মাল্টি প্লাগ কেনাকাটা
বাংলাদেশে মাল্টি প্লাগের ব্যবহার সর্বত্র লক্ষনীয়। এটি মূলত একটি প্লাগের মাধ্যমে একাধিক সকেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিধায় মাল্টি প্লাগ নামে পরিচিত। তবে অনেকে এটিকে এক্সটেন্সান ওয়্যার বলে কারন অনেক মাল্টি প্লাগের সাথে লম্বা তার সংযুক্ত থাকে ফলে ওয়াল সকেট থেকে অনেক দূরবর্তী স্থানেও ইলেকট্রিক সংযোগ দেয়া যায়।
মাল্টি প্লাগ কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
১। সকেটঃ মাল্টি প্লাগ কেনার আগে অবশ্যই এর পিন যেন ওয়াল সকেটের পিনের সাথে মিলে দেখে কিনতে হবে। বাংলাদেশে চিকন, মোটা বিভিন্ন ধরনের পিনের মাল্টি প্লাগ পাওয়া যায় এবং এর সকেটগুলো বাজারে সাধারণত ত্রি-পিন সকেট, টু-পিন সকেট এবং মাল্টি-সকেট নামে পরিচিত।
২। পাওয়ার ক্যাপাসিটিঃ ২২০-ভোল্টেজের সাথে ব্যবহারকৃত মাল্টি প্লাগ গুলো সর্বোচ্চ ৩,৫০০ ওয়াট পর্যন্ত পাওয়ার সরবরাহ করতে পারে। আবার, সকল মাল্টি প্লাগ সমান হারে পাওয়ার সরবরাহ করতে পারে না। তাই, অবশ্যই নিজের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ও ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের সাথে মিলিয়ে মাল্টি প্লাগ কিনতে হবে। বেশি পাওয়ার আউটপুট প্রয়োজন হলে মাল্টি প্লাগ কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন।
৩। সার্জ প্রোটেক্টরঃ সার্জ প্রোটেক্টর সাধারণত বিদ্যুতের ভোল্টেজের উঠা নামা চলাকালীন ও বজ্রপাতের সময় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখে।তাই, রাউটার বা অনলাইন ডিভাইসের জন্য মাল্টি প্লাগ কেনার ক্ষেত্রে সার্জ প্রোটেক্টর দেখে কেনা যেতে পারে।
৪। ওভারলোড প্রটেক্টরঃ ওভারলোড প্রটেক্টর মূলত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখে। মাল্টি প্লাগে ওভারলোড প্রটেক্টর না থাকলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহকালীন সময় আগুল লাগার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৫। ইনডিকেটর লাইটঃ বেশিরভাগ মাল্টি প্লাগে এক বা একাধিক ইনডিকেটর লাইট থাকে। ইনডিকেটর লাইটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা সহজে বোঝা যায়। কিছু কিছু মাল্টি প্লাগে প্রতিটি সকেটের জন্য আলাদা ইনডিকেটর লাইট থাকে বিধায় সেসকল মাল্টি প্লাগের কোন একটি বা একাধিক সকেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে কিনা তা আলাদা ভাবে বোঝা যায়। অধিক ইনডিকেটর লাইট সম্পন্ন মাল্টি প্লাগই কেনা উচিৎ।
৬। সুইচঃ বাংলাদেশে ব্যবহারকৃত বেশিরভাগ মাল্টি প্লাগে এক বা একাধিক সুইচ থাকে। মাল্টি প্লাগ প্রয়োজনে সুইচের মাধ্যমে বন্ধ করা যায়। কিছু মাল্টি প্লাগে প্রতিটি সকেটের জন্য আলাদা সুইচ থাকে বিধায় প্রয়োজনে ও অপ্রইয়োজনে নির্দিষ্ট সকেট চালু ও বন্ধ করা যায়। একাধিক সুইচ সম্পন্ন মাল্টি প্লাগই তুলনামূলক ভালো।
৭। ওয়্যারিংঃ মাল্টি প্লাগের তারের কোয়ালিটি অবশ্যই উন্নত মানের হতে হবে। তারের কোয়ালিটি দুর্বল হলে অধিক পাওয়ারের ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের সাথে ব্যবহার করা যাবে না। মাল্টিপ্লাগের তার দুর্বল হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়তে পারে। নিজের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী তারের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে মাল্টি প্লাগে কেনা উচিৎ। আবার, প্রয়োজনে তারবিহীন মাল্টি প্লাগ কিনতে পারেন।
মাল্টি প্লাগে ভোল্ট মিটার কি কাজ করে?
