ফ্যান কেনাকাটা
গরম মৌসুমে বদ্ধ রুমের আবহাওয়া শীতল রাখতে ফ্যানের ব্যবহার করা হয়। ফ্যানের একাধিক পাখা থাকে যা ইলেকট্রিক মোটরের সাহায্যে ঘুরতে থাকে এবং রুমের সর্বত্র বাতাস ছড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ গরমে স্বস্তির জন্য ফ্যান ব্যবহার করে থাকে। ফ্যান সাধারণত বাতাস সরবরাহ করার জন্য সরাসরি বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করে। তবে, এখন অনেক ফ্যান পাওয়া যায় যেগুলো সৌর শক্তি মাধ্যমে চলতে পারে। এছাড়া, ব্যাটারি চালিত রিচার্জেবল ফ্যান বাংলাদেশে পাওয়া যায় যেগুলো ব্যাটারি ক্যাপাসিটির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময় ব্যাকআপ প্রদান করে।
বাংলাদেশে কয় ধরনের ফ্যান পাওয়া যায়?
প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের, সাইজের, ও কোয়ালিটির ফ্যান বাংলাদেশে পাওয়া যায়। বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
সিলিং ফ্যানঃ রুমের সিলিং এর সাথে ফিটিং করে সিলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সাইজের ও বিভিন্ন ডিজাইনে সিলিং ফ্যান বাংলাদেশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রায় সকল বাসা-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এবং অফিসসহ সর্বত্র সিলিং ফ্যানের ব্যবহার দেখা যায়। এছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় নেট সিলিং ফ্যানের ব্যবহার দেখা যায়।
স্ট্যান্ড ফ্যানঃ স্ট্যান্ড ফ্যান মূলত এমন ফ্যান যা একটি গোলাকার খাছার মধ্যে থাকে এবং একটি সামঞ্জস্যযোগ্য স্ট্যান্ডের সাথে যুক্ত থাকে। স্ট্যান্ড ফ্যান প্রয়োজন অনুসারে ঘরের যেকোনো কোনে নিয়ে যাওয়া যায়। সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি অতিরিক্ত বাতাসের জন্য স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবহার করা হয়। ছোট থেকে বড় বিভিন্ন সাইজের স্ট্যান্ড ফ্যান বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায়।
টেবিল ফ্যানঃ টেবিল ফ্যান মূলত স্ট্যান্ড ফ্যানের সবচেয়ে ছোট রূপ যা সাধারণত টেবিলের উপর রেখে ব্যবহার করা হয় বিধায় টেবিল ফ্যান হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে রিচার্জেবল ও ননরিচার্জেবল উভয় ধরনের টেবিল ফ্যান বিডিতে পাওয়া যায়। গরম আবহাওয়ায় সময় টেবিলে বসে কাজ করা বা পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য টেবিল ফ্যান কার্যকরী। বাংলাদেশে টেবিল ফ্যান সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়।
মিনি ফ্যানঃ মিনি ফ্যান বা পকেট ফ্যান যা খুব সহজেই যেকোনো জায়গায় বহনযোগ্য। মিনি ফ্যানগুলো আকারে খুব ছোট হয়ে থাকে ফলে এই ফ্যানগুলো পোর্টেবল ফ্যান হিসেবেও অধিক পরিচিত। এবং, মিনি ফ্যান সাধারণত রিচার্জেবল হয়ে থাকে ফলে বাসে বা ট্রেনে কিংবা রাস্তায় চলাফেরা করার সময় এবং যেকোনো কাজ করার সময় শরীরের গরম কমাতে মিনি ফ্যান সহজেই ব্যবহার করা যায়। মিনি ফ্যান যেমন গলায় বা কাধে ঝুলিয়ে রাখার জন্য এবং টেবিলের কর্নারে সহজে সেট করার জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের মিনি ফ্যান পাওয়া যায়।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যানঃ বাংলাদেশে ছোট থেকে বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং উৎপাদন ইন্ডাস্ট্রি গুলোতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বৃহৎ আকৃতির ফ্যান ব্যবহার করা হয় তাই মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যান। বাংলাদেশে কলকারখানায় ব্যাপক হারে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যান ব্যবহার করা হয়।
রিচার্জেবল ফ্যানঃ যে ফ্যানগুলোর সাথে নির্দিষ্ট ব্যাটারি থাকে যা ইলেকট্রিক পাওয়ারে চার্জ করা যায় এবং নির্দিষ্ট সময় ব্যাটারি ব্যাকআপ এর সাহায্যে বাতাস প্রদান করে তাকে রিচার্জেবল ফ্যান বলা হয়। যেসব অঞ্চলে গরমের মৌসুমে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটে এমতাবস্থায় রিচার্জেবল ফ্যান ব্যবহার করাই উপযুক্ত। বর্তমানে বিভিন্ন সাইজের রিচার্জেবল টেবিল ফ্যান বা স্ট্যান্ড ফ্যান বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
সোলার ফ্যানঃ সৌর শক্তির সাহায্যে যেসকল ফ্যান চলতে পারে সেসব ফ্যানকে সোলার ফ্যান বলা হয়। সাধারন ইলেকট্রিক ফ্যান তুলনায় সৌর ফ্যান গুলো আলাদা প্রযুক্তি ব্যবহারে তৈরি করা হয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সৌর ফ্যান অধিক হারে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে সৌর শক্তিতে চলতে পারে এমন সিলিং ফ্যান এবং টেবিল ফ্যান বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে ফ্যানের দাম কত?
সাধারণত ফ্যানের দাম এর সাইজ, ডিজাইন, প্রযুক্তি, এবং ধরনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। বর্তমানে, বাংলাদেশে টেবিল ফ্যানের দাম ৩২০ টাকা থেকে শুরু যা পোর্টেবল হ্যান্ড হ্যাল্ড ফ্যান। বাংলাদেশে সিলিং ফ্যানের দাম ১,৮০০ টাকা থেকে শুরু হয় যা ইলেকট্রিক পাওয়ারে চালিত ৩৬-ইঞ্চি ৩টি ব্লেড যুক্ত ফ্যান। এছাড়া, রিচার্জেবল মিনি ফ্যানের দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু যা ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে চার্জ করা যায়। ফ্যানের সাইজ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাছাড়া, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যানের দাম কিছুটা বেশি হয়।
ফ্যান কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
বাংলাদেশে ফ্যান একটি অতীব প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক ডিভাইস যা সকল বাসা বাড়ি এবং প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। তাই ফ্যান কেনার আগে অবশ্যই কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
১। ফ্যানের সাইজঃ ফ্যান কেনার আগে অবশ্যই ফ্যানের সাইজ বিবেচনা করতে হবে। সিলিং ফ্যানের ক্ষেত্রে রুমের সিলিং এ ফিটিং করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ও পরিস্থিতি অনুপাতে ফ্যান নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে টেবিল ফ্যান নির্দিষ্ট স্থানে ব্যবহার করা হয়, তাই প্রয়োজন অনুসারে নির্দিষ্ট সাইজের টেবিল ফ্যান নির্বাচন করতে হবে।
২। ফ্যানের ব্লেড সংখ্যাঃ বেশীর ভাগ ফ্যানে তিনটি ব্লেড থাকে তবে বিশেষ কিছু সিলিং ও টেবিল ফ্যানে চারটি এবং পাঁচটি পর্যন্ত ব্লেড থাকে। অধিক ব্লেড সম্পন্ন ফ্যান অধিক বাতাস প্রবাহ প্রদান করতে পারে। তাই, ফ্যান কেনার আগে অবশ্যই ফ্যানের ব্লেড সংখ্যা বিবেচনায় ফ্যান নির্বাচন করতে হবে।
৩। রোটেশন স্পিডঃ ফ্যানের রোটেশন স্পিড যত বেশি হবে ফ্যান তত বেশি বাতাস প্রবাহ করতে পারবে। ফ্যানের আরপিএম কে মূলত রোটেশন স্পিড বোঝানো হয়। তাই, ফ্যান কেনার আগে অবশ্যই এর রোটেশন স্পিড বিবেচনা করতে হবে।
৪। অ্যানার্জি কন্সাম্পশনঃ ফ্যান কেনার আগে অবশ্যই দেখতে হবে এটি কতটুকু শক্তি খরচ করবে। কেননা শক্তি খরচের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ বিল কম বেশি হয়ে থাকে। তাই, এমন ফ্যান নির্বাচন করতে হবে যা শক্তি সাশ্রয়ী হবে। অন্যদিকে, অনেকে আইপিএস ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে অ্যানার্জি কন্সাম্পশন ওয়াট আইপিএস সমর্থন করবে কিনা তা বিবেচনা করতে হবে।
৫। নয়েজঃ ফ্যান সাধারণত দিন ও রাত একটানা ব্যবহার করা হয় তাই লো নয়েজ বা নয়েজব্যতীত ফ্যান গুলো নির্বাচন করতে হবে। কেননা ফ্যান যদি অনবরত শব্দ করতে থাকে তাহলে ঘুমের ব্যাঘাত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
৬। ডিজাইনঃ বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ডিজাইনের ফ্যান পাওয়া যায়। তাই, বাড়ির বা অফিস এর রুমের অভ্যন্তরীণ ডিজাইনের সাথে মানানসই ডিজাইনের ফ্যান নির্বাচন করতে হবে।