জমি কেনাকাটা
জমি বলতে মূলত সম্পত্তি বা রিয়েল এস্টেটের একটি অংশকে বুঝায় যাতে বসবাস ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দালান নির্মাণ করা হয় এবং কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে সাধারণত জমির ছোট অংশকে প্লট বলা হয় যা মূলত আবাসন বা কমার্শিয়াল কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে জমি বা প্লটের অবস্থান, আকার এবং ব্যবহারের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে জমির দাম কম বেশি হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে কি কি ধরণের জমি বা প্লট রয়েছে?
বর্তমানে বাংলাদেশে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের জমি বা প্লট পাওয়া যায়। তবে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা, চাহিদা এবং বাজেট অনুযায়ী ব্যবহারকারীকে সেরা জমি বা প্লট বাছাই করে নিতে হবে। বর্তমানে বিডিতে পাওয়া যায় এমন উল্লেখযোগ্য কিছু জমি বা প্লটের ধরণ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাকঃ
আবাসিক জমি / প্লটঃ আবাসিক জমি বা প্লট মূলত রাস্তার পাশে হয়ে, যা মূলত আকার ও অবস্থানভেদে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এই ধরনের জমি বা প্লট মূলত জোন আকারে থাকে যা মূলত বাড়ি নির্মাণের জন্যই ব্যবহার করা যাবে।
বাণিজ্যিক প্লট / জমিঃ এই ধরণের প্লট বা জমি শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য জোন আকারে তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক জমি গুলো মূলত ব্যাস্ত এলাকার মধ্যে হয়ে থাকে। এই ধরণের জমি প্রধানত অফিস, দোকান কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
শিল্প কারখানার প্লটঃ এই ধরণের জমি সাধারণত কারখানা, গুদাম বা অন্যান্য বৃহৎ পরিসরে শিল্প প্রতিষ্ঠান জন্য নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা যাবে। এই ধরণের জমিতে যাতায়াতের জন্য পরিবহন এবং অন্যান্য অবকাঠামো গত কাজের জন্য সুব্যবস্থা পাওয়া যাবে।
অবকাশযাপনের জমি / প্লটঃ প্রাকৃতিক পরিবেশ, পর্যটন এরিয়া কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলে এই ধরণের জমি বা পাওয়া যায়। এই ধরণের জমিতে অবকাশ যাপনের জন্য বাড়ি কিংবা রিসোর্ট তৈরি করার জন্য উপযুক্ত। তবে এই ধরণের জমি গুলো বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লিজ আকারে নিয়ে ব্যবহার করা যাবে।
এছাড়াও, বাংলাদেশে কৃষি জমি, পুকুর কিংবা নদী এরিয়ার জমি ও মিশ্র ব্যবহার উপযোগী যেমন আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্পকারখানা যেকোনো কাজে ব্যবহার উপযোগী জমি পাওয়া যায়।
জমি বা প্লট কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
জমি বা প্লট কেনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ, তাই জমি বা প্লট কেনার আগে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। যা বাংলাদেশে জমি বা প্লট কেনার ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করবে।
১। অবস্থানঃ জমি কেনার ক্ষেত্রে জমি বা প্লটের অবস্থান সম্পর্কে যাচাই করাটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় সুযোগ- সুবিধা যেমন স্কুল, হাসপাতাল, বাজার এবং পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত এমন একটি জমি বাছাই করে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি জমি সংলগ্ন স্থানটি যথেষ্ট নিরাপদ কিনা তা যাচাই করে নেওয়া উচিত।
২। মাটির গুণাগুণঃ জমি কেনার আগে মাটির গুণাগুণ বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ ভবন নির্মাণের জন্য স্থিতিশীল মাটির প্রয়োজন।
৩। যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ জমি বা প্লট সংলগ্ন রাস্তা ভালো কিনা এবং মূল শহরের সাথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে কিনা তা যাচাই করে জমি কেনা উচিত।
৪। প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ জমি বা প্লট সংলগ্ন এরিয়াতে বন্যা, ভূমিকম্প, এবং ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা কেনার আগে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
৫। জোনিংঃ জমি ব্যবহারে উদ্দেশ্য পূরণ হবে কিনা, বিল্ডিং ফাউন্ডেশন করার পারমিট এবং অন্যান্য বিষয় গুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য জমি কেনার আগে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যাচাই বাছাই করা উচিত।
৬। দাম ও বাজেট সামঞ্জস্যতাঃ বাংলাদেশে জমি কেনার ক্ষেত্রে আইনি ফি, ট্যাক্স এবং অবকাঠামো উন্নয়ন খরচ ইত্যাদি বিষয় সম্পৃক্ত থাকে। তাই বিডিতে জমি বা প্লটের দাম বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে কেনা উচিত।
৭। ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনাঃ জমির এরিয়াতে ভবিষ্যতে উন্নয়ন পরিকল্পনা, নতুন অবকাঠামো হওয়ার সম্ভাবনা কেমন তা যাচাই করা উচিত। কারণ পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো পরবর্তীতে জমির মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশে জমি বা প্লট কেনার ক্ষেত্রে জমিতে কোনো আইনি জটিলতা, যেকোনো প্রয়োজনে ব্যাংক লোন এবং স্থাপনা তৈরিতে হোম লোনের মত সুবিধা গুলো পাওয়া যাবে কিনা তা যাচাই বাছাই করে নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে জমি বা প্লটের দাম কত?
বিডিতে জমি বা প্লটের দাম জমির অবস্থান, আকার, জমির ধরন এবং ব্যবহারের উদ্দেশ্য ইত্যাদির উপর নির্ভর করে কম বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের জমির দাম ১২,০০,০০০ টাকা থেকে শুরু যা মূলত কাঠা প্রতি জমির দাম। এছাড়াও উন্নত পরিবেশ, শহরকেন্দ্রিকতা, এবং যোগাযোগ ব্যাবস্থা সহ নানাবিধ সুবিধা সমূহের উপর নির্ভর করে জমির দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশে বাড়ি করার জন্য কোন ধরণের জমি উপযুক্ত?
বাংলাদেশে বিভাগীয় শহরে এরিয়া ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরণের আবাসিক জমি বা প্লট রয়েছে যা বাড়ি নির্মাণের জন্য যথেষ্ট যুগপোযোগী। আবাসিক জমিতে রাস্তাঘাট, পানি সরবরাহ এবং বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ পাওয়া যাবে। তাছাড়া বাড়ি নির্মাণের জন্য জমির অবস্থান, মাটির গুণগত মান, জোনিং এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করার পাশাপাশি জমির মালিকানা হস্তান্তর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত। এছাড়াও বাংলাদেশে স্বনামধন্য রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সাথে পরামর্শ করার মাধ্যমে বাড়ি তৈরির জন্য উপযুক্ত জমি খুঁজে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে জমি বা প্লট কেনার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় এলাকা কি কি?
বাংলাদেশে জমি বা প্লট কেনার জন্য ঢাকা, গাজীপুর,চট্টগ্রাম, সিলেট, এবং কক্সবাজারের মত শহর গুলোতে জনপ্রিয় কিছু এলাকা রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট চাহিদা এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে উপযুক্ত জমি রয়েছে। কারণ শহর গুলোর জমি বসবাস, ব্যবসা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সহ প্রায় সকল ধরণের সুবিধা থাকার পাশাপাশি জীবন মান উন্নত করতে সহায়ক হবে।