ব্লেন্ডার কেনাকাটা
ব্লেন্ডার সকলের একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। পৃথিবীতে ব্লেন্ডার ব্যবহার করে না এমন দেশ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে রয়েছে ব্লেন্ডার মেশিনের ব্যাপক চাহিদা। ব্লেন্ডার মেশিন রান্নার অনেক কাজকে সহজ করে দেয় এবং সময় কম খরচ করে। এটির সাহায্যে বিভিন্ন পানীয় তৈরী, মাংশ কুচি করা, চাল গুঁড়ো করা, মসলা পেষা ছাড়াও অনেক কাজ করা যায়। এটিকে অনেকে গ্রিন্ডার মেশিনও বলে। জয়পান, প্যানাসনিক, ফিলিপস, সেফরন, নিমা ব্লেন্ডার সহ জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের প্রায় সকল ধরণের ব্লেন্ডার মেশিন বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
কোন কাজের জন্য কোন ব্লেন্ডার?
- ব্লেন্ডার/মিক্সারঃ এটি মূলত স্টেইনলেস স্টিলের ব্লেড এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মোটর দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। ফলে, ব্লেন্ডার দিয়ে বিভিন্ন খাবার উপাদান গুড়া করা, পিষানো এবং মিক্সার তৈরির মত সকল কাজ ই করা যায়।
- গ্রাইন্ডারঃ গ্রাইন্ডার মূলত কঠিন খাবার আইটেমকে সূক্ষ্ম পাউডার বা পেস্ট তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে গ্রাইন্ডারের দাম ব্লেন্ডার মেশিনের মতোই এবং এটি বিশেষভাবে মশলা, কফি বিন, শস্য, বাদাম এবং অন্যান্য শুষ্ক উপাদান পিষতে ব্যবহৃত হয়।
- বিটারঃ কিছু কিছু মেশিন আছে যেগুলো একটু ব্যতিক্রম। এরা মিক্সার অথবা বিটার নামেও পরিচিত। এই মেশিন গুলোর সাহায্যে আটা, ডিম-দুধ এবং বিভিন্ন জিনিস মিক্স করা যায়। তাই এইসকল জিনিস গোলানোর জন্য মিক্সার অথবা বিটার মেশিন কেনা ভালো।
- জুসারঃ এটি ফল এবং শাকসবজি থেকে তরল রস বের করতে ব্যবহৃত হয়। জুসার দিয়ে বিভিন্ন ফলমূল থেকে তাজা ও পুষ্টি সমৃদ্ধ রস তৈরি করতে সহায়তা করে। বাংলাদেশে জুসারের দাম খুবই সস্তা।
বাংলাদেশে ব্লেন্ডার মেশিনের দাম কত?
বাংলাদশে ব্লেন্ডারের দাম ৪০০ বিডিটি থেকে ৫,০০০ বিডিটির মধ্যে হয়ে থাকে, যা দিয়ে ভেজষ, ফলমূল এবং মসলাসহ অন্যান্য খাবার সহজে গুড়া করা যায়। তাছাড়া, ব্লেন্ডার মেশিনের দাম সাধারনত সাইজ, টাইপ, ব্র্যান্ড, পাওয়ার সহ অন্যান্য অ্যাক্সেসোরিস উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এছাড়াও, এবিএস প্লাস্টিক বডি, উচ্চ মোটর পাওয়ার এবং উন্নত সেফটি ফিচারের সমন্বয়ে তৈরি ব্লেন্ডার মেশিনের দাম বাংলাদেশে ৬,০০০ বিডিটি থেকে শুরু।
মিনি ব্লেন্ডারের দাম
মিনি ব্লেন্ডার দিয়ে সব কাজ করা যায় তবে এগুলোতে একটি মাত্র জার থাকে, যা অনেক কম দামে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে মিনি ব্লেন্ডারের দাম ৩০০ বিডিটি থেকে ৮০০ বিডিটির মধ্যে হয়ে থাকে, যা দিয়ে সহজেই মসলা গুড়া করা যায়।
হ্যান্ড ব্লেন্ডার মেশিনের দাম
হ্যান্ড ব্লেন্ডার মেশিন মূলত কোন কিছু ভালভাবে মিক্স করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে বাংলাদেশে বিটার মেশিন বলা হয়। বর্তমানে, বাংলাদেশে হ্যান্ড ব্লেন্ডারের দাম ৬০০ বিডিটি থেকে ২০০০ বিডিটির মধ্যে হয়ে থাকে।
ব্লেন্ডার কেনার টিপস
বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্লেন্ডার মেশিন পাওয়া যায়। এই ব্লেন্ডার মেশিন গুলো একেকটি একেক কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। ব্লেন্ডার বা গ্রিন্ডারের কিছু বিশেষত্ব আছে। বিশেষত্ব অনুযায়ী যেভাবে সঠিক ব্লেন্ডার মেশিন নির্বাচন করা যায় তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- প্লাস্টিক বনাম স্টেইনলেস স্টিলের ব্লেন্ডারঃ বাংলাদেশের বাজারে অসংখ্য প্লাস্টিকের ব্লেন্ডার পাওয়া যায়। প্লাস্টিকের এই ব্লেন্ডার গুলো ব্যবহার করা হয় শরবত বানানোর কাজে। এই মেশিন গুলোর সাহায্যে বাহারি রকম ফলের জুস বানানো যায়। এই প্লাস্টিকের ব্লেন্ডার গুলোতে পরিমাণ মতো ফল এবং পরিমাণ মতো পানি নিয়ে কয়েক সেকেন্ডেই তৈরি করা যায় মজাদার জুস। তাই কেনার আগে এর প্লাস্টিকের মান কেমন এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে কেনা উচিত। এটি অবশই ফুড গ্রেডের হওয়া উচিত। বাংলাদেশে অনেক স্টেইনলেস স্টীলের ব্লেন্ডার বা গ্রিন্ডার মেশিন পাওয়া যায়। এগুলোর সাহায্যে মাংশ কাটা, চাল-ডাল গুঁড়ো, মসলা পেষা ছাড়াও অনেক কাজ করা যায়। স্টেইনলেস স্টীলের মান ভাল হতে হবে তা না হলে কম টেকসই হবে।
