অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনাকাটা
অক্সিজেন সংগ্রহ করে রাখার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। অক্সিজেন সিলেন্ডারের ব্যবহার করে হাসপাতালে ফুসফুসের রোগীদের ও যাদের রক্তে অক্সিজেন পরিমাণ কমে যায় তাদের অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। আবার, বাংলাদেশ সহ বিশ্বে ডুবুরিরা পানির নিচে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে। এছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজেও বিশেষ অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবহার হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে কোন ধরনের অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়?
বাংলাদেশের মেডিকেল গুলোতে সাধারণত স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো তুলনামূলক হালকা বিধায় সহজে বহন করা যায়। তবে, উভয় সিলিন্ডারে ৯৯.৫% বিশুদ্ধ অক্সিজেন থাকে যা হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য উপযোগী। আবার, অনেক অক্সিজেন সিলিন্ডার আকারে ছোট হয় বিধায় মিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার নামে পরিচিত। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন সিলিন্ডার গুলোতে ৯০% এর কম বিশুদ্ধ অক্সিজেন থাকে যা শুধুমাত্র শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
অক্সিজেন সিলিন্ডার কখন ব্যবহার করা উচিৎ?
রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা উচিৎ নয়। বিশেষ পালস অক্সিমিটারের মাধ্যমে রোগীর দেহের রক্তের অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। এই ডিভাইসটি দেহের অক্সিজেন স্যাচুরেশন বা এসপিও২ নির্ণয় করে থাকে। যদি এসপিও২ এর মাত্রা ৯৫ থেকে ৯২ শতাংশের নিচে হয় তাহলে ডাক্তার অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করার পরামর্শ দিবেন। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হবে।
অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার আগে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
- ডাক্তারেরে পরামর্শ অনুযায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডার নির্বাচণ করতে হবে।
- প্রতি মিনিটে কত লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হবে বা এলপিএম এর সাথে মিলিয়ে কিনতে হবে।
- অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ড্রাগ লাইসেন্স নম্বর অবশ্যই দেখে কিনতে হবে। কারন, মানুষের ব্যবহারের জন্য যে সকল অক্সিজেন তৈরি হয় সেগুলতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ড্রাগ লাইসেন্স নম্বর থাকে। অন্যদিকে, শিল্পকারখানায় ব্যবহারকৃত অক্সিজেন সিলিন্ডার গুলোতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ড্রাগ লাইসেন্স নম্বর থাকে না
- অক্সিজেনের উৎপাদন মেয়াদ দেখে কিনতে হবে।
- প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ক্যানোলা বা অক্সিজেন মাস্ক কিনতে হবে।
- যদি শুধু জরুরি প্রয়োজনে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয় তাহলে পোর্টেবল বা মিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার চেষ্টা করুন। তাহলে, যেকোন যায়গায় বহন করেত সহজ হবে।
অক্সিজেন সিলিন্ডার কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?
অক্সিজেন সিলিন্ডার গুলো অক্সিজেন থেরাপির মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু, অক্সিজেন সিলিন্ডার সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে রোগীর অবস্থা আরো গুরুতর হতে পারে। তাই অবশ্যই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম জানতে হবে। অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম উল্লেখ করা হলঃ
- হাতের সাহায্যে অক্সিজেন সিলেন্ডারের ভেল্ভটি চালু করুন। তবে, প্রয়োজনে রেঞ্চের ব্যবহার করতে পারেন
- অক্সিজেন সিলেন্ডারে পর্যাপ্ত অক্সিজেন আছে কিনা তা যাচাই করতে অক্সিজেন প্রেসার মিটারটি লক্ষ করুন।
- অক্সিজেন ফ্লো-রেগুলেটর নবের মাধ্যমে অক্সিজেন প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করুন এবং ডাক্তারের নির্ধারিত করা ফ্লো রেটে নিয়ে আসুন।
- অনুনাসিক ক্যানোলাটি বা অক্সিজেন মাস্কটি রোগীর মুখে লাগিয়ে দিন।
অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্কতা
অক্সিজেন সিলিন্ডার যেমন মানুষের জন্য উপকারী তেমনি এর ব্যবহারের অসতর্কতায় হতে পারে কঠিন রোগ বা প্রাননাশী দুর্ঘটনা। কিছু বিষয় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। যেমনঃ
- নিয়মিত অক্সিজেন সিলিন্ডারের টিউব পরিষ্কার করতে হবে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের টিউব নিয়মিত পরিষ্কার না করলে তাতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক তৈরি হতে পারে যা হতে পারে গুরুতর সংক্রমণ রোগের উৎস।
- অক্সিজেন হলো দাহ্য পদার্থ ফলে হিটার ও অগ্নিশিখার সংস্পর্শে আসলে সহজে বিস্ফোরণ হতে পারে। তাই, অগ্নিশিখার মত কোন কিছু এটার কাছে নেওয়া যাবে না। এমনকি অক্সিজেন সিলিন্ডারের আশেপাশে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অক্সিজেন ব্যবহারের সময় পারফিউম, অ্যারোসল, পেট্রোলিয়াম পন্য, ও তেলের তৈরি পন্য ব্যবহার করা যাবে না।
বিডিতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম কত?
বিডিতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ভিতরে অক্সিজেনের পরিমাণ ও প্রতি মিনিটে কত লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে তার উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারিত হয়। বিডিতে সাধারণত ২০,০০০ লিটারের অক্সিজেন সিলিন্ডার বেশি পাওয়া যায় যার দাম ১৮,০০০ টাকা থেকে ২২,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এলপিএম এর উপর ভিত্তি করা দামের তারতম্য দেখা যায়। আবার, চায়না ব্র্যান্ডের অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো ৬,০০০ টাকা থেকে ১২,৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।