মাইক্রোসফট উইন্ডোজ কেনাকাটা
ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক কম্পিউটিং কাজে ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ। এটি উইন্ডোজ এক্সপি, উইন্ডোজ ৭, উইন্ডোজ ৮, উইন্ডোজ ৮.১, উইন্ডোজ ১০, উইন্ডোজ ১১ সহ বিভিন্ন সংস্করণে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রায় ডেস্কটপ, ল্যাপটপ কম্পিউটারে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে, সহজ ইউজার ইন্টারফেস, শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং উন্নত ফিচারের সমন্বয়ে তৈরি আপডেটেড এবং অরিজিনাল মাইক্রোসফট উইন্ডোজ জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিডি স্টলে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বাংলাদেশে কেন জনপ্রিয়?
- অফিসিয়াল কাজে মাইক্রোসফ্ট অফিসের পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশন সহজে অপারেট করার জন্য মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বেশিরভাগ অফিস কম্পিউটারের জন্য ফাউন্ডেশনাল সফ্টওয়্যার সরবরাহ করে।
- তাছাড়া, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। তাই এটি সঠিকভাবে কনফিগার, সুরক্ষিত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সহজে আইটি প্রফেশনাল পাওয়া যায়।
- বাংলাদেশে বিশেষ করে বাসা-বাড়িতে শিক্ষার্থী, ফ্রীল্যান্সারদের মধ্যে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ব্যবহারকারী সংখ্যা বেশি। কারণ গেমিং থেকে শুরু করে ওয়েব ব্রাউজিং, মাল্টিমিডিয়া কাজে উইন্ডোজ সহজ ইউজার ইন্টারফেস প্রদান করে থাকে।
- এছাড়াও, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ স্থিতিশীল ভাবে মাল্টিটাস্কিং করার সুবিধা প্রদান করে। পাশাপাশি ব্যাক্তিগত কিংবা প্রতিষ্ঠানের ডেটার নিরাপত্তা বজায় রাখতে নিয়মিত উইন্ডোজ আপডেট প্রদান করে থাকে।
- তাছাড়া, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ হচ্ছে বহুল ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম। এর জনপ্রিয় দুটি সংস্করণ হচ্ছে উইন্ডোজ ১০ এবং উইন্ডোজ ১১। বর্তমানে, বাংলাদেশে প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারী মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ব্যবহার করে থাকে।
বাংলাদেশে কি কি সংস্করণের মাইক্রোসফট উইন্ডোজ পাওয়া যায়?
- মাইক্রোসফট উইন্ডোজ হোমঃ এটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর এন্ট্রি-লেভেলের সংস্করণ। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ হোম মূলত ব্যাক্তিগত এবং ছোট পরিবারের জন্য ব্যবহার উপযোগী হয়ে থাকে। এতে মূল মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর ফিচার যেমন স্টার্ট মেনু, ফাইল এক্সপ্লোরার এবং মাইক্রোসফ্ট স্টোর ইত্যাদি রয়েছে। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ হোম সংস্করণটি মৌলিক কম্পিউটিং কাজ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদি কাজের জন্য উপযুক্ত। এই সংস্করণটি বাংলাদেশে প্রায় ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপ কম্পিউটারে প্রি-ইনস্টল করা থাকে।
- মাইক্রোসফট উইন্ডোজ প্রফেশনালঃ মাইক্রোসফট উইন্ডোজ প্রফেশনাল সংস্করণটিতে উইন্ডোজের সকল ফিচার রয়েছে। ফলে, এই সংস্করণটিকে মাইক্রোসফট উইন্ডোজের সমৃদ্ধ সংস্করণ বলা হয়। এতে উইন্ডোজ হোমের সমস্ত ফিচারের পাশাপাশি দূরবর্তী ডেস্কটপ অ্যাক্সেস, জয়েন ডোমেইন, উন্নত সুরক্ষা জন্য অতিরিক্ত ফিচার যুক্ত রয়েছে। তাছাড়া, উইন্ডোজ প্রফেশনাল সাধারণত ছোট ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সার এবং অফিসিয়াল কম্পিউটিং কাজের ক্ষেত্রে ভালো নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে। এটি মিড-রেঞ্জ এবং হাই-এন্ড বিসনেস সিরিজের ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপে আগে থেকে ইনস্টল করা থাকে।
- মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এন্টারপ্রাইজঃ এটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর টপ লেভেলের সংস্করণ, যা বড় পরিসরের প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এতে উইন্ডোজ প্রফেশনাল সংস্করণের যাবতীয় ফিচার রয়েছে। পাশাপাশি, এই সংস্করণটিতে উন্নত নিরাপত্তা, ব্যবস্থাপনা, এবং কমপ্লায়েন্স টুল রয়েছে। উইন্ডোজ এন্টারপ্রাইজ সাধারণত বড় কর্পোরেশন, সরকারী সংস্থা এবং অন্যান্য বড় মাপের সংস্থাতে ব্যবহার করতে পারবেন, যেখানে শক্তিশালী আইটি অবকাঠামো এবং কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এন্টারপ্রাইজ সংস্করণটি ভলিউম লাইসেন্সিং এগ্রিমেন্ট কিংবা এন্টারপ্রাইজ চুক্তির মাধ্যমে সাশ্রয়ী খরচে কিনতে পারেন।
- মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সার্ভারঃ উইন্ডোজ সার্ভার হচ্ছে এক ধরণের বিশেষ অপারেটিং সিস্টেম যা অফিসিয়াল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে এবং ডেটা সেন্টারে মত জায়গায় ব্যবহার করা হয়। এই ধরণের মাইক্রোসফট উইন্ডোজ দিয়ে বিভিন্ন সার্ভার অ্যাপ্লিকেশন, যেমন ওয়েব সার্ভার, ফাইল সার্ভার, অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার এবং মেইল সার্ভারের মত যাবতীয় কাজ করতে পারবেন। তাছাড়া, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সার্ভার মূলত আইটি প্রফেশনাল এবং সিস্টেম অ্যাডমিনিস্টেটর দিয়ে অপারেট করতে হয়।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর ফিচারসমূহ
ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হচ্ছে ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস। এই ধরণের অপারেটিং সিস্টেমে স্টার্ট মেনু, টাস্কবার এবং উইন্ডোজের বিল্ট-ইন সার্চ সিস্টেম সংযুক্ত রয়েছে। ফলে, বাংলাদেশে সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে প্রফেশনাল উভয় ধরণের কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের সহজ ইন্টারফেস অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
- স্টার্ট মেনুঃ এটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ভিতরে অ্যাপ্লিকেশন, সেটিংস সহ সকল ফাইল দ্রুত অ্যাক্সেস করতে সহায়তা করে থাকে।
- টাস্কবারঃ এটির মাধ্যমে উইন্ডোজ সিস্টেমে চলমান অ্যাপ্লিকেশন সমূহ সহজে পরিচালনা করতে পারবেন। পাশাপাশি, আপনার কম্পিউটার সিস্টেমের র্যাম, রোম, হার্ড ডিস্ক এবং নেটওয়ার্ক এর যাবতীয় বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
- ফাইল এক্সপ্লোরারঃ এটি আপনাকে দক্ষতার সাথে আপনার ফাইল এবং ফোল্ডারগুলো সু-সংগঠিত করতে সহায়তা করবে।
- কর্টানাঃ মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর সবচেয়ে আপডেটেড ফিচার হচ্ছে কর্টানা। এটি মূলত আপনাকে ভয়েস কমান্ড ব্যবহার করে যেকোন কিছু অনুসন্ধান করতে সহায়তা করবে।
শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা
মাক্রোসফট উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের ম্যালওয়্যার, ভাইরাস এবং অন্যান্য সাইবার হুমকি থেকে নিরাপদ রাখতে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার অ্যান্টিভাইরাস, ফায়ারওয়াল এবং নিয়মিত সফ্টওয়্যার আপডেট সহ ব্যাপক নিরাপত্তা ফিচার সরবারহ করে থাকে।
- উইন্ডোজ ডিফেন্ডারঃ এটি আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিটারে বিদ্যমান ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাস থেকে ডেটা কিংবা ফাইল নিরাপদ রাখতে ইন্টিগ্রেটেড অ্যান্টিভাইরাস হিসেবে কাজ করে থাকে।
- বিটলকারঃ মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর অন্যতম একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে বিটলকার। এটি আপনার কম্পিউটার বা সার্ভার সিস্টেমে অননুমোদিত অ্যাক্সেস প্রতিরোধ করে আপনার ডেটা নিরাপদ রাখবে।
- উইন্ডোজ হ্যালোঃ ন্যানো সেন্সর টেকনোলোজি আবিষ্কারের সাথে সাথে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ব্যবহারকীর ডেটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফেসিয়াল রিকগনিশন বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর ব্যবস্থা ইন্টিগ্রেট করেছে। ফলে, আপনার ফেস রিকগনিশন বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যাতিত অন্য কেউ সহজে আপনার কম্পিউটার সিস্টেম অ্যাক্সেস করতে পারবে না।
