bdstall.com

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থান-সমূহ, খুলনা, বাংলাদেশ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা লবণাক্ত বনাঞ্চল হলো সুন্দরবন। এটি বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম একটি । সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০হাজার বর্গ কিলোমিটার, যা যোৗথভাবে বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থিত।

 

 

রয়েল বেঙ্গল টাইগার সহ বিচিত্র নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে সুন্দরবন পরিচিত। জরিপ অনুযায়ী ১০৬টি বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০টি চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায় এছাড়াও ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণী। যা প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে। সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এই বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয় দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দরবনের ভেতরে যেতে হলে নৌপথই একমাত্র উপায়। শীতকাল হচ্ছে সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

একজন দর্শনার্থীর পক্ষে পুরো সুন্দরবন ঘুরে দেখা সম্ভব না হলেও এই বনের বিশেষ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে । যে স্থানগুলো ভ্রমনপ্রিয় মানুষদের ভ্রমন আকাঙ্খা মিটানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে কারণ এসব স্থান গুলো তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে বৈচিত্রময় । আর তারই আকর্ষণে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক , গবেষক দর্শনার্থী সুন্দরবনের এ সমস্ত স্থানে ভ্রমন করতে আসে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সুন্দরবনের এইসব বিশেষ দর্শনীয় স্থানগুলোর নাম ও সংক্ষিপ্ত বিবরণী। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বিষয়ে ধারনা পেতে পারেন এখান থেকে।

 

 

কটকা

 

/ কটকাঃ সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কাটকা অন্যতম। এটি সুন্দরবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। মাংলা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ৯০ কি. মি. দূরে অবস্থিত এবং সু্ন্দরবনের পূর্ব অভয়ারণ্যের মধ্যে প্রধান কেন্দ্র এটি। কাটকায় রয়েছে বনবিভাগের একটি রেস্ট হাউজ। এর আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় খাল। যেখানে নৌকা নিয়ে ভ্রমন করা যায় এবং সবচেয়ে কাছ থেকে উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের আসল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। খালের দুই ধারে দেখা যায় অসংখ্য চিত্রা হরিণ মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়াও বানর, উদবিড়াল, বনমুরগি ও নানান ধরনের পাখির বিচরন দেখা যায়। মাঝে মাঝে রাজকীয় ভঙ্গিতে বাঘের চলার দৃশ্য ও গর্জন শোনা যায়। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ  টাওয়ার থেকে দেখা যায় বন্য প্রানীর অপূর্ব সব দৃশ্য এবং বাঘের হরিণ শিকারের দৃশ্য যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে প্রতিনিয়ত।

 

 

করমজল

 

/ করমজলঃ কেউ যদি অল্প সময়ের মধ্যে সুন্দর বন ভ্রমন করে ফিরে আসতে চান তাহলে তার জন্য সুন্দরবনের করমজল স্থানটি সবচেয়ে উপযোগী। কারণ করমজল স্থানটি মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে খুব নিকটবর্তী হওয়ায় মাত্র ৩ঘন্টার মধ্যে এটি ভ্রমন করে ফিরে আসা যায় । এখানে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভ্রমন করতে আসে। এখানের প্রধান প্রধান আর্কষণ গুলো হলো: হরিণ, বানর, কুমির, নৌকা চালানো, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পশুর নদী, জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য ইত্যাদি। এছাড়াও বাংলাদেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্রও এই করমজলে অবস্থিত যা পর্যটকদের দারুণ ভাবে আকর্ষণ করে।

 

কচিখালি

 

/ কচিখালিঃ মাংলা থেকে প্রায় ১০০ কি. মি. দূরে অবস্থিত কচিখালি । সুন্দরবনের অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই কচিখালি। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালি সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালি স্টেশন পর্যন্ত পায়ে হাটা পথ । এই পথের পাশে ঘন বন যেখানে দেখতে পাওয়া যায় বাঘ, হরিণ, বানর, বিষধর সাপ, শুকুর ইত্যাদি। এই পথে হাটার সময় কিছুটা ভয় ভয় মনে হতে পারে তবে সাহসী পর্যকদের প্রথম পছন্দ এই কচিখালি। কচিখালির প্রধান আর্কষণ সমূদ্র সৈকত। যে সৈকতের নিরিবিলি পরিবশে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে। এছাড়াও এই সৈকতে মাঝে মাঝে বাঘের বিচরনও লক্ষ করা যায়। যা পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে।

