডিভাইসটি আছে সেটি হলো মাইক্রটিক রাউটার। অন্যান্য রাউটারের তুলনায় মাক্রটিক রাউটার একটু আলাদা হয়ে থাকে কারন এই রাউটারে অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত। মাইক্রোটিক ওএস একটি লিনাক্স কার্নেল বেজ অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করে থাকে। নেটওয়ার্ক স্পীড, তারমুক্ত এবং তারযুক্ত সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায় মাইক্রটিক রাউটারে। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের সকল আইএসপি কোম্পানি গুলোতে মাইক্রটিক রাউটারের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে এর সাশ্রয়ী দামের কারনে।
মাইক্রটিক রাউটারে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়?
মাইক্রটিক রাউটার কম দামে বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের বাংলাদেশে বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মাইক্রটিক রাউটারের সুবিধাগুলো হলোঃ
১। মাইক্রটিক রাউটারে ৩২ বিট আর্কিটেকচার সাপোর্ট করে।
২। মাল্টি কোর এবং মাল্টি সিপিইউ সাপোর্ট করে মাইক্রটিক রাউটারে।
৩। মাইক্রটিক রাউটারে সর্বনিম্ন র্যাম থাকে ৩২ এমবি। কিন্তু এটি ২ জিবি পর্যন্ত সাপোর্ট করে শুধুমাত্র ক্লাউড কোর ডিভাইস ছাড়া। তাই এই মাইক্রটিক রাউটার দামের তুলনায় বেশি সুবিধা প্রদান করে।
৪। এটিতে পিসিআই ও পিসিআই -এক্স নেটওয়ার্ক কার্ড সাপোর্ট করে।
৫। খুব সহজেই মাইক্রটিক রাউটার নেটওয়ার্ক বেজ এবং সিডি বেজ ইন্সটল করা যায়।
৬। ম্যাক, উয়িনবক্স, ওয়েবফিগ, টিকঅ্যাপ, কমান্ডলাইন, এপিআই দিয়ে মাইক্রটিক রাউটার ইন্সটল ও মনিটরিং করা যায়।
৭। মাইক্রটিক রাউটারে বাইনারি ফাইল ব্যাকআপ ও কনফিগারেশন এক্সপোর্ট এবং ইম্পোর্ট করা যায়।
৮। সিকিউরিটি জন্য মাইক্রটিক রাউটারে আছে ফাইয়ারওয়াল যা খুব সহজ ও অনেক স্ট্রং নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে।
৯। মাইক্রটিক রাউটারে যেকোনো আইপি ভার্সন রাউটিং করা যায়।
১০। এই রাউটারে আছে এমপিএলএস সুবিধা যা বাংলাদেশের আইএসপি লেভেল কোম্পানির জন্য অনেক বড় একটি বৈশিষ্ট্য বহন করে।
১১। ভিপিএন সুবিধার মাধ্যমে অনেক সিকিউর কানেকশন পাওয়া যায় যা বৈদেশিক অথবা ভিন্ন সার্ভার ব্যবহারে নিরাপত্তা পাওয়া যায় মাইক্রটিক রাউটারের মাধ্যমে।
১২। ওয়ারলেস সুবিধা মাইক্রটিক রাউটারগুলোতে পাওয়া যায় ফলে অতিরিক্ত তারের কোনো দরকার হয় না।
১৩। মাইক্রটিক রাউটার নিজেই ডিএইচসিপি সার্ভার হিসাবে কাজ করে যা রেডিয়াস সার্ভারের সাথে সংযোগ করা যায়।
১৪। মাইক্রটিক রাউটারের সাহায্যে হটস্পট চালু করে ওয়াইফাই সংযোগ পাওয়া যায় খুব সহজেই।
১৫। এটির প্রক্সি সার্ভার কনফিগারেশন করা যায় যা অনেক ওয়েব সাইট ব্লক করতে সাহায়তা প্রদান করে।
১৬। মাইক্রটিক রাউটারের নেটওয়ার্ক সকল আইপি নেটওয়ার্ক গুলোর সাহায্যে ব্র্যান্ডউইথ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১৭। মাল্টিপল আইএসপি থেকে কানেকশন নিয়ে অটো রিডাডেন্সি করা যায় মাইক্রটিক রাউটারের সাহায্যে।
মাইক্রটিক রাউটারের দাম কত?
