এয়ার কার্টেন কেনাকাটা
য়ার কার্টেন হচ্ছে এমন এক ধরণের ডিভাইস, যা ভবনের ভিতরের পরিবেশকে বাইরের পরিবেশ থেকে আলাদা রাখতে সহায়তা করে। এটি বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভবন এবং শিল্প কারোখানায় ব্যবহারের পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, গোডাউন এবং মসজিদের মেইন দরজায় ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া, এটি যেকোনো ভবনের দরজার উপর স্থাপন করার ফলে ভবনের ভিতরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতাকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখে। বর্তমানে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাশ্রয়ী সমাধান হওয়ায় বাংলাদেশে এয়ার কার্টেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সঠিক ধরণের এয়ার কার্টেন নির্বাচন করা
১। নন-সারকুলেটিং এয়ার কার্টেনঃ রিসার্কুলেটিং টাইপ এয়ার কার্টেনের তুলনায় নন-রিসারকুলেটিং টাইপের এয়ার কার্টেন বাংলাদেশে বেশি ব্যবহৃত হয়। কারণ এই ধরণের এয়ার কার্টেন ইনস্টল করা যথেষ্ট সহজ এবং কম ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। পাশাপাশি নন-সারকুলেটিং এয়ার কার্টেন ব্যবহারে রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম হয়ে থাকে। তবে, অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়ে থাকে। নন-সারকুলেটিং এয়ার কার্টেন ছোট পরিসরে দোকান, গোডাউন, মসজিদের মত জায়গায় বহুল ব্যবহৃত হয়।
২। রিসারকুলেটিং এয়ার কার্টেনঃ এই ধরণের এয়ার কার্টেনে সাধারণত বিল্ট-ইন এয়ার সারকুলেট সিস্টেম রয়েছে। যা দরজার ভিতর থেকে বাতাস টেনে নিয়ে পুনরায় ব্যবহার করে থাকে। এটি কার্টেনকে দক্ষতার সাথে তাপমাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। ফলে, বাণিজ্যিক ভবন, ফ্রিজার, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এরিয়া সহ বড় পরিসরের জায়গায় রিসারকুলেটিং এয়ার কার্টেন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। এই ধরণের এয়ার কার্টেন জটিল ডিজাইনে তৈরি এবং সরঞ্জাম কিছুটা ব্যায়বহুল হলেও যথেষ্ট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়ে থাকে।
মসজিদ কিংবা শপিংমলের জন্য এয়ার কার্টেন ক্যাপাসিটি
মসজিদ বা শপিং মলের ভিতরে বাইরের পরিবেশের তুলনায় কার্যকরভাবে তাপমাত্রা এবং বায়ুর গুণমান নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ক্যাপাসিটি বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও, সঠিক এয়ার কার্টেন কেনার জন্য দরজার আকার, আবহাওয়া পরিস্থিতি এবং ভিতরের কাঙ্ক্ষিত তাপমাত্রা/আর্দ্রতার মাত্রার মতো বিষয়সমূহ অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। তাছাড়া, এই ধরণের এরিয়াতে ১২০০ ঘনমিটার/ ঘণ্টা থেকে ১৬০০ ঘনমিটার/ ঘন্টার এয়ার ফ্লো ক্যাপাসিটি সম্পন্ন এয়ার কার্টেন ব্যবহার করা উচিত।
আপনার বাজেটের মধ্যে এয়ার কার্টেন ব্র্যান্ড
বাংলাদেশে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের এয়ার কার্টেন পাওয়া যায়। তবে, চায়না ব্র্যান্ডের এয়ার কার্টেন এর দাম তুলনামূলক ভাবে সস্তা হয়ে থাকে। গ্রী ব্র্যান্ডের এয়ার কার্টেন গুণমান সম্পন্ন হওয়ার পাশাপশি দামেও সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। এছাড়াও, ন্যাশনাল, ক্যারিয়ার ইত্যাদি বাংলাদেশে জনপ্রিয় এয়ার কার্টেন ব্র্যান্ড।
এয়ার কার্টেন এর বিশেষ ফাংশনসমূহ
এয়ারফ্লো সেপারেশনঃ এয়ার কার্টেন সিস্টেম মূলত এয়ারফ্লো সেপারেশন এর উপর ভিত্তি করে ডিজাইন করা হয়েছে। ফলে, এই ধরণের ডিভাইস ব্যবহারের ফলে বাণিজ্যিক ভবন কিংবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার মধ্যে বায়ুপ্রবাহকে প্রতিরোধ করে ভিতরে এবং বাইরের পরিবেশকে আলাদা করতে সহায়তা করে।
পোকামাকড় ও কীট পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণঃ এয়ার কার্টেন রেস্টুরেন্ট এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে বাধা হিসাবে কাজ করে। তাই, এটি ব্যবহারের ফলে পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় থাকে।
ডাস্ট প্রতিরোধঃ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে এয়ার কার্টেন ব্যবহারে ধুলো-বালি প্রবেশে বাধা প্রদান করে থাকে। ফলে, পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর ইনডোর স্পেস বজায় রাখতে প্রায় শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করে।
রিমোট কন্ট্রোল এবং ম্যানুয়াল সিস্টেমঃ এয়ার কার্টেন এ রিমোট কন্ট্রোল এবং ম্যানুয়াল সিস্টেম সহ উভয় ধরণের কন্ট্রোল সিস্টেম রয়েছে। ফলে, সেট আপ করার পর সহজেই অপারেট করা যায়।
এনার্জি এফিশিয়েন্টঃ এয়ার কার্টেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমলের ভিতরে এবং বাইরের বাতাসকে আলাদা করে। এটি ব্যবহৃত এরিয়াতে গরম বা শীতল পরিবেশ প্রদানের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে শক্তির দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করে। ফলে, এয়ার কার্টেন ব্যবহারে ইউটিলিটি খরচ কম হয়।
এছাড়াও, ভবনের ভিতরে ক্ষতিকারক ধোয়া প্রবেশে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ কুয়াশা, বরফ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এয়ার কার্টেন ব্যবহারে কি শব্দ হয়?
এয়ার কার্টেন সঠিকভাবে অপারেট করার পর যথাযথ ভাবে রান করলে উচ্চ ভলিউমে কোনো শব্দ হয় না। তাছাড়া, দৈনন্দিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় স্বাভাবিক কথোপকথনের ন্যায় শব্দ হয়ে থাকে।
এয়ার কার্টেন কি শতভাগ কার্যকর?
হ্যাঁ, এয়ার কার্টেন বাইরের ধুলো-বালি, কীট-পতঙ্গ সহ অন্যান্য দূষিত পদার্থকে ব্যবহৃত স্থান থেকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করে থাকে।
এয়ার কার্টেন কি ব্যায়বহুল?
বাংলাদেশে এয়ার কার্টেন দামে সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি ইন্সটলেশন খরচ যথেষ্ট কম হয়ে থাকে। তবে, দরজার সাইজ এবং ইন্সটলেশন চাহিদা অনুযায়ী খরচ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তবে, এইচভিএকে সিস্টেমের তুলনায় খরচ অনেক কম হয়ে থাকে।
এয়ার কার্টেন কিভাবে কাজ করে?
এয়ার কার্টেন মূলত দুটি স্থানের মধ্যে একটি অদৃশ্য বাধা তৈরি করে। এই বাধার ফলে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক দুটি এলাকার মধ্যে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে, অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে পাশাপাশি দূষিত পদার্থ থেকে ঐ এরিয়া নিরাপদ থাকে।
বাংলাদেশে এয়ার কার্টেন এর দাম ২০২৪
বাংলাদেশে এয়ার কার্টেন এর দাম সাধারণত ব্র্যান্ড, সাইজ, এয়ার ফ্লো, পাওয়ার সাপ্লাই, এবং অন্যান্য ফিচার সমূহের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। বর্তমানে, বাংলাদেশে এয়ার কার্টেন এর দাম ১৪,৯০০ টাকা থেকে শুরু, যা ৩ ফিট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এবং মসজিদ, অডিটোরিয়াম সহ বড় এরিয়াতে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। ইলেক্ট্রো-গ্যালভানাইজড মেটাল কেস, ম্যানুয়াল কন্ট্রোল এবং ওয়্যারলেস রিমোট কন্ট্রোল সুবিধা যুক্ত এয়ার কার্টেন বিডিতে ১৭,৯০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে, সাইজ ভেদে এয়ার কার্টেন এর দাম কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে থাকে।