এক্সস্ট ফ্যান কেনাকাটা
বাসা-বাড়িতে রান্নাঘর, বাথরুম, অফিস এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে সঠিকভাবে বাতাস চলাচল কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতেই মূলত এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহার করা হয়। এক্সস্ট ফ্যান সাধারণত আবদ্ধ রুমের ভেতরের গরম এবং ঠান্ডা বাতাসের গুণমান উন্নত করার পাশাপাশি রুমের পরিবেশকে আরামদায়ক রাখতে যথেষ্ট কার্যকর। এছাড়াও, এক্সস্ট ফ্যান বিডিতে সাধারণত এডজাস্ট ফ্যান, ব্লোয়ার ফ্যান নামেও বেশ পরিচিত। বাংলাদেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর হওয়ায় বাসা-বাড়ি, অফিস এবং শিল্প কারখানাতে এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহারের চাহিদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে আরএফএল, ভিশন এবং ওয়ালটনের মত দেশীয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি চায়না ব্র্যান্ডের এক্সস্ট ফ্যান বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
কেন এক্সস্ট ফ্যান কিনবেন?
১। বাসা-বাড়ি, অফিস, ওয়্যার হাউজ, এবং শিল্প কারখানার মত জায়গায় সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ভালো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে এমন আবদ্ধ স্থানে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে এক্সস্ট ফ্যান কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
২। বিশেষ করে গরমকালে অতিরিক্ত গরমে যেকোনো আবদ্ধ রুমে অবস্থান করলে অস্বস্তি বাড়ার পাশাপাশি অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহারের ফলে রুমের গরম বাতাস দ্রুত বের করে নিয়ে শীতল পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৩। রান্নাঘর, বাথরুম, গুদাম এবং কারখানার মত আবদ্ধ স্থানের দুর্গন্ধ সহজেই বাইরে বের করে দেয় এবং বাইরে থেকে নির্মল বাতাস রুমে প্রবেশ করায়। যার ফলে এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহারে এসব স্থানে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৪। এছাড়াও, আর্দ্র পরিবেশে আবদ্ধ রুম কিংবা বড় পরিসরের জায়গা স্যাঁতসেঁতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যা সাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে, প্রয়োজনীয় এরিয়াতে এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহারে আর্দ্র বাতাস বাইরে বের করে দেয়। যার ফলে ব্যবহৃত রুমে শুষ্ক এবং সতেজ পরিবেশ বজায় থাকে।
৫। বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল ছাড়াও বিভিন্ন শিল্প কারখানা সাধারণত ঘনবসতি পূর্ণ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বায়ু দূষণের হারও অনেক বেশি থাকে। এই সব ঘনবসতি পূর্ণ এরিয়াতে এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহারে বায়ু দূষণ কমানোর পাশাপাশি মানুষের নিঃশ্বাসের সাথে নির্গত বিভিন্ন অ্যালার্জেন বাইরে বের করে দেয়। ফলে, শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি সমস্যা জনিত ব্যাক্তিদের নিরাপদ থাকতে কার্যকর পরিবেশ প্রদান করে।
৬। তাছাড়া, এক্সস্ট ফ্যান মূলত এয়ার কন্ডিশনার এবং অন্যান্য এয়ার পিউরিফিকেশন সিস্টেমের তুলনায় শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। ফলে এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহারে খরচ অনেক কম হয়।
এক্সস্ট ফ্যান কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
এক্সস্ট ফ্যানের সাইজঃ এক্সস্ট ফ্যান কেনার আগে রুম কিংবা ব্যবহৃত স্থানের আকার যাচাই করতে হবে। তাছাড়া, ফ্যানের সাইজ মূলত যে স্থানে স্থাপন করা হবে সে স্থানের সমানুপাতিক হতে হবে।
