পালস অক্সিমিটার কেনাকাটা
অক্সিমিটার কী?
মানবদেহের হৃদস্পন্দনের গতি ও শরীরে রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা মাপার যন্ত্রের নাম অক্সিমিটার। অক্সিমিটার হাতের আঙ্গুলের মাথায় লাগিয়ে অক্সিজেনের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়। যে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবেন। অক্সিজেনর পরিমাণ ৮০ শতাংশের নীচে চলে গেলে হৃৎপিন্ড, যকৃৎ, কিডনি ইত্যাদি বিকল হয়ে যেতে পারে। ব্যক্তির শরীরে অক্সিজেন পরিমাণ কম হয়ে গেলে যদি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্য দেখা না দেয় তবে তা সহজে উপলব্ধি করা কঠিন হয়ে পরে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ঠিক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই ধরনের সমস্যার সচেয়ে বড় ভরসার যন্ত্র হল পালস অক্সিমিটার।
পালস অক্সিমিটার এর দাম কত?
সাধারণত পালস অক্সিমিটার এর দাম এর ব্র্যান্ড, ডিসপ্লে কোয়ালিটি, সেন্সর কোয়ালিটি, এবং নির্মিত প্রযুক্তির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে। বর্তমানে বিডিতে পালস অক্সিমিটার এর দাম ৭৫০ টাকা থেকে শুরু হয় যার পালস পরিমাপ পরিসীমা হলো ৩০ বিপিএম থেকে ২৫০ বিপিএম। তাছাড়া, উন্নত প্রযুক্তি ও পরিমাপের সঠিকতা ৩০ থেকে ৯৯ বিপিএম সহ পালস অক্সিমিটার এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।
পালস অক্সিমিটারের গঠন
পালস অক্সিমিটারের বডি সাধারণত উন্নত মানের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। অক্সিমিটারের একপ্রান্তে থাকে সেন্সর ও এলইডি ডিটেক্টর অপর প্রান্তে থাকে ফটো ডায়োট। এলইডি ডিটেক্টরের সাহায্যে আলো প্রদর্শণ করে ওপর পাশে ফটো ডিটেক্টর সেই আলো গ্রহন করে সেন্সরের মাধ্যমে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখায়।
ডিজিটাল ডিসপ্লেতে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া থাকে তা হল
লো ভোল্টেজ ডিসপ্লেঃ এর সাহায্যে ব্যাটারির পরিমান জানা যায়। যদি রি-চার্জেবল অক্সিমিটার হয় তাহলে লো ভোল্টেজ ডিসপ্লেতে দেখা যাবে।
অক্সিজেন স্ট্রাকশনঃ পালস অক্সিমিটারের ডিসপ্লের বাম পাশে ছোট আকারের প্রতীকী হিসেবে SpO2 লিখা থাকে।
অক্সিজেনের মাত্রাঃ ডিসপ্লেতে অক্সিজেন স্ট্রাকশনের নিচে বড় আকারে অক্সিজেনের মাত্রা প্রদর্শন করে।
পালস রেটের প্রতিকঃ ডিসপ্লেতে অক্সিজেনের মাত্রা নিচে ছোট আকারে একটি সংকেত দিয়ে প্রকাশ করা হয় যা প্রতি একক সেকেন্ড দিয়ে প্রকাশ করে থাকে।
পালসের মাত্রাঃ পালস রেটের নিচে পালসের মাত্রা ডিসপ্লেতে বড় আকারে প্রদর্শন করে থাকে। এখানে যে সংখ্যা প্রদর্শন করবে তা প্রতি সেকেন্ডের মাত্রা নির্দেশ করে।
পালস রেট বারগ্রাফঃ ডিসপ্লেতে পালস মাত্রা বাম পাশে কিছু প্রতিক থাকে সেগুলকে বলে পালস রেট বারগ্রাফ। পালস রেটের মাত্রা উঠানামা করলে পালস রেট বারগ্রাফের প্রতিকও উঠানামা করে।
পালস অক্সিমিটার কিভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিয়ে কাজ ব্যবহার করা উচিৎ।
মানব দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কেমন থাকা উচিৎ?
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেনের পরিমান থাকে ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ। মানবদেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে হাইপোক্সিয়া রোগের দেখা দেয়। যারফলে শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যাথা ,বুকব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় । এ রোগ মানব দেহের কার্যক্ষমতা একেবারে দুর্বল করে ফেলে।
কোন আঙ্গুল নির্বাচন করবেন?
অক্সিমিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আঙ্গু্ল নির্বাচন করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। হাতের আঙ্গুল নির্বাচনের কম বেশি হলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। তবে যে হাতে বেশি কাজ করেতে অভ্যস্থ সেই হাতের বুড়ো আঙ্গুল অথবা মধ্যমা আঙ্গুল নির্বাচন করতে হবে তাহলে অক্সিমিটারের ফলাফলও ভালো পাওয়া যাবে।
অক্সিমিটার কারা ব্যবহার করবেন?
যারা হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় ভুগছেন, অক্সিমিটার তাদের হাতের কাছে রাখা উচিৎ। করোনা রোগের সংস্পর্শে এলে এটি ব্যবহার করা অত্যান্ত জরুরী। এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস কিংবা হৃদরোগে ভুগলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই এসব রোগীর উচিত রক্তে অক্সিজেনের মাত্রার দিকে নজর দেওয়া।
অক্সিমিটারের ফল প্রকাশঃ
অক্সিজেনের উপর নির্ভর করে অক্সিমিটার ফলাফল প্রকাশ করে থাকে। অক্সিজেনের মাত্রা কম বা বেশি হলে এর ফলও হবে ভিন্ন। তবে ফলাফল ±২% কম বা বেশি হলে স্বাভাবিক মাত্রা হিসেবে ধরা হয় ।
অক্সিমিটারের ভুল সিদ্ধান্তঃ
অক্সিমিটারের কিছু কিছু সময় ভুল ফলাফল প্রদর্শন করে থাকে । অক্সিমিটারের ফলাফল নির্ভর করে হাতের তাপমাত্রার উপর। যদি কখনো হাতের তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে কম হয় তাহলে অক্সিমিটার সঠিক ফলাফল নাও দিতে পারে। এক্ষত্রে আগেই ভালোভাবে নিশ্চিত হতে হবে যেন পরিক্ষণের সময় শরীরের চেয়ে হাতের তাপমাত্রা বেশি থাকে। অন্যথায় অক্সিমিটার সঠিক ফলাফল না ও দিতে পারে।