স্কুলে বা অফিসে যাই হোক না কেন দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রিন্ট একটি অপরিহার্য বিষয় এবং এই কাজটি পুরোপুরি এবং সহজে করতে ডিজিটাল প্রিন্টার সহায়তা করে। প্রিন্টারগুলির কার্যকারিতার এবং নিজের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে প্রিন্টার কেনা উচিত তাতে আপনার টাকা যেমন সাশ্রয় হবে তেমনি চাহিদা পূরণ হবে।
ইঙ্কজেট বা লেজারঃ লেজার প্রিন্টার দক্ষতার সাথে মুদ্রণ করতে পারে আর ইঙ্কজেট প্রিন্টার কম খরচে লেজার প্রিন্টারের মতোই প্রিন্ট করে।
যখন সাদা-কালো প্রিন্টের প্রয়োজন হবে তখন ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট লেজার প্রিন্টার আরও ভালো কাজ করবে কারণ লেজার প্রিন্টারের টোনার তার প্রযুক্তির জন্য ইঙ্কজেটের মতো সহজে শুকিয়ে যায় না। যদি ক্রমাগত কালারের প্রিন্টের প্রয়োজন হয় তবে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট লেজার প্রিন্টার ভাল কারণ এটি দিয়ে প্রিন্ট করলে কালির খরচ কম পরবে।
আপনার যদি রঙিন মুদ্রণের প্রয়োজন হয় তবে রঙিন লেজার প্রিন্টার আরও ভালো করবে। তবে কালার প্রিন্ট এর ক্ষেত্রে ইঙ্কজেট প্রিন্টার এর দাম তুলনামূলক অনেক কম তাতে অর্থ সাশ্রয় হবে।
মাল্টি-ফাংশনঃ কখনও কখনও আমাদের স্ক্যান বা কপির প্রয়োজন হয়। একটি মাল্টি-ফাংশন প্রিন্টার সহজেই এই কাজটি করতে পারে। এক্ষেত্রে দাম কিছুটা বেশি হবে। তবে নিয়মিত স্ক্যানিং বা কপি করার জন্য একটি ফটোকপিয়ার কেনা বা স্ক্যানার সুবিধাজনক হবে। কিছু প্রিন্টারে ফ্যাক্স সুবিধা রয়েছে তাই এটি সহ কিনলেএকটি ডেডিকেটেড ফ্যাক্স মেশিন কেনা থেকে আপনার খরচ বাঁচাবে।
ফটো প্রিন্টিংঃ মজার জন্য ফটো প্রিন্ট করা যেকোন কম দামের ইঙ্কজেট কালার প্রিন্টার দিয়ে করা যায়। কিন্তু ক্যামেরায় তোলা ছবি অ্যালবামে সংরক্ষণের জন্য একটি ভালো মানের ফটো প্রিন্টার প্রয়োজন তা ইঙ্কজেটক অথবা লেজারজেট যে কোন প্রযুক্তি হতে পারে। ফটো প্রিন্টিং ব্যবসা বা স্টুডিওর জন্য, ল্যাব মানের ফটো প্রিন্টার আদর্শ যা ডাই-সাবলিমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে ছবি প্রিন্ট করতে ফটো কাগজের উপর তাপ ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ছবি অনেক পরিষ্কার হয় এবং অনেক বছর ধরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মনে রাখবেন যে এই ধরনের প্রিন্টারের মাল্টি ফাংশন ক্ষমতা নেই এবং শুধুমাত্র ছবি প্রিন্ট করার জন্য ভাল।
গতি এবং রেজোলিউশনঃ সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য গতি বা রেজোলিউশন প্রিন্টিং এর উপরে তেমন প্রভাব ফেলে নাহ। কিন্তু একটানা প্রিন্ট করার জন্য হাই স্পিড প্রিন্টার ব্যবহার করা ভালো এতে সময় কম সময়ে অধিক পরিমানের প্রিন্ট করা সম্ভব। প্রিন্টারে রেজোলিউশনের সেট করার ফাংশন থাকে এতে কালির খরচ কম হবে এবং নিখুঁত মানের প্রিন্ট দিবে। কিছু সাধারণ স্পেসিফিকেশন হল:
- পিপিএমঃ পৃষ্ঠা প্রতি মিনিট (PPM) অর্থাৎ একটি প্রিন্টার প্রতি মিনিটে কয়টি পেজ প্রিন্ট করতে পারে। এই গতি কালো প্রিন্ট ও রঙিন প্রিন্টার জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
- ডিপিআই: ডটস পার ইঞ্চি (DPI ) মানে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে কত বিন্দু কালি প্রিন্ট করা হবে। এটি যত বেশি হবে তত ভালো মানে নিখুঁত প্রিন্ট হবে.
ডিউটি সাইকেলঃ এর মানে হল প্রতি মাসে একটি প্রিন্টার কোন রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই কতগুলো পৃষ্ঠা প্রিন্ট করতে পারে। হোম ব্যবহারকারীদের এটির তেমন দরকার নেই। কিন্তু ক্রমাগত ব্যবহারকারী এবং অফিসের জন্য এটি নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি সবসময় মুদ্রণের প্রয়োজন হয় তবে অধিক ডিউটি সাইকেল বেছে নেওয়ার উচিত।
সংযোগঃ সবচেয়ে সাধারণ সংযোগ পদ্ধতি হল USB যা বেশিরভাগ বাড়ির ব্যবহারকারীদের জন্য যথেষ্ট। বড় অফিসের জন্য যেখানে অনেক লোক একই প্রিন্টার শেয়ার করে সেখানে একটি নেটওয়ার্ক প্রিন্টার প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং, আপনার প্রয়োজন হলে এটি বেছে নিন। ওয়াইফাই প্রযুক্তি এখন অনেক প্রিন্টারেই পাওয়া যায় আর এটি সব ধরনের ব্যবহারকারীদের প্রিন্টিংয়ের কাজকে সহজ করে দিবে।
ডুপ্লেক্সিংঃ ডুপ্লেক্সিং থাকলে এটি এক কমান্ডে পৃষ্ঠার উভয় পাশে প্রিন্ট করবে। সুতরাং, আপনার যদি এটির প্রয়োজন হয় তবে এট সুবিধাসহ মডেল নির্বাচন করুন।
মেমরিঃ এটি নেটওয়ার্ক প্রিন্টারগুলির জন্য একটি ফ্যাক্টর হতে পারে কারণ অনেক প্রিন্ট কমান্ড যা অনেক প্রিন্ট কমান্ড একসাথে প্রক্রিয়া করতে পারবে। কম দামের প্রিন্টারে অল্প মেমরি থাকে কিন্তু ব্যবসা বা নেটওয়ার্ক প্রিন্টারে সাধারণত বেশি মেমরি থাকে। এছাড়াও ফটো প্রিন্টিংয়ের জন্য উচ্চতর মেমরি প্রয়োজন যাতে এটি আপনার মেমরি কার্ড থেকে সহজেই প্রিন্ট প্রক্রিয়া করতে পারে।
কালির খরচঃ আপনি যদি বেশিরভাগ কালো ও সাদা প্রিন্ট করেন তবে একরঙা লেজার প্রিন্টার সবচেয়ে ভাল কারণ কালি খরচ অনেক কম হবে। কিন্তু যদি অধিক রঙিন মুদ্রণের প্রয়োজন হয় তবে রঙিন প্রিন্টার প্রয়োজন তবে কালো এবং সাদা প্রিন্টিং করলে খরচ কিছুটা বেশি হবে। কিন্তু যদি আপনার মাঝে মাঝে রঙিন বা কালো প্রিন্টিং এর প্রয়োজন হয় তবে ২ ধরনের প্রিন্টার রাখুন কালির খরচ কমানোর এটি একটি ভাল বিকল্প।
কাগজ হ্যান্ডলিংঃ বেশিরভাগ প্রিন্টার A4 আকারের কাগজ পর্যন্ত প্রিন্ট করতে পারে যা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য যথেষ্ট। কিছু অফিসে A3 আকারের প্রয়োজন হতে পারে বা অন্য আকারের হতে পারে তাই প্রিন্টারের স্পেসিফিকেশন পড়ুন যে এটি কি ধরনের কাগজ সাপোর্ট করে। এছাড়াও, এটি খাম, কার্ড ইত্যাদি মুদ্রণ করতে পারে কিনা তা পরীক্ষা করুন কারণ কখনও কখনও এটির প্রয়োজন হতে পারে।
কাগজের ট্রেঃ প্রতিটি প্রিন্টারে অন্তত একটি কাগজের ট্রে থাকে। কিন্তু নেটওয়ার্ক বা ব্যবসায়িক কাজের জন্য একাধিক ট্রে প্রয়োজন হতে পারে যাতে এটি একই সময়ে অনেকগুলি কাগজ ধারণ করতে পারে।
বাজেটঃ বাসায় ব্যবহারের জন্য ৩ থেকে ৬ হাজার টাকার ভিতর ইঙ্কজেট প্রিন্টার কিনতে পারবেন যা সাদা ও কালো এবং রঙিন দুটিই প্রিন্ট করতে পারবে। ব্যবসায়িক বা অফিসের জন্য সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকার প্রিন্টার কেনা উচিত। আর ফটো প্রিন্ট করার জন্য ১১-১২ হাজার টাকার মধ্যে প্রিন্টার পাওয়া যায় তবে ২৫ হাজারের মধ্যে কিনলে ভাল মানের হবে। আর ডাই-সাবলিমেশন প্রযুক্তির প্রিন্টার ৫০ হাজার থেকে শুরু।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: June 07, 2022