হেয়ার স্ট্রেইটেনার কেনাকাটা
বর্তমান সময়ে চুল ছোট বা বড় হউক তা স্ট্রেইট রাখা নারীদের ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। মহিলাদের জন্য বাঁকা কিংবা কুঁকড়ানো চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য হেয়ার স্ট্রেইটনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হেয়ার স্ট্রেইটনার হচ্ছে মূলত স্ট্রেইটনারে মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তিকে তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত করে কোঁকড়ানো কিংবা বাঁকা চুলকে সোজা করার আধুনিক ডিভাইস। শুধু কোঁকড়ানো চুল সোজা নয় বরং সোজা চুল কোঁকড়ানো স্টাইল করতেও হেয়ার স্টেইনার ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে নারীদের ব্যবহার্য অন্যান্য সামগ্রীর মধ্যে হেয়ার স্ট্রেইটনার নিত্যসঙ্গী। বর্তমানে বাংলাদেশে ওয়াল্টন, প্যানাসনিক, ফিলিপস, কেমেই, এবং বিভিন্ন চায়না ব্র্যান্ডের তৈরি বিভিন্ন ধরনের হেয়ার স্ট্রেইটনার পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশে কয় ধরনের হেয়ার স্ট্রেইটনার পাওয়া যায়?
স্ট্রেইটনার মূলত বিদ্যুৎ এর মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। তবে ডিজাইন, সেন্সর, স্ট্রেইটনারে প্লেটের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে হেয়ার স্ট্রেইটনার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তাছাড়া, ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে যেসব হেয়ার স্ট্রেইটনার পাওয়া যায় তা প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়।
ফ্ল্যাট হেয়ার স্ট্রেইটনারঃ ফ্ল্যাট হেয়ার স্ট্রেইটনার মূলত দুটি ফ্ল্যাট সিরামিক বা ধাতব উত্তপ্ত প্লেটের সাথে একজোড়া চিমটি হয়ে থাকে। ফ্ল্যাট স্ট্রেইটনার চুলের খাদে তাপ প্রয়োগ করে অস্থায়ীভাবে কোঁকড়া কিংবা বাঁকা চুলকে সোজা করে। চুল সোজা করার জন্য স্ট্রেইটনারটি মাথার ত্বকের উপরিভাগ থেকে চুলের শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়। সম্পূর্ণ চুলের স্ট্রেইটনার ব্যবহার না করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করা হয়। তাছাড়া ফ্ল্যাট হেয়ার স্ট্রেইটনার চুলকে সোজা করার পাশাপাশি অনেক টা মসৃণ করে থাকে।
ব্রাশ হেয়ার স্ট্রেইটনারঃ ব্রাশ হেয়ার স্ট্রেইটনারগুলো অন্যান্য প্যাডেল ব্রাশের মত দেখতে এবং কিছুটা বড় ধরনের হয়ে থাকে। ব্রাশ স্ট্রেইটনারের হ্যান্ডেলের শেষ অংশে একটি বৈদ্যুতিক কর্ড থাকে। ফলে চুল আচড়ানোর পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ভাবে তাপ পাওয়ার ফলে কোঁকড়ানো ও বাঁকা চুল সোজা করা যায়। এই ধরনের স্ট্রেইটনার ব্যবহারের ফলে চুলে তাপ সামঞ্জস্যভাবে পেয়ে থাকে ফলে চুল দ্রুত সোজা হয়ে থাকে।
হেয়ার স্ট্রেইটনার কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
হেয়ার স্ট্রেইটনার কেনার পূর্বে হেয়ার স্ট্রেইটনারের সেন্সর, স্ট্রেইটনারের প্লেটের ধরণ, সাইজ, তাপমাত্রা সীমা, গরম করার সময়, বিদ্যুৎ খরচ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেওয়া অবশ্যই জরুরি। পাশাপাশি চুলের গঠন ও কোঁকড়ানো না বাঁকা ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে হেয়ার স্ট্রেইটনার কেনা উচিত।
সেন্সরঃ প্রয়োজনীয়তা অনুসারে হেয়ার স্ট্রেইটনারে বিভিন্ন ধরনের সেন্সর যুক্ত করা হয়। হেয়ার স্ট্রেইটনারে সাধারণত তাপমাত্রা ও চাপ কিংবা আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের সেন্সর ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া, বর্তমানে অনেক হেয়ার স্ট্রেইটনারে টাচ সেন্সরযুক্ত রয়েছে ফলে স্পর্শের মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ বা চালু করা যায়।
