আল-কুরআন কেনাকাটা
আল-কুরআন হল সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। আখিরাতকে সামনে রেখে দুনিয়াবি জীবন সঠিক ভাবে পরিচালনা করার সকল বিধিমালা কুরাআন মাজীদে রয়েছে। কুরআনে রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন সকল সমস্যার সমাধান। কুরআন মাজীদ মোট ১১৪ টি সূরা আছে যা ৩০ টি অধ্যায়ে বিভক্ত।
কেন আল-কুরআন পড়া প্রয়োজন?
ইসলাম সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই কুরআন পড়তে হবে। প্রকৃত মুসলিম হতে হলে অবশ্যই কুরআন পড়তে হবে এবং কুরআনের দেখানো পথে চলতে হবে। কুরআন পড়া অন্যতম সর্বোৎকৃষ্ট আমল। এবং, কুরআন নিয়মিত পাঠ করলে মন শান্ত থাকে এবং সকল প্রকার হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে, অবশ্যই কুরআন অর্থ বুঝে পড়তে হবে তবেই প্রকৃত ফজিলত অনুধাবন করা যাবে।
বাংলাদেশে কুরআনের ধরন।
বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী আল-কুরানের শব্দাবলি একইরকম। মূলত, অনুবাদ ও ভাষার ভিত্তিতে বাংলাদেশে তিন ধরনের কুরআন পাওয়া যায়। যথাঃ ১. শুধু আরবি কুরআন; ২. অনুবাদ সহ কুরআন; ৩. তাফসির সহ কুরআন। উল্লেখিত তিন ধরনের কুরআন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
শুধু আরবি কুরআনঃ কুরআন নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায়। বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী আরবি ভাষায় কুরআন পড়াকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। বাংলাদেশে সকল মাদ্রাসায় প্রাথমিক পর্যায় আরবি ভাষায় লিখা কুরআন পাঠ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন কোয়ালিটি পেজের আরবি কুরআন পাওয়া যায়। তারমধ্যে হোয়াইট পেজ প্রিন্ট, নিউজ পেজ প্রিন্ট, অ্যারাবিক পেজ, ও কালার-কোডেড পেজ অন্যতম।
- হোয়াইট পেজ প্রিন্টঃ যেসব কুরআন সম্পূর্ণ সাদা পেজে সম্বলিত হয় সেগুলোকে হোয়াইট পেজ প্রিন্ট বিশিষ্ট কুরআন বলা যায়। বাংলাদেশে হোয়াইট পেজ বিশিষ্ট আরবি কুরআন অধিক জনপ্রিয়।
- নিউজ পেজ প্রিন্টঃ যেসব কুরআন নিউজ পেজে বা ধূসর বর্ণের পেজে সম্বলিত হয় সেগুলোকে নিউজ প্রিন্ট পেজ কুরআন বলা যায়। বাংলাদেশে নিউজ প্রিন্ট পেজ বিশিষ্ট আরবি কুরআনের দাম তুলনামূলক কম।
- অ্যারাবিক পেজঃ যেসব কুরআন অ্যারাবিক পেজে সম্বলিত হয় সেগুলোকে অ্যারাবিক পেজ বিশিষ্ট কুরআন বলা যায়। অ্যারাবিক পেজ মূলত মিডেল ইস্টের দেশ গুলোতে পাওয়া যায়। এই পেজ সাধারণত হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। অ্যারাবিক পেজের কুরআন দেখতে খুবি সুন্দর হয়ে থাকে।
- কালার-কোডেড পেজঃ কালার-কোডেড কুরআনের পেজ গুলো বিভিন্ন রং দ্বারা সজ্জিত করা হয়। কালার-কোডেড পেজ গুলো খুবি মসৃণ ও সুন্দর হয়ে থাকে। কুরআনের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ বৃদ্ধির জন্য কালার-কোডেড পেজের কুরআন মাজীদ উপযুক্ত।
অনুবাদ সহ কুরআনঃ বাংলাদেশে মূলত বাংলা ও ইংরেজি এই দুই ভাষায় অনুবাদ সহ আল-কুরআন পাওয়া যায়। আবার, বেশিরভাগ অনুবাদ সহ আল-কুরআনে বাংলা বা ইংরেজিতে উচ্চারন দেওয়া থাকে। কুরআন অনুধাবন করার জন্য অবশ্যই অনুবাদ পড়া উচিৎ। অনুবাদ সহ কুরআন গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
