অণুবীক্ষণ যন্ত্র কেনাকাটা
বিবর্তনের ধারায় সারাবিশ্বে প্রযুক্তিগত যে সকল আবিষ্কার হয়েছে সকল আবিষ্কারই মানব কল্যাণের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে মাইক্রোস্কোপ চিকিৎসা বিজ্ঞান, গবেষণা, অপরাধ তদন্তের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। অণুবীক্ষণ যন্ত্র মূলত ক্ষুদ্র বস্তুকে বড় করে দেখার সুযোগ করে দেয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে আলোক মাধ্যম ব্যবহার করে নিকটবর্তী অতি ক্ষুদ্র বস্তুর খুঁটিনাটি প্রতিবিম্বের সাহায্যে বড় করে দেখা যায় তাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলা হয়।
কেন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করবেন?
আমাদের স্বাভাবিক চোখের দৃষ্টি সীমা ২০০ মাইক্রো মিটারের চেয়ে ছোট কোনো বস্তু সহজেই দেখতে পায় না। অণুবীক্ষণ যন্ত্র মূলত উদ্ভিদ ও জৈবিক ক্ষেত্র, অপরাধ তদন্ত,শিক্ষাক্ষেত্র এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ আমাদের শরীরের রোগ জীবাণু, উদ্ভিদে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার, অপরাধা তদন্তে বিভিন্ন সূক্ষ্ম বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। পাশাপাশি নতুন নতুন জিন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে ল্যাব টেস্ট কিংবা প্যাথলজিক্যাল টেস্টে বিস্তর ভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে প্রায় ১০০ থেকে ৪০ লক্ষ গুণ পর্যন্ত জুম করে ক্ষুদ্র বস্তুকে দেখা যায়।
বাংলাদেশে কয় ধরণের অণুবীক্ষণ যন্ত্র পাওয়া যায়?
অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের পর থেকে শিক্ষা, গবেষণা এবং জিনগত আবিষ্কারের পরিধি দ্রুত বেড়ে চলেছে। ফলে অণুবীক্ষণ যন্ত্র মানব জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কাজের পরিধির, গবেষণার ধরণ, এবং জুম-ইন ও জুম-আউট পরিধির উপর নির্ভর করে অণুবীক্ষণ যন্ত্র প্রধানত চারটি ভাগে বিভক্ত করা যায়।
শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত অণুবীক্ষণ যন্ত্রঃ এটি অতিসাধারণ এবং জনপ্রিয় অণুবীক্ষণ যন্ত্র যা মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত অণুবীক্ষণ যন্ত্রটি শক্ত প্লাস্টিকে তৈরি এবং এর মধ্যস্থ আয়নার সাথে একটি এলইডি লাইট সংযুক্ত রয়েছে। যা অস্বচ্ছ বস্তুকে স্লাইডে রেখে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখার জন্য উপরে এবং নিচে এলইডি আলো দিয়ে থাকে। অণুবীক্ষণ যন্ত্রটির জুম সক্ষমতা ১০ গুন পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা ১২০০ এক্স পর্যন্ত বিবর্ধন প্রদান করতে পারে। অণুবীক্ষণ যন্ত্রটিতে ৩৬০° ঘূর্ণনযোগ্য মনোকুলার হেড রয়েছে ফলে যেকোনো এঙ্গেল থেকে দেখা যায়। তাছাড়া ২৫০মিমি বস্তুকে ১৫মিমি দূরত্ব থেকে দেখা যায়। সাধারণত ৮ বছরের উপরে বয়স এমন শিক্ষার্থীদের দেখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতা প্রদর্শন করে।
মনোকুলার অণুবীক্ষণ যন্ত্রঃ মনোকুলার অন্যতম চাহিদা সম্পন্ন জনপ্রিয় এবং ব্যবহারকারী বান্ধব অণুবীক্ষণ যন্ত্র। এই ধরনের অণুবীক্ষণ যন্ত্র প্রধানত স্কুলের পরীক্ষাগারে ব্যবহার করা হয়। অণুবীক্ষণ যন্ত্রটিতে একটি আইপিস, অবজেক্টিভ লেন্স, কোলিমেশন স্ক্রু, ফিল্ম ক্ল্যাম্প, লাইট হোল, শাটার, কনভার্টার, মিরর, মিরর আর্ম, লেন্স টিউব, লেন্স হোল্ডার, কনডেনসার, ডায়াফ্রাম কম্পোজিশন ইত্যাদি সংযুক্ত রয়েছে। এই ধরনের অণুবীক্ষণ যন্ত্রের জুম সক্ষমতা ৫ থেকে ৪৫ গুন পর্যন্ত হয়ে থাকে যা বস্তুকে ২৫এক্স থেকে ৫০০এক্স পর্যন্ত বিবর্তন প্রদান করে থাকে। মনোকুলার অণুবীক্ষণ যন্ত্রটি ধাতব পদার্থে তৈরি তাই দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়ে থাকে। তাছাড়া এই ধরনের অণুবীক্ষণ যন্ত্রকে জীববিজ্ঞান বা অন্যান্য অণুবীক্ষণ যন্ত্রও বলা হয়।
