অ্যাকশন ক্যামেরা কেনাকাটা
বাংলাদেশ এখন অ্যাকশন ক্যামেরা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রমাগতই। বর্তমানে যারা ভ্রমন করতে ভালোবাসে তাদের কাছে অ্যাকশন ক্যামেরা নেই এমন সংখ্যা খুবই কম। ভ্রমনে গিয়ে স্মৃতি গুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে অ্যাকশন ক্যামেরা ব্যবহার হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকমের ক্যামেরা বাজারে পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো ভ্রমণের জন্য ভিডিও ধারণ করার জন্য যথেষ্ট বা যথাযথ নয়। আর এই কারণেই বাংলাদেশে গ্রাহকেরা অ্যাকশন ক্যামেরা কেনায় মেতে উঠেছে। এই ক্যামেরাগুলোকে স্পোর্টস ক্যামেরাও বলা হয়ে থাকে কারন এগুলো চলন্ত অবস্থায় যেকোন জায়গায় মাউন্ট করে ভিডিও ও অডিও ধারণ করা যায়।
একশন ক্যামেরা কাদের জন্য
- স্পোর্টস এবং অ্যাডভেঞ্চার ব্যক্তিরাঃ বাইক রাইডার, কার রাইডার, মাউন্টেন, স্কাইডাইভিং, প্যারা গ্লাইডিং, ওয়াটার সার্ফিং, হাইকিং, ক্যাম্পিং, নদীতে বোটিং এবং অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের জন্য একশন ক্যামেরা খুবই উপযোগী। এই ক্যামেরাগুলি হালকা ওজন এবং বহনযোগ্য হওয়ায় ভ্রমণের সময় সহজেই আপনার সঙ্গে রাখাতে পারবেন।
- ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট ক্রিয়েটরসঃ আপনি যদি ইউটিউব বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভ্লগিং, লাইভ স্ট্রিমিং, স্লো-মোশন ভিডিও, বা কন্টেন্ট ক্রিয়েশন করে থাকেন, তাহলে একশন ক্যামেরা আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে। এই একশন ক্যামেরা দিয়ে ফুল এইচডি বা ৪কে ভিডিও করে রেকর্ডিং করা যায়।
- ফ্যামিলি মেমোরি সংগ্রহকারী ব্যক্তিরাঃ আপনি যখন পারিবারিক ছুটি বা সাপ্তাহিক ছুটিতে ভ্রমণে যাবেন তখন বিশেষ মুহূর্তগুলো ক্যাপচার করার জন্য একশন ক্যামেরাগুলি খুব দরকার হয়। কারন একশন ক্যামেরা আপনাকে সেই বিশেষ মুহূর্তগুলো উচ্চ মানের ভিডিও বা ছবি হিসেবে ধারণ করতে সহায়তা করে।
- স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ব্যক্তিরাঃ যারা সাধারণত স্মার্টফোন দিয়ে ভিডিও, ছবি ধারণ করেন কিন্তু পেশাদার মানের ভিডিও বা ছবি করতে পারছেন না তাদের জন্য একশন ক্যামেরা বিকল্প হতে পারে। এই একশন ক্যামেরাগুলি স্টেবল ভিডিও, এবং ছবি উচ্চ রেজোলিউশন এবং প্রফেশনাল ফিচার প্রদান করে, তাই আপনার স্মার্টফোনের তুলনায় অনেক বেশি প্রফেশনাল ভিডিও করতে পারবেন।
- লং-টাইম ভিডিও শুটিংঃ আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে ভিডিও শুট করতে চান, তাহলে একশন ক্যামেরা আপনার জন্য আদর্শ হবে কারণ একশন ক্যামেরার ভাল ব্যাটারি লাইফের সুনাম রয়েছে।
অ্যাকশন ক্যামেরার দাম
অ্যাকশন ক্যামেরা ব্র্যান্ড এবং দামঃ বাংলাদেশের বাজারে সাধারণত GoPro, Sjcam, Insta360, DJI, Akaso, Eken, ইত্যাদি ব্র্যান্ডের একশন ক্যামেরা অনেক জনপ্রিয় এবং এই সব ব্র্যান্ডের একশন ক্যামেরা উন্নত প্রযুক্তি এবং ফিচার রয়েছে। এই সব ব্র্যান্ডের অ্যাকশন ক্যামেরাগুলা বাংলাদেশে ৬০০০ টাকা থেকে ৬১০০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন। এছাড়াও কিছু কম দামের মধ্যে একশন ক্যামেরা পাওয়া যায় যে সব অ্যাকশন ক্যামেরা ভাল মানের ছবি এবং ভিডিও দিতে পারে। এই সব নন ব্র্যান্ড অ্যাকশন ক্যামেরার দাম বাংলাদেশে ২০০০ টাকা থেকে শুরু।
অ্যাকশন ক্যামেরা কেনার আগে কি দেখে কিনতে হবে
বাংলাদেশে বিভিন্ন রেজুলেশনের, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অ্যাকশন ক্যামেরা পাওয়া যায়। তাই অ্যাকশন ক্যামেরা কেনার আগে যে বৈশিষ্ট্য জানতে হবে সেগুলো হলোঃ
- রেজুলেশনঃ বাংলাদেশে ফুল এইচডি এবং ৪কে রেজুলেশনের অ্যাকশন ক্যামেরা পাওয়া যায়। এই রেজুলেশন এর উপর ভিত্তি করে অনেকাংশে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যদি পাহাড়, সমুদ্র, আকাশ পথের ভিডিও ধারণ করতে চান তবে ৪কে রেজুলেশনের অ্যাকশন ক্যামেরা ভালো হবে। আবার যদি বাইকিং, সাইকেলিং, বোটিং এর ভিডিও ধারণ করতে চান তাহলে ফুল এইচডি রেজুলেশনের ক্যামেরা যথেষ্ট হবে।
- লেন্সঃ প্রত্যেকটি অ্যাকশন ক্যামেরাতে ব্যবহার করা হয় ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স। অনেক অ্যাকশন ক্যামেরাতে ১২০ থেকে ১৮০ ডিগ্রী আলট্রা ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স থাকে। এগুলো দিয়ে অনেক সুন্দর ভিউ পাওয়া যায় এবং ভিডিও হয় প্রাণবন্ত।
- টেকসইঃ বিভিন্ন এডভেঞ্চারের জন্য অ্যাকশন ক্যামেরা খুব মজবুত ভাবেই তৈরি হয়ে থাকে। তাই টেকসই এর দিকে অ্যাকশন ক্যামেরা যেকোনো ক্যামেরা থেকে বেশি ভাল।
- ওয়াটারপ্রুফ এবং ডাস্টপ্রুফঃ ওয়াটারপ্রুফ এবং ডাস্টপ্রুফ প্রতিটি অ্যাকশন ক্যামেরাই হয়ে থাকে। তাই ময়লা এবং পানি নিয়ে করতে হবে না কোন চিন্তা। ধুলাবালি এবং সমুদ্রের তলদেশ এমন স্থানেও ভিডিও করা যাবে খুব চমৎকার ভাবে।
- ইমেজ স্টেবিলাইজেশনঃ একটা অ্যাকশন ক্যামেরা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইমেজ স্টেবিলাইজেশন কারন সাধারণ ক্যামেরাগুলার ভিডিওতে গতি বা কম্পন সহ সাইক্লিং, স্কিইং, বা গাড়ি চালাবেন তখন ঝাঁকুনি লেগে ছবি বা ভিডিও ঝাপসা হয়। তবে বেশিরভাগ আধুনিক একশন ক্যামেরা গুলিতে ইলেকট্রনিক ইমেজ স্টেবিলাইজেশন (EIS) বা অপটিকাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশন (OIS) ফিচার দেওয়া থাকে যাতে আপনি যেভাবেই ভিডিও বা ছবি তুলেন আপনার ছবি বা ভিডিও মসৃণ এবং ঝাঁকুনি মুক্ত পাবেন। তাই আপনি যখন একটা অ্যাকশন ক্যামেরা কিনবেন অবশ্যেই EIS বা OIS প্রযুক্তি আছে কি না দেখে নিবেন। তবে অ্যাকশন ক্যামেরা যদি ভালো মানের স্ট্যাবিলাইজেশন দিয়ে সজ্জিত হয় তাহলে অ্যাকশন ক্যামেরার দাম একটু বেশি হবে তাই এই ফিচারের সাথে আপনার বাজেটের তুলনা করুন। আপনি যখন অ্যাকশন মোডে ভিডিওগুলি নেন তখন এই বৈশিষ্ট্যটিও খুব কার্যকর।
- ফ্রেম রেটঃ ফ্রেম রেট ভিডিওর মসৃণতা নির্ধারণ করে তাই অ্যাকশন ক্যামেরা কেনার আগে অবশ্যেই ফ্রেম রেট দেখে কিনবেন। একটা সাধারণ অ্যাকশন ক্যামেরার জন্য ৩০এফপিএস (ফ্রেম প্রতি সেকেন্ড) ভিডিওর জন্য যথেষ্ট, তবে ৬০এফপিএস, ১২০এফপিএস, বা ২৪০এফপিএস ক্যামেরা বাজারে পাওয়া যায়। তবে আপনি স্লো মোশন ভিডিও করতে চান তাহলে ১২০এফপিএস বা ২৪০এফপিএস ফ্রেম রেট ক্যামেরা কিনতে পারেন।
- অ্যাডভান্স ফিচার এবং মোডঃ বাজারে কিছু একশন ক্যামেরায় টাইম-ল্যাপস, লং এক্সপোজার, এইছডিআর (হাই ডাইনামিক রেঞ্জ), এবং স্মার্ট মোড ইত্যাদি ফিচার থাকে যা এই ধরনের ফিচারগুলি বিশেষত পেশাদার শুটিং বা ক্রিয়েটিভ ভিডিও তৈরি করার জন্য উপযোগী করে তোলে। এই ধরেনর অ্যাকশন ক্যামেরাগুলির দাম একটু বেশি হয়। তাই আপানর কেনার বাজেট যদি বেশি হয় তাহলে অ্যাডভান্স ফিচারযুক্ত একশন ক্যামেরা কিনতে পারেন।
