প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিনোদনের ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সময়ে অডিও, ভিডিও শোনার জন্য জনপ্রিয় ডিভাইস হচ্ছে হেডফোন। বাসে যাতায়াতের সময়, অফিসে এমনকি বাসায় একাকী সময় কাটানোর সময় অডিও শোনার জন্য আমরা হেডফোন ব্যবহার করে থাকি। তাছাড়া, নিত্য নতুন ডিজাইনে এবং উন্নত টেকনোলোজির সমন্বয়ে ব্লুটুথ হেডফোন, স্পীকার, এবং ইয়ারবাডস সহ বিভিন্ন ধরণের ইন-ইয়ার, ওভার-ইয়ার হেডফোন আমাদের দেশে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়। তবে, আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য ডিভাইস যেমন ল্যাপটপ, মোবাইল, অডিও প্লেয়ারের মত ডিভাইসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হেডফোন আমরা খুবই কম ব্যবহার করে থাকি। ফলে, নিয়মিত হেডফোন ব্যবহারে আমাদের কানে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে, কানের ইনফেকশন, ফিজিক্যাল ইনজুরির পাশাপাশি শ্রবণশক্তি সুরক্ষিত রাখতে কানের ক্ষতি না করে কিভাবে হেডফোন দিয়ে নিরাপদে অডিও শোনা যায় সে সম্পর্কে জেনে নেয়।
কানের ক্ষতি না করে কিভাবে হেডফোন শুনবেন?
১। সীমিত শোনার সময়
কানে শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে দীর্ঘসময় উচ্চ ভলিউমে অডিও শোনা। এর ফলে ধীরে ধীরে কানের শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে হ্রাস পেতে থাকে। এছাড়াও, অনেকে দীর্ঘসময় হেডফোন ব্যবহারে কানে রিং বা বিভিন্ন ধরণের শব্দ শুনতে পান, যা পরবর্তীতে শ্রবণ শক্তিহীন হয়ে পড়েন। তাই, ভিডিও, অডিও শোনার ক্ষেত্রে একটানা না শোনে প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর ৫-১০ মিনিট বিরতি নেওয়া উচিত। তাহলে, হেডফোন ব্যবহারে কানের শ্রবণ শক্তি হ্রাসে ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।
২। কম ভলিউম ব্যবহার
অডিও শোনার ক্ষেত্রে হেডফোনের ভলিউম স্বাভাবিক স্তরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, ভলিউম এমন একটা পর্যায়ে রাখা উচিত যাতে আপনি আপনার বাসা কিংবা অফিসে পারিপার্শ্বিক কথোপকথন বা পরিবেষ্টিত শব্দ শুনতে পারেন। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে, দৈনিক একজন ব্যাক্তি গড়ে সর্বোচ্চ ৮৫ ডেসিবল শব্দ আট ঘণ্টা সময় পর্যন্ত শোনতে পারেন, যা কানের স্বাভাবিক শ্রবণ শক্তি বজায় রাখতে সহায়ক হয়ে থাকে। তাই, উচ্চ ভলিউমে দীর্ঘসময় অডিও সেশন থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও, অনেক অডিও ডিভাইস এবং হেডফোনে বিল্ট-ইন ভলিউম লিমিটার থাকে, যা ব্যবহারকারীকে উচ্চ ভলিউমে অডিও শোনা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
৩। সঠিক হেডফোন যাচাই
আমাদের দেশে সাশ্রয়ী দামে ইন-ইয়ার, ওভার-ইয়ার এবং অন-ইয়ার টাইপের ব্লুটুথ হেডফোন, ইয়ারবাড এবং গেমিং হেডফোন পাওয়া যায়। বর্তমানে, স্মার্ট ফিচারের সমন্বয়ে তৈরি মোবাইল সহজলভ্য হওয়ায় সিলিকন বা প্লাস্টিকের তৈরি ছোট আকারের ইয়ারবাড বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই ধরণের ইন-ইয়ার হেডফোন সরাসরি কানের ভিতরে সাউন্ড সরবরাহ করে। ফলে কানে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। অন্যদিকে, কানের বাইরে যেমন ওভার-ইয়ার বা অন-ইয়ার হেডফোন নিরাপদ। কারণ এই ধরণের হেডফোন কানের সূক্ষ্ম পর্দায় সরাসরি চাপ দেয় না। তাই কানের ক্ষতি রোধ করতে সঠিক হেডফোন বাছাই করে ব্যবহার করতে হবে।
