দ্রবীভূত অক্সিজেন মিটার কেনাকাটা
ডিসলভড অক্সিজেন মিটার হচ্ছে এমন এক ধরনের ডিভাইস যা পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘনত্ব পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। বিডিতে ডিসলভড অক্সিজেন মিটার সাধারণত ডিও মিটার নামে বেশি পরিচিত। এই ধরণের মিটার বাংলাদেশে মূলত জলাশয়ে মাছ চাষ, বর্জ্যযুক্ত পানির বিশুদ্ধকরণে এবং ল্যাবরেটরিতে গবেষণার পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বিডিতে হ্যাচ, হানা, লুট্রন এবং ওয়াইএসআইসহ জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ডিও মিটার পাওয়া যায়। তাছাড়া বর্তমানে মাছের বৃদ্ধি, বেঁচে থাকা, পানির বর্জ্য নিষ্কাশনে ট্যাংকের বায়ুচলাচলে অক্সিজেন লেভেল এবং ল্যাবরেটরিতে অণুজীবের অক্সিজেন ব্যবহারের হার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যকর এবং নির্ভুল তথ্য প্রদান করায় বিডিতে ডিও মিটার ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বাংলাদেশে কি কি ধরণের ডিও মিটার পাওয়া যায়?
ডিও মিটার সাধারণত নির্দিষ্ট প্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধরণগুলো হচ্ছেঃ
পোলারোগ্রাফিক ডিও মিটারঃ দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘনত্ব পরিমাপ করতে এই ধরনের ডিও মিটার পোলারোগ্রাফিক সেন্সর ব্যবহার করে। পোলারোগ্রাফিক ডিও মিটার সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার জন্য নিয়মিত ক্যালিব্রেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।
গ্যালভানিক ডিও মিটারঃ গ্যালভানিক ডিও মিটার দুটি ইলেক্ট্রোড সহ একটি সেন্সর ব্যবহার করে যা মূলত একটি ঝিল্লি দ্বারা পৃথক করা হয়। এই ধরণের ডিও মিটার ব্যবহার করা সহজ সেন্সরের স্থায়িত্ব কম হয়ে থাকে।
অপটিক্যাল ডিও মিটারঃ লুমিনেসেন্ট সেন্সরের সমন্বয়ে অপটিক্যাল ডিও মিটার তৈরি করা হয়েছে। যা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে নির্গত হওয়া আলোর পরিমাণ দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘনত্বের পরিমানের পরিমাপ করে থাকে। বর্তমানে বিডিতে অপটিক্যাল ডিও মিটারের দাম পোলারোগ্রাফিক বা গ্যালভানিক ডিও মিটারের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
ক্লার্ক টাইপ ডিও মিটারঃ প্ল্যাটিনাম ক্যাথোড এবং সিলভার অ্যানোডের সমন্বয়ে একটি সেন্সর দিয়ে ক্লার্ক টাইপ ডিও মিটার তৈরি করা হয়েছে। যা সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত ক্যালিব্রেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হয়।
অ্যাম্পেরোমেট্রিক ডিও মিটারঃ অ্যাম্পেরোমেট্রিক ডিও মিটার মূলত কার্যকরী ইলেক্ট্রোড এবং রেফারেন্স ইলেক্ট্রোডের সমন্বয়ে একটি সেন্সর ব্যবহার করে থাকে। এই ধরণের ডিও মিটার সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য পরিমাণ প্রদান করে থাকে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে অন্যান্য ধরনের ডিও মিটারের তুলনায় অ্যাম্পেরোমেট্রিক ডিও মিটারের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে।
ডিসলভড অক্সিজেন মিটারের সুবিধা কি?
পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপের জন্য ডিসলভড অক্সিজেন মিটার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। যা বাংলাদেশে বিভিন্ন শিল্পে এবং পরিবেশগত পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিও মিটার ব্যবহার যেসব সুবিধা পাওয়া যাবেঃ
- ডিও মিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য পরিমাপ প্রদান করে থাকে।
- পানিতে চাষ আবাদ, বর্জ্য পানি বিশুদ্ধকরণ এবং ল্যাবরেটরিতে পরিক্ষা নীরিক্ষা করার ক্ষেত্রে অক্সিজেনের নির্ভুল পরিমাপ প্রদান করে।
- ডিসলভড অক্সিজেন মিটার দ্রুত ও সহজেই ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহারের পাশপাশি পরীক্ষাগারে দ্রুত পাঠ নেওয়া যাবে।
- ডিও মিটারে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নমুনা দ্রবনে কোনো পরিবর্তন কিংবা দূষণ সৃষ্টি হয় না।
- মিঠা পানি, সমুদ্রের পানি এবং বর্জ্য জল সহ বিস্তৃত পানির নমুনায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করতে ডিসলভড অক্সিজেন মিটার ব্যবহার করা যায়।
- ডিও মিটার অন্যান্য বিশ্লেষণাত্মক ডিভাইসের তুলনায় বিডিতে তুলনামূলকভাবে কম খরচে পাওয়া যায়। যা ছোট ব্যবসা, ল্যাবরেটরিতে গবেষণা এবং পরিবেশগত পর্যবেক্ষণের জন্য সাশ্রয়ী বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায়৷
কিভাবে ডিও মিটার ব্যবহার করবেন?
ডিও মিটার ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে প্রাপ্ত মডেল এবং ধরণের উপর নির্ভর করে ব্যবহারের পদক্ষেপ পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাছাড়া সঠিক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিমাপ নিশ্চিত করতে সঠিক সেন্সরযুক্ত ডিও মিটার ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। ডিসলভড অক্সিজেন মিটার ব্যবহার করার জন্য যেসব পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবেঃ
সঠিক ক্যালিব্রেশনঃ ব্যবহারের আগে ডিও মিটারটি প্রথমে ক্যালিব্রেট করতে হবে। ফলে মিটার যে সঠিক পরিমাপ প্রদান করছে তার নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।
নমুনা প্রস্তুতিঃ তারপর পরিষ্কার পাত্রে নমুনা পানি সংরক্ষন করতে হবে। যদি পানিতে কোনো ধ্বংসাবশেষ বা কণা থাকে সেক্ষেত্রে ডিও মিটারে পরীক্ষা করার আগে নমুনা পানি ফিল্টার করে নিতে হবে।
সেন্সর প্রস্তুতিঃ তারপর ডিও মিটার চালু করে সেন্সর প্রস্তুত করতে হবে। কারণ পরবর্তীতে নমুনা দ্রবণে সেন্সরকে ভিজিয়ে নিতে হবে।
পরিমাপ যাচাইকরণঃ নমুনা দ্রবণটিতে সেন্সর নিমজ্জিত করে রিডিং স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ডিও মিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘনত্ব সাধারণত এমজি/এল বা পিপিএম ইউনিটে প্রকাশ করে থাকে।
নমুনা তথ্য রেকর্ডঃ নমুনা দ্রবণের পাশপাশি পরিমাপের অবস্থান এবং সময় সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য রেকর্ড করতে হবে।
ক্লিনআপঃ ব্যবহারের পরে সাধারণ পানি দিয়ে সেন্সরটি ধুয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
ডিসলভড অক্সিজেন মিটারের দাম কত?
