কম্পিউটার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজকে সহজ করে থাকে। বাংলাদেশে ডেস্কটপ কম্পিউটারের দাম কমে যাওয়ায় এখন এর বহুল ব্যবহার দেখা যায় যেমন ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি। পিসিতে নিয়মিত কাজ করতে গেলে মাঝে মধ্যে কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়। এমন সমস্যা দেখা দিলে ইন্টারনেট ব্রাউজিং বা কোনো দরকারি কাজ করার সময় ঝামেলায় পরতে হয়। এই ধরনের ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু বিষয় আছে যেগুলো জানা থাকলে পিসির গতি কমে গেলে সেটিকে বাড়ানো যাবে এবং গতিশীল রাখা যাবে। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক ডেস্কটপ পিসির গতি বাড়ানোর কিছু টিপসঃ-
অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আন-ইনস্টল
পিসিতে কাজ করার সময় অনেক ফাইল বা সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হয়। কিন্তু কিছু ফাইল বা সফটওয়্যার এককালীন সময় কাজে আসলেও পরবর্তীতে আর দরকার হয় না। এগুলো পিসির স্টোরেজ দখল করে থাকে এবং পিসির কাজের গতি কমিয়ে আনে। তাই এরকম ফাইল বা সফটওয়্যার ব্যবহার শেষে পিসি থেকে ডিলিট করে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে থার্ড পার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্টার্ট আপ প্রসেস
কাজের ক্ষেত্রে পিসি চালু করা হলে বেশ কিছু প্রোগ্রামও চালু হয়ে যায়। এই কারণে পিসির গতি অনেকটাই কমে যায়। তবে এই প্রোগ্রাম গুলো বন্ধ করা যায় খুব সহজেই। প্রথমে Ctrl-Shift-Esc বোতাম চাপলে একটি প্রোগ্রাম চালু হবে। দ্বিতীয় ধাপে Startup column সেকশনে ক্লিক করতে হবে। তৃতীয় ধাপে প্রোগ্রাম লিস্টের উপর মাউসে রাইট ক্লিক করলে disabled অপশনটি দেখা যাবে এতে ক্লিক করলেই প্রোগ্রামটি আর পিসি চালু করার সময় চালু হবে না। তবে অপারেটিং সিস্টেম ভেদে এটি ভিন্ন হতে পারে।
এসএসডি যুক্ত করা
পিসিতে হার্ড ড্রাইভের সাথে সলিড স্টেট ড্রাইভ বা এসএসসডি যুক্ত করার ফলে পিসির গতি অনেক বেড়ে যাবে। এটি এমন একটি ডিভাইস যা ডেস্কটপ পিসিতে যুক্ত করলে বিভিন্ন বড় ফাইল বা অ্যাডোবি ফটোশপের মতো সফটওয়্যার স্মূথলী ব্যবহার করা যাবে। তাই পিসির গতি ঠিক রাখতে এসএসডি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
থার্ড পার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার
পিসির কর্মক্ষমতা বাড়াতে অনেক থার্ড পার্টি সফটওয়্যার আছে যেগুলো দিয়ে পিসিতে থাকা জাঙ্ক পরিষ্কার করে গতি বাড়াতে সাহায্য করে। থার্ড সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে সফটওয়্যার নির্বাচন করা ভালো। আইওএলও সিস্টেম মেকানিক একটি উন্নত মানের থার্ড পার্টি সফটওয়্যার। এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে পিসিতে সহজেই জাঙ্ক বা ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে না। কিছু টাকা খরচ করে হলেও একটি অথেনন্টিক থার্ড পার্টি নিরাপদ সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত।
ডিস্ক ক্লিন রাখা
