ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনাকাটা
ল্যাপটপ ব্যাটারি দীর্ঘ সময় ব্যাকআপ প্রদান করে। সময় বাড়ার সাথে সাথে ব্যাটারির সেল দুর্বল হয়ে যায় তাই সব সময় সর্বোচ্চ ব্যাকআপ রাখার জন্য ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ ল্যাপটপের ব্যাটারি হল চায়না ব্যাটারি তাই খুব সস্তায় ১০০০ টাকার ভিতর প্রতিস্থাপন করা যায়। তবে, অরিজিনাল ল্যাপটপের ব্যাটারি বাংলাদেশেও পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আপনাকে ব্র্যান্ড এবং মডেলের সাথে মিল করতে হবে।
বাংলাদেশে কয় ধরণের ল্যাপটপ ব্যাটারি পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরণের ল্যাপটপ ব্যাটারি পাওয়া যায়।
১। লিথিয়াম-আয়ন ল্যাপটপ ব্যাটারিঃ লি-আয়ন ব্যাটারি সাধারণত ল্যাপটপে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত। এই ধরণের ল্যাপটপ ব্যাটারি হাই-এনার্জি ডেনসিটি প্রদান করে। ফলে লিথিয়াম-আয়ন ল্যাপটপ ব্যাটারি দীর্ঘদিন নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়।
২। লিথিয়াম-পলিমার ল্যাপটপ ব্যাটারিঃ লি-পো ব্যাটারি যথেষ্ট ফ্লেক্সিবল এবং লাইটওয়েট ডিজাইনের জন্য পরিচিত। এই ধরনের ল্যাপটপ ব্যাটারি বিভিন্ন সাইজ এবং শেপে পাওয়া যায়। ফলে, পাতলা এবং কমপ্যাক্ট সাইজের ল্যাপটপে ব্যবহারের জন্য লিথিয়াম-পলিমার ল্যাপটপ ব্যাটারি উপযুক্ত।
৩। নিকেল-মেটাল হাইড্রাইড ল্যাপটপ ব্যাটারিঃ এনআইএমআইচ ব্যাটারি বর্তমানে ল্যাপটপে কম ব্যবহার হয়। তবে, এই ধরণের ল্যাপটপ ব্যাটারি যথেষ্ট পরিবেশ বান্ধব হয়ে থাকে। তাছাড়া, লি-আয়ন এবং লি-পো ব্যাটারির তুলনায় শেল্ফ ডিসচার্জ রেট অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবহার না করলেও চার্জ হারায়। নিকেল-মেটাল হাইড্রাইড ল্যাপটপ ব্যাটারি সাধারণত পুরনো ল্যাপটপে ব্যবহার হয়ে থাকে। বর্তমানে, বাংলাদেশের বাজারে সচারাচর কম পাওয়া যায়।
লিথিয়াম আয়ন ল্যাপটপ ব্যাটারি এবং লিথিয়াম পলিমার ল্যাপটপ ব্যাটারির মধ্যে কোনটি ভালো?
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি হাই এনার্জি ডেনসিটির কারণে ল্যাপটপে বেশি ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, পাতলা এবং হালকা ওজনের ল্যাপটপের জন্য লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি উপযুক্ত। লিথিয়াম -আয়ন ল্যাপটপ ব্যাটারি লিথিয়াম পলিমার ল্যাপটপ ব্যাটারির তুলনায় বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। তবে, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির তুলনায় লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারির থার্মাল যথেষ্ট নিরাপদ এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক কম। বর্তমানে, উভয় ধরণের ল্যাপটপ ব্যাটারি বাংলাদেশে বেশি ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে লি-আয়ন এবং লি-পো ল্যাপটপ ব্যাটারির দাম সাধারণত ব্র্যান্ড এবং ক্যাপাসিটির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তবে, লি-আয়ন ল্যাপটপ ব্যাটারির দাম লি-পো ল্যাপটপ ব্যাটারির তুলনায় বেশি সাশ্রয়ী হয়ে থাকে।
ল্যাপটপ ব্যাটারির দাম কত?
