CPAP মেশিন কেনাকাটা
স্লিপ অ্যাপনিয়া সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও স্লিপিং ডিসঅর্ডার রোগ হিসেবে পরিচিত যা মূলত ঘুমের মধ্যে মানুষের স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস কে বাধাগ্রস্ত করে। স্লিপিং ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার তাগিদে স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন ব্যবহার করা হয়। ঘুমের সময় শ্বাসনালীতে অক্সিজেনের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার জন্য নাক এবং মুখের উপর পরা মুখোশের মত যে মেশিন ব্যবহার করা হয় তাকে স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন বলা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন সিপিএপি মেশিন নামেও পরিচিত। তাছাড়া স্বাভাবিক ঘুম এবং হৃদ্রোগ সহ বিভিন্ন ধরণের রোগ থেকে রোগীদের ঝুকিমুক্ত রাখতে কার্যকর অবদান রাখায় বিডিতে স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন ব্যাপক জনপ্রিয়।
কেন স্লীপ অ্যাপনিয়া মেশিন ব্যবহার করা হয়?
স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন বা সিপিএপি মেশিন নাক এবং মুখের উপর মুখোশের মাধ্যমে স্বাভাবিক বাতাস সরবরাহ করে। এই ধরণের মেশিন মূলত শ্বাসনালীকে খোলা রাখতে এবং ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসে বিরতি রোধ করতে ব্যবহার করা হয়।
মান সম্মত ঘুমঃ সিপিএপি মেশিন শ্বাসনালীকে খোলা রেখে শ্বাস-প্রশ্বাসে গতিকে স্বাভাবিক রেখে রোগীকে পর্যাপ্ত ঘুমাতে সহায়তা করে। ফলে রোগীর স্বাভাবিক ঘুম হওয়ার ফলে শারীরিক সক্ষমতা এবং মেজাজ ভালো থাকে যা ভালো স্বাস্থ্য অবস্থা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাসঃ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগী উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, এবং ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগে থাকেন। আর এক্ষেত্রে সিপিএপি মেশিন ব্যবহারে ফলে স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রান্ত রোগীর স্বাস্থ্য ঝুকি অনেকাংশে কমে যায়।
সমৃদ্ধ কার্যকারিতাঃ এই ধরণের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা দিনের বেলায় বেশি ঘুম অনুভব করে থাকে, যা দৈনন্দিন জীবনের কর্মক্ষমতাকে হ্রাস করে। আর এই সমস্যা সমাধানে স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন ব্যবহারে দিনের ঘুম কমানোর পাশাপাশি রোগীদের কর্মক্ষম রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উন্নত জীবনমানঃ স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা স্বাভাবিক জীবনে অবসাদে বেশি ভুগে থাকেন। ফলে সামাজিক সম্পর্ক, কাজ, এবং অবসর যাপন সমস্ত বিষয় গুলোর উপর বিরূপ প্রভাব দেখা যায়। সবদিক বিবেচনায় আক্রান্ত ব্যাক্তি সিপিএপি মেশিন ব্যবহারে ফলে সমস্যা দূর করার পাশপাশি জীবন মানকে উন্নত করে।
বাংলাদেশে কয়ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন রয়েছে?
রোগের তীব্রতা, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি, এবং অন্যান্য জটিলতা নিরসনে বিডিতে চার ধরণের স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন পাওয়া যায়।
- কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার (সিপিএপি) মেশিনঃ রোগাক্রান্ত ব্যাক্তির ঘুমের সময় শ্বাসনালী খোলা রাখার পাশাপাশি স্বাভাবিক বাতাস প্রবাহ বজায় রাখতে মুখোশের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয় কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার মেশিন।
- দুই স্তর বিশিষ্ট পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার (বিআইপিএপি) মেশিনঃ এই ধরনের মেশিন মূলত দুটি ভিন্ন মাত্রার বায়ুচাপ সরবরাহ করে। প্রথমত শ্বাস নেওয়ার সময় উচ্চ চাপ এবং দ্বিতীয়ত শ্বাস ছাড়ার সময় নিম্ন চাপ প্রদান করে। সিপিএপি মেশিনের চাপের বিরুদ্ধে শ্বাস ছাড়তে সমস্যা হওয়া ব্যক্তিদের জন্য বিআইপিএপি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- অটো পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার (এপিএপি) মেশিনঃ এই ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন ঘুমের সময় রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতির উপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতাসের চাপকে সামঞ্জস্য রাখতে সহায়তা করে।
- অ্যাডাপটিভ সার্ভো ভেন্টিলেশন (এএসভি) মেশিনঃ এই ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন যেসব রোগীর মস্তিষ্ক শ্বাস নেওয়ার পেশিগুলোকে সংকেত ব্যর্থ সেই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। অ্যাডাপটিভ সার্ভো ভেন্টিলেশন মেশিন রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণগুলির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তনশীল চাপ সরবরাহ করে।
বাংলাদেশে সিপিএপি মেশিনের দাম কত?
বর্তমানে রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন সাইজের ও আধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত সিপিএপি, বিআইপিএপি, এপিএপি, এবং এএসভি মেশিন পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সিপিএপি মেশিনের দাম ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু হয় যা স্বল্প তীব্রতার ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে, ডেটা ট্র্যাকিং, প্রেসার কন্ট্রোল সিস্টেম, এবং হিউমিডিফায়ার ইত্যাদি প্রযুক্তি যুক্ত সিপিএপি মেশিনের দাম ৪০,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে থাকে। তাছাড়া, বিডিতে অ্যাডাপটিভ সার্ভো ভেন্টিলেশন মেশিন পাওয়া যায় যার দাম কিছুটা বেশি।
বাংলাদেশে বিআইপিএপি মেশিনের দাম কত?
বাংলাদেশে বিআইপিএপি মেশিনের দাম ১৭,০০০ টাকা থেকে শুরু, যা ডুয়াল-ওয়াল স্প্রিং এয়ার কুশন প্রযুক্তিতে তৈরী এবং আরাম ও ফুটো-মুক্ত কর্মক্ষমতা প্রদান করে। বিআইপিএপি বাংলাদেশে দ্বি-স্তরের পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার মেশিন নামেও পরিচিত। তাছাড়া, ব্র্যান্ড, মডেল, ওয়ারেন্টি এবং অন্যান্য আধুনিক টেকনোলোজির উপর নির্ভর করে বাংলাদেশে বিআইপিএপি মেশিনের দাম পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এছাড়াও, স্লিপ অ্যাপনিয়ার পাশাপাশি সিওপিডি এবং স্থূলতা হাইপোভেন্টিলেশন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের কার্যকর চিকিত্সার নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর, এপিসিভি মোড সম্পন্ন বিআইপিএপি মেশিন ৬০,০০০ টাকা থেকে ৮০,০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়।
স্লিপ অ্যাপনিয়া মেশিন কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগের তীব্রতার মাত্রার উপর নির্ভর করে সিপিএপি মেশিন গুলো বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। পাশপাশি ডেটা ট্র্যাকিং, আর্দ্রতা, এবং সামঞ্জস্য চাপ নিয়ন্ত্রণ সেটিংস সহ উন্নত প্রযুক্তির মেশিন রয়েছে। তবে মেশিন কেনার পূর্বে, অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১। চাপ পরিসীমাঃ মেশিনের চাপ পরিসীমা প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্য কিনা তা প্রথমে জেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক স্লিপ অ্যাপনিয়ার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত চাপ পরিসীমার মেশিন নির্ধারণ করতে সহায়ক হবে।
২। মুখোশ সামঞ্জস্যতাঃ সিপিএপি মেশিনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মুখোশ। কেনার আগে মেশিনটি বিভিন্ন ধরণের মুখোশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য আরামদায়ক এবং কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
৩। নয়েজ লেভেলঃ কিছু সিপিএপি মেশিন ব্যবহারে অতিরিক্ত শব্দ উৎপন্ন হয় যা ব্যবহারকারী ব্যক্তির সাথে সঙ্গীর ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তাই শান্তভাবে কাজ করবে এমন মেশিন যাচাই করে নিতে হবে।
৪। বহনযোগ্যঃ ব্যবহৃত ব্যক্তির যদি স্থান ঘন ঘন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে সহজ পরিবহনের জন্য কমপ্যাক্ট এবং হালকা ওজনের সিপিএপি মেশিন বাছাই করে নেওয়া উচিত।
৫। ডেটা ট্র্যাকিংঃ ডিজিটাল সিপিএপি মেশিনে ডাটা ট্র্যাকিং এবং অক্সিজেন প্রবাহের কন্ট্রোল সিস্টেম রয়েছে। যা দেখে একজন চিকিৎসকের পাশাপাশি ব্যবহারকারী নিজেও অগ্রগতি বুঝতে পারবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বায়ুপ্রবাহ কমানো বা বাড়ানো যাবে। তাই মেশিন কেনার আগে অবশ্যই এই বিষয় গুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত।