জেনারেটর কেনাকাটা
বাংলাদেশে লোডশেডিং নিত্য নৈমেত্তিক বিষয়, তাই নির্ভরযোগ্য পাওয়ার বেক আপ সোর্স থাকা জুরুরি। আর, এই নির্ভরযোগ্য পাওয়ার বেক আপ প্রদানের জন্য জেনারেটর হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর ডিভাইস। কারণ, এটি লোডশেডিং এর সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে। এটি বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে প্রয়োজন অনুযায়ী পাওয়ার বেকআপ প্রদান করে থাকে। বর্তমানে, চাহিদা অনুযায়ী ডিজেল জেনারেটর, গ্যাসোলিন জেনারেটর এবং মিনি জেনারেটর সহ বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন ক্যাপাসিটির জেনারেটর বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
জেনারেটর এর ধরণ
বর্তমান বাংলাদেশের বাজারে তিন ধরণের জ্বালানীর জেনারেটর পাওয়া যায় এর মধ্যে একটি হচ্ছে ডিজেল জেনারেটর অন্যটি দুটি হচ্ছে গ্যাসোলিন এবং গ্যাস জেনারেটর।
- ডিজেল জেনারেটরঃ এই ধরনের জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে জ্বালানী হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করা হয় এবং অন্যান্য জেনারেটরের তুলনায় অনেক বেশি শক্তি উৎপাদন করতে পারে। জেনারেটরের পাওয়ার যত বেশি হবে জ্বালানী তত বেশি লাগবে। সাধারণত ৬ লিটার ডিজেল দিয়ে ৮ থেকে ১০কেভিএ জেনারেটর ১ ঘন্টা চালানো যায়।
- গ্যাসোলিন জেনারেটরঃ এই ধরনের জেনারেটরে পেট্রোল বা গ্যাসোলিন জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। গ্যাসোলিন জেনারেটর অনেক দীর্ঘ সময় ধরে চালানো যায়। প্রায় ৮ ঘন্টা চলে ১ গ্যালন পেট্রোল দিয়ে।
- গ্যাস জেনারেটরঃ এলপিজি বা সিএনজিতে এই জেনারেটরগুলো চলে বিধায় এর জ্বালানি খরচ অনেক কম।
জেনারেটর এর সঠিক পাওয়ার নির্বাচন
জেনারেটরের ক্ষমতাকে কেভিএ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। জেনারেটরের কেভিএ যত বেশি হবে এর কার্ক্ষমতাও তত বেশি হবে। কেভিএ হচ্ছে কিলোভোল্ট আম্পিয়ার যা ১০০০ ভোল্টের সমান।
মিনি জেনারেটর বনাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল জেনারেটর
হোম জেনারেটর বা মিনি জেনারেটরঃ মিনি জেনারেটর ছোট প্রতিষ্ঠান, অফিসে বা বাসা বাড়ির জন্য ভাল। ১ থেকে ১০ কেভিএর এই জেনারেটরগুলো ছোট ছোট অফিস, দোকান বা বাসার জন্য যথেষ্ট। এগুলোকে পোর্টেবল জেনারেটরও বলা হয়ে থাকে। সিঙ্গেল ফেজ ২২০-২৪০ ভোল্টেজ এর হয়ে থাকে এই ছোট জেনারেটরগুলো। বাংলাদেশে এই জেনারেটরগুলোর দাম অনেক কম।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল জেনারেটরঃ কারখানার জন্য প্রয়োজন হয় বৃহৎ আকারের জেনারেটর। এগুলো অনেক শক্তিশালী বিধায় ৩ ফেজের বিদ্যুৎ ৪০০-৪৪০ ভোল্টেজ প্রয়োজন হয় এবং ৫০০ কেভিএ পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাছাড়া বড় মেশিন যেমন লিফট, এস্কেলেটরের এবং হাসপাতালের জরুরি বিদ্যুৎসহ প্রয়োজনীয় মেশিন চালানোর জন্য এই ধরনের জেনারেটর প্রয়োজন।
অন্যান্য ফিচার সমূহ
- অটমেটিক সিও শাট-অফঃ জেনারেটরের অটোমেটিক সিও শাট-অফ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা। এটি জেনারেটরের অভ্যন্তরে সেন্সরের মাধ্যমে যুক্ত করা থাকে ফলে মারাত্মক দূর্ঘটনা এটি শনাক্ত করে অটোমেটিক জেনারেটরের ইঞ্জিনটি বন্ধ করে দেয়।
- অটোমেটিক স্টার্টঃ জেনারেটরকে অটোমেটিক স্টার্ট করার জন্য এক ধরনের পুশ স্টার্টিং সুইচ ব্যবহার করা হয় যা চার্জার ব্যাটারী দিয়ে পরিচালিত হয়।
- ফুয়েল গজঃ ছোট জেনারেটর বা পোর্টেবল জেনারেটরে জ্বালানী পরিক্ষা করার জন্য এতি ব্যবহার করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে জেনারেটরে কত জ্বালানী রয়েছে তা পরিক্ষা করা যায়।
- লো-অয়েল শাট অফঃ বেশির ভাগ জেনারেটরে জ্বালানী হিসেবে ডিজেল বা পেট্রোল ব্যবহার করা হয়। জেনারেটর ব্যবহার করার ফলে যদি তেল ন্যূনতম স্তরের নীচে পড়ে যায় তাহলে জেনারেটরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যখন তেল ন্যূনতম স্তরের নীচে চলে আসে তখন জেনারেটরের ইঞ্জিনের ক্ষতি রোধ করতে অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।
- ক্যানোপিঃ বাংলাদেশে জেনারেটর ক্যানোপি সহ বা ক্যানোপি ছাড়া বিক্রি করা হয়। ক্যানোপি ছাড়া জেনারেটরকে ওপেন জেনারেটর বলা হয় এবং সাধারণত দাম কম হয়। ক্যানোপি সাধারণত জেনারেটরকে পরিবেশগত কারণ থেকে রক্ষা করে এবং কম রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করে। ক্যানোপি শব্দ কমাতে এবং পরিবেশকে সবার জন্য আরামদায়ক করতেও সাহায্য করে।
জেনারেটর সম্পর্কিত প্রায়শ জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী
স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর এবং পোর্টেবল জেনারেটরের মধ্যে পার্থক্য কি?
