আইপি ক্যামেরা Cctv Camera কেনাকাটা
আইপি ক্যামেরা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় নজরদারি ক্যামেরা হিসেবে বিবেচিত। আসলে আইপি একটি প্রযুক্তির নাম যার পূর্ণরূপ হচ্ছে ইন্টারনেট প্রোটোকল। বর্তমানে সিসিটিভি ক্যামেরাতে যুক্ত হচ্ছে এই আধুনিক আইপি প্রযুক্তি। আগে সিস্টিভি ক্যামেরা থেকে রেকর্ড করা ভিডিও একমাত্র দেখা যেত আলাদা অন্য একটি ডিভাইসে তবে বর্তমানে আইপি প্রযুক্তির উন্নতির জন্য লাইভ ভিডিও কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনের মতো ডিভাইস গুলোতে দেখা যায়। এছাড়াও আইপি ক্যামেরার রেজুলেশন ও অনেক ভাল। বিডি স্টলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের, বিভিন্ন রেজুলেশনের, বিভিন্ন আকৃতির আইপি সিসি ক্যামেরা দাম তুলনা করে কেনা যায়।
আইপি ক্যামেরা সংযোগ করতে কি তারের দরকার হয়?
আইপি ক্যামেরা সেট করার সময় ৩ ধরণের আইপি ক্যামেরা বাছাই করা যায়। এই ৩ ধরণের হলোঃ
• তারবিহীন সিসি ক্যামেরা
• তারযুক্ত আইপি ক্যামেরা
• সেলুলার আইপি ক্যামেরা
তারবিহীন সিসি ক্যামেরাঃ
এটি ওয়াইফাই কানেকশনের সাহায্যে ডাটা গ্রহণ ও প্রেরণ করে তাই এটিকে ও্যায়ারলেস সিসিটিভি ক্যামেরা বলে। ফলে মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন বিভিন্ন ডিভাইসে তার ছাড়াই ক্যামেরার ফুটেজ দেখা যায় খুব সহজেই। ওয়্যারলেস সিসিটিভি ক্যামেরার দাম সাধারণত ফিচার এবং কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ওয়্যারলেস সিসিটিভি ক্যামেরা ১,২০০ টাকা থেকে ৩,৫০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়, যা ১০০ থেকে ১৫০ ফিট এরিয়ার ভিডিও ফুটেজ কভারেজ প্রদান করে।
তারযুক্ত আইপি ক্যামেরাঃ
তারযুক্ত বলতে সাধারণ কোনো তার নয় বরং আইপি ক্যামেরা ইথারনেট ক্যাবল দ্বারা যুক্ত হয়। এই সংযোগটি সবচেয়ে নিরাপদ বলে বিবেচিত। ইথারনেট ক্যাবলের সাহায্যে সিগন্যাল নিরাপদ থাকে ফলে এটি অন্য কোন ব্যক্তির দ্বারা অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপের স্বীকার কম হয় এবং এই সংযোগে ডাটা ট্রান্সমিশন স্পিড ওয়াইফাই থেকে বেশি হয়। আর তারযুক্ত আইপি ক্যামেরাই বাংলাদেশে বেশি প্রচলিত কারন এর দাম তারবিহীন সিসি ক্যামেরা থেকে অনেক কম। ওয়্যারড আইপি ক্যামেরায় স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য সংযোগ প্রদানের জন্য ইন্সটলেশন খরচ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ওয়্যারড আইপি ক্যামেরা সাধারণত ২,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে, হাই-রেজোলিউশন ভিডিও, ভালো নাইট ভিশন ক্যামেরা ফ্যাসিলিটি এবং প্যান-টিল্ট-জুম সহ অন্যান্য ফিচার সমূহের উপর নির্ভর করে ওয়্যারড আইপি ক্যামেরার দামের পরিবর্তন হয়।
সেলুলার আইপি ক্যামেরাঃ
সেলুলার নেটওয়ার্ক দিয়েও আইপি ক্যামেরা ব্যবহার করা যায়। ওয়াইফাই কানেকশন না থাকলে মোবাইলে ডাটা কানেশন চালু করে হটস্পটের সাথে আইপি ক্যামেরা সংযোগ করে মোবাইলের সাহায্যে ছবি বা ভিডিও দেখা যায়। তাই আইপি ক্যামেরা সেট করার সময় সেলুলার নেটওয়ার্কও বাছাই করা যেতে পারে। সেলুলার আইপি ক্যামেরা সমূহ সাধারণ আইপি ক্যামেরার ন্যায় হয়ে থাকে। এটি শুধুমাত্র সংযোগ এর ক্ষেত্রে ল্যান কানেকশন কিংবা ওয়াইফাই এর পরিবর্তে মোবাইল ডাটা ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করে। বাংলাদেশে সেলুলার আইপি ক্যামেরা ৫,০০০ টাকা থেকে ৭,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
আইপি ক্যামেরাতে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়?