বাংলাদেশে যেসকল মাল্টি প্লাগ বা মাল্টি সকেট পাওয়া যায় এর মধ্যে বেশিরভাগ মাল্টি প্লাগে ভোল্ট মিটার দেখা যায়। বেশিরভাগ মাল্টি প্লাগে এনালগ ভোল্ট মিটার থাকে যা বিদ্যুতের ভোল্টেজ পরিমাপ করে প্রদর্শন করে বিধায় বিদ্যুতের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়। আবার, কিছু কিছু মাল্টি প্লাগে ডিজিটাল এলসিডি ভোল্ট মিটার থাকে যা বিদ্যুতের ভোল্টেজের তথ্য প্রদর্শন করে।
ভালো মাল্টি প্লাগ কেন প্রয়োজন?
বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন যায়গায় ছোট থেকে বড় আগুন লাগার ঘটনা চোখে পড়ার মত যার মধ্যে অধিকাংশ ঘটনা লুজ কানেকশন ও শর্ট সার্কিটের কারণে ঘটে। আবার, দূর্বল মাল্টি প্লাগ ব্যবহারে ফলে আপনার মূল্যবান ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই, শর্ট সার্কিট প্রতিরোধে অবশ্যই ভাল মানের মাল্টি প্লাগ ব্যবহার করতে হবে।
ফিউজসহ কি মাল্টি প্লাগ কেনা উচিত?
বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন ভাল কিছু মাল্টি প্লাগে ফিউজ থাকে। এগুলো সাধারণ পাওয়ার সার্জ প্রতিরোধ করতে পারে ফলে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস নষ্ঠ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে। এগুলোর দাম কিছুটা বেশি।
মাল্টি প্লাগ ব্যবহারের কিছু সতর্কতাঃ
- লম্বা তার যুক্ত মাল্টি প্লাগ বাচ্চাদের হাতের নাগালের বাইরে রাখুন।
- যে পোর্টগুলো ব্যবহৃত হয় না সেগুলো টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখুন। কিছু মাল্টি প্লাগে অটোমেটিক কাভার থাকে।
- কোন ধরনের পোড়া গন্ধ নাকে আসলে তৎক্ষণাৎ মাল্টি প্লাগটি চেক করুন এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করুন।
- প্রতিটি মাল্টি প্লাগের একটি নিদৃস্ট ক্ষমতা আছে সুতরাং এর বেশি লোড দেয়া যাবে না কারন এতে মারাত্তক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
- হাই লোড কাজের জন্য হাতে তৈরী লম্বা তারযুক্ত মাল্টি প্লাগ বানিয়ে নেয়া যেতে পারে।
- দামি ডিভাইসের জন্য সার্জ প্রটেক্টরযুক্ত মাল্টি প্লাগ কেনা যেতে পারে।
বিডিতে মাল্টি প্লাগের দাম কেমন?
বাংলাদেশে মাল্টি প্লাগের দাম সাধারণত মাল্টি প্লাগের পোর্ট সংখ্যা, মাল্টি প্লাগের তারের দৈর্ঘ্য, মাল্টি প্লাগের কাঠামোর উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিডিতে মাল্টি প্লাগ ২০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।