স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর মূলত নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ীভাবে ইন্সটল করা যায়, যা লোডশেডিং এর সময় অটোমেটিক পাওয়ার আপ করে থাকে। ফলে, বাসা-বাড়ি, হাসপাতাল কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় থাকে। অন্যদিকে, পোর্টেবল জেনারেটর প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে যেমন ইভেন্ট, কন্সট্রাকশন সাইট অথবা অস্থায়ী বিদ্যুৎ সরবারহ করার জন্য উপযুক্ত।
জেনারেটর অপারেট করার জন্য কোন ধরণের ফুয়েল ব্যবহার করা যায়?
জেনারেটর এর ফুয়েল সাধারণত ধরণের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন ডিজেল জেনারেটর অপারেট করার জন্য পেট্রোল, ডিজেল ব্যবহার করতে হয়। এছাড়াও, গ্যাস জেনারেটর সাধারণত প্রাকৃতিক গ্যাস যেমন এলপিজি এবং সিএনজি গ্যাস ব্যবহার করে থাকে।
জেনারেটর ব্যবহারে কেমন শব্দ হয়?
প্রায় সকল জেনারেটর ব্যবহারে কম বেশি শব্দ হয়ে থাকে। তবে, কিছু কিছু মডেল শব্দ ছাড়া অপারেট করা যায়। তাই, প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী এসব মডেল বেছে নিতে পারেন। পাশাপাশি, জেনারেটরে অ্যাকোস্টিক এনক্লোজার বা ক্যানপি ইনস্টল করে শব্দের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারেন।
জেনারেটর কতক্ষণ পাওয়ার বেকআপ প্রদান করে?
জেনারেটর নিয়মিত চালানোর ক্ষেত্রে জ্বালানী ট্যাঙ্কের সাইজ এবং লোড ক্যাপাসিটির উপর নির্ভর করে পাওয়ার বেকআপ এর সময় পরিবর্তিত হয়ে। ডিজেল জেনারেটরের ১১৩৬ লিটার-১৩৬৭ লিটার ফুয়েল দিয়ে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পাওয়ার বেকআপ পাওয়া যায়। অন্যদিকে, পোর্টেবল জেনারেটর সাধারণত দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টার মত পাওয়ার বেকআপ প্রদান করে থাকে। তাছাড়া, যেসব জেনারেটর বাহ্যিক জ্বালানী উৎসের সাথে সংযুক্ত সেসব জেনারেটর কয়েক ঘন্টা থেকে শুরু করে কয়েকদিন পর্যন্ত চলতে পারে।
সকল জেনারেটর কি ক্যানপিসহ পাওয়া যায়?
না, নির্দিষ্ট কিছু মডেলের জেনারেটরের সাথে ক্যানপি পাওয়া যায়। তবে, প্রয়োজনে আপনি আলাদাভাবে কিনে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশে জেনারেটর এর দাম ২০২৪
বাংলাদেশে জেনারেটরের দাম প্রায় ৪,০০০ টাকা থেকে শুরু হয় যাকে মিনি জেনারেটরও বা পোর্টেবল জেনারেটর বলা হয় এবং এতে ২ কিলোওয়াট বা তার কম শক্তি রয়েছে। এই ধরনের জেনারেটর ছোট দোকানের জন্য আদর্শ কারণ এটি অল্প জায়গা নেয়। শিল্প বা অ্যাপার্টমেন্টের জন্য, জেনারেটরের দাম হবে ১ লাখ বা তার বেশি যা আপনার চাহিদার উপর নির্ভর করবে। জেনারেটরের দাম সাধারণত এর আউটপুট পাওয়ার, জ্বালানি প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে এবং ইনস্টলেশন, ক্যানোপি এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মতো কিছু অতিরিক্ত খরচ যোগ করতে হতে পারে।