- আরবি টু বাংলা অনুবাদঃ এই কুরআন গুলোতে শুধু বাংলা অনুবাদ থাকে। এবং, বাংলা অনুবাদের পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত শানে নুযূল দেওয়া থাকে। আবার, কিছু কিছু বাংলা অনুবাদ সহ কুরআনে পড়ার সুবিধার্থে বাংলা উচ্চারন দেওয়া থাকে। তবে, বাংলা উচ্চারন ব্যবহার করে কুরআন না পড়াই উত্তম কেননা বাংলা উচ্চারনের মাধ্যমে কুরআন পড়লে সঠিক আরবি উচ্চারনের ন্যায় পড়া সম্ভব নয়।
- আরবি টু ইংরেজি অনুবাদঃ এই কুরআন গুলোতে শুধু ইংরেজি অনুবাদ থাকে। যাদের বাংলা পড়তে অসুবিধা হয় তাদের জন্য ইংরেজি অনুবাদ সহ কুরআন উপযুক্ত।
- আরবি টু বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদঃ কিছু কুরআনে বাংলা ও ইংরেজি উভয় অনুবাদ থাকে। এবং, অনুবাদের পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত শানে নুযূল উল্লেখ থাকে। বোঝার সুবিধার্থে দুই ভাষাতেই অনুবাদ পড়া উচিৎ।
তাফসির সহ কুরআনঃ আল-কুরআন গভীর ভাবে অনুধাবন করার জন্য অবশ্যই তাফসির সহ পড়তে হবে। তাফসির সহ কুরআনে আল-কুরআনের প্রতিটি আয়াতের পরিপূর্ণ বর্ণনা দেওয়া থাকে। এবং, বর্ণনার পাশাপাশি প্রেক্ষাপট ও রাসূল (সাঃ) এর হাদিসের বিস্তারিত বিষয়বস্তু উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে জনপ্রিয় কুরআনের তাফসিরের ধরণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
- বিষয় ভিত্তিক তাফসিরঃ বিষয় ভিত্তিক তাফসীরুল কুরআনে সূচিপত্র থাকে এবং বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আলাদা পাঠে বিভক্ত থাকে। বিষয় ভিত্তিক তাফসির তুলনামূলক সহজেই পড়া যায় এবং সহজেই সকল সমস্যার সমাধান খুজে বের করা যায়। এই তাফসির গুলো সাধারণত এক খন্ডেই পাওয়া যায়।
- সাধারণ তাফসির সহ কুরআনঃ সকল তাফসির সাধারণত কুরআনের সূচি অনুযায়ী থাকে। এবং, প্রতিটি আয়াতের একক বর্ণনা ও প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়। এই তাফসির গুলোতে বিষয় ভিত্তিক কোন সূচিপত্র থাকে না। তবে, প্রতিটি আয়াতের সাথে সম্পর্কিত সকল হাদিস ও বর্নণা উল্লেখ থাকে। এই তাফসির গুলোতে প্রচুর পরিমান তথ্য সম্বলিত থাকে বিধায় একাধিক খন্ডে বিভক্ত হয়ে থাকে।
- সংক্ষিপ্ত তাফসিরঃ সংক্ষিপ্ত তাফসিরে কুরআনের অনুবাদ সহ সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা থাকে। সাধারণত বড় তাফসির গ্রন্থ গুলোকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হয়। এই তাফসির গুলো এক বা একাধিক খন্ডে হতে পারে।
তবে, অনুবাদ সহ কুরআন ও তাফসির সহ কুরআন গুলো হোয়াইট পেজ প্রিন্ট, নিউজ পেজ প্রিন্ট, অ্যারাবিক পেজ, ও কালার কোডেড পেজেও পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে পেজের ভিন্নতার কারনে দামের তারতম্য হতে পারে।
বাংলাদেশে প্রতি কপি কুরআনের দাম কত?
বাংলাদেশে প্রতি কপি কুরআন ১৫০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। কুরআনের পেজ ও প্রিন্ট কোয়ালিটি এবং সাইজের উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারিত হয়। আবার, অনুবাদ সহ কুরআন গুলো ২৫০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এবং, তাফসির সহ কুরআন গুলো সকল খন্ড একত্রে ৪,০০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে, তাফসির গুলোর এক একটি আলাদা খন্ড ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। মুসলিম উম্মাহর কাছে কুরআনের শব্দাবলি হল অমূল্য সম্পদ। কেননা কুরআন নাজিল হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য।