বাংলাদেশে ডিসলভড অক্সিজেন মিটারের দাম মডেল, ব্র্যান্ড এবং বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হয়ে থাকে। বিডিতে এন্ট্রি লেভেলের সাধারণ ডিও মিটার দাম ১১,০০০ টাকা থেকে শুরু হয় যা মূলত প্রোব ইন্টারফেস, এইচডি বেক লাইট ডিসপ্লে, ৩০ সেকেন্ডের কম রেসপন্স টাইম এবং ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাজ করে থাকে। এছাড়াও মিড রেঞ্জের ডিও মিটারের দাম ২৫,০০০ টাকা থেকে শুরু হয় যা সাধারণত ডিজিটাল মিটার, ডেটা লগিং, অটোমেটিক ক্যালিব্রেশন, পানি প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং বেশি তাপমাত্রা ধারণ ক্ষমতা দিয়ে তৈরি। এছাড়াও বাংলাদেশে হাই-এন্ড ডিও মিটারের দাম ৮০,০০০ টাকা থেকে শুরু হয় যা মূলত গবেষণা ল্যাবরেটরিতে উচ্চ নির্ভুলতা দিয়ে উন্নত ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে।
ডিসলভড অক্সিজেন মিটার কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
ডিও মিটার কেনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী মডেল এবং প্রস্তুতকারক সম্পর্কে যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ডিসলভড অক্সিজেন মিটার কেনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যেসব বিষয় যাচাই করতে হবেঃ
১। পরিমাপের পরিসরঃ দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘনত্বের পরিসীমার সাথে ডিও মিটারের পরিমাপ সীমা যাচাই করতে হবে। কারণ বিডিতে ধরণ এবং মডেল অনুযায়ী ডিসলভড অক্সিজেন মিটারের পরিমাপ পরিসীমা কম বেশি হয়ে থাকে।
২। নির্ভুলতাঃ ডিও মিটারের নির্ভুলতা নির্ভরযোগ্য পরিমাপের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া উচ্চ স্তরের নির্ভুলতা সম্পন্ন ডিসলভড অক্সিজেন মিটার বাছাই করে নেওয়া উচিত যা শতকরা ৫ ভাগেরও কম ত্রুটি প্রদান করবে।
৩। রেসপন্স টাইমঃ অক্সিজেনের স্থিতিশীল অবস্থা থেকে রিডিং প্রদান করতে যে সময় লাগে তাই হচ্ছে ডিসলভড অক্সিজেন মিটারের রেসপন্স টাইম। কারণ দ্রুত রেসপন্স টাইম ডিও মিটারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে যেখানে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত পরিবর্তন হয়।
৪। সেন্সরের ধরনঃ পোলারোগ্রাফিক, গ্যালভানিক এবং অপটিক্যাল সেন্সর সহ বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের ডিও সেন্সর যুক্ত ডিও মিটার পাওয়া যায়। তাই প্রতিটি ধরণের নিজস্ব সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেজন্য প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সেন্সর টাইপ বাছাই করে নিতে হবে।
৫। স্থায়িত্বঃ কাজের পরিধির উপর নির্ভর করে ডিও মিটার এবং সেন্সরের স্থায়িত্ব বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বিডিতে ডিসলভড মিটার কেনার আগে অবশ্যই রূঢ়, আর্দ্রতার পাশাপাশি তাপমাত্রার পরিবর্তন সহ্য করার সক্ষমতা বিষয়ে যাচাই করে নেওয়া উচিত।
৬। ব্যবহারের সহজলভ্যতাঃ ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস রয়েছে কিনা ডিসলভড অক্সিজেন মিটারে তা ভালো ভাবে যাচাই করে নিতে হবে৷ কারণ সহজ এবং নির্ভুল পরিমাপ সক্ষমতা সম্পন্ন ডিও মিটার ব্যবহারকারীর সময় বাঁচানোর পাশাপাশি ত্রুটির সম্ভাবনা অনেকাংশে কম হবে।
৭। দাম বিবেচনাঃ বাংলাদেশে ডিও মিটারের বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষমতার উপর নির্ভর করে দামের পার্থক্য দেখা যায়। তাই ডিসলভড অক্সিজেন মিটার কেনার আগে বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য ডিও মিটার বাছাই করা উচিত যা বাজেটের মধ্যে থেকে ব্যবহারকারীর চাহিদা পূরণ করবে।
স্মার্ট সেন্সর যুক্ত ডিসলভড অক্সিজেন মিটারের দাম কত?
স্মার্ট সেন্সর যুক্ত ডিসলভড অক্সিজেন মিটারের দাম নির্দিষ্ট মডেল এবং ধরণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে স্মার্ট সেন্সর যুক্ত ডিও মিটারের দাম ৪১,০০০ টাকা থেকে শুরু যা স্মার্ট সেন্সরের পাশাপাশি ডেটা লগিং, অটোমেটিক ক্যালিব্রেশন এবং মোবাইল ডিভাইস বা কম্পিউটারে সাথে ব্লুটুথ সংযোগের মতো উন্নত ফিচারযুক্ত রয়েছে।