মাল্টিমিটার কেনাকাটা
ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহার করে একাধিক বৈদ্যুতিক মান যেমন কারেন্ট (এএমপিএস), ভোল্টেজ (ভোল্ট), এবং প্রতিরোধ (ওএইচএমএস) নির্ণয় করা হয়। বিশেষ করে বিডিতে ইলেকট্রিক্যাল / ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিতে টেকনিশিয়ানরা ডায়গনিস্টিক টুল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া, ইলেকট্রিক ডিভাইসের সমস্যা নির্ণয় ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয়। তুলনামূলক সঠিক ফলাফল প্রদান করে বিধায় বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল মাল্টিমিটার খুবি জনপ্রিয়। বর্তমানে, প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ধরণের ডিজিটাল মাল্টি মিটার বিডিতে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
ডিজিটাল মাল্টিমিটারের দাম কত?
বাংলাদেশে ডিজিটার মাল্টিমিটারের দাম এর বৈশিষ্ট্য ও গুণমানের ভিত্তিতে কমবেশী হয়ে থাকে। বর্তমানে, বিডিতে ডিজিটাল মাল্টিমিটারের দাম ২৬০ টাকা থেকে শুরু যা একটি ছোট সাইজের ভোল্ট মিটার এবং ৭২০ভি পর্যন্ত এসি এবং ১০০০ভি পর্যন্ত ডিসি ভোল্টেজ পরিমাপ করতে সক্ষম। তাছাড়া, অটো হোল্ড, রিলেটিভ ভ্যালু, উচ্চ- ফ্রিকোয়েন্সি সম্পন্ন ডিজিটাল মাল্টিমিটার বাংলাদেশে পাওয়া যায় যার দাম তুলনামূলক বেশী হয়ে থাকে।
ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহারের সুবিধা কি কি?
ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহারের কতিপয় বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে। সুবিধা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
নির্ভুল ফলাফলঃ ডিজিটাল মাল্টিমিটার সাধারণত ±০.০১ শতাংশ থেকে ±০.০৫ শতাংশ নির্ভুল ফলাফল প্রদান করে থাকে। ফলে, বেশীরভাগ ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ানরা ডায়গনিস্টিক টুল হিসেবে ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহারকে প্রাধান্য দেয়।
অটো হোল্ড অপশনঃ ডিজিটাল মাল্টিমিটারে অটো হোল্ড অপশন থাকে যা স্থিতিশীল বিদ্যুৎ পরিমাপ করে স্বয়ংক্রিয় ভাবে হোল্ড হয়ে যায় এবং প্রদর্শিত করে। ফলে, বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায়।
রিডিং ও ইন্টারপোলেশন ত্রুটি হ্রাসঃ ডিজিটাল মাল্টিমিটার ক্রমাগত সঠিক ফলাফল প্রদান করতে সক্ষম কেননা এতে রিডিং এবং ইন্টারপোলেশন ত্রুটি হ্রাস সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এলসিডি ডিসপ্লেঃ ডিজিটাল মাল্টিমিটারে এলসিডি ডিসপ্লে অন্তর্ভুক্ত থাকে ফলে, কারেন্ট (এএমপিএস), ভোল্টেজ (ভোল্ট), এবং প্রতিরোধ (ওএইচএমএস) বৈদ্যুতিক মান সংখ্যায় ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত হয়।
কন্ট্রোল প্যানেলঃ নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কন্ট্রোল প্যানেল দ্বারা মোড পরিবর্তন করা যায়। আর, আলাদা কন্ট্রোল প্যানেল থাকায় ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহার সহজ এবং এর ফলাফল বুঝতেও সময় ব্যয় হয় না।