প্লেটের ধরনঃ হেয়ার স্ট্রেইটনারের প্লেট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে ফলে স্ট্রেইটনারের মানের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায় এবং দামেও পার্থক্য হয়ে থাকে। হেয়ার স্ট্রেইটনারে প্রধানত সিরামিক, টরমালিন সিরামিক, টাইটানিয়াম, এবং অ্যালুমিনিয়ামের প্লেট ব্যবহার করা হয়। তাই, স্ট্রেইটনারে এসব পদার্থের প্লেটে ব্যবহারের ফলে তাপমাত্রা উঠা নামার মধ্যে সময়ের পার্থক্য হয়ে থাকে এবং মানের দিক থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। তাছাড়া স্ট্রেইটনার ব্যবহারে প্লেটের উপর নির্ভর করে চুলের আর্দ্রতা ও স্ট্রেইটিং স্থায়িত্ব হয়। তাই হেয়ার স্ট্রেইটনার কেনার পূর্বে স্ট্রেইটনারের প্লেটের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
প্লেট সাইজঃ প্লেট সাইজ মূলত চুলের ঘনত্ব ও কতটুকু লম্বা সে অনুসারে সঠিক প্লেট নির্বাচন করতে হবে। কারণ বেশি লম্বা চুলের জন্য একটু চওড়া প্লেটের হেয়ার স্ট্রেইটনার ভালো এবং কম সময়ে চুল সোজা করা যায়। আবার পাতলা কিংবা তুলনামূলক ছোট চুলের জন্য চিকন প্লেটের হেয়ার স্ট্রেইটনার উপযুক্ত।
তাপমাত্রা সীমাঃ চুলের ধরন অনুযায়ী স্ট্রেইটনারে সঠিক তাপমাত্রা নির্বাচন করে ব্যবহার করা উচিত। চুল সাধারণত পাতলা, মাঝারি, এবং ঘন বা খুব বেশি হয়ে থাকে তাই চুলের ঘনত্বের অনুসারে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় হেয়ার স্ট্রেইটনারে ব্যবহার করা উচিত। তাই পাতলা চুলের জন্য ১২০-১৪০ ডিগ্রি, মাঝারি চুলের জন্য ১৬০-১৮০ ডিগ্রি এবং ঘন কোঁকড়া চুলের জন্য ১৮০-২২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা পর্যন্ত হেয়ার স্ট্রেইটনারে ব্যবহার করা উচিত। তাই হেয়ার স্ট্রেইটনার নেওয়ার পূর্বে স্ট্রেইটনারে তাপমাত্রা রেঞ্জ জেনে নেওয়া উচিত।
গরম হওয়ার সময়ঃ সাধারণত হেয়ার স্ট্রেইটনার চালু করার পর সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে যায়। তাছাড়া বর্তমানে কিছু কিছু হেয়ার স্ট্রেইটনারে ৩০ মিনিট কিংবা ১ ঘণ্টা অন্তর অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সেন্সর যুক্ত রয়েছে ফলে অসাবধানতা বশত ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে, হেয়ার স্ট্রেইটনার চুলে ব্যবহারের পূর্বে সঠিক তাপমাত্রা নির্বাচন করে নিতে হবে।
হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহারে সতর্কতা
- অতিরিক্ত গরম তাপমাত্রায় হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করা থেকে বিরিত থাকুন
- ব্যবহার করার পরে হেয়ার স্ট্রেইটনারের সুইচ বন্ধ করে রাখুন
- ব্যবহার শেষে হেয়ার স্ট্রেইটনার চালু অবস্থায় রেখে যেখানে সেখানে ফেলে রাখবেন না
- ব্যবহার শেষে প্লেটগুলো ঠান্ডা হওয়ার পর হেয়ার স্ট্রেইটনার নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করুন
- হেয়ার স্ট্রেইটনার শিশুদের নাগালের বাহিরে রাখুন
- পানি ও তরল পদার্থের সংস্পর্শ থেকে হেয়ার স্ট্রেইটনার দূরে রাখুন
বাংলাদেশে হেয়ার স্ট্রেইটনারের দাম কত?
বাংলাদেশে হেয়ার স্ট্রেইটনারের দাম স্ট্রেইটনারের ডিজাইন, সাইজ, সেন্সর, ধরণ, এবং ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্য থেকে শুরু হয়। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ২,০০০ টাকার মধ্যে উন্নত মানের হেয়ার স্ট্রেইনার পাওয়া যায়। তবে, টাচ এলইডি, অটোমেটিক তাপমাত্রা কন্ট্রোল, চুলের কালার প্রটেকশন যুক্ত হেয়ার স্ট্রেইটনারে দাম ৩৮০০ টাকা থেকে শুরু।