- নিয়মিত আপডেটঃ কম্পিউটার সিস্টেম বা সার্ভার সুরক্ষিত রাখতে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিকিউরিটি আপডেট প্রদান করে থাকে। তাই, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ আপনার জন্য আদর্শ অপারেটিং সিস্টেম।
নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদনশীলতা
মাইক্রোসফট সাধারণত মাইক্রোসফট অফিস স্যুট এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল সফটওয়্যারের সাথে উইন্ডোজ ইন্ট্রিগেট করার ফলে ব্যবহারকারীদের জন্য ডকুমেন্ট, স্প্রেডশীট, এবং প্রেজেন্টেশন এর মত বিষয়গুলোকে যথেষ্ট সহজ করে তোলেছে।
- মাইক্রোসফ্ট অফিস স্যুটঃ এই ধরণের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে আপনি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল এবং মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টের মতো অফিস অ্যাপ্লিকেশন নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে, অফিসিয়াল কিংবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল যেকোনো ডকুমেন্টেশন, হিসাব-নিকাশ এর মত যাবতীয় কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে পারবেন।
- ভার্চুয়াল ডেস্কটপঃ মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অন্যতম একটি ফিচার হচ্ছে ডুয়েল মনিটর সংযোগ সুবিধা। এর মাধ্যমে
একাধিক ডেস্কটপ পরিচালনা করা যায়, যা বাসা-বাড়িতে কিংবা অফিসে ভালো কাজের পরিবেশ প্রদান করে। - টাস্ক ভিউঃ এটি আপনাকে আপনার খোলা অ্যাপ্লিকেশন এবং ডেস্কটপের মধ্যে সহজেই স্যুইচ করার সুবিধা প্রদান করবে।
- ওয়ান ড্রাইভঃ প্রয়োজনীয় ফাইল সমূহ সহজে অ্যাক্সেস এবং দ্রুত সময়ে শেয়ার করার জন্য মাইক্রোসফট উইন্ডোজে ওয়ান ড্রাইভ রয়েছে। এটি মূলত ক্লাউড স্টোরেজ। আপনি সহজেই ওয়ান ড্রাইভে প্রয়োজনীয় যেকোনো ফাইল ব্যাকআপ রাখার পাশাপাশি শেয়ার করতে পারবেন।
ডিভাইস সমূহের সাথে সামঞ্জস্যতা
- সফ্টওয়্যার সাপোর্টঃ মাইক্রোসফট উইন্ডোজে সাধারণত ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে অডিও, ভিডিও, ছবি এডিটিং অ্যাপ্লিকেশন এবং মাল্টিমিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন সহ বিস্তৃত পরিসরের অ্যাপ্লিকেশন সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করা যায়। এই বিস্তৃত পরিসরের অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট এর জন্য বাংলাদেশে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের কাছে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।
- হার্ডওয়্যার সামঞ্জস্যতাঃ মাইক্রোসফট উইন্ডোজ প্রায় সকল পিসি, ল্যাপটপ, প্রিন্টার এবং অন্যান্য পেরিফেরাল ডিভাইসের সাথে সামঞ্জস্যভাবে কাজ করে থাকে।
- গেমিংঃ গেমিংয়ে উন্নত গ্রাফিক্স পারফরম্যান্স প্রদানের জন্য মাইক্রোসফট উইন্ডোজে ডিরেক্টএক্স রয়েছে। ফলে, এটি ব্যবহার করে আপনি মসৃণ ভাবে গেমিং করতে পারবেন।
- ক্রস-ডিভাইস কানেকশনঃ ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপ কিংবা ট্যাবলেট এ মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে ব্যবহার করা যায়। ফলে, প্রয়োজনের অনুযায়ী মানানসই ডিভাইসের সাথে সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর দাম কত?
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর দাম সাধারণত নির্দিষ্ট সংস্করণ, লাইসেন্স সংখ্যা এবং মডেলের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। বর্তমানে, বিডিতে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর দাম ৮,৭০০ টাকা থেকে শুরু, যা সিঙ্গেল লাইসেন্স এর সমন্বয়ে প্রফেশনাল উইন্ডোজ ১০ সরবারহ করে থাকে। মেশিন লাইফ টাইম লাইসেন্স যুক্ত বিভিন্ন সংস্করণের মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০,০০০ টাকা থেকে ১৫,৫০০ টাকার মধ্যে সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়াও, লাইসেন্স যুক্ত অরিজিনাল মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সার্ভার বাংলাদেশে ৭৫,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