৪। নয়েস ক্যান্সেলেশন হেডফোন
শ্রবণশক্তি হ্রাস রোধ করার আরেকটি যুগোপযোগী উপায় হচ্ছে নয়েস ক্যান্সেলেশন হেডফোন ব্যবহার করা। এই ধরণের ফিচার যুক্ত হেডফোন সাধারণত মোবাইলে কথা বলা কিংবা অডিও শোনার ক্ষেত্রে কোলাহল মুক্ত স্পষ্ট অডিও সরবারহ করতে এক ধরণের অডিও সিগন্যাল সরবারহ করে। ফলে, আপনি কম ভলিউমে অডিও শোনতে পাবেন। পাশাপাশি দীর্ঘসময় কথা বলতে কিংবা অডিও শোনার ক্ষেত্রে ভলিউম লেভেল সামঞ্জস্য করার প্রয়োজন হবে না। তাই, নয়েস ক্যান্সেলেশন ফিচার যুক্ত হেডফোন ব্যবহারে আপনার সম্ভাব্য শ্রবণশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমে যাবে।
৫। বেস্ট কোয়ালিটি হেডফোন
কম দামের হেডফোন সাধারণত নিম্ন-মানের সাউন্ড সরবারহ করে থাকে, যা আপনাকে হেডফোনে কথা বলা কিংবা অডিও শোনার ক্ষেত্রে ভলিউম বাড়াতে বাধ্য করতে পারে পারে। তাই, প্রয়োজন অনুযায়ী উচ্চ-মানের হেডফোন বাছাই করুন, যা ভাল সাউন্ড কোয়ালিটি প্রদান করতে পারে। ফলে, বেস্ট কোয়ালিটির হেডফোন দিয়ে আপনি কম ভলিউমে নিরাপদে কথা বলতে এবং অডিও শুনতে পারবেন। এছাড়াও, আপনার ব্যবহৃত ডিভাইসের সামঞ্জস্যপূর্ণ মডেলের হেডফোন জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিডিস্টল.কম এ সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়। কারণ, ডিভাইসের মডেল অনুযায়ী হেডফোনে নির্দিষ্ট পাওয়ার এবং ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার করে থাকে। তাই, ডিভাইসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মডেলের হেডফোন ব্যবহারে কানের শ্রবণশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমে যাবে।
৬। কানের সংক্রমণ রোধ
দীর্ঘ সময় ইয়ারবাড, হেডফোন ব্যবহারের ফলে কানে উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশ তৈরি হতে পারে। ফলে, কানে ব্যাথা এবং কানের ভিতরে ময়লা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও, হেডফোন ব্যবহারে করে বাইরে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে অসাবধানতার জন্য বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই, বাইরে চলা ফেরা করার ক্ষেত্রে হেডফোন খোলা রেখে চলা ফেরা করা উচিত। এছাড়াও, কানের শ্রবণ শক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত হেডফোন জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি কান পরিষ্কার রাখতে হবে।
৭। শ্রবণ শক্তি পরীক্ষা
হেডফোন ব্যবহারে কানের ক্ষতি কমাতে নির্দিষ্ট সময় পর পর শ্রবণ শক্তি পরীক্ষা করা উচিত। ফলে, শ্রবণ শক্তি হ্রাসের প্রাথমিক লক্ষণ সহজেই পর্যবেক্ষণ করা যাবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যা কানের নিরাপদ শ্রবণ শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: May 23, 2024