সাইকেল কেনাকাটা
কেন সাইকেল কিনবেন?
বাইসাইকেল ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই একটি পছন্দের ব্যক্তিগত যানবাহন। বিশেষ করে স্টুডেন্ট ও যারা অল্প দুরত্বের গন্ত্বব্য নিয়মিত গমন করে থাকেন তাদের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়াও যারা যারা নিয়মিত সময় স্বল্পতার কারণে শারিরীক এক্সারসাইজ করতে পারেন না তারা এখন নিজেদের যাতায়াতের সময় কিছুটা ব্যায়াম সেরে ফেলতে বাইসাইকেলের দিকে ঝুকে পরছেন। তাই চলুন একটি বাইসাইকেল কিনার সহজ গাইডলাইন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কোন ধরনের সাইকেল কিনবেন?
একটি সাইকেল কিনার শুরুতেই আপনার প্রয়োজনটা বুজতে হবে। এটা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করবে যেমন আপনার বয়স, বাজেট, শারিরীক গঠন ও নিজস্ব পছন্দের উপর। তাদের মধ্যে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আপনার পছন্দকে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে তাই বিডস্টল ডট কম এ বাংলাদেশের সাইকেলের দাম দেখুন। বয়স ভেদে বিভিন্ন ধরনের সাইকেল রয়েছে যেমন বাচ্চাদের জন্য এক ধরনের সাইকেল এবং বড়দের জন্য আরেক ধরনের। তাই আপনার জন্য কোনটা প্রয়োজন তা ঠিক করুন। তারপর নির্ধারণ করুন আপনার বাজেট কারণ বাজেট নির্ধারণ করা থাকলে আপনি খুব তাড়াতাড়ি সিধান্ত নিতে পারবেন। এরপর আপনার শারীরিক গঠন যেমন আপনার ওজন ও হাইট এই ক্ষেত্রে অনেকটা নির্ভর করে বাকিটা আপনার নিজস্ব পছন্দ যা প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই আলাদা। বিভিন্ন ধরনের বাইসাইকেল বাংলাদেশে পাওয়া যায় এবং মূলত দামের পার্থক্য হয় কি ধরনের সাইকেল কিনবেন।
বাচ্চাদের বাইসাইকেল
৪ থেকে ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই বাইসাইকেল। কিছু বেবি বাইসাইকেল আকর্ষণীয় করার জন্য ঝুড়ি যুক্ত থাকে। অনেক বাইসাইকেলে ছোট বাচ্চাদের জন্য ভারসাম্য বজায় রাখতে পিছনে অতিরিক্ত দুটো চাকা যুক্ত করা থাকে।
মেয়েদের বাইসাইকেল
মেয়েদের সাইকেল বিশেষভাবে শুধু মহিলাদের জন্যই ডিজাইন করা হয়েছে। এই ধরণের বাইসাইকেল খুব হালকা হয় এবং রঙিন হয়। বর্তমান বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন ডিজাইনের মেয়েদের বাইসাইকেল পাওয়া যায়।
মাউন্টেন বাইসাইকেল
যদি দুর্গম রাস্তায় চলাচল করতে হয় তবে মাউন্টেন সাইকেল বেশি উপযোগী। এগুলোতে বড় টায়ার এবং উন্নত মানের সাসপেন্সন থাকে বিধায় কাঁদা মাটি, পাহাড়ি রাস্তা, এবং গ্রামের কাঁচা মাটিতে চলাচলের উপযোগী।
হাইব্রিড সাইকেল
এগুলো মাউন্টেন এবং সাধারণ বাইসাইকেলের সমন্বয়ে তৈরি বলে দাম মাউন্টেন বাইকের তুলনায় অনেক কম।
রোড সাইকেল
এগুলো বিভিন্ন স্টাইলের হয়ে থেকে যেমন সোজা, বাঁকানো এবং রেসিং স্টাইলের। দ্রুত গতিতে চলার জন্য এই সাইলেগুলো বেশ ভাল।
মোটর নাকি প্যাডেল সাইকেল কিনবেন?
বাজারে এই দুই ধরনের সাইকেলই বর্তমানে দেখতে পাওয়া যায়। প্যাডেল আমাদের সকলের চিরচেনা এই সাইকেলগুলোতে শুধু প্যাডেল দ্বারাই চালিত হয় তবে মোটর গুলো মূলত ইলেক্ট্রিক মোটরের সাহায্যে চলে থাকে পাশাপাশি এগুলোতে প্যাডেলও সংযুক্ত থাকে। এই মোটরগুলো চলার জন্য ব্যাটারি লাগানো থাকে যা একবার চার্জ দিলে ৩০-৪০ কিলোমিটার চলতে পারে।
অ্যালুমিনিয়াম নাকি স্টিল বডির সাইকেল ভাল?
বর্তমানে স্টিল বডির সাইকেলগুলো থেকে অ্যালুমিনিয়াম বডির সাইকেলগুলো অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা তৈরি সাইকেলগুলো তুলনামূলক অনেক বেশি হালকা ও শক্ত হয়ে থাকে। এর ফলে স্টিলের তুলনায় অ্যালুমিনিয়াম সাইকেলগুলোর দামও কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের রাস্তায় স্ট্যান্ডার্ড ব্রেক নাকি ডিস্ক ব্রেক উপযোগী?
স্ট্যান্ডার্ড ব্রেকের তুলনায় ডিস্ক ব্রেকগুলো অনেক বেশি ভালো ব্রেকিং নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। এছাড়াও ডিস্ক ব্রেকের সাইকেলগুলো দেখতেও অনেক বেশি সুন্দর হওয়ায় এটির চাহিদা তুলনামূলক অনেক বেশি। আর বাংলাদেশের রাস্তার জন্য ডিস্ক ব্রেক বেশি ভাল হবে কারণ এটি দ্রুত এবং নিখুঁত ব্রেকের নিশ্চয়তা দেয়।
স্যাডল কি রকম হওয়া উচিৎ?
স্যাডেল চালকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ এবং অনেকেই এটাকে উপেক্ষা করে। এটিতে যেন চালক সহজে বসে চালাতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ। এটি আরামদায়ক হতে হবে এমন নয়।
আমার কি ভাল প্যাডেল লাগবে?
হ্যাঁ, ম্যানুয়াল সাইকেলের জন্য আরামদায়ক পেডেল থাকা খুব জরুরি। প্যাডেলগুলি সাধারণত প্ল্যাটিক তৈরির হয় এবং এটি যে কোনও সময় সহজেই পরিবর্তন করা যায়। কিছু ব্যয়বহুল বাইসাইকেল প্যাডেল এর পরিবর্তে ক্লিপ থাকে যেন সহজেই আপনার পছন্দের প্যাডেল লাগিয়ে নিতে পারেন।
সাইকেলে গিয়ার কি করে?
কিছু সাইকেলে গিয়ার থাকে যেগুলো দিয়ে সর্বোচ্চ গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয় ফলে প্যাডেলের সাথে গতির সামঞ্জ থাকে এবং সাইকেল সুন্দরভাবে চলে।
বাংলাদেশে বাইসাইকেলের দাম কত?
বাংলাদেশে বাইসাইকেলের দাম মাত্র ৩,৫০০ টাকা থেকে শুরু তবে বাজেট কিছু বাড়ালে আরও ভাল মানের পাওয়া যাবে। ৫০,০০০ টাকা বা তার বেশি দামেরও বাইসাইকেল বিডিতে পাওয়া যায় যেগুলো অনেক হালকা কিন্তু অনেক টেকসই। এগুলো আকর্ষণীয় ডিজাইনের হয় এবং যেকোন প্রতিযোগিতায় এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বাইসাইকেল শুধু ডিজাইন বা দামের উপর নির্ভর করে কেনা উচিত নয় এটি কিনতে হবে প্রয়োজন, বাজেট, এবং বাংলাদেশের যেখানে চালাবেন তার উপর ভিত্তি করে যেমন পাহাড়ি এলাকায় চালালে লাগবে মাউন্টেন বাইসাইকেল।
বাইসাইকেল চালালে যাতায়তের পাশাপাশি আর কি সুবিধা পাওয়া যায়?
বাইসাইকেলের সাহায্যে শারীরিক কসরত হয় যথাযথ ভাবে। শরীরকে সুস্থ রাখতে রয়েছে বাইসেকেলের বিশেষ অবদান। এগুলো হলোঃ
১। সাইকেলিং-এর ফলে শরীরে থাকা অতিরিক্ত ক্যালরি হ্রাস পায়।
২। বাংলাদেশে যাদের ওজন অনেক বেশি তারা সাইকেল চালানোর মাধ্যমে ওজন কমাতে পারেন অল্প কিছু দিনের মধ্যেই।
৩। অতিরিক্ত মেদ বা ভুরি যে যা নামেই বলি না কেন এটিই হচ্ছে বাংলাদেশের শহরের মানুষের নিকট প্রধান সমস্যা। তাই অতিরিক্ত মেদ বা ভুরি কমাতে বাইসাইকেল চালনার রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।
৪। বাচ্চাদের হাড় মজবুত এবং দৈহিক গ্রোথকে সতেজ রাখতে বাইসাইকেল রাখে বিশেষ ভূমিকা। আর বিশেষ করে বাংলাদেশে বাচ্চাদের খেলার জায়গা কম তাই বাইসাইকেল হতে পারে কম খরচে একটি বিকল্প।
৫। ডায়াবেটিসের রোগীদেরকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে হাঁটতে হয় এটা সকলেরই জানা আছে। কিন্তু অনেকেই জানে না হাঁটার চাইতে বেশি সাইকেলিং করলে ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হাঁটার চাইতে বেশি সময়ও সাশ্রয় হয়।
৬। সাইকেল চালানোর ফলে উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সাইকেল মানুষের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় যা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলে থাকেন।
৭। সাইকেল চালানোর ফলে মানসিক চাপ, হতাশা হ্রাস পায় ফলে মস্তিষ্ক থাকে শান্ত যার ফলে ব্রেইন স্ট্রোকের মতো বড় বড় সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।