চিকিৎসা হচ্ছে প্রত্যেক মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানও। সময়ের সাথে তাল রেখে জটিল রোগকে সহজ ভাবে পরিক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্র। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রের মধ্যে অন্যতম একটি। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি সম্পর্কে যাদের সুস্পট ধারণা নেই তারা এখান থেকে আল্ট্রাসোনোগ্রাম কি, কিভাবে কাজ করে? কোন কাজে ব্যবহার করা হয়? এবং এর খরচ কেমন হতে পারে? এর সঠিক ধারণা নিতে পারবেনঃ-
আল্ট্রাসোনোগ্রাম কি?
ডাক্তাররা সাধারণত আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান প্রযুক্তি যা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তরঙ্গ তৈরি করে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অরগানের চিত্র ফুটিয়ে তুলে। এর সাহায্যে ব্যক্তির পেট এবং পেলভিক অঙ্গ, পেশী, হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালীগুলির আকার এবং অনাগত শিশুর ভ্রূণ সুন্দ্ররভাবে পরিমাপ করা যায় এবং কোন ত্রুটি তাখলে নির্ণয় করা যায়।
আল্ট্রাসোনোগ্রাম কিভাবে কাজ করে?
আলট্রাসনোগ্রাম এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে শরীরের ভেতরের চিত্র ধারন করে রোগ নির্ণয় করা হয়। আল্ট্রাসোনোগ্রাম যন্ত্রটি রোগ নির্নয়ের জন্য উচ্চ শব্দ শক্তি সম্পন্ন তরঙ্গ ব্যবহার করে যা শরীরের অভ্যন্তরে প্রতিফলিত হয়। প্রতিফলিত তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি ও তীব্রতা ব্যবহার করে কম্পিউটারের মনিটরে চিত্র পাওয়া যায়। এভাবেই আল্ট্রাসোনোগ্রাম মেশিন কাজ করে থাকে। বর্তমানে আল্ট্রাসোনোগ্রাম মেশিন বাংলাদেশের বাজারে কম দামে পাওয়া যায়।
আল্ট্রাসোনোগ্রাম পরিক্ষা করার পূর্ব প্রস্তুতি কেমন হয়?
যে কন ধরনের মেশিনের সাহায্য কোন কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা অবলম্বণ করতে হয়। বিশেষ করে সঠিক রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে পূর্ব প্রস্তুতি থাকা বাঞ্চনীয়;-
১। পরীক্ষাটির পূর্বে ডক্টর এর পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে আপনাকে ৮-১০ ঘণ্টার মতো না খেয়ে থাকতে হতে পারে। বিশেষ করে যদি পেটের কোনো পরীক্ষা হয় তবে। এর কারণ হচ্ছে খাদ্য আল্ট্রা সাউন্ডের শব্দ তরঙ্গকে আটকে দিয়ে পারে, পরীক্ষায় বাধার সৃষ্টি হতে পারে।
২। পরীক্ষাটি করার পূর্বে আপনাকে প্রচুর পানি পান করতে হবে। পানির চাহিদা পূরণ হলেই এই পরীক্ষাটি করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যা নির্ণয়ে সুবিধা হয়।
৩। তবে কিছু পরিক্ষার পূর্বে পানি পানের প্রয়োজন নেই।
আল্ট্রাসোনোগ্রাম কি কাজে ব্যবহার করা হয়?
আলট্রাসনোগ্রাম চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে এটির বাহিরেও মস্তিষ্ক, চোখ, পিত্তথলি, কিডনি, লিভার, জরায়ু , রক্তনালী, অণ্ডকোষসহ আরো অনেক রোগ সহজে নির্ণয় এর কাজে ব্যবহার করা যায়। সাধারণত একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভবতী অবস্থায় শিশুর বিভিন্ন কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে বা রোগ নির্ণয়ে এটি ব্যবহার করা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে একজন গর্ভবতী মহিলা গর্ভকালীন সময়ে তার প্রত্যেকটি ধাপ সঠিকভাবে পালন করেছে কিনা সে বিষয়ে জানা যায়। এছাড়াও মা অথবা শিশু কি পরিস্থিতে আছেন বা তাদের কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা সেটিও খুঁজে বের করা যায়।
আল্ট্রাসোনোগ্রাম এর চিকিৎসা খরচ কত?
হাসপাতাল অথবা ক্লিনিক ভেদে আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার খরচ আলাদা হতে পারে। তবে সাধারণভাবে সাদাকালোর আল্ট্রাসোনোগ্রাফির ক্ষেত্রে খরচের পরিমান ৫০০- ৮০০ টাকা হয়ে থাকে এবং রঙিন আল্ট্রাসোনোগ্রাফির ক্ষেত্রে সেটি ১০০০-২৫০০ পর্যন্ত হতে পারে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
অধিকাংশ মানুষের মনে এই প্রশ্নটি থাকে যে, আলট্রাসোনোগ্রাম কোনো ধরনের ঝুঁকি গ্রহণ করে কিনা বা এটি কি নিরাপদ কিনা এই বিষয়ে। এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হচ্ছে অন্যান্য পরীক্ষার তুলনায় আলট্রাসনোগ্রাম একদমই কম ঝুঁকি বহন করে থাকে। গর্ভাবস্থায় এই পরীক্ষা করার ফলে কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে না। কারণ এক্সরে বা সিটি স্ক্যান জাতীয় পরীক্ষাগুলো করার ক্ষেত্রে রেডিয়েশনে প্রয়োগ করা হলেও আল্ট্রাসাউন্ড এর ক্ষেত্রে কোনো রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়না। ফলে অন্যান্য পরিক্ষার তুলনায় এটি বেশি নিরাপদ।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: January 27, 2022