পিসির ডিস্কে অনেক অপ্রয়োনীয় ফাইল থাকে যেগুলো পিসিতে থাকা স্টোরেজ অনেক অপচয় করে। এই ফাইল গুলো পিসির কার্যক্ষমতাকে প্রতিনিয়ত হ্রাস করে। এই ফাইল গুলো পিসি থেকে ডিলিট করতে Start menu-তে গিয়ে Disk Cleanup সার্চ করে এর মধ্যে থাকা ড্রাইভ থেকে পর্যায়ক্রমে ইচ্ছা মতো বেছে নিয়ে অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করা যাবে। এগুলো ডিস্ক থেকে ডিলিট হয়ে গেলে পিসির কার্যক্ষমতা বেড়ে যাবে।
ভাইরাস আক্রমণ রোধ
পিসির ভাইরাস আক্রমণ বা ম্যালওয়্যার রোধ করতে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালিত পিসিতে বিল্ট-ইন ডিফেন্ডার থাকে। আবার অনেক থার্ড পার্টি অ্যাপ এই ভাইরাস গুলো পরিষ্কার করে থাকে। একটি শক্তিশালী থার্ড পার্টি অ্যাপ যার নাম ম্যালওয়্যারবিটস অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সম্পূর্ণ ফ্রিতে অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার প্রোটেকশন দিয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়া গুলো অবলম্বন করে ভাইরাস আক্রমণ রোধ করা যাবে। ফলে পিসির গতি বৃদ্ধি পাবে। আর বেশি পারফরমেঞ্চ পেতে গেলে পেইড এন্টিভাইরাস বা ইন্টারনেট সিকিউরিটি ব্যবহার করতে পারেন।
নটিফিকেশন বন্ধ রাখা
পিসির নটিফিকেশন বন্ধ রাখার মাধ্যমে পিসির গতি বাড়ানো যায়। পিসিতে কাজ করার সময় হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ফেসবুক, ইমেইল ইত্যাদি সফটওয়্যার থেকে আগত নটিফিকেশন পিসিকে অনেকটাই দুর্বল করে দেয়। বিভিন্ন সফটওয়্যার থেকে নটিফিকেশন আসার ফলে পিসি স্লো হয়ে যায় এবং কিছু ক্ষেত্রে হ্যাং করে। নটিফিকেশন বন্ধ রাখলে পিসির গতি অনেকটাই বেড়ে যাবে। তাই অদরকারি নটিফিকেশন বন্ধ করে রাখা উচিৎ।
পিসি কুলিং
পিসিতে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফলে পিসি গরম হয়ে যায় ফলে গতি কমে যায়। কুলিং সিস্টেমের কাজ হচ্ছে পিসিকে অতিরিক্ত গরম হতে রক্ষা করা। পিসি ঠান্ডা থাকলে কাজ দ্রুত কাজ করতে পারে। এরজন্য পিসিতে ভালো মানের কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে।
রিসাইকেল বিন পরিষ্কার রাখা
পিসিতে কাজ করার পরে কোনো ফাইল ডিলিট করলেই তা পরিপূর্ণ ডিলিট হয় না বরং এটি রিসাইকেল বিনে জমা হয়ে থাকে। এই জমে থাকা ফাইল গুলো আলাদাভাবে স্টোরেজ অপচয় করে। এর ফলে পিসির গতি অনেকটাই কমে যায়। তাই সপ্তাহে একবার হলেও রিসাইকেল বিনে থাকা ফাইল গুলো ডিলিট করা দরকার। ফলে স্টোরেজ ফাকা হয়ে যাবে এবং পিসির গতি বৃদ্ধি পাবে।
পিসি পরিষ্কার করা
দীর্ঘদিন পিসি চালালে এর মধ্যে অনেক ধুলাবালি জমে এতে পিসি ডিসটার্ব করতে পারে এমনকি অনেক পার্টস নষ্ট হয়ে জিতে পারে। চাইলে নিজেই এটি পরিষ্কার করে নিতে পারেন। আর এয়ার ব্লোয়ার ব্যবহার করলে ভাল কারন এতে ভিতরে লেগে থাকা ধুলাবালি উড়ে যাবে। তবে না পারলে কোন দোকান থেকে সামান্য টাকার বিনিময়ে করে নিতে পারেন।
ভার্চুয়াল মেমরি বাড়ান
আপনার যদি কম মেমরি থাকে তবে আপনি কিছু মেমরি যোগ করতে পারেন গতি বাড়ানোর জন্য এক্ষেত্রে কিছু টাকা খরচ করতে হবে। অথবা আপনি কিছু ভার্চুয়াল মেমরি যোগ করতে পারেন যাতে এটি র্যাম এর মত কাজ করে এবং কিছু বুস্ট পাবেন। মনে রাখবেন আপনার হার্ডডিস্কের কিছু জায়গা সবসময় খালি রাখবেন তা কখনই পূর্ণ করবেন না।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: August 05, 2022