মাইক্রটিক রাউটারগুলোতে সাধারণত ল্যান কানেক্টিভিটি, র্যাম, স্টোরেজ, পিসিবি টেম্পারেচার মনিটর, ব্যান্ড উইথ ম্যানেজ সিস্টেম, ভোল্টেজ মনিটর, অ্যাম্বিয়েন্ট টেম্পারেচার -৪০° সেলসিয়াস থেকে ৭০° সেলসিয়াস সহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকে। বিডিতে মাইক্রটিক রাউটারের দাম সর্বনিম্ন ২,৫০০ টাকা। এটি ছোট অফিস বা বাসার জন্য বেশ ভাল। আর ওয়ারলেস সুবিধাসহ মাইক্রটিক রাউটার কিনলে দাম আরেকটু বেশি লাগবে। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে মাইক্রটিক রাউটার নির্বাচন করতে হবে। মাইক্রটিক সাধারণত ওএস এর লাইসেন্স লেভেল এবং হার্ডওয়ারের উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করে।
মাইক্রোটিক ওয়াইফাই রাউটারের দাম কত?
বাংলাদেশে ওয়াইফাই সুবিধা সম্পন্ন মাইক্রোটিক রাউটার সচারাচর পাওয়া যায়। ওয়াইফাই সুবিধা সম্পন্ন মাইক্রোটিক রাউটারের দাম সাধারণত পোর্ট সংখ্যা, র্যাম, রোম, ব্যান্ডউইথ স্পীড, অ্যান্টেন, এবং ওয়্যারলেস ব্যান্ড ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। বর্তমানে, বিডিতে ওয়াইফাই সুবিধা সম্পন্ন মাইক্রোটিক রাউটারের দাম ৩,১০০ টাকা থেকে শুরু, যা কনসিলড অ্যান্টেনা সমন্বয়ে তৈরি, ৩-পোর্ট বিশিষ্ট এবং ১০/১০০এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ স্পীড প্রদান করে। এছাড়াও, ৫-পোর্ট, ১০/১০০/১০০০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ এর ওয়াইফাই সুবিধা সম্পন্ন মাইক্রোটিক রাউটার ৬,০০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়।
বিজনেস সিরিজের মাইক্রোটিক ওয়্যারড রাউটারের দাম কত?
বিজনেস সিরিজের মাইক্রোটিক ওয়্যারড রাউটার মূলত আইএসপি, অফিস, এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিজনেস সিরিজের মাইক্রোটিক ওয়্যারড রাউটারের দাম মূলত মাইক্রোটিক রাউটারের সিরিজ, স্পেসিফিকেশন, কানেক্টিভিটি পোর্ট, ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি, পাওয়ার এবং কান্ট্রি ভ্যারিয়েন্ট এর উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। বিজনেস সিরিজের মাইক্রোটিক ওয়্যারড রাউটারের দাম ১৪,০০০ টাকা থেকে শুরু, যা ছোট পরিসরে অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার উপযোগী। এছাড়াও, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিজনেস সিরিজের মাইক্রোটিক ওয়্যারড রাউটার ২৫,০০০ টাকা থেকে ৬০,০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে, ক্লাউড-কোর বিশিষ্ট বিজনেস সিরিজের মাইক্রোটিক ওয়্যারড রাউটারের দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়ে থাকে।
ব্যান্ডউইথের উপর নির্ভর করে মাইক্রোটিক রাউটারের দাম কত?