এয়ারফ্লো ক্যাপাসিটিঃ ব্যবহৃত এরিয়ার সাথে এক্সস্ট ফ্যান কার্যকর ভাবে দূষণকারী পদার্থ অপসারণ এবং সঠিকভাবে বাতাস চলাচলে কার্যকর এয়ারফ্লো ক্যাপাসিটি রয়েছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
নয়েস লেভেলঃ এক্সস্ট ফ্যান সাধারণত কিচেন, বাথরুম এবং কারখানা গুলোতে ঘনবসতি পূর্ণ এরিয়াতে সেট আপ করা হয়। তাই এক্সস্ট ফ্যান কেনার আগে অবশ্যই ফ্যানের নয়েস লেভেল যাচাই করে কেনা উচিত, যা শান্তিপূর্ণ এবং আরামদায়ক পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
শক্তিশালী মোটরঃ এক্সস্ট ফ্যানের সাথে যুক্ত মোটর উচ্চ পারফরম্যান্স প্রদানের সক্ষমতা এবং বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয়ী হবে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
এক্সস্ট ফ্যানের ধরণঃ বাসা বাড়ি, অফিস এবং কল কারখানায় সাধারণত দেওয়ালে, জানালায় এবং সিলিং এর সাথে মাউন্ট করার সুবিধা সম্পন্ন বিভিন্ন ধরণের এক্সস্ট ফ্যান বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়। তাই এক্সস্ট ফ্যান কেনার আগে ইন্সটল করার স্থান বিবেচনা করে ফ্যানের ধরণ বিবেচনা করতে হবে। জানালায় মাউন্টেবল এক্সস্ট ফ্যান সাধারণত বাসা-বাড়ি কিংবা অফিসের বাথরুম এবং কিচেনে ইন্সটল করা হয়ে থাকে।
গুণমান এবং স্থায়িত্বঃ এক্সস্ট ফ্যান কেনার আগে অবশ্যই নির্মাণ কোয়ালিটি, মরিচা প্রতিরোধী এবং মোটরের সাথে যুক্ত টেকসই ব্লেড বিবেচনা করতে হবে। ফলে এক্সস্ট ফ্যান দীর্ঘস্থায়ী কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করবে।
ওয়ারেন্টিঃ এক্সস্ট ফ্যান কেনার আগে ব্র্যান্ড বিবেচনার পাশাপাশি বিক্রয়োত্তর সুযোগ সুবিধা কেমন তা যাচাই করতে হবে।
অন্যান্য ফিচারঃ বাসা-বাড়িতে সাধারণত কিচেন, বাথরুমে ব্যবহার উপযোগী এক্সস্ট ফ্যানের পাশাপাশি বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সস্ট ফ্যান পাওয়া যায়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যান সাধারণত বড় পরিসরের জায়গায় ব্যবহার করা হয় এবং উন্নত ফিচারের সমন্বয়ে তৈরি হয়ে থাকে। তাই এই ধরণের এক্সস্ট ফ্যান কেনার আগে টাইমার, আর্দ্রতা সেন্সর এবং গতি পরিবর্তনের সেটিংস ইত্যাদি বিষয় সমূহ যাচাই করতে হবে।
এক্সস্ট ফ্যানের দাম কত?
বাংলাদেশে এক্সস্ট ফ্যান ৪০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে, এক্সস্ট ফ্যানের দাম সাধারণত সাইজ, ফ্যানের ধরণ, কোয়ালিটি, ব্র্যান্ড এবং অন্যান্য ফিচার সমুহের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
- কিচেন এক্সস্ট ফ্যানের দামঃ বাংলাদেশে কিচেন এক্সস্ট ফ্যানের দাম সাধারণত ৭৫০ টাকা থেকে শুরু, যা পিভিসি প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি সাইজের হয়ে থাকে। এছাড়া, কিচেন এক্সস্ট ফ্যানের দাম সাইজ, বিল্ট কোয়ালিটি এবং ব্লেড এর ধরণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
- ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সস্ট ফ্যানের দামঃ বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সস্ট ফ্যানের দাম ৬,০০০ টাকা থেকে শুরু, যা ডাবল হুইল ডিজাইনে তৈরি, নয়েস কম হয় এবং সহজে দেওয়ালে মাউন্ট করা যায়। এছাড়াও, বড় পরিসরের জায়গার বাতাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রুফটপ, ড্রাম, ব্লোয়ার টাইপের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সস্ট ফ্যান বাংলাদেশে ১৭,০০০ টাকা থেকে ৮০,০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, গুনমান বিবেচনা করার পাশাপাশি ব্যবহৃত স্থানের আকার বিবেচনায় নিয়ে সঠিক এক্সস্ট ফ্যান কেনা উচিত, যা সঠিকভাবে বাতাস নিয়ন্ত্রন এবং সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে যথেষ্ট কার্যকর হবে।