- একশন ক্যামেরার মাউন্টিংঃ একশন ক্যামেরাগুলার মাউন্টিং করার অনেক সুবিধা রয়েছে যেমন হেলমেট, বাইক চালানো,স্কাইডাইভিং, গাড়ির ড্যাশবোর্ড, বা স্পোর্টস কার্যক্রম ব্যবহার করা যায়, তাই একশন ক্যামেরার মাউন্টিং করার মাধ্যমে আপনি অনেক ধরনের অ্যাকশন দৃশ্য ধারণ করতে পারেন যেগুলি সাধারণ ক্যামেরা দ্বারা সম্ভব হয় না।
- স্টোরেজঃ বেশিরভাগ অ্যাকশন ক্যামেরাগুলাতে মাইক্রোএসডি কার্ড সাপোর্ট করে, তাই আপনি বেশি স্টোরেজ মাইক্রোএসডি কার্ড কিনে রাখলে আপনার ভিডিও এবং ছবি ধারণের জন্য প্রচুর যায়গা পাবেন।
- কানেক্টিভিটিঃ বেশিরভাগ অ্যাকশন ক্যামেরা গুলাতে Wi-Fi এবং Bluetooth প্রযুক্তি থাকে যাতে আপনি সহজেই ক্যামেরায় থাকা ভিডিও বা ছবি আপনার স্মার্ট মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে দ্রুত তথ্য ট্রান্সফার করতে পারবেন। এছাড়াও কিছু অ্যাকশন ক্যামেরাতে অ্যাপ সমর্থন করে যাতে ফোন বা ট্যাবলেটে ভিডিও স্ট্রিমিং বা ক্যামেরার কন্ট্রোল করার সুবিধা পাবেন।
- ব্যাটারি লাইফঃ একশন ক্যামেরার ব্যাটারি লাইফ অতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনি দীর্ঘ সময় ধরে ভিডিও ধারণ করার প্রয়োজন হয়। যদি আপনি দীর্ঘ সময় ধরে ভিডিও করতে চান, তাহলে রিমুভেবল ব্যাটারি বা একাধিক ব্যাটারি নেওয়ার সুবিধা আছে সেইসব একশন ক্যামেরার কিনতে পারেন।
4K অ্যাকশন ক্যামেরার সুবিধা
4K প্যানোরামা ভিডিও শ্যুট করার জন্য এবং ভ্লগিনের মতো পেশাদার কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য খুব ভাল৷ তাছাড়া, বাংলাদেশে 4K ক্যামেরা কম দামে পাওয়া যায় যেমন ৬,০০০ টাকা থেকে শুরু। 4K অ্যাকশন ভিডিও ক্যামেরার সুবিধা হল:
- সর্বাধিক রেজোলিউশনে প্রতিটি বিবরণ ক্যাপচার করে যাতে প্রয়োজনে সেটা থেকে কম রেজোলিউশনের ভিডিও তৈরি করা যায়
- 4K রেজোলিউশনের বেশিরভাগ অ্যাকশন ক্যামেরা ভ্লগইনের জন্য বেশ ভাল তাই ব্যক্তিগত মজা থেকে শুরু করে পেশাদার বিষয়বস্তুর উপর ভিডিও যেকোনো সময় তৈরি করা যেতে পারে। বাংলাদেশে উচ্চমানের স্মার্টফোন বা ডিজিটাল ক্যামেরার মতো ডিভাইসের তুলনায় কম খরচে ভ্লগিন অ্যাকশন ক্যামেরা কেনা যায়।
- বেশিরভাগ 4K অ্যাকশন ক্যামেরা দ্রুত ফোকাস করে তাই ব্লার ভিডিও বা ধীর গতির ভিডিও একেবারেই দেখা যায় না।
- দ্রুত ডেটা স্থানান্তর এবং সহজে আপলোড করার জন্য বেশিরভাগ 4K অ্যাকশন ক্যামেরায় স্মার্ট বৈশিষ্ট্যগুলিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে
- 4K অ্যাকশন ক্যামেরা অন্যান্য ডিভাইসের তুলনায় কম ব্যাটারি শক্তি ব্যবহার করে।
শেষ কথাঃ
একশন ক্যামেরা কেনার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি হচ্ছে তারাই যাহারা প্রতিনিয়ত অ্যাডভেঞ্চার, স্পোর্টস, ভ্রমণ বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটিভ তৈরি করতে আগ্রহী। সাধারণত একশন ক্যামেরাগুলা ওইভাবেই তৈরি করা হয় যাতে আপনি পানি, ধুলো, ঝাঁকুনি এবং তাপমাত্রা পরিবর্তন সহ বিভিন্ন কঠিন পরিবেশে ভিডিও বা ছবি ধারণ করতে পারে। তাই যদি আপনি একজন স্পোর্টস, ভ্রমণ, ভিডিওগ্রাফি বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটিভ নিয়ে কাজ করেন তবে একশন ক্যামেরা আপনার জন্য আদর্শ।