পাওয়ার টিলার কেনাকাটা
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এক সময় কৃষিকাজে বীজকে নির্দিষ্ট স্থানে ও সঠিক গভীরতায় সুষমভাবে বপন করতে ব্যবহার হতো লাঙ্গল। কিন্তু এতে অনেক সময় অপচয় হয়। আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতিতে এখন এ সময়কে অনেক কমিয়ে আনা যায় পাওয়ার টিলার ব্যবহার করে। বাংলাদেশে পাওয়ার টিলার ব্যবহার করতে কৃষকেরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য করেন কারণ এতে খরচ ও শ্রম দুটোই কম। বাংলাদেশে পাওয়ার টিলারের মূল্য অনেক কম।
পাওয়ার টিলারে কি কি সুবিধা আছে?
পাওয়ার টিলার ব্যবহার করে কম সময়ে মাটি নেড়ে বীজ বপনের পাশাপাশি আরও অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। এগুলো হলোঃ
১। পাওয়ার টিলারের সাহায্যে বীজের ভাল অঙ্কুরোদগম এবং জমি অনুযায়ী পর্যাপ্ত সংখ্যক চারাগাছ নিশ্চিত করা যায়, ফলে অতিরিক্ত খরচ কমে।
২। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে পাওয়ার টিলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩। আগে অনেক বিজ নষ্ট হয়ে যেতো তাই পরিমাণের চেয়ে বেশি বীজ বপন করা হত। কিন্তু পাওয়ার টিলার ব্যবহারের ফলে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে প্রায় ১০-৪০ শতাংশ বীজ কম লাগে।
৪। পাওয়ার টিলারে ফলন ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
৫। পাওয়ার টিলার দিয়ে দিয়ে চাষ করা জমি ছাড়াও চাষবিহীন অবস্থায় বেলে ও বেলে দোআঁশ মাটিতে ধান, গম, ভুট্টা, পাট, তৈলবীজ ও ডাল শস্য সারিতে বোনা যায়।
৬। পাওয়ার টিলার দিয়ে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপনের ফলে অন্যান্য নিড়ানি যন্ত্র ব্যবহার করা যায় বীজ নষ্ট হয় না।
৭। পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি পরিচর্যা করার ক্ষেত্রেও ২৫ শতাংশ সময় ও খরচ কম লাগে।
৮। খুব অল্প সময়ে জমিকে চাষ উপযোগী করে তুলতে পাওয়ার টিলারের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে পাওয়ার টিলার এর দাম কত?
বাংলাদেশে পাওয়ার টিলারের দাম মাত্র ১৭,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়। এটিতে ৫৩ সিসির ২ স্ট্রোকের ইঞ্জিন আছে। এটি ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটে মাত্র ১ লিটার তেল খরচ করে। প্রতি ঘন্টায় ১ থেকে দেড় বিঘা জমি খুব সহজেই চাষ করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকমের পাওয়ার টিলার পাওয়া যায়। এই পাওয়ার টিলারের দাম নির্ভর করে পাওয়ার টিলারের বৈশিষ্ট্যের উপর।
পাওয়ার টিলারের কোন অংশ কোন কাজে ব্যবহার করা হয়?
একটি পাওয়ার টিলার বেশ কয়েকটি অংশ নিয়ে গঠিত। এর প্রত্যেকটি অংশের আছে নিজস্ব পরিচিতি এবং কাজের ধরণ। এবার জেনে নেয়া যাক পাওয়ার টিলারের কোনো অংশ কি কাজ করেঃ
ইঞ্জিনঃ ইঞ্জিন এক প্রকার যন্ত্র যা দিয়ে জ্বালানি পুড়িয়ে পাওয়ার টিলারকে চলতে শক্তি প্রদান করে।
ক্লাচঃ ক্লাচ ইঞ্জিনের শক্তিকে গিয়ার বক্সে সরবারহ করে এবং বিশেষ প্রয়োজনে শক্তি সরবারহ সাময়িক ভাবে বন্ধ করে।
গিয়ার বক্সঃ গিয়ার বক্স ইঞ্জিনের গতিকে ঠিক মাত্রায় রেখে পাওয়ার টিলারের গতি কমাতে বা বাড়াতে সাহায্য করে।
সাইড ক্লাচ লিভারঃ সাইড ক্লাচ লিভার পাওয়ার টিলারকে ডানে বা বামে ঘুরাতে কাজ করে।
টেইল হুইল এডজাস্টিং লিভারঃ এই লিভার উপরে বা নিচে নামিয়ে জমি চাষের গভীরতা বাড়ানো বা কমানো যায়।
পাওয়ার টিলার দিয়ে কি বেকারত্ব দূর করা সম্ভব?
পাওয়ার টিলার দিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। বাংলাদেশে পাওয়ার টিলারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কারণ বাংলাদেশে পাওয়ার টিলারের দাম অনেক কম এবং এতে অনেক সুবিধা আছে। পাওয়ার টিলার পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের শ্রমিকের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে যেখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং বাস্তব ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজ এলাকাতেই জীবিকা নির্বাহ করা যায়।