সাইজে ছোটঃ ডিজিটাল মাল্টিমিটার মূলত আকারে ছোট হয়ে থাকে বিধায় পকেটে করেই যেকোনো জায়গায় বহনযোগ্য।
এছাড়াও, ডিজিটাল মাল্টিমিটারে স্যাম্পলিং রেট ৩ বার / সেকেন্ড, এসি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডউইথ, অটো পাওয়ার বন্ধ, ধারাবাহিকতা পরিসরে কম পাওয়ার ওহম, ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ,অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ডিজিটাল মাল্টিমিটার কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
১। ডিজিটাল মাল্টিমিটার কেনার আগে অবশ্যই এর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কারেন্ট (এএমপিএস), ভোল্টেজ (ভোল্ট), এবং প্রতিরোধ (ওএইচএমএস) পরিমাপ পরিসীমা বিবেচনা করতে হবে।
২। কেনার আগে অবশ্যই ডিজিটাল মাল্টিমিটার সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। এবং, ডিজিটাল মাল্টিমিটার কতটুকু নির্ভুল ফলাফল প্রদর্শন করছে তা বিবেচনা করতে হবে।
৩। প্রয়োজন অনুসারে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত আছে কিনা তা বিবেচনা করে ডিজিটাল মাল্টিমিটার সংগ্রহ করতে হবে।
৪। ডিজিটাল মাল্টিমিটারের সার্কিটের শক্তি ক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে। কেননা সর্বাধিক কতটুকু ভোল্টেজ ডিজিটাল মাল্টিমিটার ঝুঁকি ছাড়াই সহ্য করতে পারে তার ভিত্তিতে এটি ব্যবহার করতে হবে।
৫। ডিজিটাল মাল্টিমিটারের নির্মিত উপাদান বা গুণমানের বিবেচনায় তা নির্বাচন করতে হবে। কেননা উন্নত মানের উপাদান দ্বারা ডিজিটাল মাল্টিমিটার তৈরি করা হলে তা দীর্ঘসময় ব্যবহার করা যায়।
ডিজিটাল মাল্টিমিটার কিভাবে ব্যবহার করে?
ডিজিটাল মাল্টিমিটারের মাধ্যমে ভোল্টেজ পরিমাপ করা, কারেন্ট টেস্টিং, এবং রেসিস্টেন্স পরিমাপ করা হয়। তাই, নির্দিষ্ট একক পরিমাপের ক্ষেত্রে ভোল্ট মাল্টিমিটার আলাদা পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে হয়।
এসি বা ডিসি ভোল্টেজ পরিমাপের ক্ষেত্রে ব্যবহারবিধি
- স্টেপ ১ঃ কালো টেস্ট লিড কম টার্মিনালে প্লাগ করুণ এবং লাল টেস্ট লিড ভি টার্মিনালে প্লাগ করুন।
- স্টেপ ২ঃ এসি বা ডিসি ভোল্টেজ পরিমাপের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অ্যাঙ্গেলে ডায়াল সেট করতে হবে। এসি ভোল্টেজ পরিমাপের ক্ষেত্রে ডায়াল ভি~ এর দিকে অ্যাঙ্গেল করতে হবে। অন্যদিকে, ডিসি ভোল্টেজ পরিমাপ করতে হলে ভি⎓ এর দিকে অ্যাঙ্গেল করে রাখতে হবে।
- স্টেপ ৩ঃ নির্ভুল ফলাফল পেতে ডিভাইসের ভোল্টেজ অনুসারে সর্বোচ্চ ভোল্টেজ রেঞ্জ সেট করুন।
- স্টেপ ৪ঃ ডিভাইসের বা শক্তি উৎসের নেগেটিভ অংশে কালো প্রোব স্পর্শ করান এবং পজিটিভ অংশে লাল প্রোব স্পর্শ করান।
- স্টেপ ৫ঃ এখন আপনি ডিভাইসের বা শক্তি উৎসের সঠিক ভোল্টেজ ডিজিটাল মাল্টিমিটারের এলসিডি ডিসপ্লেতে দেখতে পারবেন।
কারেন্ট টেস্টিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহারবিধি
- স্টেপ ১ঃ লাল টেস্ট লিড এ বা এমএ টার্মিনালে এবং কালো টেস্ট লিড কম টার্মিনালে প্লাগ করুণ।
- স্টেপ ২ঃ যে ডিভাইস বা সার্কিটের কারেন্ট পরিমাপ করবেন সেটার একটি তার বিচ্ছিন্ন করুন।
- স্টেপ ৩ঃ বিচ্ছিন্ন কৃত তারের এক পাশে কালো এবং অন্যপাশে লাল টেস্ট প্রোবটি স্পর্শ করান। ফলে, ডিভাইসে প্রবাহিত হওয়া কারেন্টের পরিমাণ আপনি ডিজিটাল মাল্টিমিটারের ডিসপ্লেতে দেখতে পাবেন।
রেসিস্টেন্স পরিমাপের ক্ষেত্রে ব্যবহারবিধি
- স্টেপ ১ঃ লাল টেস্ট লিড Ω বা ওহম টার্মিনালে এবং কালো টেস্ট লিড কম টার্মিনালে প্লাগ করুণ।
- স্টেপ ২ঃ ডায়ালটি মাল্টিমিটার রেসিস্টেন্স স্কেলে অ্যাঙ্গেল করুন অথবা Ω চিহ্ন বা ওহম লেখার দিকে অ্যাঙ্গেল করে রাখুন।
- স্টেপ ৩ঃ নির্ভুল ফলাফল পেতে ওহম প্রত্যাশা অনুসারে নির্দিষ্ট ওহম সেট করে রাখুন। এবং যদি ওহম রেঞ্জ জানা না থাকে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ওহম এ সেট করে রাখতে হবে।
- স্টেপ ৪ঃ রেসিস্টর এর দুই প্রান্তে লাল ও কালো প্রোব স্পর্শ করাতে হবে। এবং সাথে সাথে ডিজিটাল মাল্টিমিটার রেসিস্টেন্স পরিমাপ করে ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত করবে।
ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহারের জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন আছে কি?
ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহারের কতিপয় নির্দেশনাবলি অনুসরণ করে যেকেও ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহার করতে পারে। এর জন্য আলাদা কোন দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন নেই। তবে, ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই এর সাথে থাকা ইউজার গাইড ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। আর, বিশেষ করে ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউজার গাইডে উল্লেখিত সতর্কতাবলি অবলম্বন করতে হবে।
অ্যানালগ নাকি ডিজিটাল মাল্টিমিটার ভালো হবে?
ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর নির্ভুল ফলাফল প্রদর্শনের সক্ষমতা, অটো হোল্ড অপশন, রিডিং ও ইন্টারপোলেশন ত্রুটি হ্রাস, সহজ কন্ট্রোল প্যানেল, দ্রুততর সময়ে ফলাফল প্রদর্শন, এবং সাইজে ছোট হওয়ায় বাংলাদেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছে। ফলে, আজকাল বেশীরভাগ ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যবহার করাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তবে, অ্যানালগ মাল্টিমিটার তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায় এবং দীর্ঘদিন অনায়াসে ব্যবহার করা যায় বিধায় বিডিতে এই মিটারের আলাদা ফ্যান বেজ তৈরি হয়েছে। সর্বোপরি বলা যায় ডিউজিটাল মাল্টিমিটার আধুনিক সময়ে তাল মিলিয়ে চলতে পারে এবং দ্রুততর সময়ে ফলাফল প্রদর্শন করতে পারে অন্যদিকে অ্যানালগ মাল্টিমিটার দীর্ঘ দিন অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
অ্যানালগ মাল্টি মিটারের দাম কত?
বাংলাদেশে অ্যানালগ মাল্টিমিটারের দাম এর বৈশিষ্ট্য ও গুণমানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিডিতে অ্যানালগ মাল্টিমিটারের দাম ৪০০ টাকা থেকে শুরু যা উন্নত গুণমান সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে, উচ্চ ভোল্টেজ পরিমাপ যোগ্য অ্যানালগ মাল্টিমিটারের দাম তুলনামূলক বেশী হয়ে থাকে।