হোস পাইপ কেনাকাটা
হোস পাইপ মূলত গৃহস্থ, কৃষিকাজ এবং নির্মাণ শিল্পে প্রয়োজনীয় পানি সরবারহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাংলাদেশে পানির পাইপ নামেও পরিচিত। এই ধরণের পাইপ বাংলাদেশে বাসা-বাড়িতে, বাগান, খামারে, নির্মাণ সাইটে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এবং গাড়ি পরিষ্কারে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। হোস পাইপ মূলত উন্নত উপকরণে তৈরি এবং দৈনন্দিন কাজের কঠোর চাপ সক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দৈর্ঘ্য এবং ব্যাসে সহজেই পাওয়া যায়। তাছাড়া, ব্যবহারের সহজলভ্যতা, টেকসই এবং সাশ্রয়ী দামের হওয়ায় বাংলাদেশে হোস পাইপের চাহিদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেন হোস পাইপ কিনবেন?
১। হোস পাইপ মূলত নির্দিষ্ট স্থান থেকে বাগানে, গাড়ি পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে কিংবা পানি ট্যাংকে পানি সরবারহ করার জন্য সুবিধাজনক এবং কার্যকর উপকরণ।
২। হোস পাইপ নমনীয় হওয়ায় যেকোনো দুর্গম স্থানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সহজেই পানি সরবারহ করা যায়।
৩। হোস পাইপ দিয়ে দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে পানি সরবারহ করতে সহায়তা করে যা সময় এবং শ্রম উভয় সাশ্রয় করে।
৪। হোস পাইপ দিয়ে সহজেই পানি সরবারহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যার ফলে পানির অপচয় হয় না।
৫। কৃষিক্ষেত্রে ফসলের বৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দক্ষ সেচ ব্যবস্থায় হোস পাইপ অপরিহার্য।
৬। কন্সট্রাকশন কাজে কংক্রিট মেশানো, এবং নির্মাণাধীন সাইটে পানি সরবারহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৭। এছাড়াও, বাসা-বাড়ী, অফিস কিংবা শিল্পকারখানায় দুর্ঘটনাবশত অগ্নিকান্ডে আগুন নিয়ন্ত্রনে হোস পাইপের ব্যবহার করা হয়।
৮। হোস পাইপ ব্যবহারের জন্য আলাদা প্লাম্বিং এর প্রয়োজন হয় না যেকোনো পানির ট্যাপ, পানির পাম্প কিংবা জলাশয়ে যুক্ত করে সহজে পানি সরবারহ করা যায়।
৯। হোস পাইপের সামনের অংশে স্প্রে হেড বা স্প্রে গান লাগানো থাকে যা পানির চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পাশাপাশি যানবাহন কিংবা অন্যান্য কিছু পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে।
১০। হোস পাইপ সাধারণত লাইটওয়েট এবং নমনীয় হওয়ায় সহজে কুন্ডলি পাকিয়ে ছোট পরিসরের জায়গায় সংরক্ষণ করা যায়।
হোস পাইপ কেনার ক্ষেত্রে কি কি দেখতে হবে?
হোস পাইপের দৈর্ঘ্যঃ হোস পাইপ কেনার আগে কাজের পরিধি অনুযায়ী এরিয়া পানি সরবারহ করা যাবে এমন দৈর্ঘ্যের হোস পাইপ বিবেচনা করতে হবে।
হোস পাইপের ব্যাসঃ হোস পাইপের ব্যাস মূলত পানি প্রবাহের হার এবং চাপ নির্ধারণ করে থাকে। হোস পাইপ সাধারণত ৫/৮ ইঞ্চি, ৩/৪ ইঞ্চি ব্যাস সহ বিভিন্ন ব্যাসে পাওয়া যায়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী যথেষ্ট পানি সরবারহ করা যাবে এমন ব্যাস সম্পন্ন হোস পাইপ বিবেচনা করা উচিত।
তৈরিকৃত উপাদানঃ হোস পাইপ সাধারণত হাই-কোয়ালিটি রাবার, পলেস্টার ফেব্রিকস সহ বিভিন্ন উপাদানে তৈরি। তাই কেনার আগে হোস পাইপ কি ধরণের উপদানে তৈরি তা যাচাই করতে হবে।
পাইপের নমনীয়তাঃ হোস পাইপ যেন যেকোন জায়গায় স্থানান্তর করার পাশাপাশি সহজে কুন্ডলি পাকিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে কিনা তা বিবেচনা করতে হবে।
হোস পাইপের কানেক্টরঃ হোস পাইপের মাথায় পিতল, স্টেইনলেস স্টিলের কানেক্টর থাকে যা পানি সরবারহ করার ক্ষেত্রে নজলের এর সাথে সংযোগ তৈরিতে সহায়তা করে। তাই হোস পাইপ কেনার আগে অবশ্যই টেকসই এবং স্থায়িত্ব সম্পন্ন কানেক্টর যাচাই করতে হবে।
নজলেসঃ বাগান, গাড়ি পরিষ্কার কিংবা কন্সট্রাকশন সাইটে নির্দিষ্ট পরিমানে পানি ছিটাতে হোস পাইপের সাথে যুক্ত থাকে। তাই কাজের পরিধি অনুযায়ী হোস পাইপের সাথে নজলেস সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা যাচাই করতে হবে।
ইউভি রেজিস্ট্যান্সঃ প্রচন্ড তাপে কিংবা সূর্যের আলোতে দীর্ঘ সময় ব্যবহারে হোস পাইপ কোনো প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ হবে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
বাজেট সামঞ্জস্যতাঃ বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হোস পাইপ বিবেচনা করা উচিত। তাহলে নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে সেরা হোস পাইপ পাওয়া যাবে।
হোস পাইপের দাম কত?
হোস পাইপের দাম সাধারণত পাইপের দৈর্ঘ্য, ব্যাস, তৈরিকৃত উপাদান এবং গুণমান ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে হোস পাইপের দাম ১৫০ টাকা থেকে শুরু যা শতকরা ১০০ ভাগ নমনীয় পিভিসি দিয়ে তৈরি, ১০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ভালো ইউভি প্রতিরোধ সক্ষমতা রয়েছে।
- ম্যাজিক হোস পাইপের দামঃ বাংলাদেশে ম্যাজিক হোস পাইপের দাম ৪০০ টাকা থেকে শুরু যা টেকসই প্লাস্টিক ও মেটাল উপাদানে তৈরি, মাল্টিফাংশনাল স্প্রে গান যুক্ত রয়েছে এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া, ম্যাজিক হোস পাইপ দাম দৈর্ঘ্য ও ব্যাস অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
- ফায়ার ফাইটিং হোস পাইপঃ বাংলাদেশে ফায়ার ফাইটিং হোস পাইপের দাম সাধারণত ২৮০০ টাকা থেকে শুরু যা ১.৫ ইঞ্চি ব্যাস, এবং ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের হয়। এছাড়াও, ফায়ার ইঞ্জিন বা ফায়ার হাইড্রেন্টের সাথে সংযোগ করার পাশাপাশি উচ্চ মানের উপকরণে তৈরিকৃত ফায়ার ফাইটিং হোস পাইপের দাম ১৩,০০০ টাকার বেশি হয়ে থাকে।
তবে, বাজেট বিবেচনা করার পাশাপাশি গুণমান সম্পন্ন হোস পাইপ বিবেচনা করা উচিত, যা দীর্ঘদিন অনায়সে ব্যবহার করা যাবে।