বর্তমানে, বাংলাদেশে ল্যাপটপ ব্যাটারির দাম মূলত ব্র্যান্ড, ক্যাপাসিটি, এবং কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। বিডিতে ল্যাপটপ ব্যাটারির দাম ৯৫০ টাকা থেকে শুরু হয় যা ৬-সেলের লিথিয়াম ব্যাটারি এবং ৪৪০০ থেকে ৫২০০ এমএএইচ পর্যন্ত ক্যাপাসিটির হয়ে থাকে। এছাড়া, বাংলাদেশে ম্যাকবুক, এইচপি, ও ডেলসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের ব্যাটারি সাশ্রয়ি দামে পাওয়া যায়। তবে, লিথিয়াম আয়ন ল্যাপটপ ব্যাটারির দাম তুলনামূলক ভাবে কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।
ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে
চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ যাচাই করতে হবে
ব্যাটারি টাইপঃ লি-আয়ন, লি-পো সহ বিভিন্ন ধরণের ল্যাপটপ ব্যাটারি পাওয়া যায়। তবে, ধরণ অনুযায়ী ল্যাপটপ ব্যাটারি চার্জ বেকআপ, স্থায়িত্ব এবং ব্যাটারির লাইফ ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাটারির ধরণ যাচাই করতে হবে।
কোয়ালিটিঃ বাংলাদেশের বাজারে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ব্যাটারি সাশ্রয়ি দামে পাওয়া যায়। তবে, ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড বিবেচনা করার পাশাপাশি ব্যাটারি বিল্ড কোয়ালিটি যাচাই করতে হবে। তাছাড়া, কম্পিটেবল ল্যাপটপ ব্যাটারিও যথেষ্ট কম দামের মধ্যে ভালো চার্জ বেক আপ প্রদান করে।
মডেল সামঞ্জস্যতাঃ ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড অনুযায়ী ল্যাপটপের মডেলের সাথে মিলিয়ে নিতে হবে। তাহলে, ল্যাপটপে ভালো ব্যাটারি বেকআপ পাওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।
পাওয়ার ক্যাপাসিটিঃ ল্যাপটপ ব্যাটারি সাধারণত বিভিন্ন পাওয়ার ক্যাপাসিটির হয়ে থাকে। এছাড়াও, এই ধরণের ব্যাটারি মিলিঅ্যাম্পিয়ার-ঘন্টা বা ওয়াট-আওয়ারে পরিমাপ করা হয়। তাই, ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে উচ্চ পাওয়ার ক্যাপাসিটি সম্পন্ন ব্যাটারি বাছাই করতে হবে, যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফ প্রদান করবে।
ভোল্টেজঃ ল্যাপটপের ব্যাটারি রিপ্লেস করার জন্য নতুন ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে ল্যাপটপের সাথে সামঞ্জস্য ভোল্টেজ বিবেচনা করতে হবে।
ল্যাপটপ ব্যাটারি লাইফ সাইকেলঃ ল্যাপটপ ব্যাটারির লাইফ সাইকেল হচ্ছে নির্দিষ্ট সময় পর ব্যাটারি চার্জ নিবে না এবং ডিসচার্জও হবে না। ল্যাপটপ ব্যাটারির সাধারণত ২-৫ বছর অনায়সে ব্যবহার করা যায়। তবে, ল্যাপটপ ব্যবহার, অ্যাপ্লিকেশন রান এবং পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট সেটিংস এর উপর নির্ভর করে ল্যাপটপ ব্যাটারির লাইফ সাইকেল পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তাই, ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার আগে অবশ্যই ব্যাটারির লাইফ সাইকেল যাচাই করে নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে কি ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে ল্যাপটপ ব্যাটারি কেনার সময়, বেশিরভাগ ল্যাপটপ ব্র্যান্ডের ব্যাটারিতে ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়। ল্যাপটপ ব্যাটারির ওয়ারেন্টি সাধারণত ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ওয়ারেন্টি সময়ের মধ্যে ব্যাটারিতে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে, ব্যবহারকারী বিনামূল্যে পরিবর্তন বা মেরামত করাতে পারবেন।
বাংলাদেশে কোন কোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ব্যাটারি পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে বিভিন্ন জনপ্রিয় ল্যাপটপ ব্র্যান্ড যেমন ডেল, এইচপি এবং আসুস ল্যাপটপ ব্যাটারি পাওয়া যায়। এই ব্র্যান্ডগুলো বর্তমানে বেশ সুপরিচিত এবং ব্যাপক পরিসরে ল্যাপটপ ব্যাটারি সরবারহ করে থাকে। এছাড়াও, চায়না ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পাওয়ার ক্যাপাসিটির ল্যাপটপ ব্যাটারি পাওয়া যায়। এই ব্যাটারির দাম ব্র্যান্ডেড ব্যাটারির দামের তুলনায় সস্তা হয়ে থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কার্যকর ব্যাটারি ব্যাকআপ প্রদান করে৷
সাধারণত কম্পিট্যাবল ল্যাপটপ ব্যাটারি থেকে কতক্ষণ চার্জ বেকআপ পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে অরজিনাল এবং কম্পিট্যাবল উভয় ধরণের ল্যাপটপ ব্যাটারি সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়। ল্যাপটপ ব্র্যান্ডের সাথে মানানসই ল্যাপটপ ব্যাটারি রিপ্লেস করার ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। তবে, কম্পিটেবল ল্যাপটপ ব্যাটারি বা চায়না ব্যাটারি বাংলাদেশের বাজারে যথেষ্ট কম দামে পাওয়া যায় এবং যথেষ্ট কার্যকর ভাবে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া, কম্পিটেবল ল্যাপটপ ব্যাটারি ব্যবহারে প্রায় ২ঃ৩০ থেকে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত চার্জ বেকআপ পাওয়া যায়।