গাড়ি Battery কেনাকাটা
ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে গাড়ির ব্যবহার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি বৃদ্ধির সাথে সাথে নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ গাড়ির ব্যাটারির চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তাছাড়া, গাড়ির ব্যাটারি গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার পাশাপাশি বিভিন্ন বৈদ্যুতিক উপকরন যেমন লাইট, এয়ার কন্ডিশনার সিস্টেম, ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পরিচালনা করতে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে, গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশে ভলভো, লোকাস, হামকো এর জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের কার ব্যাটারি সহ হাইব্রিড কার ব্যাটারি সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে কি কি ধরণের গাড়ির ব্যাটারি পাওয়া যায়?
বর্তমানে উন্নত নির্মাণ টেকনোলোজি অনুযায়ী বাংলাদেশে দুই ধরণের গাড়ির ব্যাটারি বেশি পাওয়া যায়।
ওয়েট লিড-এসিড কার ব্যাটারিঃ এই ধরনের গাড়ির ব্যাটারি অনেক পুরনো, যা কয়েক দশক ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওয়েট লিড-এসিড কার ব্যাটারি মূলত তরল ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণে নিমজ্জিত সীসা প্লেট নিয়ে গঠিত ব্যাটারি। এই ধরণের কার ব্যাটারি বাংলাদেশে কম দামে পাওয়া যায়, তবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় পাশাপাশি চরম আবহাওয়ায় দ্রুত চার্জ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সিল কার ব্যাটারিঃ এই ধরণের কার ব্যাটারি প্রচলিত গাড়ির ব্যাটারির তুলনায় যথেষ্ট উন্নত এবং রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া দীর্ঘদিন অনায়সে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া, সিল কার ব্যাটারি (পাউডার কার ব্যাটারি) সাধারণত উপরের অংশে সীল করা থাকে। গাড়িতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিল কার ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড লিক বা স্বাভাবিক অবস্থায় চার্জ করার সময় গ্যাস ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বর্তমানে, বাংলাদেশে জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিডিস্টল.কম এ বিভিন্ন ক্যাপাসিটির সিল কার ব্যাটারি সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
তবে, গাড়ির ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই গাড়ির মডেল এবং গাড়ির সাথে সামঞ্জস্য ব্যাটারি ক্যাপাসিটি যাচাই করে নেওয়া উচিত।
গাড়ির ব্যাটারি কেন কিনবেন?
১। গাড়ির ব্যাটারি মূলত গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করে।
২। গাড়ির বিভিন্ন বৈদ্যুতিক উপাদান যেমন লাইট, এয়ার কন্ডিশনার সিস্টেম, ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, পাওয়ার উইন্ডো সহ অন্যান্য উপরকরণ চালানোর জন্য যথাযথ পাওয়ার সরবারহ করে।
৩। প্রতিকূল আবহাওয়া কিংবা রাতের বেলা গাড়ি ড্রাইভিং এর সময় হেডলাইট এবং টেললাইটে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবারহ করে।
৪। এছাড়াও, কার ব্যাটারি পেট্রোল চালিত গাড়ির ইঞ্জিনের ইগনিশন সিস্টেমে কারেন্ট সরবরাহ করে থাকে।
৫। পাশাপাশি গাড়ির অডোমিটার এবং হর্ন বাজাতে কার ব্যাটারি সহায়তা করে।
উপরোক্ত বিষয় সমূহের ক্ষেত্রে যথাযথ পাওয়ার সাপ্লাই পাওয়ার জন্য গাড়ির টাইপ বিবেচনা করা খুবই জুরুরি। প্রাইভেট কার, সিএনজি সহ ছোট পরিসরের গাড়ির ক্ষেত্রে ৬-১২ ভোল্টের ভোল্টেজ সম্পন্ন কার ব্যাটারি বিবেচনা করতে হবে। এছাড়াও, বাস, ট্রাকের মত যানবাহনের ক্ষেত্রে ২৪ ভোল্ট বা তার বেশি ভোল্টেজের কার ব্যাটারি বিবেচনা করা উত্তম।
গাড়ির ব্যাটারির দাম কত?
বাংলাদেশে গাড়ির ব্যাটারির দাম ৫,৯০০ টাকা থেকে শুরু, যা ৩৫ এম্পিয়ার পাওয়ার ক্যাপাসিটি সম্পন্ন, প্রাইভেট কার এবং সিএনজিতে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। তাছাড়া, বাংলাদেশে গাড়ির ব্যাটারির দাম মূলত ব্র্যান্ড, মডেল, ব্যাটারি টাইপ, ভোল্টেজ, এবং ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এছাড়াও, উচ্চ ক্যাপাসিটি সম্পন্ন এবং সিল টাইপ কার ব্যাটারি ৮,০০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়, যা বাস, ট্রাক সহ বড় পরিসরে যানবাহনে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
গাড়ির ব্যাটারি কতদিন স্থায়ীভাবে ব্যবহারে করা যায়?
গাড়ির ব্যাটারির স্থায়িত্ব মূলত গাড়ি ড্রাইভিং, চার্জিং সিস্টেম এবং রক্ষণাবেক্ষণ সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তাছাড়া, হার্ড ড্রাইভিং, পরিবেশগত অবস্থার উপর নির্ভর করে গাড়ির ব্যাটারি কম সময় স্থায়ী হয়ে থাকে। তবে, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে, গাড়ির ব্যাটারি প্রায় এক লাখ মাইল পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। পাশাপাশি হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারি ধরন অনুসারে পনের বছর স্থায়ী হয়ে থাকে।
দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য গাড়ির ব্যাটারি কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করবেন?
গাড়ির ব্যাটারির জীবনকাল ব্যাটারির গুণমান, ড্রাইভিং অবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণের নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
- গাড়ির ব্যাটারি একটানা ব্যবহারের ফলে ব্যাটারির টার্মিনাল ক্ষয় হতে থাকে, তাই টার্মিনাল কিছুদিন পর পর বেকিং সোডা এবং পানি ব্যবহার করে পরিষ্কার করতে হবে। তবে, পরিষ্কারের পূর্বে অবশ্যই গাড়ির ব্যাটারির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
- গাড়ি নিয়মিত ড্রাইভ করার ফলে ঝাকুনিতে অনেক সময় কার ব্যাটারি আলগা হয়ে যায়, তাই গাড়ির ব্যাটারির অতিরিক্ত নড়াচড়া রোধ করতে ট্রেতে ভালো ভাবে বেধে রাখতে হবে।
- তাছাড়া, গাড়ির ইঞ্জিন দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ থাকলে বৈদ্যুতিক উপাদান যেমন লাইট, এয়ার কন্ডিশনার সিস্টেম, ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম বন্ধ রাখতে হবে।
- অতিরিক্ত তাপ এবং ঠান্ডা উভয়ই গাড়ির ব্যাটারির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই গরমকালে গাড়ি ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে গাড়ির ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার উপযোগী রাখতে গাড়ির ওয়ার্মার চালু রাখতে হবে।
- কার ব্যাটারি চার্জ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নির্দিষ্ট চার্জার ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি, গাড়ির ব্যাটারি অতিরিক্ত চার্জ থেকে নিরাপদ রাখতে হবে। কারণ অতিরিক্ত চার্জে ব্যাটারির স্থায়িত্ব কমে যায়।
- এছাড়াও, ওয়েট লিড-এসিড কার ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইট স্তর, ব্যাটারির কেস, ভোল্টেজ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।