গাড়ি কেনাকাটা
মিনি বাস বা মাইক্রো গাড়িকে মূলত মাইক্রোবাস বলা হয়। এটি এমন এক ধরণের যাত্রীবাহী যানবাহন যা গাড়ির আকারের উপর নির্ভর করে ১২ থেকে ২২ জন লোককে বহন করার সক্ষমতা দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। সারা বিশ্বের পাশাপাশি বিডিতে মিনি বাস মাঝারি থেকে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য ধরণের পরিবহনের তুলনায় মাইক্রোবাস তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী এবং উন্নত হওয়ায় বাংলাদেশে অফিস, কারখানা কর্মীদের জন্য কিংবা ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে একটি জনপ্রিয় যানবাহন।
মাইক্রোবাসে বিশেষ কি কি সুবিধা রয়েছে?
মাইক্রোবাস ধরণ, মডেল, এবং ব্যবহারের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের ফিচার প্রদান করে থাকে।
আসন বিন্যাসঃ মাইক্রোবাস সাধারণত যাত্রীদের বসার স্থানকে আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক করতে উঁচু ছাদ সহ বক্স আকৃতির ডিজাইনে তৈরি করা হয়। তবে বসার আসন সংখ্যা মাইক্রোবাসের আকারের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যার হয়ে থাকে।
দরজাঃ মাইক্রো কারের সাধারণত এক বা উভয় পাশে স্লাইডিং দরজা থাকে। ফলে যাত্রীদের উঠা নামা যথেষ্ট সহজ হয়ে থাকে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং হিটিং সিস্টেমঃ গরম কিংবা ঠান্ডা আবহাওয়ায় মিনি বাসে যাত্রীদের আরামদায়ক পরিবেশ প্রদান করার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রনণ এবং গরম করার ব্যবস্থা যুক্ত রয়েছে।
বিনোদন ব্যবস্থাঃ মাইক্রোবাসে যাত্রীদের বিনোদন দেওয়ার জন্য ডিভিডি প্লেয়ার, টিভি বা সাউন্ড সিস্টেমের মতো উন্নত বিনোদন ব্যবস্থা রয়েছে।
নিরাপত্তাঃ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাইক্রো গাড়িতে এয়ারব্যাগ, সিট বেল্ট, অ্যান্টি-লক ব্রেক এবং রিয়ারভিউ ক্যামেরার মত উন্নত প্রযুক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।
জ্বালানী দক্ষতাঃ মাইক্রোবাস জ্বালানী সাশ্রয়ীভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। পেট্রোল এবং ডিজেল ফুয়েল ব্যবহারের পাশপাশি গ্যাস ব্যবহারে খুব ভালো মাইলেজ প্রদান করে থাকে।
স্টোরেজঃ মাইক্রোবাসে লাগেজ বা অন্যান্য সরাঞ্জম রাখার জন্য স্টোরেজ কম্পার্টমেন্ট বা র্যাক থাকে। ফলে যেকোনো দূরত্বে যাতায়াতে মালামাল বহনে ঝামেলা পোহাতে হয় না।
কাস্টমাইজেশন বিকল্পঃ মিনি বাসের রং, আসনের উপকরণ, এবং অভ্যন্তরীণ ডিজাইন ইত্যাদি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে কাস্টমাইজেশন করে নেওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া, অনেক মাইক্রোবাসে র্যাম্প বা সিড়ির ব্যবস্থা থাকে, ফলে শারীরিক ভাবে অক্ষম যাত্রীরা সহজে উঠা নামা করতে পারেন।
বাংলাদেশে মাইক্রোবাসের দাম কত?
