মনিটর কেনাকাটা
মনিটর একটি কম্পিউটারের একটি অপরিহার্য অংশ। একটি ভালো মনিটর কিনলে শুধু কিছু অর্থ সাশ্রয় হবে না কিন্তু এটি ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করবে এবং চোখের চাপ কমবে। অধিকন্তু, বেশিরভাগ ডেস্কটপ কম্পিউটার এর জন্য একটি মনিটরের প্রয়োজন হয় তাই এটি বাংলাদেশে কম্পিউটার মনিটর হিসাবে সুপরিচিত এবং কম দামে কেনা যায়। এই টিপস আপনাকে বাংলাদেশে মনিটরের দাম এবং স্পেসিফিকেশন তুলনা করে একটি ভালো মনিটর কিনতে সাহায্য করবে
মনিটর এর সুবিধা কি?
- ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য ভিজ্যুয়াল দেখার জন্য মনিটর সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- গেমিং এবং বিনোদনমূলক ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে উচ্চ রিফ্রেশ রেট, কম রেসপন্স টাইম এবং প্রাণবন্ত রঙ প্রদান করে।
- গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফটো এডিটিং এর মতো কাজে মনিটর ভালো ভিজুয়্যাল প্রদান করে এবং সঠিক রঙ প্রদান করে।
- মনিটর ল্যাপটপ, ডেস্কটপ এর সাথে মনিটর হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি টিভি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
- তাছাড়া, মনিটর ব্যবহারে কম বিদ্যুৎ খরচ হয়, যা কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সামগ্রিক খরচ কমাতে সাহায্য করে।
কত বড় স্ক্রিন হলে ভাল হয়?
২২ ইঞ্চি থেকে ২৪ ইঞ্চিঃ গেমারদের একটি গেমিং মনিটর প্রয়োজন। গেমিং মনিটরগুলির জন্য, এটি বলা যেতে পারে যে মনিটর যত বড় হবে, খেলতে তত ভাল তাই ২৪ ইঞ্চি মনিটর, ২৭ ইঞ্চি মনিটর এবং ৩২ ইঞ্চি মনিটর কেবল গেমিং এর জন্যই ভাল নয় ডিজাইনাররা এর থেকে সুবিধা পেতে পারেন। একটি গেমিং মনিটর কেনার সময়, আপনাকে রেজোলিউশন, রিফ্রেশ রেট এবং রেস্পন্স টাইমের দিকে খেয়াল করে কিনতে হবে কারণ আরও বাস্তব চিত্র পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে এই সাইজের মনিটর গুলো অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।
২১ ইঞ্চি থেকে ২২ ইঞ্চিঃ ২১ ইঞ্চি থেকে ২২-ইঞ্চি মনিটর এখনকার দিনের মান এবং সব ধরনের কাজ পরিবেশন করতে পারে। প্রোগ্রামার এবং পেশাদাররা প্রায়শই তাদের নিয়মিত কাজের জন্য এই আকারটি ব্যবহার করেন এবং ফ্রিল্যান্সাররাও এই সাইজ থেকে সুবিধা পেতে পারেন। বিডিতে ২১ থেকে ২২-ইঞ্চি মনিটরের দাম ৬,০০০ টাকা থেকে ৬,৫০০ টাকা থেকে শুরু যা উন্নত গুণমানের হয়ে থাকে ও পেশাদারদের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
১৭ ইঞ্চি থেকে ১৯ ইঞ্চিঃ ১৭-ইঞ্চি মনিটর এবং ১৯-ইঞ্চি মনিটর সাধারণত কম দামের মনিটর এবং বেশিরভাগই ছাত্রদের দ্বারা ব্যবহৃত হয় কম্পিউটার মনিটর হিসাবে। এটি সিসিটিভি মনিটর হিসেবেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিডিতে সাধারনত ৩,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা খরচ করেই ১৭-ইঞ্চি থেকে ১৯-ইঞ্চি মনিটর সংগ্রহ করা যায়।
১৬ ইঞ্চি বা তার নিচেঃ ১৬ ইঞ্চির নীচে যেমন ১৫-ইঞ্চি মনিটরটি বর্তমানে ব্যবহৃত পিসি মনিটর হিসাবে পাওয়া যায় কারণ এই আকারগুলি বেশ পুরানো। বর্তমান যুগের তুলনায়, এই মনিটরগুলি খুব ছোট আকার হিসাবে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশে মনিটরের দাম কত?
বাংলাদেশে মনিটরের দাম ৩,৫০০ টাকা থেকে শুরু যা সাধারণ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। পেশাদার কাজের জন্য, ৫,৫০০ টাকার মধ্যে মনিটর সবচেয়ে ভাল কাজ করবে। গ্রাফিক্স ডিজাইনিং বা অ্যানিমেশনের মতো বিশেষ কাজের জন্য ১০,০০০ টাকা বা তার উপরে মনিটর কিনতে হবে। যাইহোক, প্রথমে বাংলাদেশে মনিটরের দাম এবং সেই মনিটরের বৈশিষ্ট্যগুলির তুলনা করুন তারপর আপনার জন্য সেরাটি নির্ধারণ করুন।
গেমিং মনিটরের জন্য কত বাজেট প্রয়োজন?
গেমিং এর জন্য বড় ডিসপ্লে মনিটর প্রয়োজন হয়, এবং রেজোলিউশন, রিফ্রেশ রেট এবং রেস্পন্স টাইম তুলনামূলক বেশী প্রয়োজন হয়। তাই, বিডিতে একটি ভালো মানের গেমিং মনিটর কেনার জন্য কমপক্ষে ১০,০০০ টাকা থেকে ১২,০০০ টাকা খরচ করতে হবে।
২কে মনিটর কি এবং কত খরচ?
বাংলাদেশে ২কে মনিটর পাওয়া যায়, কিন্তু ফুল এইচডি মনিটর এর তুলনায় ২কে মনিটরের দাম কিছুটা বেশী। তবে, ২০,০০০ টাকা থেকে ২২,০০০ টাকার মধ্যে ২কে মনিটর পাওয়া যায় যার ডিসপ্লে সাইজ কমপক্ষে ২৪-ইঞ্চি।
মনিটর কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
ডিসপ্লে সাইজঃ কাজের পরিধি এবং দেখার দূরত্বের উপর নির্ভর করে মনিটর যাচাই করতে হবে। তাছাড়া, মাল্টিটাস্কিং এর জন্য বড় স্ক্রীনের মনিটর বেশি জায়গা প্রদান করে, অন্যদিকে ছোট স্ক্রীনের মনিটর দক্ষ এবং কম বাজেটে পাওয়া যায়।
রেজোলিউশনঃ বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে ১০৮০ পিক্সেল, ১৪৪০ পিক্সেল, ৪কে সহ বিভিন্ন রেজোলিউশনের মনিটর পাওয়া যায়। রেজোলিউশন যত বেশি হবে, মনিটরে তত বেশি পরিষ্কার ও উন্নত ভিজ্যুয়াল দেখা যাবে। তাই মনিটর কেনার আগে অবশ্যই রেজোলিউশন যাচাই করতে হবে।
প্যানেল টেকনোলোজিঃ বর্তমানে টুইস্টেড নেম্যাটিক, ইন-প্লেন সুইচিং সহ বিভিন্ন প্যানেল টেকনোলোজির সমন্বয়ে তৈরি মনিটর বাংলাদেশে পাওয়া যায়। প্যানেল টেকনোলোজি মূলত মনিটরের বিভিন্ন কর্মক্ষমতা এবং ভালো ভিজ্যুয়াল প্রদান করে। তাই মনিটর কেনার আগে প্যানেল টেকনোলোজি যাচাই করতে হবে।
রিফ্রেশ রেটঃ মনিটর সাধারণত ৬০ হার্জ থেকে ২৪০ হার্জ পর্যন্ত রিফ্রেশ রেট এ পাওয়া যায়। তাছাড়া, রিফ্রেশ রেট মূলত মনিটরের প্রদর্শিত ছবি প্রতি সেকেন্ডে কত বার রিফ্রেশ করতে পারে তা বুঝায়। তাই মনিটর কেনার ক্ষেত্রে উচ্চ রিফ্রেশ রেটের মনিটর বিবেচনা করা উচিত, যা ভিডিও, গেমিং এর ক্ষেত্রে মসৃণ ভিজ্যুয়াল প্রদান করে।
রেসপন্স টাইমঃ মনিটরের রেসপন্স টাইম বলতে কম সময়ে পিক্সলে এক রঙ থেকে অন্য রঙ এ পরিবর্তিত হওয়াকেই বোঝায়। তাই মনিটর কেনার ক্ষেত্রে রেসপন্স টাইম বিবেচনা করে নেওয়া উচিত, যা হাই-কোয়ালিটি ভিডিও এবং গেমিং এ পরিষ্কার ভিজ্যুয়াল প্রদান করে।
কানেক্টিভিটিঃ কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইসের সাথে সংযোগ করার জন্য মনিটরের সাথে প্রয়োজনীয় এইচডিএমআই, ডিসপ্লে পোর্ট এবং ইউএসবি-সি পোর্ট সহ প্রয়োজনীয় কানেক্টিভিটি পোর্ট রয়েছে কিনা যাচাই করতে হবে।
কালার অ্যাকুরেসিঃ ফটো এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনের মত কাজের জন্য নির্ভুল কালার প্রয়োজন। তাই, মনিটর কেনার আগে সঠিক কালার অ্যাকুরেসি যাচাই করতে হবে।
অন্যান্য ফিচারঃ বিল্ট-ইন স্পীকার, পেরিফেরাল সংযোগের জন্য ইউএসবি হাব, চোখের চাপ কমানোর জন্য নীল আলোর ফিল্টার এবং একাধিক কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করার জন্য কেভিএম সুইচ রয়েছে কিনা যাচাই করতে হবে।
বাজেটঃ চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী এমন মনিটর বাছাই করতে হবে, যা বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং ভালো ভারসাম্য প্রদান করে।
বাংলাদেশে মনিটর সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্ন
কি ধরনের রেজোলুশন সেরা?
১০৮০পি এবং ৪কে এর মধ্যে যেটা সবচাইতে ভালো সেটা হচ্ছে ৪কে। আপনি গেমস খেলতে চান বা গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই ৪কে মনিটর কেনা উচিত কারণ ৪কে-তে আপনি একদম পরিষ্কার এবং আসল ছবির মত মনিটরে দেখতে পাবেন। তবে ১০৮০পি বা ফুল এইচডি মনিটর খুবই জনপ্রিয়। ৭২০পি বা এইচডি রেজোলুশন বেশিরভাগ ব্যবহারকারীদের জন্য ভাল কাজ করে।
ন্যূনতম রিফ্রেশ রেট কি হওয়া উচিত?
বেশির ভাগ মনিটরে ৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেট থাকে এবং সব ধরনের কাজের জন্য যথেষ্ট। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ১২০ হার্জ, ১৪৪ হার্জ মনিটরও বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে যা গেমিং, গ্রাফিক্স এবং ভিডিও সম্পাদনার জন্য ভাল কাজ করে।
মনিটরের জন্য কোন স্ক্রিন প্রযুক্তি ভালো?
এলইডি মনিটরের আইপিএস টেকনোলজি হচ্ছে এক বিশেষ টেকনোলজি যার সাহায্যে আপনি পোর্ট্রেট রিয়েল টাইম ইমেজ, গ্রাফিক্স, কালার ইত্যাদি খুবই সুন্দর ভাবে পাবেন। লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লের এই প্রযুক্তি আগের সমস্ত প্রযুক্তির থেকে উন্নততর।
বর্ডারলেস মনিটরের সুবিধা কি?
বর্ডারলেস মনিটর হচ্ছে এক বিশেষ ধরনের মনিটর যেখানে মনিটর এর পাশে যে বর্ডার থাকে তা প্রায় অদৃশ্য থাকে। যার ফলে আপনি পুরো স্ক্রিন জুড়ে ছবি এবং ভিডিও দেখতে পারবেন এবং একদম তা রিয়েল লাইফে ইমেজের মতন বাস্তব মনে হবে। এটি দুর্দান্ত একটি প্রযুক্তি যা ভিডিও এবং ছবি কে মনিটর এ নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিডিতে বর্ডারলেস মনিটর কিনতে হলে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা বেশী লাগতে পারে।
কি কি সংযোগ থাকা উচিত?
সাব, ডি সাব এবং এইচডিএমআই এর মধ্যে এইচডিএমআই প্রযুক্তির সবচাইতে ভালো এবং সবচাইতে নতুন। এ প্রযুক্তিটি যেরকম একইসাথে ভিডিও এবং অডিও শেয়ারিং সাপোর্ট করে পূর্বের প্রযুক্তি গুলো সাপোর্ট করেনা। যেমন ডি সাবে শুধু অডিও শেয়ার করা যায়।এইচডিএমাই এর প্রযুক্তি একদম সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং সবচেয়ে বেশি বর্তমানে এইচডিএমাই এর প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। আর টিভি মনিটর হল এক ধরনের মনিটর যার ভিতর টিভি সংযুক্ত থাকে এবং ডিশ ক্যাবল সংযুক্ত করে টিভি দেখা যায়।