পজ মেশিন কেনাকাটা
সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তিগত সকল উন্নয়নের মধ্যে পজ মেশিন আবিষ্কার সাধারণ গ্রাহক থেকে আরম্ভ করে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক লেনদেনের সহজতর করায় প্রশংসিত হয়েছে। পিওএস মেশিন মূলত পয়েন্ট অফ সেল বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বিক্রীত মালামালের দাম সহ তথ্য সংরক্ষণের আধুনিক মেশিন বলা যায়। তাছাড়া, পস মেশিন হচ্ছে খুচরা অবস্থান থেকে নগদ টাকা লেনদেন না করে কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি হার্ডওয়্যার সিস্টেম। বর্তমান সময়ে শপিং মল, হোটেল, সিনেমা হল, নানাবিধ ব্যবসায় কিংবা যানবাহন টিকেট কাউন্টারে পিওএস মেশিন ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয়। পিওএস মেশিন ব্যবহারের ফলে বিশেষ করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের কেনাকাটা কিংবা ভ্রমণ কেন্দ্রিক যাবতীয় লেনদেনের তথ্যাদি পাওয়া যায় ফলে জীবন মান যথেষ্ট গতিশীল হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ইপসন, জেডকেটেকো, আই-মেশিন, সানমি এবং রয়েল ইত্যাদি ব্র্যান্ডের পিওএস মেশিন রয়েছে।
বাংলাদেশে কয় ধরনের পস মেশিন পাওয়া যায়?
বর্তমান সময়ে প্রায় সকলেই ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার মুখী হওয়ায় নগদ অর্থ লেনদেনের হার অনেকাংশে কমে এসেছে। তাই বর্তমান সময়ে পজ মেশিনের ব্যবহার দ্রুতই বেড়েই চলেছে। তবে পিওএস মেশিন ব্যবসায়িক মাধ্যম ভেদে ভিন্নতা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রধানত চার ধরনের পিওএস মেশিন পাওয়া যাচ্ছে।
পিওএস প্রিন্টারঃ পিওএস প্রিন্টার মূলত খুচরা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীরা গ্রাহকদের কাছ থেকে কার্ড নিয়ে পেমেন্ট সংগ্রহ করে থাকেন। পরবর্তীতে গ্রাহককে খরচ বাবদ রসিদ পিওএস প্রিন্টারের মাধ্যমে প্রদান করেন। এই ধরনের প্রিন্টার গুলো ওজনে হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য হয়ে থাকে। তাই পিওএস প্রিন্টারকে হ্যান্ড-হোল্ড ডিভাইস ও বলা যায়। তাছাড়া এ ধরনের প্রিন্টার গুলো পোর্টেবল ইঙ্ক জেট, থার্মাল এবং ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার সহ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিওএস প্রিন্টার মেশিন গুলো রেস্টুরেন্টে ব্যবহার করা হয়ে।
পিওএস টার্মিনালঃ পিওএস টার্মিনাল ক্যাশিয়ার বা গ্রাহকদের লেনদেনকৃত পণ্যগুলিকে নির্বাচন করতে আইকন সহ একটি টাচ স্ক্রিন থাকে। তাছাড়া বিক্রয়ের পয়েন্টগুলি কেনাকাটা করা পণ্যের পরিমাণ এবং মূল্য গণনা করার জন্য একটি রেজিস্টার, টাকা এবং কয়েন সংরক্ষণের জন্য একটি নগদ ড্রয়ার থাকে। পাশাপাশি টারমিনালে কার্ড সোয়াইপ করার জন্য একটি কার্ড রিডার, ট্যাপ বা চিপস ঢোকানোর জন্য, এবং সহজে একটি বার কোড স্ক্যানার থাকে। তাছাড়া পিওএস টার্মিনালের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে থেকে বা অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা করার জন্য গ্রাহক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে অর্থ আদান প্রদানের সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়।
