বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত গ্রীনহাউজ গ্যাসের নির্গমন এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর প্রভাবে বছরের লম্বা সময় ধরে আমাদের দেশে গরমকাল থাকে। ফলে গরমকালে অতিরিক্ত তাপে সাধারণ মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায়। সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফিরে মুখোমুখি হতে হয় তীব্র গরমের। আর গরমে স্বস্তিতে থাকার ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয় হচ্ছে ঘর ঠান্ডা রাখা। তবে যাদের বাজেট আছে তারা এয়ার কন্ডিশনার কিনে সহজেই ঘরকে ঠান্ডা রাখতে পারবেন। তবে বাংলাদেশে অনেক লোড শেডিং হয় বিধায় নিচের নিয়মগুলো ফলো করলে সব ক্ষেত্রেই অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। তাই কি কি উপায়ে ঘরকে সহজেই ঠান্ডা রাখা যায় সে বিষয় গুলো জেনে নেওয়া যাকঃ
১। ভারী পর্দার ব্যবহারঃ গরমে সূর্যের প্রখর তাপ যাতে সহজে ঘরে সহজে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ঘরের জানালায় ভারী পর্দা ব্যবহার করতে হবে এবং জানালা বন্ধ রাখতে হবে। ফলে তাপ সহজেই ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং ঘর যথেষ্ট ঠান্ডা থাকবে।
২। প্রাকৃতিক বায়ু সরবারহঃ সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত ঘরের জানালা, দরজা খোলা রাখা উচিত। কারণ এই সময় ঠান্ডা বাতাস ঘর থেকে গরম বাতাস বের করে ঘরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে।
৩। সবুজায়ণঃ ঘরকে ঠান্ডা রাখার জন্য বাড়ির আশেপাশে কিংবা বাসার ছাদে ঝোপজাতীয় গাছ লাগানোর পাশাপাশি জানালার উপর ছাউনি ব্যবহার করা উচিত। কারণ অতিরিক্ত গরমে গাছপালা সহজে তাপ শোষণ করে ঘর ঠান্ডা রাখবে।
৪। এলইডি লাইট ব্যবহারঃ অনেক ঘরে সাধারণত প্রাকৃতিক আলো কম পাওয়া যায় কিংবা রাতে ঘরকে আলোকিত রাখতে বিভিন্ন ধরনের লাইট ব্যবহার করা হয় ফলে আলোর পাশাপাশি ঘর গরম হয়ে থাকে। তাই গরমে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে এলইডি লাইট ব্যবহার করা উচিত কারণ এই ধরনের লাইট বেশি আলোর পাশাপাশি কম তাপ উৎপন্ন করে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়ে থাকে।
৫। দেয়ালে ভেন্টিলেটরঃ ঘরকে ঠান্ডা রাখার জন্য অন্যতম কার্যকর ভেন্টিলেটর কারণ ঘরে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। তাই গরমে ঘরকে ঠান্ডা রাখার জন্য ভেন্টিলেটর পরিষ্কার রাখা উচিত।
৬। কম আসবাবপত্র ব্যবহারঃ আসবাবপত্র যতবেশি থাকবে ঘর তত বেশি গরম থাকবে। তাই গরমে ঘরে আলো বাতাস সঠিকভাবে সরবরাহের জন্য প্রয়োজনে অল্প আসবাবপত্রে সাজানো উচিত।
৭। অপ্রয়োজনীয় ডিভাইস বন্ধ রাখাঃ ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস যেমন টিভি, কম্পিউটার, ট্যাবলেট, ওয়াশিং মেশিন, আয়রণ মেশিন এমনকি মোবাইল চার্জার ইত্যাদি ছোটখাট ডিভাইস সমূহ কাজের পাশাপাশি তাপ উৎপন্ন করে ঘরের পরিবেশকে গরম করে ফেলে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহারের পর সাথে সাথে বন্ধ করে রাখা উচিত।
৮। দেয়ালে সাদা রং ব্যবহারঃ ঘরের দেয়ালে ভিতরে কিংবা বাইরে এমনকি বাড়ির ছাদে সাদা কিংবা হালকা রং ব্যবহার করা উচিত। কারণ সাদা কিংবা হালকা রং সহজে সূর্য থেকে নির্গত অতি বেগুনি রশ্মি যুক্ত তাপকে সহজে বিকিরিত করে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
৯। আসবাবপত্রে ব্যবহার্য কাপড়ঃ ঘরে আসবাব পত্রে ব্যবহৃত যেমন বিছানার চাদর, বালিশের কভার, সোফার কোশন কভার ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুতি কিংবা লিলেন জাতীয় কাপড় ব্যবহার করা উচিত। কারণ এ ধরনের কাপড় সহজে তাপ শোষণ করতে পারে এবং ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে থাকে।
১০। বাথরুম ও রান্নাঘরে এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহারঃ বাথরুমে এবং কিচেনে মূলত গোমট পরিবেশ কিংবা বদ্ধ অবস্থায় থাকে। তাছাড়া কিচেনে রান্না করার ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা ঘরের পরিবেশকে গরম করে। তাই কাজ চুলা শেষে বন্ধ রাখার পাশাপাশি এক্সহস্ট ফ্যান চালু রাখা, ফলে দ্রুত ঘর ঠান্ডা হয়ে যায়।
১১। ক্রস ভেন্টিলেশনঃ এছাড়াও গরমে ঘরের তাপমাত্রাকে সহনীয় পর্যায়ে নিতে জানালায় টেবিল ফ্যান কিংবা পোর্টেবল ফ্যান ব্যবহার করা উচিত। ফলে ঘর থেকে গরম বাতাসকে বের করে দিয়ে দ্রুত ঠান্ডা করবে।
১২। সিলিং ফ্যান ব্যবহারঃ সিলিং ফ্যান মূলত ঘরের চারিদিকে সমানভাবে বাতাস সঞ্চালন করতে পারে এবং দ্রুত ঠান্ডা করতে পারে। তাই গরমে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি অন্যান্য ফ্যানও ব্যবহার করা উচিত।
১৩। বরফ কিংবা ফ্রিজের পানি ব্যবহারঃ ঘরের মেঝেতে গামলার মধ্যে বরফের টুকরা কিংবা ফ্রীজের পানি রেখে ফ্যান ছেড়ে দিলে ঘর তাপমাত্রা অনেকাংশে কমে যাবে এবং শীতল পরিবেশ বিরাজ করবে।
১৪। পরিচ্ছন্নতাঃ গরমকালে ঘরের মেঝে নিয়মিত দুপুরে এবং রাতে শোয়ার আগে একবার করে মুছে নেওয়া উচিত। এতে ঘরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায় এবং ঠান্ডা পরিবেশ বজায় থাকে।
উপরিউক্ত উপায়গুলো গরমকালে ব্যবহারের পাশাপাশি ঘরের পরিবেশকে শীতল রাখার জন্য বিডিস্টলে কম দামে বিভিন্ন ধরনের এয়ার কুলার পাওয়া যায়।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: April 30, 2023