bdstall.com

গরুর দুধ দোয়ানোর মেশিনের দাম ২০২৪

আইটেম ১-১ এর ১

মিল্কিং মেশিন কেনাকাটা

বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রুত স্বাবলম্বী হওয়ার দৌড়ে দুগ্ধজাত প্রাণীর খামার হচ্ছে সবচেয়ে লাভজনক পন্থা, যা দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। আর এসব খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া বা অন্যান্য দুগ্ধ জাত প্রাণীর দুধ দোহানের জন্য দুধ দোহন মেশিন খুবই উপকারী। দুধ দোহনের মেশিন মূলত ভ্যাকুয়াম পাম্প, পালসেটর এবং কাপ বা টিট কাপের সেট ইত্যাদি একত্রে সংযুক্ত করে তৈরিকৃত মেশিন যা প্রাণীর দুধের থলের সাথে সংযুক্ত করে দুধ সংগ্রহ করা হয়। তাছাড়া হাতে দোহনের তুলনায় দ্রুত দুধ দোহনের কাজ সম্পন্ন হয় বিধায় মিল্কিং মেশিন বিডিতে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশে কয় ধরণের দুধ দোহন মেশিন পাওয়া যায়?

বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের দুধ দোহনের মেশিন রয়েছে, তবে দুই ধরণের মেশিন বেশি ব্যবহার করা হয়।

বাকেট যুক্ত দুধ দোহন মেশিনঃ এই ধরনের মিল্কিং মেশিন মূলত স্টেইনলেস স্টিল বা প্লাস্টিকের বালতি, নমনীয় টিউব, পালসেটরের সংযোজনে তৈরি করা হয়ে থাকে। পালসেটরের সাহায্যে ভ্যাকুয়াম চাপ নিয়ন্ত্রণ করে, পশুর থলিতে কৃত্তিম ম্যাসেজের মাধ্যমে দুধ সংগ্রহ করে। এবং, সরাসরি দুগ্ধজাত পশুর থলির সাথে লাগানো পাইপের মাধ্যমে দুধ বালতিতে জমা হয়।

পোর্টেবল দুধ দোহন মেশিনঃ এই দুধ দোহন মেশিন সাধারণত বিভিন্ন জায়গায় দুধ দোহনের জন্য বহন করা যায়। পোর্টেবল দুধ দোহন মেশিন মূলত বিভিন্ন আকার এবং কনফিগারেশনে হয় যা স্বল্প পরিমাণ থেকে বেশি সংখ্যক দুগ্ধজাত পশুর দুধ দোহনের জন্য উপযুক্ত। এই দুধ দোহনের মেশিনে ভ্যাকুয়াম পাম্প, পালসেটর, এবং দুধ সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকে। পাশাপাশি এই ধরণের মেশিন বিদ্যুৎ বা পেট্রল ইঞ্জিন দিয়ে চালানো যায়।

দুধ দোহন মেশিনের দাম কত?

বর্তমানে ব্র্যান্ড, ধরন, ব্যবহারের কার্যকারিতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে দুধ দোহন মেশিনের দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। মেশিনের ধরণ, মটরের সক্ষমতা, দুধ জমা করার পাত্রের ক্যাপাসিটি, মেশিন তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে গরুর দুধ দোহন মেশিনের দাম ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়। এছাড়া, উন্নত প্রযুক্তি, ট্রান্সপোরটেবল ক্যাপাবিলিটি, এবং হাই-ক্যাপাসিটি ইঞ্জিন সহ দুধ দোহন মেশিনের দাম ৬৫,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে বড় পরিসরের খামারে ব্যবহারের জন্য পাইপলাইন সিস্টেম এবং রোবোটিক দুধ দোহনের মেশিন পাওয়া যায় যা অন্যান্য দুধ দোহন মেশিনের তুলনায় ব্যায়বহুল।

মিল্কিং মেশিন কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?