বাংলাদেশে ব্যবহৃত এবং রিকন্ডিশন উভয় ধরনের মাইক্রোবাস পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে মাইক্রোবাসের দাম ১৫,০০,০০০ টাকা থেকে শুরু যার ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৩,১০০ সিসি হয় এবং ব্যবহৃত কন্ডিশনের হয়ে থাকে। এছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি, ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি, ডিজাইন, মডেল, এবং ট্রান্সমিশন সিস্টেম ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বিডিতে মিনি বাসের দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। তবে, বর্তমানে উন্নত নিরাপত্তা, ফুয়েল সিস্টেম, উন্নত ডিজাইনে তৈরি মাইক্রো গাড়ির দাম ২০,০০,০০০ টাকা থেকে শুরু।
মাইক্রোবাস কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
চাহিদা এবং বাজেট বিবেচনায় নিয়ে সঠিক মাইক্রোবাস বাছাই করতে অবশ্যই নিম্নোক্ত বিষয় গুলো জেনে নিতে হবেঃ
১। বসার ক্ষমতাঃ পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় যাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ এবং উপযুক্ত বসার সক্ষমতা সহ মাইক্রোবাস বাছাই করতে হবে। পাশাপাশি ভাঁজযোগ্য বা অপসারণযোগ্য আসন রয়েছে কিনা জেনে নেওয়া, কারণ এই ধরণের আসন গুলো অতিরিক্ত নমনীয়তা প্রদান করে থাকে।
২। ব্যবহারের উদ্দেশ্যঃ মাইক্রোবাস কেনার আগে অবশ্যই ব্যবহার ক্ষেত্র যেমন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, ব্যক্তিগত ভাড়া, বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিবেচনা করতে হবে। কারণ ধরন অনুযায়ী মিনি বাসের আসন সংখ্যা এবং ভিন্ন ভিন্ন সুবিধা প্রদান করে থাকে।
৩। রক্ষণাবেক্ষণের ইতিহাসঃ মাইক্রো গাড়ি কেনার আগে রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধাদি সমূহ জেনে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি গাড়িতে কোনো ধরণের যান্ত্রিক ত্রুটি আছে কিনা তা একজন দক্ষ মেকানিক দিয়ে দেখিয়ে নেওয়া উচিত।
৪। জ্বালানী সিস্টেমঃ ভাল জ্বালানী দক্ষতা সম্পন্ন মিনিবাস বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মাইক্রোবাস সাধারণত পেট্রোল, ডিজেল, ইলেকট্রিক ইত্যাদি ধরে জ্বালানি ব্যবহার করে থাকে। তাই, কোন জ্বালানী ব্যবহারে কেমন মাইলেজ পাওয়া যাবে তা জেনে নেওয়া উচিত।
৫। সিকিউরিটি সিস্টেমঃ এয়ারব্যাগ, সিট বেল্ট, এবং অ্যান্টি-লক ব্রেক রয়েছে কিনা মাইক্রোবাস কেনার আগে তা যাচাই করে নেওয়া উচিত৷ তাছাড়া মাইক্রোবাসে ব্যাকআপ ক্যামেরা বা ব্লাইন্ড স্পট পর্যবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে কিনা জেনে নেওয়া উচিত।
১৫লক্ষ টাকায় কেমন মাইক্রোবাস পাওয়া যাবে?
বাংলাদেশে ১৫ লাখ টাকা বা তার চেয়ে কিছুটা কম বাজেটের মধ্যে ব্যবহৃত এবং রিকন্ডিশন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের যেমন মাজেদা বঙ্গো, টয়োটা হাইয়েস, মিতসুবিশি ডেলিকা, এবং নিসান ক্যারাভান মডেলের মাইক্রোবাস রয়েছে। এই মাইক্রো গাড়ি গুলো সর্বনিম্ন ৮ জন থেকে ১৫ জনের মত যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। তাছাড়া ট্রান্সপোর্টেশন কিংবা ভাড়ায় চালানোর জন্য এই ধরনের মাইক্রোবাস গুলো খুবই ভালো হয়ে থাকে।
মাইক্রোবাস মাইলেজ কত হয়?
মাইক্রোবাসের মাইলেজ ইঞ্জিনের ধরন, জ্বালানির ধরন, গাড়ির ওজন, এবং ড্রাইভিং অবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। ছোট ইঞ্জিনযুক্ত মাইক্রো গাড়ি সাধারণত বড় ইঞ্জিনের তুলনায় বেশি জ্বালানী সাশ্রয়ী হয়ে থাকে, তবে তাদের শক্তি সক্ষমতা কম দেখা যায়। তাছাড়া মাইক্রোবাস পেট্রোল, ডিজেল বা বিকল্প জ্বালানী যেমন কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস দিয়ে চলতে পারে। তবে মাইক্রো গাড়ির জ্বালানী খরচ প্রতি লিটারে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকে। এছাড়া নির্দিষ্ট মডেল এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিষয়ের উপর নির্ভর করে মিনি বাসের মাইলেজ কম বেশি হয়ে থাকে।