আইপি ক্যামেরাতে বিভিন্ন রকমের সুবিধা পাওয়া যায়। আর এই বিভিন্ন রকমের সুবিধার জন্যই আইপি ক্যামেরা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। নিচে আইপি ক্যামেরার সুবিধা গুলো তুলে ধরা হলোঃ
১। একটি আইপি ক্যামেরাতে লোকাল স্টোরেজ বা রেকর্ডার মেশিন না থাকলেও চলে কারন এটি সংযুক্ত যেকোন ডিভাইসে রেকর্ডিং করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আইপি ক্যামেরার জন্য নিদ্রিষ্ট এপটি ডাউনলোড করে নিতে হবে।
২। ল্যাপটপ, ডেক্সটপ কম্পিউটার, স্মার্টফোন এ জাতীয় ডিভাইস দিয়ে আইপি ক্যামেরা দ্বারা রেকর্ডকৃত ভিডিও সরাসরি দেখা যায়।
৩। আইপি ক্যামেরাতে একটি ব্যতিক্রমী বিশেষত্ব আছে যার নাম টু ওয়ে অডিও সিস্টেম। এটির সাহায্যে ক্যামেরার সামনে থাকা ব্যক্তির সাথে খুব সহজেই কথা বলা যায়।
৪। আইপি ক্যামেরা ভিডিও বা ছবি সঠিক মাত্রায় পর্যবেক্ষন করতে পারে।
৫। আইপি ক্যামেরা পূর্বের ক্যামেরা গুলোর তুলনায় উচ্চ মাত্রার ছবি এবং ভিডিও প্রদান করতে পারে।
৬। ইথারনেট ক্যাবলের সাহায্যে এটি পরিচালিত হয় বিধায় এটি স্থাপন করা বেশ সহজ। আর যদি অফিস বা বাড়িতে ইথারনেট ক্যাবল বসানো থাকে তবে আলাদা ক্যাবল এর প্রয়োজন নেই।
৭। আইপি ক্যামেরা রাউটারে কানেক্ট হতে পারে ফলে একাধিক ডিভাইস থেকে সরাসরি দেখা যায়।
৮। প্রতিটি আইপি ক্যামেরা যেখানে বসানো হবে সেখানে আলাদা বিদ্যুতের কানেকশান প্রয়োজন। বাংলাদেশের কিছু আকৃতির আইপি ক্যামেরা পাওয়া যায় যেগুলোতে পিওই ইথারনেট পোর্ট থাকে ফলে ইথারনেট ক্যাবল থেকেই এটি বিদ্যুত পায় ফলে আইপি ক্যামেরা যেকোন স্থানে সহজেই বসানো যায়।
৯। ফেস ডিটেকশন ও মোশন ডিটেকশন প্রযুক্তি আইপি ক্যামেরার বিডিতে পাওয়া যায় যা অত্যাধুনিক সিকিউরিটি প্রদান করে এবং অল্প ক্যামেরা দিয়ে অধিক লোকের উপর নজরদারি করা যায়।
১০। আইপি ক্যামেরাতে জুম লেন্স থাকে ফলে কোন ভিডিও বা ছবির ক্লোজ শট নেয়া যায়।
আইপি ক্যামেরার দাম কত?
বিডিতে আইপি ক্যামেরার দাম শুরু হয় মাত্র ১,১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০,০০০ টাকা ৬৫,০০০ টাকা বা বেশি পর্যন্ত পাওয়া যায়। কম দামের ভিতর এটিতে ৩৬০ ডিগ্রী ফিশ আই লেন্স আছে জাতি দিয়ে ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে পারে। একটি রুমের কোনো এক কোণায় এই আইপি ক্যামেরাটি লাগালে পুরো রুমের স্পষ্ট ভিউ পাওয়া যাবে এই ক্যামেরার সাহায্যে। এটিতে আছে ২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, ১২০ মিটার আইআর ডিস্টেন্স প্রযুক্তি, টু ওয়ে ভয়েস ইন্টারকম এবং ৬৪ জিবি পর্যন্ত মাইক্র এসডি কার্ড সাপোর্ট করার মতো অসাধারণ সকল বিশেষত্ব। এছাড়াও বিডিতে আইপি ক্যামেরার দাম বিভিন্ন ব্র্যান্ড, মডেল ও বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।
আইপি ক্যামেরা কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
- স্পষ্ট ও বিস্তারিত ভিডিও পর্যবেক্ষণের জন্য আইপি ক্যামেরা কেনার আগে রেজোলিউশন যাচাই করতে হবে।
- আইপি ক্যামেরার ফিল্ড-অফ-ভিউ যাচাই করতে হবে, যা দিয়ে নির্দিষ্ট এরিয়ার পাশাপাশি আশেপাশের এরিয়াও কভার করতে পারে।
- নাইট ভিশন, এলইডি এর মত অন্যান্য টেকনোলোজি যুক্ত রয়েছে কিনা তা আইপি ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে।
- আইপি ক্যামেরাতে মোশন ডিটেক্টর সেন্সর রয়েছে কিনা তা কেনার আগে যাচাই করতে হবে।
- মোবাইল, ল্যাপটপ দিয়ে দূরবর্তী ভাবে ক্যামেরা অ্যাক্সেস করা যাবে কিনা তা আইপি ক্যামেরা কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করতে হবে।
- আইপি ক্যামেরা কেনার আগে সুরক্ষা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে আবহাওয়া প্রতিরোধী রেটিং যাচাই করতে হবে।
- বিডিতে সাশ্রয়ী দামে প্যানারোমা, স্মার্ট, ডল টাইপ সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভিন্ন ভিন্ন ধরণের আইপি ক্যামেরা পাওয়া যায়। তাই আইপি ক্যামেরা কেনার আগে ব্র্যান্ড যাচাই করার পাশাপাশি বিক্রয়োত্তর সেবা যাচাই করতে হবে।
আইপি ক্যামেরা দিয়ে কীভাবে ভিডিও সংরক্ষণ করা যায়?
আইপি ক্যামেরাতে এনভিআর বা নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। এনভিআরের সাহায্যে একাধিক আইপি ক্যামেরা কানেক্ট হতে পারে এবং সব ক্যামেরার ভিডিও আলাদাভাবে ডিজিটাল ফরম্যাটে সংরক্ষণ করতে পারে। সংরক্ষণের পরিমান এটিতে থাকা হার্ডডিস্ক এর উপর নির্ভর করে।
আইপি ক্যামেরা সেট করা যায় কীভাবে?
আইপি ক্যামেরা সেট করা একদম সহজ। আইপি ক্যামেরাতে যে আইপি নাম্বার থাকে সেটি ব্রাউজারের টাইপ করে সরাসরি সেট করা যায় এবং সেখান থেকেই লাইভ ভিডিও দেখা যায়। আর যদি ভিডিও রেকোর্ডারে সংযুক্ত থাকে তবে ভিডিও রেকর্ডারে কানেক্ট হয়ে সেট করা যাবে এবং সেখানেই রেকর্ডিং করা যাবে।
বাংলাদেশে আইপি ক্যামেরা সম্পর্কে সাধারণ কিছু প্রশ্ন
স্মার্টফোনে কি আইপি ক্যামেরা ফুটেজ দেখা যায়?
উত্তরঃ হ্যা, স্মার্টফোনের মাধ্যমে আইপি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা যায়। তাছাড়া, ব্র্যান্ড অনুযায়ী আইপি ক্যামেরার নিজস্ব অ্যাপ ব্যবহার করে ওয়েব ইন্টারফেসের মাধ্যমে স্মার্টফোন থেকে আইপি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা যায়।
ওয়্যারড ও ওয়্যারলেস আইপি ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃ ওয়্যার্ড আইপি ক্যামেরায় ডাটা আদান প্রদানের জন্য সরাসরি ইথারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয়, অন্যদিকে ওয়্যারলেস আইপি ক্যামেরা ওয়াইফাই ব্যবহার করে নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ প্রদান করে। তাছাড়া, ওয়্যারড আইপি ক্যামেরা স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য সংযোগ প্রদান করে, পাশাপাশি ওয়্যারলেস ক্যামেরা ইনস্টলেশন খরচ কম হয়। কানেক্টিভিটির উপর নির্ভর করে আইপি ক্যামেরার দাম বাংলাদেশে কম বেশি হয়ে থাকে।
একাধিক আইপি ক্যামেরা কি একটি নেটওয়ার্কে যুক্ত করা যায়?
উত্তরঃ হ্যা, একাধিক আইপি ক্যামেরা একটি নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কে যুক্ত করা যায়। এছাড়াও, এনভিআর ব্যবহার করে একাধিক আইপি ক্যামেরা ব্যবহার করা যায়।
আইপি ক্যামেরা কি ইনডোর ও আউটডোর উভয় জায়গাতে ব্যবহার করা যায়?
উত্তরঃ হ্যা, আইপি ক্যামেরা ইনডোর ও আউটডোর উভয় জায়গাতেই ব্যবহার উপযোগী ডিজাইনে পাওয়া যায়। তবে, আউটডোর এ ব্যবহার উপযোগী আইপি ক্যামেরা যথেষ্ট শক্তিশালী, যেকোনো আবহাওয়ায় ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি, কম আলো কিংবা অন্ধকার পরিবেশে পরিষ্কার ভিডিও ফুটেজ প্রদান করে।