দুধ দোহন মেশিন মূলত ভ্যাকুয়াম সিস্টেম ব্যবহার করে দুগ্ধজাত পশুর থলি থেকে থেকে দুধ সংগ্রহ করার কাজ করে। দুধ দোহনের মেশিন কেনার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

১। ভ্যাকুয়াম পাম্পঃ ভ্যাকুয়াম পাম্প দুধ দোহন মেশিনের অপরিহার্য উপাদান। ভ্যাকুয়াম পাম্প মূলত দুধ দোহনের মেশিন পশুর থলিতে সংযুক্ত করার ফলে অভ্যন্তরে ভ্যাকুয়াম তৈরি হয় এবং দুধ থলি থেকে কাপে জমা হতে থাকে।

২। পালসেটরঃ ভ্যাকুয়ামের চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্পন্দন ক্রিয়া তৈরি করায় পালসেটরের কাজ। যা মূলত প্রাকৃতিক ভাবে দুধ সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে অনুকরণ করে। তাছাড়া পালসেটরের সাহায্যে ভ্যাকুয়ামের চাপকে পরিবর্তন করার ফলে টিটগুলো পশুর থলিতে আলতোভাবে ম্যাসেজ করতে থাকে। ফলে পশুর থলি থেকে দুধ কাপে জমা হতে থাকে।  

৩। কাপ বা টিট কাপঃ কাপ বা টিট কাপ মূলত দুগ্ধজাত প্রাণীর জন্য আরামদায়ক ও দক্ষ দুধ প্রবাহের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। কাপগুলো মূলত ভ্যাকুয়াম সিল দ্বারা থলির সাথে সংযুক্ত থাকে।

৪। টিউব লাইনঃ মিল্ক লাইন হচ্ছে এক ধরণের টিউবিং সিস্টেম, যা কাপ থেকে সঞ্চয়কৃত দুধ পাত্রে নিয়ে যায়।

কিভাবে দুধ দোহন মেশিন ব্যবহার করবো?

মেশিন ব্যবহার করে দুধ দোহনের প্রক্রিয়াটি দক্ষ, নিরাপদ, এবং সাস্থ্যসম্মত রাখার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবহার বিধি অনুসরণ করা উচিতঃ

  • স্টেপ ১ঃ দুধ দোহনের পূর্বে দুগ্ধজাত পশুটিকে ভালো পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে দুধের থলিতে যেন কোনো ধরণের ময়লা না থাকে।
  • স্টেপ ১ঃ মেশিনটি ব্যবহারের আগে পরিষ্কার করার পাশাপাশি ভ্যাকুয়াম মাপ, পালসেটর, এবং টীট কাপ ভালো ভাবে চেক করে নেওয়া।
  • স্টেপ ২ঃ টিটকাপ পশুর থলির সাথে ভালো ভাবে সংযুক্ত করতে হবে যেন দুধের প্রবাহ নষ্ট না হয়।
  • স্টেপ ৩ঃ ভ্যাকুয়াম পাম্প চালুর করার সাথে পালসেটরের গতি প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে।
  • স্টেপ ৪ঃ মেশিনটি চালু অবস্থায় ঠিক মত কাজ করছে কিনা তা কিছু সময় পর পর দেখা উচিত।
  • স্টেপ ৫ঃ দুধ দোহনের কাজ শেষ হলে পশুর দুগ্ধ থলিতে কোনো আঘাত বা লালচে হয়েছে কিনা খেয়াল করা উচিত।

দুধ দোহন মেশিন ব্যবহারে সতর্কতা

দুধ দোহন মেশিন ব্যবহারের পাশাপাশি দুগ্ধ জাত পশুর ক্ষতি এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা সমূহঃ

  1. মেশিনে দুধ দোহনের ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনূসরণ করতে হবে।
  2. দুগ্ধজাত পশুর অস্বস্তি বা আঘাত জনিত সমস্যা ধুর করতে ভ্যাকুয়াম চাপ সঠিকভাবে সেট করা এবং কাপগুলি সঠিকভাবে সেট করা হয়েছে কিনা তা খেয়াল রাখা।
  3. যন্ত্রটি সঠিকভাবে কাজ করছে এবং গাভীর কোনো অস্বস্তি হচ্ছে কিনা পর্যবেক্ষণ করা।
  4. রোগের বিস্তার রোধ করতে প্রতিবার ব্যবহারের পর মিল্কিং মেশিনটি সঠিকভাবে পরিষ্কার এবং স্যানিটাইজ করা।
  5. দুগ্ধজাত পশুর স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বজায় রাখার জন্য তাদের যথাযথ যত্ন ও পুষ্টি প্রদান করা।
  6. প্রয়োজন অনুসারে দুধ দোহন মেশিনে কোন ধরনের জীর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্থ অংশ থাকলে তা দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে।