bdstall.com

ফুটানো পানি সত্যি কি ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ?

পানির অপর নাম জীবন কারণ মানদেহে শতকরা প্রায় ৬০-৭০ ভাগ পানি থাকে। মানবদেহের প্রতিটি কোষ, টিস্যু, অর্গান পানির উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক জীবের বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নেই। আমরা বিশুদ্ধ পানির খোঁজে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকি। তবে আমরা পানি ফুটিয়ে পান করার পাশাপাশি ঝামেলা মুক্ত থাকার জন্য পানির ফিল্টার এর সাহায্যে পানি বিশুদ্ধকরণ করে পান করতে পারি।

 

কেন বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন?

আমাদের দেশে গ্রাম ও শহরে বিশুদ্ধ পানির খুবই সংকট দেখা দেয়। পানি যদি বিশুদ্ধ না হয় সেক্ষেত্রে মানব দেহে জন্ডিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পাশাপাশি পানিতে থাকা রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমানে থাকলে কিডনি, চর্মরোগ, হৃদরোগ, আর্সেনিক থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  যা পরবর্তীতে সাধারন মানুষের জীবনের জন্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই সব সময় সুস্থ ও সতেজ থাকার জন্য জন্য বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

 

পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি

পানি বিশুদ্ধ করার জন্য সবচেয়ে পুরোনো এবং নিরাপদ উপায় হচ্ছে ফুটানো। বাসা বাড়িতে, অফিসে সাধারনত টিউবওয়েল বা সাপ্লাইয়ের পানি ব্যবহৃত হয় তবে খাওয়ার ও রান্নার কাজে পানি ফুটিয়ে নিয়ে ব্যবহার করা উত্তম। পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করার জন্য করনীয় কিছু বিষয় জেনে নেওয়া যাকঃ

  • পানিকে ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত সময় নিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে।
  • নির্ধারিত তাপে পানি ফুটালে পানিতে থাকা জীবানু, লার্ভা কিংবা ব্যাকটেরিয়া ধবংস হয়ে যায়।
  • পানি ফুটানোর আগে এবং পানি পান করার পূর্বে ভালো ভাবে ছেঁকে নিতে হবে।
  • ফুটানো পানি সংরক্ষিত পাত্রটি ডেকে রাখতে হবে এবং পানি পান করার পূর্বে গ্লাস পরিষ্কার করে নিয়ে পান হবে।

 

ফুটানো পানি কি বিশুদ্ধ?

ফুটিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়াটি মূলত পুরোনো হলেও উত্তম একটি প্রক্রিয়া। পানি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফুটালে প্রায় শতভাগ জীবানুমুক্ত হয়ে থাকে যা মানবদেহকে রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে। তবে পানিতে থাকা রাসায়নিক ও ধাতব পদার্থ যেমন নাইট্রেট, ফ্লোরাইড, আর্সেনিক, ক্যালসিয়ামের মত পদার্থ ফুটানোর পরও থেকে যায়। এগুলোর মধ্যে কিছু পদার্থ মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় এবং কিছু কিছু পদার্থ অপ্রয়োজনীয়। পানি ফুটানো হলে ১০০ ভাগ জীবাণু মুক্ত হবে কিন্তু শতভাগ বিশুদ্ধকরণ হবে না। আর শতভাগ বিশুদ্ধকরনের জন্য ওয়াটার পিউরিফাইয়ার বা ফিল্টার রয়েছে। ফুটানো পানি নিয়ে কেউ সন্দেহ পোষণ করলে সেই পানি ফিল্টারিং করেও খেতে পারেন।

 

সতর্কতাঃ

পানি ফুটানোর আগে ও পরে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। 
১। পানি ফুটানোর আগে পানিকে ছেঁকে নিতে হবে। 
২। পানিকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফুটাতে হবে অন্যথায় পানিতে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা থাকে। 
৩। পানি নির্দিষ্ট সময় পরে গ্যাস বা চুলা বন্ধ করতে হবে অন্যথায় জ্বালানী অপচয় বৃদ্ধি পাবে।   
৪। ফুটানো পানি সংরক্ষণ করার পাত্রটি পরিষ্কার থাকতে হবে এবং  পানি সংরক্ষণের পরবর্তী সময় ঢেকে রাখা উচিৎ যাতে বাহিরের ময়লা না পরে। 
৫। ফুটানো পানি গরম থাকা অবস্থায় কখনই প্ল্যাস্টিকের পাত্রে সংরক্ষণ করা উচিৎ নয় কারণ পানির গরমের জন্য প্ল্যাস্টিকে থাকা ইথিলিন পানির সাথে মিশে যেতে পারে।

৬। পানিতে রাসায়নিক পদার্থের কারণে এসিড কিংবা ক্ষারীয় পরিমাণ বেশি থাকলে তা পিএইচ মিটার এর সাহায্যে পরিমাপ করে পানি পান করা নিরাপদ। মনে রাখা ভালো যে বিশুদ্ধ পানির মান pH-7। তবে pH-6 থেকে pH-8.5 পর্যন্ত পানি পানযোগ্য।   

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: March 19, 2023
Reviews (0) Write a Review