- বাটন কন্ট্রোলঃ ব্লেন্ডার মেশিনের বোতাম গুলোর কাজ সম্পর্কে জানতে হবে। ব্লেন্ডারমেশিনের সকল বৈশিষ্ট্যের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এর মাঝে থাকা বোতাম। বিভিন্ন বোতাম ব্লেন্ডার বা গ্রিন্ডার মেশিনের গতি, শক্তি আরও বিভিন্ন জিনিস নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয় তাই কেনার আগে এর বোতাম গুলোর কাজ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে ভালো ভাবে।
- জার সংখ্যাঃ ব্লেন্ডারে সাধারণত একের অধিক জার থাকে। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ব্লেন্ডারে ৩ থেকে ৪ টি জার পাওয়া যায়। তবে ব্লেন্ডার কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই জার গুলো এবিএস ফুড গ্রেড প্লাসটিকে তৈরি কিনা যাচাই করবেন। পাশাপাশি স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি জার সহ কিনবেন তাহলে আপনি শক্ত খাবার সমূহ সহজে গুড়া করতে পারবেন।
- পাওয়ারঃ ব্লেন্ডার পাওয়ার বিবেচনা করাটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। তবে উচ্চ পাওয়ার ক্যাপাসিটির ব্লেন্ডার নেওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ পাওয়ার বেশি হলে ব্লেন্ডার দিয়ে দ্রুত সময় যেকোনো কিছুর মিশ্রণ তৈরি করতে পারবেন। আর কম পাওয়ারের ব্লেন্ডার মেশিন কিছুটা বেশি সময় নিয়ে থাকে।
ব্লেন্ডার মেশিন বা গ্রিন্ডার মেশিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
ব্লেন্ডার মেশিন বা গ্রিন্ডার মেশিন অনেকেই ব্যবহার করলেও সঠিক ভাবে ব্যবহার করার নিয়ম না জানার কারণে মেশিন টেকসই হয় না। কেনার কয়েকদিন পরেই দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। অনেকেই মনে করে থাকে মেশিন কেনার কয়েকদিনের মাথায় মটরে কোনো সমস্যা হয়েছে অথবা অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে। আসলে এই ধারণা সঠিক নয়, ব্যবহারে যত্নশীল না হলে মেশিনের ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই ব্লেন্ডার বা গ্রিন্ডার মেশিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম গুলো নিচে আলোকপাত করা হলোঃ
- ব্লেন্ডার বা গ্রিন্ডার মেশিন ব্যবহারের আগে এবং পরে অবশ্যই ভালো ভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে যাতে ভিতরে কোনো গন্ধ না থাকে। বিভিন্ন রাসায়নিক এবং ধুলিকণা জমে মেশিনের ব্লেডকে ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফলে ব্লেডের ধার কমে যায়। ফলে কোনো কিছু গ্রিন্ড অথবা ব্লেন্ড করতে অনেক সমস্যায় পরতে হয়। তাই ব্যবহারের আগে ও পরে ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
- ব্লেন্ডার অথবা গ্রিন্ডার ব্যহারের সময় অবশ্যই ঢাকনা ভালো ভাবে লাগানো হয়েছে কিনা তা লক্ষ্য করতে হবে। ঢাকনা ঠিক মতো না লাগানো হলে ব্লেন্ড বা গ্রিন্ড করার সময়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই অবশ্যই ঢাকনা ঠিক মতো আছে নাকি প্রয়োজনে একাধিকবার দেখে নিতে হবে।
- সঠিক ভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ না হওয়ার ফলে হতে পারে শক সার্কিটের মতো বড় ধরণের ক্ষতি। শক সার্কিট না হলেও মেশিনের অনেক রকম ক্ষতি হতে পারে। তাই বৈদ্যুতিক সংযোগ ঢিলা আছে কিনা দেখে নিতে হবে। ঢিলা থাকলে অবশ্যই সঠিক ভাবে লাগিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে হবে।
- ব্লেন্ড বা গ্রিন্ড করার সময়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ অবশ্যই ছোট ছোট পিছ করে কেটে নিতে হবে। কেননা ছোট করে না কাটলে মেশিনের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি হয়। আর এই চাপের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই মেশিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- ব্লেন্ডারের গতি কখনোই সর্বোচ্চ করা ঠিক নয়। এর ফলে মেশিন অনেক গরম হয়ে যায় তাড়াতাড়ি এবং কয়েকদিনের মাঝেই মটর অকেজ হয়ে যেতে পারে। তাই ব্যবহারের সময় সর্বোচ্চ গতি থেকে একটু কমিয়ে রাখা ভালো।
- মটরকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করতে ১-২ মিনিটের বেশি কোনো ভাবেই ব্লেন্ডারকে চালানো যাবে না। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ব্লেন্ডার চালালে এটির মটর একটা সময়ে ধীর গতিতে কাজ করবে। তাই গ্রিন্ডার অথবা ব্লেন্ডার মেশিন ব্যবহারের সময় ১-২ মিনিট এর মাঝে থাকাই উত্তম।