ব্যান্ডউইথ স্পিড এর উপর নির্ভর করে মাইক্রোটিক রাউটার দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত ১০/১০০এমবিপিএস, ৩০০ এমবিপিএস, ১০/১০০/১০০০ এমবিপিএস স্পীডের ইথারনেট এবং গিগাবিট মাইক্রোটিক রাউটার পাওয়া যায়। ১০/১০০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের মাইক্রোটিক রাউটার ৩,০০০ টাকা থেকে ৬,৫০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়। ৩০০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ এর মাইক্রোটিক রাউটার ৭,০০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে, ১০/১০০/১০০০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের মাইক্রোটিক রাউটার এর দাম তুলনামূলক বেশি, এবং দাম ২১,০০০ টাকা থেকে শুরু।
মাইক্রোটিক রাউটার এ কি র্যাক মাউন্ট সুবিধা আছে?
হ্যাঁ, মাইক্রোটিক রাউটার এ র্যাক মাউন্ট সুবিধা রয়েছে এবং ১১৩ x ৮৯ x ২৮ মিমি সাইজের হয় যা ডেটা সেন্টার, আইএসপি এবং অফিস নেটওয়ার্ক ইনস্টলেশনে সুবিধা প্রদান করে। ফলে মাইক্রোটিক রাউটার সেটআপ করার ক্ষেত্রে সঠিক স্থান ব্যবহারে র্যাক মাউন্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মাইক্রোটিক রাউটার এ কোন ওএস ব্যবহৃত হয় এবং লাইসেন্স লেভেল কি কি?
মাইক্রোটিক রাউটার সাধারণত লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বেইজড মাইক্রোটিকের নিজস্ব রাউটারওএস ব্যবহার করে। এই রাউটারওএস উন্নত রাউটিং এবং নেটওয়ার্কিং সুবিধা প্রদান করে। বাংলাদেশে অফিসিয়ালি মাইক্রোটিক রাউটারওএস লাইসেন্স ফ্রী থেকে লেভেল ৬ পর্যন্ত পাওয়া যায়। মাইক্রোটিক রাউটারের লাইসেন্স লেভেল মূলত রাউটারের ইন্টারফেসের সংখ্যার উপর নির্ভর করে এবং অতিরিক্ত ফিচার সমূহ আনলক করতে সহায়তা করে। তবে, প্রতিটি লাইসেন্স লেভেল এ নির্দিষ্ট ফিচার এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাছাড়া, যেকোনো মাইক্রোটিক রাউটার কেনার পর অতিরিক্ত সুবিধার জন্য লাইসেন্স লেভেল অনলাইনের মাধ্যমে আপগ্রেড করা যায়।
মাইক্রটিক রাউটার রিসেট করে কীভাবে?
মাইক্রটিক রাউটার রিসেট করা খুবই সহজ। কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে মাইক্রটিক রাউটার রিসেট করা যায়। এগুলো হলোঃ
১। প্রথমে ইউনিট থেকে পাওয়ার কর্ড সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
২। রিসেট বোতামটি কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে।
৩। পাওয়ার কর্ডটি প্লাগ ইন করে এসিটি বাতিতে আলো জ্বলতে শুরু করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
৪। এবার কনফিগারেশন ক্লিন করতে চাপ দিয়ে রাখা বোতামটি ছেড়ে দিতে হবে।
৫। রাউটারটিকে ক্লিন করতে এবং ফ্যাক্টরি সেটিংস পুনরুদ্ধার করতে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
৬। মাইক্রটিক রাউটার কম্পিউটারকে পোর্ট ৩ এ সংযুক্ত করতে হবে। এবার ওয়েব ব্রাউজার খুলে ১৯২.১৬৮.৮৮.১ এর সাথে সংযোগ করতে হবে। যদি রাউটারটি রিসেট করা হয়ে থাকে তবে পাসওয়ার্ড চাইতে পারে।
৭। শেষের ধাপে নতুন পাসওয়ার্ড দিলেই মাইক্রটিক রাউটার আবার তার সিকিউরিটি সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে।