বাস্তব পৃথিবীর মত ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও আছে এক রহস্যময় জগৎ। এই রহস্যময় জগৎটিকেই বলে ডার্ক নেটওয়ার্ক সংক্ষেপে ডার্কনেট। অন্ধকারের এই রাজত্বকে ব্ল্যাক ওয়ার্ল্ড, ডীপ ওয়েব, বা ব্ল্যাক নেট বলেও ডাকা হয়। উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞা অনুযায়ী, ডার্ক নেট হচ্ছে এমন একটি সম্পর্ক যেখানে বিশ্বস্ত লোকেরা পরস্পরের সাথে গোপনে মিলিত হতে পারে অথবা গোপন তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ফ্রেন্ডস টু ফ্রেন্ডস সংক্ষেপে এফ টু এফ প্রক্রিয়া বা ফ্রেন্ডস পি টু পি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন ইউজার অতি সহজেই নিজের আইপি এড্রেস গোপন রাখতে পারে। যার ফলে সরকারী বা কনফিডেন্সিয়াল স্থানগুলোতে ভয়হীনভাবে প্রবেশ করে ডেটা হ্যাক করা সম্ভব। এই কারনেই এই জগৎটি অনলাইনের অপরাধীদের কাছে এতোটা প্রিয়। এক জরিপে জানা গেছে দৃশ্যমান বা প্রকাশ্য ওয়েবে যে ডেটা সংরক্ষিত আছে তার চেয়েও প্রায় ১০০০ গুণ বেশী ডেটা সংরক্ষিত আছে অন্ধকার জগতে।
বাস্তব জীবনের মত অনলাইন জগতেও আছে ব্ল্যাক মার্কেট যা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এই ডার্ক নেটের মাধ্যমে। অনলাইনের এই ব্ল্যাক মার্কেটে প্রতি মূহুর্তে নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দ্রব্য, বই , পর্ণোগ্রাফী, বিভিন্ন মরণাস্ত্র এমনকি রকেট লঞ্চার, নিউক্লিয়াস বোমার যন্ত্রাংশের অবাধ বাণিজ্য চলতে থাকে। বিভিন্ন তথ্য, চৌকস হ্যাকার বা হ্যাকিং টেকনিক অথবা কন্ট্রাক্ট সুপার কিলার পর্যন্ত কেনা-বেচা হয় এখানে। সন্ত্রাসী, মাফিয়া বা স্মাগলার গ্রুপ, বিপ্লবী, হ্যাকার, এমনকিই বিভিন্ন দেশের প্রশাসনও এই জগতের সাথে যুক্ত। এখানে গোয়েন্দারা খুব গোপনে নিজেদের ভেতর তথ্য আদান প্রদান করতে পারে অথবা চুরি যাওয়া তথ্য ফিরে পেতে দর কষাকষি করতে পারে অপরাধীদের সাথে। এছাড়াও এই জগতে খুব কম মূল্যে বিক্রি করা হয় নিত্য প্রয়োজনীয় সব পন্য। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলের বণিকেরা বিভিন্ন দামী এবং দুর্লভ সামগ্রী অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে বিক্রি করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের জাল পাসপোর্ট বা নাগরিকত্ব নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে।
ডার্কনেটের আরো একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এরা ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবের সাইটগুলোর মত সাধারন কোন ডোমেইন ( যেমন .com ) ব্যবহার করে না। এরা Pseudo Top Level Domain ব্যবহার করে যা কিনা মূল ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবে না থেকে ARPANET নামক বিশেষ এক নেটওর্য়াকের অধীনে থাকে যে কারনে সাধারন ব্রাউজার দিয়ে এখানে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। এ ধরণের ডোমেইনের ভেতর আছে বিটনেট, অনিয়ন, ফ্রীনেট প্রভৃতি। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে ফ্রিনেট। তাদের ওয়েবসাইটে বিনামূল্যে একটি বিশেষ সফটওয়্যার পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর নিজের কম্পিউটারটিই ডার্কনেটের একটি সার্ভারে পরিণত হয়৷ তারপর তারা অন্য ডার্কনেট ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়ে উঠে। ডার্কনেটে পন্য কেনা বেচার জন্য বিটকয়েন নামে বিশেষ এক ধরনের মুদ্রা ব্যবহার করা হয়।
ডার্কনেটের ইতিহাস খুব বেশী পুরানো নয়। ১৯৭০ সালে ARPANET কে নিরাপত্তার জন্য মূল নেটওয়ার্ক থেকে বের করে দেয়া হয়। এই ARPANET কে পরবর্তীতে কিছু লোক নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য ব্যবহার করা শুরু করে। মূল নেটওয়ার্কের বহির্ভূত হওয়াতে খুব সহজেই এখানে গোপন তথ্যের আদান প্রদান চলতে থাকে। পরবর্তীতে ২০০২ সালে পিটার বিডেল, পল ইংল্যান্ড, মারকাস পাইনাভো এবং ব্রায়ান উইলিয়াম নামে মাইক্রোসফটের চার কর্মচারীর এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য উঠে আসে। এই প্রতিবেদনে এই নেটওয়ার্কটিকে ডার্কনেট হিসেবে আখ্যায়িত হয়। সম্প্রতি এক তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে উইক্লিপস যে তথ্য দেয় তার অধিকাংশই তারা ডার্কনেট
থেকে ক্রয় করে।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: July 31, 2013