মধু কেনাকাটা
মধু হচ্ছে ঘন এবং মিষ্টি জাতীয় তরল পদার্থ, যা মৌমাছিরা বিভিন্ন ধরণের ফুল থেকে নেকটার সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা রাখে। পরবর্তীতে সংরক্ষিত ফুলের রস প্রাকৃতিক নিয়মে মৌচাকের মধ্যে মধুতে রুপান্তরিত হয়। তাছাড়া, মধু ঔষুধি গুনাগুন সম্পন্ন ভেষজ তরল, যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী এবং নিয়মিত খাওয়ার ফলে বিভিন্ন অসুখ থেকে নিরাপদ থাকা যায়। বাংলাদেশে সুন্দরবন, পাহাড়ী এলাকা সহ গ্রামে গঞ্জে বিভিন্ন জায়গায় মধু চাষ করা হয়। ফলে, গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী বর্তমানে জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিডিস্টল.কম এ সাশ্রয়ী দামে মধু পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে কয় ধরণের মধু পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে প্রধানত দুই ধরনের মধু পাওয়া যায়, যা প্রাকৃতিক মধু এবং চাষকৃত মধু নামেই পরিচিত।
প্রাকৃতিক মধুঃ এই ধরণের মধুর প্রধান উৎস সুন্দরবন।প্রাকৃতিক মধুতে সাধারণত সাত রকম ফুলের রস থাকে। এছাড়াও, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রাকৃতিক মধুর চাক দেখা যায়, তবে থেকে সামান্য মধুর জোগান পাওয়া যায়। সুন্দরবন এবং পাহাড়ি এলাকার মানুষ বিশেষ মৌয়ালরা প্রাকৃতিক মধু সংগ্রহ করে বাংলাদেশের বাজারে সাশ্রয়ী দামে সরবারহ করে থাকে।
চাষকৃত মধুঃ বর্তমানে, বাংলাদেশের দুর্গম পাহাড়ী এলাকা, ঘন অরন্যময় জায়গা ব্যাতীত এখন সাধারণ শস্য ক্ষেতে মধু চাষ করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে, সরিষা ক্ষেতে কৃত্তিম উপায়ে মধু চাষ করা হয়। তবে, চাষকৃত মধুতে পাঁচ রকম ফুলের মধু পাওয়া যায়। তাছাড়া, চাষকৃত মধু প্রাকৃতিক মধুর তুলনায় কম দামে পাওয়া যায়।
কেন মধু খাবেন?
১। মধু মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি সাধারণত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা শরীরের কোষ, শ্বাসযন্ত্র, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল, কার্ডিওভাসকুলার এবং স্নায়ুতন্ত্র নিরাপদ রাখতে সহায়তা করে।
২। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ফসফরাস, পটাসিয়াম, রিবোফ্লাভিন, জিঙ্ক সহ বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান থাকে, যা শরীরে শক্তি জোগায়।
৩। তাছাড়া, শরীরে বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীন অ্যালার্জি, চর্মরোগের জন্য অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে যথেষ্ট কার্যকর।
৪। কাটা ছেড়া কিংবা ক্ষত স্থানের চিকিৎসায় মধু ব্যবহার করা যায়, তবে চিকিৎসক এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫। মধুতে উপকারী প্রিবায়োটিকও রয়েছে যা অন্ত্রে বসবাসকারী ভালো ব্যাকটেরিয়াকে পুষ্ট করে, যা হজম শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৬। বিশেষ করে শীতকালে কাশি এবং গলা ব্যাথা প্রশমিত করতে মধু খুবই কার্যকর।
৭। মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি মানুষের মস্তিষ্কের স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে।
৮। এছাড়াও, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা সমাধানে মধু যথেষ্ট কার্যকর। পাশাপাশি, মধু খেলে শরীরের ফ্যাট কমে যায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
বাংলাদেশে মধুর দাম কত?
বাংলাদেশে মধুর দাম সাধারণত কেজি প্রতি ৫০০ টাকা থেকে শুরু, যা মূলত চাষকৃত সরিষা ফুলের মধু। তাছাড়া, বাংলাদেশে মধুর দাম সাধারণত মধুর ধরণ, প্যাকেজিং, এবং গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী দাম কম বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে, সুন্দরবনের শতকরা ১০০ ভাগ খাটি প্রাকৃতিক মধুর দাম প্রতি কেজি ৮০০ টাকা থেকে শুরু।
অরজিনাল মধু কিভাবে চিনবেন?
- মধু সাধারণত ঘন এবং অনেক বেশি আঠালো হয়ে থাকে, তাই মধু যাচাই করতে হাতের আঙ্গুলে অল্প মধু নিয়ে যাচাই করতে পারেন।
- গ্লাসভর্তি পানিতে এক চামচ মধু ঢেলে আস্তে আস্তে নাড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যদি খাটি মধু হয় সেক্ষেত্রে ছোট ছোট পিন্ডের মত মধু পানিতে ছড়িয়ে যাবে।
- তাছাড়া, প্রাকৃতিক মধুতে কখনো ফেনা হয় না, তাই মধু কেনার সময় মধুতে অল্প পানি এবং দুই তৃতীয়াংশ ভিনেগার মেশানোর পর যদি ফেনা সেক্ষেত্রে সেটা নকল মধু।
- প্রাকৃতিক মধুতে সহজেই আগুন ধরে, তাই অল্প তুলো মধুতে ভিজিয়ে তাতে আগুন দিয়ে যাচাই করতে পারেন।
- মধু দীর্ঘদিন বাসায় রাখলে, মধুতে চিনি পড়ে। তাই, মধুর জারটি গরম পানিতে কিছুক্ষণ রেখে খাটি মধু কিনা যাচাই করতে পারেন।
- ব্লটিং পেপারে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে যাচাই করতে পারেন মধু আসল না নকল।
- এছাড়াও দাগ যুক্ত সাদা কাপড়ে মধু মাখিয়ে আধা ঘন্টা রেখে দিয়ে মধু খাটি কিনা যাচাই করতে পারেন। কারণ মধু মাখানো কাপড় ধোয়ার পর যদি দাগ থাকে সেক্ষেত্রে তা নকল মধু।
- পাশাপাশি, মধু ফ্রীজে রেখে যাচাই করতে পারেন, কারণ অরিজিনাল মধু কখনো ঠান্ডায় জমে যায় না।