পাওয়ার টিলার বাংলাদেশে বাহুল ব্যবহৃত একটি মেশিন। বর্তমানে শুধু জমি চাষের ক্ষেত্রেই নয় এটি মালপত্র বহন করতেও গ্রামে ব্যপক ব্যবহৃত হচ্ছে। কিস্তু কিছু নিয়ম কানন না মানার কারনে এই গুরত্তপূর্ণ মেশিনটি যেমন তাড়াতাড়ি নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে তেমনি এটি এক স্থান থাকে অন্য স্থানে নেয়ার সময় হচ্ছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সামান্য কিছু ট্রেনিং এবং রক্ষনাবেক্ষনের ধারনা থাকলেই বাংলাদেশে এটি হয়ে উঠতে পারে একটি প্রয়োজনীয় যন্ত্র। শুধু কৃষিকাজেই নয় এটি অনেক মানুষের জীবিকার উৎস হতে পারে। তবে সব কিছুর আগে কিনতে হবে একটি ভাল মানের পাওয়ার টিলার আর পাওয়ার টিলারের দাম এখন বাংলাদেশে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এর ব্যপক চাহিদা এবং বাজার প্রতিযোগিতার জন্য।
পাওয়ার টিলারের ইঞ্জিন চালু বা বন্ধ করে কীভাবে?
সঠিক ভাবে পাওয়ার টিলারের ইঞ্জিন চালু বা বন্ধ করার প্রক্রিয়া গুলো জানা থাকলে বিভিন্ন দূর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া অনেকটাই সম্ভব।
১। ইঞ্জিন চালু করার প্রক্রিয়াঃ
- জ্বালানি সরবারহের সংযোগ চালু করতে হবে।
- জ্বালানি সরবারহের রাস্তা থেকে সম্পূর্ণ বাতাস বের করে ফেলতে হবে।
- ক্লাচ লিভার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাখতে হবে।
- গিয়ার লিভার নিউট্রাল অবস্থায় রাখতে হবে।
- থ্রোটল লিভার রানিং অবস্থায় রাখতে হবে।
- ডি-কম্প্রেশন লিভার এক হাত দিতে চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে স্টার্টিং হাতল আস্তে আস্তে ঘুরাতে হবে। এ সময়ে লক্ষ্য রাখতে তেলের প্রেসার উপরে উঠছে কি না। তেলেতর প্রেসার উপরে উঠার সাথে সাথে স্টার্টিং হাতল দ্রুত ৫ থেকে ৭ বার ঘুড়ালে ইঞ্জিন চালু হয়ে যাবে।
২। পাওয়ার টিলার বন্ধ করার প্রক্রিয়াঃ
- ক্লাচ লিভারকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আনতে হবে।
- গিয়ার লিভারকে পুণরায় নিউট্রাল অবস্থায় আনতে হবে।
- এক্সিলারেটিং লিভারকে অফ পজিশনে আনলেই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে।
পাওয়ার টিলার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কি কি যন্ত্রাংশ সাথে রাখা ভাল?
পাওয়ার টিলার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু যন্ত্রতাংশ সাথে রাখা ভাল। এগুলো জরুরী মুহুর্তে কাজে আসে। এই যন্ত্র গুলো হলোঃ
- লোহার হাতুড়ি
- প্লাস্টিকের হাতুড়ি
- ফ্ল্যাট স্ক্রু ড্রাইভার
- স্টার স্ক্রু ড্রাইভার
- কম্বিনেশন প্লায়ার্স
- কাটিং প্লায়ার্স
- ফিলার গেজ
- বিয়ারিং পুলার
- এডজাস্টেবল রেন্স
- সকেট রেন্স
- হ্যাক-স ও স্পেনার
পাওয়ার টিলার পরিচালনায় কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার?
- পাওয়ার টিলার পরিচালনের আগে জমিতে কোনো পাথর, ইট বা গর্ত আছে কি না তা দেখে নিতে হবে।
- পাওয়ার টিলার বিশেষ প্রয়োজনে উপরে উঠাতে হলে ১ নাম্বার গিয়ারে রেখে উঠাতে হবে নইলে উলটে যেতে পারে। আবার নিচে নামানোর সময় ব্যাক গিয়ারে রেখে নামাতে হবে।
- এক্সিলারেটরে জোরে চাপ দিয়ে গিয়ার কমিয়ে রেখে জমি চাষ করলে পাওয়ার টিলার নষ্ট হয়ে যাবে, তাই এক্সিলারেটর ও গিয়ারের মাঝে সপমন্বয় রাখতে হবে।
- গিয়ার শিফটিং-এর পর মেইন ক্লাচকে ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে।
- ক্লাচকে ডানে বামে ঘুরিয়ে পাওয়ার টিলার পরিচালন করতে হবে তাহলে ক্লাচ বেশি দিন টিকবে।
- রোটারির সাথে আগাছা আটকে গেলে পাওয়ার টিলার থামিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- গিয়ার শিফটিং-এর সময় অবশ্যই ক্লাচ অফ করে নিতে হবে।
- একটানা চার ঘন্টা পরিচালনের পর আধা ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হবে। তাহলে পাওয়ার টিলার দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যাবে সহজে নষ্ট হবে না।
- চাকা ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, শুকনো জমি চাষ করার সময় এবং রাস্তায় চালানোর সময় পাওয়ার টিলারের চাকায় টায়ার লাগাতে হবে। ভেজা জমির ক্ষেত্রে লোহার চাকা ব্যবকার করতে হবে।
- পাওয়ার টিলার পরিচালনের সময় ইঞ্জিন থেকে বেশি আওয়াজ হলে পাওয়ার টিলার বন্ধ করে ইঞ্জিন পরিক্ষা করতে হবে।
- ব্যবহার শেষে ইঞ্জিন বন্ধ করে ভাল ভাবে পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় স্থানে গ্রিজ বা তেল দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে ফলে মরিচা ধরবে না।
পাওয়ার টিলার ব্যবহারে পরিচালনকারী ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে?
সতর্কতাই নিরাপত্তার মূল ভিত্তি। সতর্কতার পাশাপাশি পাওয়ার টিলার ব্যবহারে নিরাপত্তা গ্রহণেও থাকতে হবে তৎপর। পাওয়ার টিলার পরিচালনকারী ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত গ্রহযোগ্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গুলো হলোঃ
- পাওয়ার টিলার পরিচালনের সময় ঢিলা কোনো পোষাক পরিধান করা যাবে না।
- গলায় মাফলার, শরীরে চাদর এবং লুঙ্গি পরে পাওয়ার টিলার পরিচালন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- পাওয়ার তিলার চালু অবস্থায় কোনো যন্ত্র পর্যবেক্ষণ করা যাবে না। পর্যবেক্ষণ করার আগে পাওয়ার টিলার বন্ধ করে নিতে হবে।
- পাওয়ার টিলার চালু আছে এমন অবস্থায় পাওয়ার টিলারের গায়ে হেলান দেয়া যাবে না।
- মোবিল বা ডিজেল পাওয়ার টিলারের ইঞ্জিন চালু আছে এমন অবস্থায় প্রয়োগ করা যাবে না।
- পাওয়ার টিলার চালু থাকা অবস্থায় এটির উপর কোনো প্রকারের যন্ত্রপাতি রাখা যাবে না।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: November 20, 2022