বৈদ্যুতিক বাইনোকুলার অণুবীক্ষণ যন্ত্রঃ এই ধরনের অণুবীক্ষণ যন্ত্র কম খরচে লাভজনক। বৈদ্যুতিক বাইনোকুলার অণুবীক্ষণ যন্ত্র প্রধানত ল্যাব, রিসার্চ ইন্সটিটিউট, এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ধরনের মাইক্রোস্কোপের একটি স্লাইডিং বাইনোকুলার হেড থাকে যা ডব্লিউ এফ১০ এবং ডব্লিউ এফ১৬ এক আইপিস দিয়ে ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরানো যায়। তাছাড়া বৈদ্যুতিক বাইনোকুলারে মেকানিক্যাল স্টেজের সাইজ ১৪০ x ১৫৫ মিমি এবং রেঞ্জ ৭০ x ৫০ মিমি। এই বাইনোকুলার অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পুরু এবং সূক্ষ্ম ফোকাসিংয়ের সংমিশ্রণ রয়েছে এবং নির্ভুলতার হার ০.০০২ মিমি।
জৈবিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রঃ এটি একটি বাইনোকুলার মাইক্রোস্কোপ যার জুম করার সক্ষমতা ১০গুন থেকে ১০০০গুন পর্যন্ত হয়ে থাকে। জৈবিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র মূলত কোষ, টিস্যু, এবং অন্যান্য জৈবিক নমুনা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাইক্রোস্কোপ স্লাইড, পেট্রি ডিশ, ওয়েল-প্লেট সাহায্যে প্রধানত খুব ফ্ল্যাট নমুনাগুলি দেখার কাজে ব্যবহৃত হয়। জৈবিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের লেন্সগুলো কাজের দূরত্ব এবং উচ্চ সংখ্যক অ্যাপারচার দিয়ে থাকে। অণুবীক্ষণ যন্ত্রটিতে এস-এলইডি আলোকসজ্জা রয়েছে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ উজ্জ্বলতা প্রদান করতে পারে। এমনকি বিশেষ সংস্করণের ফ্লোরোসেন্স ইমেজিং করতে সক্ষম জৈবিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
অণুবীক্ষণ যন্ত্র কেনার আগে কি করে দেখতে হবে ?
অণুবীক্ষণ যন্ত্র গুলো মূলত বিভিন্ন ডিজাইন, বৈশিষ্ট্য এবং জুম ক্যাপাবিলিটির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তাই কাজের ধরন অনুযায়ী যাচাই, বাছাই করে অণুবীক্ষণ যন্ত্র কেনা উচিত।
- অণুবীক্ষণ যন্ত্রে সাধারণত ৩-৫টি অবজেক্টিভ লেন্স থাকে যা বস্তুকে নিখুঁত ভাবে দেখার জন্য ১০এক্স থেকে ৪০০এক্স পর্যন্ত বড় করা যায় এবং কিছু অবজেক্টিভ লেন্স ১০০০এক্স পর্যন্ত ম্যাগনিফিকেশন দিতে পারে। তাই অণুবীক্ষণ যন্ত্রটি কেনার পূর্বে কাজের পরিধি অনুযায়ী জেনে কেনা উচিত
- সুনির্দিষ্ট কাজের অণুবীক্ষণ যন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের আলো যেমন এলইডি, হ্যালোজেন, ফ্লোরো সেন্ট কিংবা টাংসেন্ট আলো সংযুক্ত করা থাকে। তাই অণুবীক্ষণ যন্ত্রটি ল্যাব, ডায়াগনস্টিক কিংবা রিসার্চের কাজের জন্য ব্যবহার করা যাবে কিনা যাচাই করে নেওয়া উচিত
- অণুবীক্ষণ যন্ত্র কেনার পূর্বে জুম ক্যাপাবিলিটি সম্পর্কে ভালো ভাবে ধারণা নেওয়া উচিত। কারণ লেন্স এবং আইপিস এর উপর নির্ভর করে অণুবীক্ষণ যন্ত্র বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে
- কেনার পূর্বে অবশ্যই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের কোয়ালিটি যাচাই করে নেওয়া উচিত যাতে দীর্ঘ দিন স্থায়ী ভাবে ব্যবহার করা যায়
বাংলাদেশে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দাম কত?
বাংলাদেশে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দাম এর ডিজাইন, জুম ক্যাপাবিলিটি, লাইট সোর্স, এবং ব্যবহারের ধরনের উপর নির্ভর করে ১,৩০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকার মধ্য থেকে শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো মানের অণুবীক্ষণ যন্ত্র ৪,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে, বিশেষ প্রযুক্তির ফ্লোরো সেন্সিং ইমেজিং করার সক্ষমতা সম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দাম ২০,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়। তাছাড়া, জৈবিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দাম তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।