 

 

হাড়বাড়িয়া

 

 

/ হাবাড়িয়াঃ মংলা থেকে মাত্র ২০ কি. মি. দূরে হার বাড়িয়া নামক স্থানটি অবস্থিত। যার অপুরোপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই এই স্থানটির প্রধান আর্কষণ। এখানে কাঠের তৈরী দুইটা ট্রেইলসহ গোলাঘর, যার একটি পুকুর  সংলগ্ন, ও কাঠের তৈরী পুল ইত্যাদি রয়েছে । এছাড়াও রয়েছে নানান প্রজাতির বন্য পশু পাখি ও উদ্ভিদের সমারোহ।

 

 

 

 

হিরনপয়েন্ট

 

 

/ নীল কমল, হিরনপয়েন্টঃ মংলা থেকে প্রায় ১০০ কি.মি. দূরে অবস্থিত নীল কমল নামক স্থানটি। এটি সুন্দরবন দক্ষিণ অভয়ারন্যের একটি বিখ্যাত প্রশাসনিক কেন্দ্র । এখানে সবচেয়ে বেশি হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও বাঘ, শুকুর, বানর, উদবিড়াল, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, নানা বর্ণের পাখির ঝাক ইত্যাদিরও বিচরন লক্ষনীয়। নীল কমলের সামনে দিয়ে বয়ে গেছে একটি ছোট খাল। ১৯৯৭  খ্রিঃ ঘোষিত ৫২২ তম সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের ফলক এখানেই উম্মোচন করা হয়। এখানে রয়েছে বন বিভাগ কতৃক একটি রেস্ট হাউস যেখানে দর্শনার্থীদের থাকার সু-ব্যবস্থা রয়েছে।

 

 

দুবলার চর

 

 

/ দুবলার চরঃ সুন্দরবনের সর্ব দক্ষিণে এই স্থানটি অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত এই দ্বীপটি মৎস্য আহরোণ ও প্রক্রিয়াজাত করণের এক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত । এখানে প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেলেরা অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে এবং সাগরে মাছ ধরে এবং তা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রি করে। সুন্দরবনের মৎস সম্পদ সম্পর্কে ধারানা পেতে হলে এই স্থানটি সর্বোৎকৃষ্ট স্থান। এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় সমূদ্র সৈকত।

 

 

 

 

mandarbaria

 

/ মান্দার বাড়িয়াঃ সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে এ অভয়ারণ্য অবস্থিত । এখানকার গভীর অরণ্যে ছোট ছোট ক্ষুদ্র জীব থেকে শুরু করে রয়েছ বাঘ, হরিণ, বন্যশুকুর, বানর, কুমির, কচ্ছপ, সাপ, কাকড়া ইত্যাদির সমারোহ। এছাড়াও এই স্থানের আরো একটি আর্কষণীয় জিনিস হলো সাগরের বড় বড় ঢেউ। এখানে সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল বিশাল ঢেউগুলো দেখতে সত্যি খুবই মনমুগ্ধকর। এছাড়াও প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য ও জীব বৈচিত্রের ভরপুর দুর্গম এ স্থানটি।

 

 

 

অপরুপ সৌন্দর্যের এই সুন্দরবন দেখার জন্য সহায়তা করবে ট্যুর প্যাকেজগুলো আর খুলনা থেকে সুন্দরবনের ট্যুর প্যাকেজ দেখতে পারেন এখান থেকে।

 

 

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: August 24, 2022
Reviews (1) Write a Review
Tuhin
Tuhin | 28 November 2020 06.57 AM
খুব সুন্দর হয়েছে।