অ্যান্ড্রয়েড হ্যান্ডহেল্ড পিওএস মেশিনঃ অ্যান্ড্রয়েড পিওএস মেশিন হলো একটি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে তৈরি পস মেশিন যা সহজে বহন করা যায়। এটিতে একটি নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা সম্পন্ন ইন্টারফেস এবং একটি স্মার্টফোনের মতো একটি বড় স্ক্রিনসহ তৈরি করা। এই ধরনের পিওএস মেশিন দিয়ে বেশ কয়েকটি অ্যাপকে চালানো যায়, ফলে ডেলিভারি বা অর্থপ্রদানের অ্যাপ চালানোর জন্য একটি পৃথক ফোনের প্রয়োজন হয় না। অ্যান্ড্রয়েড পিওএস মেশিন রসিদ প্রিন্টার, বারকোড স্ক্যানার, গ্রাহককে স্ক্রিনে প্রদর্শন করা, ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট করার টার্মিনাল , এবং একটি নগদ ড্রয়ার সহ বিভিন্ন ডিভাইসের সাথে সংযোগ প্রদান করার সক্ষমতা রয়েছে।
অল-ইন-ওয়ান টাচ স্ক্রীন পিওএস মেশিনঃ সাধারণ পিওএস মেশিনের থেকে অল ইন ওয়ান টাচস্ক্রিন পিওস মেশিন গ্রাহক বা কর্মীদের দ্বারা ক্রয় করা তথ্য, গ্রাহকের নিজস্ব তথ্য বা বিক্রয়ের তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য দ্রুত ও সহজ একটি মাধ্যম। বর্তমানে বিডিতে অল-ইন-ওয়ান পিওএস টাচস্ক্রিন মেশিন সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন। এই ধরনের পিওএস মেশিন যেকোনো সেলার পয়েন্টে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া অল-ইন-ওয়ান POS মেশিন হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার উভয় একত্রে পাওয়া যায়। এই ধরনের পিওএস মেশিনের টাচ মনিটার বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে। তবে ১৫-ইঞ্চি মনিটার যুক্ত অল ইন ওয়ান পিওএস মেশিন খুচরা এবং রেস্তোরাঁর জন্য ভালো হবে।
পজ মেশিন কেনার পূর্বে করণীয় কি?
হিসেবের সহজলভ্যতা, ব্যবসাকে গতিশীল, এবং নিরাপত্তার স্বার্থে তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য পিওএস মেশিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই পিওএস মেশিন কেনার পূর্বে কিছু বিষয় নিজে থেকে যাচাই করে প্রয়োজন অনুযায়ী পিওএস কেনা উচিত। পিওএস মেশিন কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই যে বিষয়গুলো যাচাই করে নিতে হবে।
- ব্যবসার ক্ষেত্র সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং ব্যবসা সাথে পিওএস মেশিন যথেষ্ট কাজে আসবে কিনা সে বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে।
- যে পিওএস মেশিন টি ক্রয় করতে চাচ্ছেন তা আপনার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত সিস্টেম সফটওয়্যার তৈরি কিনা সে বিষয়ে ভালো ভাবে ধারণা নিতে হবে।
- তাছাড়া, কাজের পরিধি অনুযায়ী দ্রুততর এবং নির্ভরযোগ্য পিওএস মেশিন নির্বাচন করুন।
- ব্যবসা বৃদ্ধি পেলে পিওএস মেশিন আপগ্রেড করা যাবে কিনা সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া।
বাংলাদেশে পিওএস মেশিনের দাম কত?
বাংলাদেশে পিওএস মেশিনের দাম ধরন, সফটওয়্যার সিস্টেম, হার্ডওয়্যার, টাচ বা নন টাচ এবং মনিটরের সাইজের উপর নির্ভর করে ৭,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা মধ্য থেকে শুরু হয়। তবে, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দ্রুত রিড করা, দ্রুত গতিতে তথ্য সংরক্ষণ, এবং টাচ সুবিধা সম্পন্ন পিওএস মেশিনের দাম ২১,০০০ টাকা থেকে ২৫,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তাছাড়া, পস টার্মিনালগুলোর দাম ৫০,০০০ টাকা থেকে ৬০,০০০ টাকা মধ্য থেকে শুরু হয়।